“সুরা ইখলাস সম্পর্কে জানুন”
____________________
সুরা ইখলাসের নামকরণঃ
শিরক থেকে মুক্ত হয়ে ‘তাওহীদ’ বা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী হওয়াকে ‘ইখলাস’ বলা হয়। যেই ব্যক্তি এই সুরাটির যেই শিক্ষা তার প্রতি ঈমান আনবে, সে শিরক থেকে মুক্তি লাভ করবে এবং খাঁটি তাওহীদবাদী হয়ে আল্লাহর মুখলিস বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হবে। এইজন্য এই সুরাটির নাম রাখা হয়েছে সুরাতুল ইখলাস।
____________________
সুরা ইখলাস নাযিল হওয়ার সময়ঃ
এটি একটি “মাক্কী সুরা”, অর্থাৎ রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর মদীনাতে হিজতের পূর্বে, মক্কার জীবনেই অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ এই সুরাটি নাযিল হয়েছিলো।
____________________
সুরা ইখলাস নাযিল হওয়ার শানে নুযূলঃ
ক্বুরানুল কারীম নাযিল হওয়ার যুগে ইয়াহুদীরা বলতো আমরা আল্লাহর পুত্র (নাউযুবিল্লাহ) ওযায়ের (আঃ) এর উপাসনা করি। আর খ্রীস্টানরা বলতো আমরা আল্লাহর পুত্র (নাউযুবিল্লাহ) ঈসা (আঃ) এর উপাসনা করি। মাজূসী বা আগুন পূজারীরা বলতো, আমরা চন্দ্র-সূর্যের পূজা করি। আর মুশরিকরা লাত, মানাত, ওযযা সহ বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তি পূজা করতো। দেখা যাচ্ছে, তখনকার যুগের মুশরেকরা পূর্ব যুগের অলি-আওলিয়াদেরকে ‘দেবতা’ বানিয়ে পূজা করতো আর আহলে কিতাবী যারা (ইয়াহুদী এবং খ্রীস্টানরা) নবী-রাসূলদেরকে ‘আল্লাহর পুত্র’ বানিয়ে তাদের পূজা করতো। যেহেতু তারা মানুষ ছিলেন, দেখা যেত যে যার পূজা করতো সে তার দেবতার বংশ-পরিচয় স্বরণ রাখতো এবং এনিয়ে অন্যদের সাথে গর্ব এবং অহংকার করতো। এমতাবস্থায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সমস্ত দেব-দেবী এবং মিথ্যা মাবূদের পূজাকে অমার্জনীয় অপরাধ ‘শিরক’ ঘোষণা করে ‘তাওহীদ’ বা এক আল্লাহর ইবাদতের দিকে দাওয়াত দেন। মক্কার মুশরিকরা একদিন তাদের পূর্বের স্বভাব মতো রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসে বললঃ হে মুহাম্মাদ! আমাদের কাছে তোমার রব্বের বংশধারা বর্ণনা করো। তখন আল্লাহ তাআ’লা সুরা ইখলাস নাযিল করে বুঝিয়ে দিলেন যে, আল্লাহ তাআ’লার কোন বংশধারা নেই। কারণ তিনি এক, একক এবং অদ্বিতীয়। জন্ম নেওয়া, সন্তান জন্ম দেওয়া বা বংশধারার সাথে তাঁর কোন সম্পর্ক নেই। তিনি কারো থেকে জন্ম গ্রহণ করেন নি এবং তাঁর থেকেও কেউ জন্মলাভ করেনি। সুতরাং আল্লাহর বংশধারা নিয়ে প্রশ্নই আসতে পারেনা।
____________________
সুরা ইখলাসের ফযীলতঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুরা ইখলাস সম্পর্কে বলেছেন,
“নিঃসন্দেহে এটা ক্বুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান।”
মুসলিমঃ ৮১২, তিরমিযীঃ ২৮৯৯।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার সাহাবীদেরকে বললেন, “তোমরা কি রাতে এক তৃতীয়াংশ ক্বুরআন পড়তে পারনা”? প্রস্তাবটি সাহাবাদের জন্য কঠিন মনে হল। তাই তাঁরা বলে উঠলেন, “হে আল্লাহর রসুল! এই কাজ আমাদের মধ্যে কে করতে পারবে”? (অর্থাৎ কেউ পারবে না।)
রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, “ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ, আল্লাহুস স্বামাদ (সুরা ইখলাস) ক্বুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান।” (অর্থাৎ এই সুরা পড়লে এক তৃতীয়াংশ ক্বুরআন পড়ার সমান নেকী পাওয়া যাবে)।
সহীহুল বুখারীঃ ৫০১৫, নাসায়ীঃ ৯৯৫, আবু দাউদ ১৪৬১, আহমাদ ১০৬৬৯।
এক সাহাবী এসে বলল, “হে আল্লাহর রসূল! আমি এই (সুরা) ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদকে ভালবাসি”। তিনি বললেন, “এর ভালবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে।”
বুখারীর ৭৭৪নং হাদীসের পরবর্তী অধ্যায়, তিরমিযী ২৯০১, আহমাদ ১২০২৪
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“যে ব্যক্তি সুরা ইখলাস ১০ বার পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানানো হবে।”
সহীহ আল-জামি আস-সগীরঃ ৬৪৭২।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে সুরা ইখলাস তেলাওয়াত করতে শুনলেন। তিনি বললেন “এটা তার অধিকার”। সাহাবারা জিজ্ঞাস করলেন, তার অধিকার কি? তিনি উত্তর দিলেন, “তার অধিকার হচ্ছে জান্নাত।”
মুসনাদে আহমাদঃ ৭৬৬৯।
***দিনে রাতে যতবার ইচ্ছা, বেশি বেশি করে সুরা ইখলাস পড়া যাবে।
____________________
সুরা ইখলাসের সরল তর্জমাঃ
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে।
قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ
বলুন, তিনি আল্লাহ, এক ও অদ্বিতীয়,
اللَّهُ الصَّمَدُ
আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন, বরং সকলেই তাঁর মুখেপেক্ষী
لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ
তিনি কাউকে জন্ম দেন নি, তাঁকেও কেউ জন্ম দেয় নাই।
وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ
এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।
____________________
সুরা ইখলাসের শব্দার্থঃ
আয়াত নাম্বার একঃ ক্বুল হুয়া-ল্লাহু আহা’দ।
ক্বুল = বলুন (say)
হুয়া = তিনি (he)
আল্লাহু = আল্লাহ্
আহাদ = এক/অদ্বিতীয় (one and only)
আয়াতের অর্থঃ (হে নবী) আপনি বলুন, তিনি আল্লাহ্, এক ও অদ্বিতীয়।
আয়াত নাম্বার দুইঃ আল্লাহুস-সামাদ।
আল্লাহু = আল্লাহ্,
আস-সামাদ = যার উপরে সমস্ত কিছু নির্ভরশীল কিন্তু তিনি সমস্ত কিছু হতে অমুখাপেক্ষী (absolute and eternal) – এটা আল্লাহর একটা নাম।
আয়াতের অর্থঃ আল্লাহ্ সমস্ত কিছু হতে অমুখাপেক্ষী, কিন্তু সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী।
আয়াত নাম্বার তিনঃ লাম ইয়ালিদ ওয়া-লাম ইউলাদ।
লাম = করেন নি বা দেন নি (did not)
ইয়ালিদ = জন্ম দেওয়া (to give birth)
ওয়া = এবং (and)
লাম = করেন নি বা দেন নি (did not)
ইউলাদ= জন্ম নেওয়া (born)
আয়াতের অর্থঃ তিনি কাউকে জন্ম দেন নি, তাঁকেও কেউ জন্ম দেয় নাই।
আয়াত নাম্বার চারঃ ওয়া-লাম ইয়া কুল্লাহু কুফুওয়ান আহা’দ।
ওয়া = এবং
লাম = করেন নি বা দেন নি (did not)
ইয়া কুল্লাহু = তার মতো বা তার সমান (like him)
কুফুওয়ান = সমান, (কুফু থেকে কুফুওয়ান, কুফু অর্থ হলো সমতা)
আহাদ = এক ও অদ্বিতীয়।
আয়াতের অর্থঃ এবং তাঁর মতো আর কেউ নেই।
____________________
[সমাপ্ত] [সমাপ্ত] [সমাপ্ত]
No comments:
Post a Comment