Friday, August 7, 2015

প্রশ্নঃ জুমুয়া’র সালাহ কিভাবে পড়বেন?



তোমরা তোমাদের পালনকর্তার অভিমূখী হও এবং তাঁর আজ্ঞাবহ হও's photo.


প্রশ্নঃ জুমুয়া’র সালাহ কিভাবে পড়বেন?
উত্তরঃ আপনি মসজিদে প্রবেশ করে, প্রথমেই দুই রাকাত সালাহ আদায় করবেন। এটা হলো তাহিয়্যাতুল মসজিদের সালাহ। এমনকি খতিব সাহেব যদি খুতবা দিতে থাকেন (আরবীতে ওয়াজিব দুইটা খুতবা / বাংলায় বেদাতী খুতবা, ওয়াজিব দুইটা খুতবার আগে, যেকোনো সময়েই হোক) তবুও আপনি এই দুই রাকাত সালাহ পড়তে পারবেন, কারণ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর আদেশ সেই রকম।
এর পরে আপনার ইচ্ছা হলে আর খুতবা শুরু না হলে, দুই রাকাত দুই রাকাত রাকাত করে নফল নামায পড়তে পারেন অথবা অন্য যিকির করবেন, কোনো ধরা বাঁধা নিয়ম নেই। খতিব খুতবা দেওয়া শুরু করলে চুপ করে মনোযোগ দিয়ে শুনবেন। ফরয ২ রাকাতের পরে যদি মসজিদে নামায পড়েন তাহলে ২+২=৪ রাকাত সুন্নত পড়বেন। আর মসজিদে না পড়লে বাসায় এসে ২ রাকাত নামায পড়া সুন্নত।
নারীদের যদি মসজিদে যাওয়ার সুযোগ থাকে তাহলে মসজিদে পুরুষদের মতোই জমুয়াহ পড়বেন। আর বাসায় পড়লে যোহরের সালাত পড়বেন। ওয়াক্ত হলেই নামায পড়বেন, পুরুষের নামায শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করবেন না।
জুমুয়ার নামাযের কিছু ভুলঃ
এই পোস্ট যারা কুরান ও সহীহ হাদীস জানতে আগ্রহী তাদের জন্য, যারা প্রচলিত ভুল আর জাল জয়ীফ আঁকড়ে ধরে থাকতে চান তাদের জন্য নয়। দয়া করে গালি দিয়ে বা দলীল বিহীন যুক্তি তর্ক উপস্থাপন করে আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করবেন না।
১ নাম্বার ভুলঃ মসজিদে গিয়ে ২ রাকাত নামায না পড়ে বসে পড়া, পরে ইমাম সাহবে যখন সময় দেয় তখন ৪ রাকাত পড়া।
এই ধরণের সুন্নত বিরোধী আমলের কোনো ভিত্তি নেই, সুন্নত হচ্ছে – জুমুয়ার দিনে কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করবে সে তাহিয়্যাতুল মসজিদের ২ রাকাত সুন্নত নামায পড়বে (বুখারী)।
এমনকি ইমাম সাহবে খুতবা দিতে থাকলেও সে এই নামায পড়বে – এটাই রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর ফয়সালা।
এর পরে যদি খুতবা দেওয়ার আগে সময় থাকে তাহলে সে যিকির করবে, দুয়া, দুরুদ পড়বে। আর তার ইচ্ছা হলে ২ রাকাত ২ রাকাত করে যতক্ষণ না খুতবা শুরু হয় নফল নামায পড়তে পারবে। কত রাকাত পড়বে কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই, আমাদের দেশে চার রাকাত যে কাবলাল জুমুয়ার সিস্টেম – এই হাদীস অত্যন্ত জয়ীফ, এর পক্ষে কোনো সহীহ হাদীস নেই।
২ নাম্বার ভুলঃ ইমামের বাংলা ভাষায় ৩ নাম্বার খুতবা দেওয়া – এটা নব আবিষ্কৃত একটা বেদাত। এটাকে তারা খুতবা বলুক, ওয়াজ যাই বলুক এটা খুতবা হিসেবেই গণ্য হবে – রাসুলুল্লাহ (সাঃ) খুতবা দিতেন ২টা। পাকিস্থানের বড় হানাফী মুফতি ও মারেফুল কুরানের লেখক – মুফিত শফি সাহেব এই খুতবা দেওয়াকে বেদাত বলেছেন – কারণ কুরান সুন্নতে এমন কোনো কিছু পাওয়া যায়না।
আর এই বাংলা ভাষায় বেদাতী ৩ নাম্বার খুতবার সময় তাহিয়্যাতুল মসজিদের নামায না পড়ার জন্য লাইট জ্বালিয়ে রাখা, পড়তে নিষেধ করা – এই সবগুলো হলো সুন্নতের সাথে বেয়াদবী, একটা বেদাতকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সুন্নতকে নিষিদ্ধ করা (নাউযুবিল্লাহ)।
আর অনেকে মনে করে খুতবা আরবীতে দিতে হবে। এটা ঠিক নয়, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর জাতি যেই ভাষাতেই কথা বলতো সেই ভাষাতেই খুতবা দিতেন – সুতরাং আমাদের দেশে খতিব সাহেবদের উচিত হবে বাংলায় খুতবা দেওয়া। হানাফী মাযহাব অনুযায়ী মাতৃভাষাতেও খুতবা দেওয়া জায়েজ এনিয়ে এই লেখাটা দেখতে পারেনঃ
৩ নাম্বার ভুলঃ খুতবার সময় দান বাক্স চালু করে খুতবা শুনতে বিঘ্ন ঘটানো। মসজিদের টাকা তোলার দরকার আছে – কিন্তু খুতবা শোনা তার থেকেও জরুরী। এটা খুতবা শোনার আদবের পরিপন্থী একটা বিষয়।
৪ নাম্বার ভুলঃ নামাযের পরে সম্মিলিত মুনাযাত করা। জুমুয়ার দিনে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) খুতবার মধ্যে দুয়া করতেন আর সবাই মনে মনে আমীন বলে সেই দুয়া শরীক হতেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কোনোদিন কোনো নামাযের পরে সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করেছেন – এর কোনো প্রমান নেই।
প্রত্যেক ফরয নামাযের পরে সম্মিলিত দুয়া করা বেদাতঃ
৫ নাম্বার ভুলঃ মানুষ বেশি হওয়ার কারণে কোনো এক ফাঁকে ঢুকে গিয়ে অন্যকে কষ্ট দিয়ে বসা। হাদীসে এটা নিষেধ করতে নিষেধ করা হয়েছে- যেখানে জায়গা পাবেন সেখানে বসবেন। চাপাচাপি করে কাউকে কষ্ট দেওয়া যাবেনা। দরকার হলে নিজে কষ্ট করে ছাদে, রাস্তায় নামায পড়বেন – তবু অন্যকে কষ্ট দিবেন না।
৬ নাম্বার ভুলঃ খুতবার সময় কথা বলা (মুখে বা ইশারায়) – এটা খুবই মারাত্মক একটা বিষয় এমনকি কারো জুমুয়ার নামায বাতিল হয়ে যেতে পারে এই নিকৃষ্ট কাজের জন্য। কেউ যদি আপনার সাথে কথা বলতে চায়, আপনি যদি তাকে বলেন, “চুপ করো” তাহলেও আপনার গুনাহ হবে (সহীহ হাদীসে সেটাই বলা হয়েছে). এবার তাহলে চিন্তা করুন, কেমন আছো, কি খবর? এই ধরণের খাজুইর‍্যা আলাপ করলে কতটুকু গুনাহ হবে?
আমরা লিখে যাচ্ছি, আপনারা চেষ্টা করবেন – এইগুলো ঠিকমতো করার জন্য। সাধারণ মানুষ যদি কুরান সুন্নাহর দিকে ফিরে যায় – ইমাম সাহেবেরা এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে। মুসল্লিরা যেরকম, আল্লাহ তাদেরকে সেইরকম ইমাম বা নেতা দান করেন। মুসল্লিরা ঠিক হলে ইমাম সাহবেরাও একদিন ঠিক হয়ে যাবেন ইন শা’ আল্লাহ।
প্রশ্নঃ জুমুয়ার দিনে খুতবা শোনা ওয়াজিব আর তাহিয়্যতাতুল মসজিদের নামায পড়া সুন্নত। তাহলে ওয়াজিব ছেড়ে কি করে নফল/সুন্নত পড়বো?
উত্তরঃ দ্বীন হচ্ছে আল্লাহ ও তাঁর নবী আমাদেরকে যেইভাবে শিক্ষা দিয়েছেন সেটা।
এই দ্বীন যার মাধ্যমে আমাদের কাছে আল্লাহ পাঠিয়েছেন – তিনি আমাদেরকে হুকুম করেছেন – কেউ যদি জুমুয়ার দিনে মসজিদে এসে দেখে যে খুতবা চলছে তাহলে সে যেনো সংক্ষেপে ২ রাকাত নামায পড়ে নেয়।
অন্য হাদীসে এসেছে, এই লোক এই ২ রাকাত না পড়ে বসে গেছে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাকে উঠিয়ে ২ রাকাত নামায পড়িয়েছেন।
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (সাঃ) এর খুৎবা দানকালে সেখানে এক ব্যক্তি আগমন করেন। তিনি তাকে বলেন , হে অমুক! তুমি কি (তাহিয়াতুল মাসজিদ) সালাত পড়েছ? ঐ ব্যক্তি বলেন, না । নবী (সাঃ) বলেন, তুমি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় কর । অন্য হাদীসে বলা হয়েছে তুমি সংক্ষিপ্ত ভাবে দুই রাকাআত (তাহিয়াতুল মাসজিদ) সালাত আদায় কর ।
[বুখারী হা/৮৮৩; মুসলিম হা/১৮৯৫-১৯০০ ; তিরমিযী; ইবনে মাজাহ; নাসাঈ হা/১৪০৩; আবু দাউদ হা/১১১৫-১১১৭]০
এই হচ্ছে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর ফয়সালা। যাদের রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর ফয়সালা ভালো লাগেনা, নিজের মনগড়া কথা বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় – বা অমুক মাযহাব, অমুক ইমাম, অমুক পীর সাহেব, অমুক বড় হুজুরের কথা বেশি দামী মনে হয় তারা দয়া করে আমাদের পেজ আনলাইক দিয়ে চলে যাবেন।
যেই ব্যক্তি মানুষের মধ্যে সবার থেকে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কথাকে বেশি মূল্যায়ন করেনা, সেই ব্যক্তি নবীর নাফরমান।

No comments:

Post a Comment