Monday, January 25, 2016

নারী-পুরুষের সালাতের পদ্ধতিগত কোন পার্থক্য আছে কি?





মুসলিম জাতীর জন্য একটি ফরয ইবাদত হচ্ছে সালাত বা নামায। যা কোন
অজুহাতেই পরিত্যাগ করা সম্ভব নয়। আর পরকালে সর্বপ্রথম এই সালাতের হিসাব নেয়া হবে। তবে আমাদের সমাজে পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে সালাত আদায়ে পার্থক্য দেখা যায়।
কিন্তু মহানবী (সঃ) কখনও বলে যাননি যে, পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে সালাত
আদায়ে পার্থক্য আছে। তাঁর সময় নারী-পুরুষ একসাথে জামায়াতে নামায আদায়ের বহু হাদিস রয়েছে।
^
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “ছল্লু কামা রআইতুমুনি উছল্লি” – “তোমরা সেই ভাবে
সালাত আদায় কর , যেভাবে আমাকে সালাত আদায় করতে দেখ”
(মেশকাত, ২য় খন্ড, হাদীস ৬৩২)
এবং রাসূলের আনুগত্য না করে অন্য কারো আনুগত্য করলে তাকে নিজের ‘রব’ বানানো
হবে, যেহেতু আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
“তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদের আলেম ও পীর/দরবেশদেরকে নিজের ‘রব’
বানিয়ে নিয়েছে।”
(সূরা তওবা: আয়াত ৩১)
^
সালাত আদায় করার জন্য নারী পুরুষ কারোর জন্য স্বতন্ত্র নিয়ম করা হয়নি।
জিবরাঈল (আঃ) মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ ক্রমে দুই দফায় রাসূল (সাঃ)-কে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের নিয়ম পদ্ধতি ইমামতি করে বাস্তবভাবে শিখিয়ে গেছেন।
এ সময়
জিবরাঈল (আঃ) নারীদের সালাতের জন্য আলাদা কোন নিয়ম পদ্ধতির বর্ণনা দেন
নাই। নারী-পুরুষ নির্বিশেষের জন্য এ নমুনা
শিখানো হয়েছে। আল্লাহর নিয়ম পদ্ধতিতে কখনও কোন পার্থক্য দেখা যাবে না।
এ মর্মে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“আর আপনি আল্লাহর নিয়ম-রীতিতে কখনও কোন পরিবর্তন পাবেন না।” [সূরা-
আহযাব : আয়াত-৬২]
^
রাসূল (সাঃ) নিজেও বহু সাহাবীদের উপস্থিতিতে সালাত কেমন করে আদায়
করতে হয় বাস্তবভাবে রুকু, সিজদাহ ইত্যাদি করে
দেখিয়েছেন। তারপর রাসূল (সাঃ) দৃঢ়তার সাথে জোড়ালো ভাষায় বললেন,
“তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখ, ঠিক সেভাবেই সালাত
আদায় কর।” [মেশকাত, ২য় খন্ড, হাদীস ৬৩২]
^
এ কথা প্রণিধানযোগ্য যে, আল্লাহ তায়ালা ও রাসূল (সাঃ) যে কাজকে নারী
পুরুষদের জন্য নির্দিষ্ট করে পার্থক্য করার বর্ণনা বা
নির্দেশ দেন নাই তা পুরুষ মহিলা নির্বিশেষে পার্থক্য না করেই পালন করতে হবে।
যেহেতু রাসূল (সাঃ) সকল নারী পুরুষের জন্যই
সমানভাবে অনুসরণ ও অনুকরণযোগ্য, এ ব্যাপারে কোন মতভেদ নাই নিশ্চয়ই।
সালাতের ব্যপারেও এ সত্য যথার্থই কার্যকর বলে গ্রহণ
করতে হবে। তবে মহিলাদের সালাত আদায়ে যে পার্থক্যগুলো দেখা যায় সেগুলো
বাহ্যিক এবং সালাতের বাইরে বিবেচিত।
^
^
এগুলো নিম্নরূপঃ
^
^
১) সালাতের জন্য পুরুষ আযান দিবে কিন্তু মহিলা আযান দেবে না।
২) সালাতে মহিলা মাথা ঢেকে রাখবে, কিন্তু পুরুষের মাথা না ঢাকলেও সালাত
হয়ে যাবে।
৩) মহিলাদের পায়ের গোড়ালী ঢেকে রাখতে হবে তা নাহলে সালাত সিদ্ধ হবে
না। অপরদিকে পুরুষদের পায়ের গোড়ালী খোলা
রাখতে হবে।
৪) কোন মহিলা পুরুষদের ইমামতি করতে পারবে না, কিন্তু পুরুষরা নারী পুরুষ
উভয়েরই ইমামতি করতে পারবে। মহিলা অবশ্য শুধু
মহিলাদের জামায়াতে ইমামতি করতে পারবে।
৫) জামায়াতে সর্বাবস্থায় মহিলাদের কাতার পুরুষদের কাতারের পিছনে থাকবে।
৬) পুরুষ ইমামতি করলে কাতারের আগে একাকী দাড়াঁতে হবে, যদি ওজর না থাকে।
কিন্তু মহিলা ইমাম হলে তাকে মহিলাদের
কাতারের মাঝখানে দাঁড়াতে হবে। [বর্ণিত আছে যে, আয়েশা (রাঃ) এবং উম্মে
সালমা (রাঃ) যখন মেয়েদের ফরয সালাত অথবা
তারাবীহ এর সালাতে জামায়াতে ইমামতি করতেন তখন তাদের মাঝখানে
দাঁড়াতেন।
৭) যদি ইমাম ভুল করে তাহলে মহিলাদেরকে হাত তালি দিয়ে বা উরুর উপর হাত
মেরে সংকেত দিতে হবে। আর পুরুষদেরকে
উচ্চঃস্বরে তাকবীর বলতে হবে।
৮) তাকবীরে তাহরীমার সময় পুরুষদের চাদর বা কম্বল ইত্যাদি হতে হাত বের করে
কাঁধ বা কান পর্যন্ত উঠাতে হবে, অবশ্য ওজর না
থাকলে। কিন্তু মহিলাদের চাদরের বা ওড়নার ভিতরে হাত রেখেই কাঁধ বা কান
পর্যন্ত হাত উঠাতে হেব; তাকবীরের সময়ও এভাবে
করতে হবে।
৯) মসজিদ হতে মহিলারা সালাত শেষ হলেই বের হয়ে যাবে, আর পুরুষরা পরে বের
হবে।
^
^
উপরোক্ত বাহ্যিক করণীয় বিষয়গুলো ব্যতীত অন্য কোন পার্থক্য পুরুষ ও মহিলাদের
সালাতে নেই। পুরুষ-মহিলাদের সালাত আদায়ের
ক্ষেত্রে অর্থাৎ তাকবীরে তাহরীমা, হাত বাঁধা, রুকু, সিজদাহ, উঠা-বসা ইত্যাদি
ক্ষেত্রে কোন পার্থক্য নেই। মহিলাদের
সালাত আদায়ে আমাদের দেশে যে পার্থক্য প্রচলিত আছে তা সহীহ হাদীস
ভিত্তিক তো নয়ই, দলীল ভিত্তিকও নয়, বরং
কতকগুলো যঈফ ও নিতান্ত দুর্বল হাদীস এবং অসমর্থিত ও মনগড়া লেখা বই হতে
প্রচলিত হয়েছে।
^
^
এই বিষয়ে নিম্নে কিছু প্রশ্নোত্তর এবং অডিও ভিডিও এর লিংক দেয়া হলো :
^
প্রশ্ন : নারী-পুরুষের ছালাতের মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কি? প্রশ্নোত্তরটি এই
লিংকে দেখুন
উত্তর : ছালাত আদায়ের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে যেভাবে
ছালাত আদায় করতে দেখছ, সেভাবেই ছালাত আদায় কর’ (বুখারী, মিশকাত
হা/৬৮৩)। তিনি নারী ও পুরুষের জন্য দু’বার দু’ভাবে
ছালাত আদায় করেননি। বিশিষ্ট তাবেঈ ইবরাহীম নাখঈ বলেন, ‘পুরুষেরা ছালাতে
যা করে নারীরাও তাই করবে (মুছান্নাফ ইবনু
আবী শায়বাহ ১/৭৫ পৃঃ সনদ ছহীহ)।
^
^
তবে বিশেষ কয়েকটি ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে। যেমন- (১) মহিলা ইমাম মহিলাদের
সামনের
কাতারের মাঝ বরাবর দাঁড়াবে (আবুদাঊদ, দারাকুৎনী, ইরওয়া হা/৪৯৩)। (২) ইমাম
কোন ভুল করলে মহিলা মুক্তাদীগণ হাতে হাত
মেরে আওয়ায করবেন (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৯৮৮)। (৩) প্রাপ্ত বয়স্কা
মহিলাগণ বড় চাদর দিয়ে পুরা দেহ না ঢাকলে
তাদের ছালাত হবে না (আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৭৬২-৬৩)। পুরুষের জন্য
টাখনুর উপরে কাপড় থাকতে হবে (আবূদাঊদ, ইবনু
মাজাহ, মিশকাত হা/৪৩৩১)। কিন্তু মহিলাগণ টাখনু ঢাকতে পারেন (তিরমিযী,
আবূদাঊদ, মিশকাত হা/৪৩৩৪-৩৫)।
^
^
নারী পুরুষের সালাতের পার্থক্য
প্রশ্ন: পূরুষ ও মহিলাদের নামাজের মধ্যে কোন রকমের পার্থক্য আছে কি?
প্রশ্নোত্তরটি এই লিংকে দেখুন
উত্তর: সালাত আদায় করার জন্য নারী পুরুষ কারোর জন্য স্বতন্ত্র নিয়ম করা হয়নি।
জিবরাঈল (আঃ) আল্লাহর নির্দেশক্রমে দুই
দফায় রাসূল (সঃ) কে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের নিয়ম পদ্ধতি ইমামতি করে
বাস্তবভাবে শিখিয়ে গেছেন। এসময় জিবরাঈল (আঃ)
নারীদের সালাতের জন্য আলাদা কোন নিয়ম পদ্ধতির বর্ণনা দেন নাই। রাসূল
(সঃ) বহু সাহাবীদের উপস্থিতিতে বাস্তবভাবে রুকু, সাজদাহ ইত্যাদি করে দেখিয়ে সালাত শিক্ষা দিয়েছিলেন এবং
বলেছিলেনঃ “তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখ ঠিক সেভাবেই সালাত আদায় কর”।
^
^
সম্মানিত পাঠক, আসুন উক্ত প্রশ্নের জবাবে সাইয়্যেদ কামালুদ্দীন জাফরীর
বক্তব্য শুনে নিই।
কামাল উদ্দীন জাফরীর বক্তব্য
প্রশ্নঃ : মহিলারা ইক্বামতের বাক্য জোরে বলবে, না নীরবে বলবে এবং মহিলা
জামা‘আতের ক্ষেত্রে ইমাম কোথায় দাঁড়াবে জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর : পুরুষ ও মহিলাদের ছালাতের মধ্যে পদ্ধতিগত কোন পার্থক্য নেই (ফিক্বহুস
সুন্নাহ ১/১০৯)। মহিলারা পুরুষদের ন্যায় সরবে ইক্বামত দিবে। তবে উচ্চৈঃস্বরে নয়। মহিলারা পুরুষের ইমামতির মতই ইমামতি
করবে, তবে তারা জামা‘আতের প্রথম কাতারের মধ্যস্থলে দাড়িয়ে ইমামতি করবে। ফরয ও তারাবীহর জামা‘আতে তাদের ইমামতি করার স্পষ্ট দলীল পাওয়া যায়
(আবূদাঊদ,
দারাকুৎনী প্রভৃতি ইরওয়া হা/৪৯৩, ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), ৩য় সংস্করণ, পৃঃ ১২৩)।
আল্লাহ আমাদের সবাই সঠিক সালাত আদায় করার
তৌফিক দান করুন । আমীন!

No comments:

Post a Comment