Wednesday, February 24, 2016

শায়খ বিন বাজ রাহিমাহুল্লাহ বলেন,




শায়খ বিন বাজ রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
“আক্বিদাহ যদি সঠিক না হয়, তাহলে সমস্ত কথা ও কাজ বাতিল।”
[ফতোয়া ইবনে বাজঃ ১/১৩, আল-ইফতা] 
অনেক ভাইয়েরা এই কথাটার দলিল বা উৎস জানতে চেয়েছেন। নিচে আমি আক্বীদাহ শব্দের অর্থ এবং আকীদাহ সঠিক না হলে আমল বাতিল এই কথার দলিল উল্লেখ করছি।
___________________________
আরবী ‘আক্বদ’ শব্দ থেকে ‘আক্বীদাহ’, যার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে বন্ধন বা গিঁট, Knot.
ইসলামী পরিভাষায় একজন মুসলিম ব্যক্তির ‘মৌলিক ধর্মীয় বিশাস’ (ইংরেজীতে Creed) এর এক একটি বিষয়, যেমন- আল্লাহ এক, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম একজন ‘রাসূল’ বা আল্লাহর প্রেরিত দূত, জিব্রাঈল আঃ আল্লাহর ওহী নিয়ে আসতেন, ‘তাক্বদীর’ বা মানুষের ভাগ্য আল্লাহ নিয়ন্ত্রন করেন এবং তিনি তা লিখেও রেখেছেন, ইত্যাদি বিষয়গুলোকে আক্বীদাহ বলা হয়। কারণ মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসগুলো গিঁটের মতোই মানুষের অন্তরের সাথে জোড়া লেগে থাকে, যা সহজে ভেঙ্গে বা নষ্ট হয়ে যায়না।
উল্লেখ্য, নোমান আলী খান নামক একজন এমেরিকান বক্তা দাবী করেছেন, আক্বীদাহ কথাটি ক্বুরানে নেই, সুতরাং আক্বিদাহ শিক্ষা করাকে এতো গুরুত্ব দেওয়া ঠিকনা। এটা আসলে ইসলামী শিক্ষা নিয়ে তার মূর্খতাপূর্ণ বক্তব্য ছাড়া আর কিছুইনা। ক্বুরানে ‘তারাবীহ’ শব্দ নাই, ‘দাজ্জাল’ শব্দ নাই, তাই বলে আমরা কি এইগুলো শিক্ষা করা বাদ দিয়ে দেবো? এটা আসলে মূর্খতা, আপনারা এমন মূর্খতাপূর্ণ কথা-বার্তা থেকে সাবধান থাকবেন। আল্লাহ সুবহা’নাহু তাআ’লা ক্বুরানুল কারীমে যেই জিনিসটাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন সেটা হচ্ছেঃ শিরকমুক্ত একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা। সেইজন্য আল্লাহ তাআ’লা ক্বুরানুল কারীমের পাতায় পাতায় আল্লাহ সম্পর্কে সঠিক বিশ্বাস কেমন হওয়া উচিৎ এবং কাফের মুশরেকদের ভ্রান্ত বিশ্বাসের প্রত্যাখ্যান করে আলোচনা করেছেন। আর এই একজন মুসলিমের এই বিশ্বাসকে সমস্ত ইসলামী পন্ডিতগণ ‘আকিদাহ’ নামে উল্লেখ করেছেন এবং এনিয়ে বই লিখেছেন। এটা না বুঝেই একবিংশ শতাব্দীর অনেক মুফতি, মুফাসসির আর শায়খরা দাবী তুলেছেন, ক্বুরানে আকিদাহ শব্দ নাই সুতরাং আকিদাহ কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না? এটা জাহালাত (মূর্খতা), এটা দ্বোয়ালালাহ (পথভ্রষ্টতা)। 
___________________________
‘ক্বুরানুল কারীম’ থেকে আকীদাহ সঠিক না হলে আমল বাতিল এই কথার দলিলঃ
মহান আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “(হে নবী!) আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তী সকল (নবী-রাসূলদের) প্রতি এই ওয়াহী করা হয়েছিলো যে, আপনি যদি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করেন, তাহলে আপনার সমস্ত আমল বাতিল হয়ে যাবে, এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে একজন হবেন।” [সুরা আল-জুমারঃ ৬৫]
সুতরাং, এই আয়াতে কারীমায় আল্লাহ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, শিরক করলে কারণে মানুষের সমস্ত আমল বর্বাদ হয়ে যাবে। যেটা তিনি অন্যান্য আয়াতেও উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তাআ’আলা আরো বলেছেনঃ
“আর (শেষ বিচারের দিন) আমি তাদের আমলগুলোর প্রতি লক্ষ্য করবো, অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করে দেব।” [সুরা আল ফুরক্বানঃ ২৩]
ধূলিকণায় পরিণত করে দেবেন কারণ তাদের ইবাদত বা আমলগুলো ছিলো শিরক মিশ্রিত অথবা বিদআ’ত। আর শিরক মিশ্রিত কোন আমল বা বিদআ’ত আল্লাহ কবুল করেন না। সেই জন্যে আমল করার পূর্বে ‘আক্বিদাহ’ বা ধর্মীয় বিশ্বাস (Creed) সঠিক করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী আমল করতে হবে। আকীদাহ সংশোধন না করেই বেশি বেশি আমল করলে সম্ভাবনা আছে সেই আমলের মাঝে শিরক ও বিদাত ঢুকে নষ্ট ও ব্যর্থ হয়ে যাবে।
___________________________
সুন্নাহ বা সহীহ হাদিস থেকে দলিলঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“যে ব্যক্তি কোন গণকের কাছে গিয়ে কোন কিছু জিজ্ঞেস করবে, তার ৪০ দিনের সালাত কবুল হবে না।” [সহীহ মুসলিম]
নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন,
“যে ব্যক্তি কোন গণক বা জ্যোতিষের কাছে যায় এবং তার কথা সত্যি বলে বিশ্বাস করে, তাহলে সে মুহাম্মাদ এর উপর নাযিলকৃত বিষয় (ক্বুরানুল কারীমের) সাথে কুফুরী করবে।” [সুনানে আবু দাঊদ]
এই দুইটি হাদীস থেকে প্রথমটিতে দেখা যাচ্ছে, কেউ যদি শুধুমাত্র গণকের কাছে তার ভাগ্য নিয়ে তার ভবিষ্যতবাণী জিজ্ঞাস করে তাহলে তার ৪০ দিনের নামায কবুল হবেনা। এর কারণ হচ্ছে, সে গণক বা জ্যোতিষীর কথা বিশ্বাস করুক বা না করুক, গণক যে গায়েব বা অদৃশ্যের জ্ঞান জানার দাবী করা (বড় শিরক), সে তার প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করে দূরে থাকেনি। এতোটুকু ঈমানের ঘাটতির কারণে ৪০ দিন পর্যন্ত তার নামায কবুল করা হবেনা। আর যদি গণকের কথা বিশ্বাস করে তাহলে সে যেনো সম্পূর্ণ ক্বুরানকেই অস্বীকার করে কাফের হয়ে গেলো। 
___________________________
সাহাবীদের বক্তব্যঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর মৃত্যুর পরে সাহাবীদের যুগে ইরাকের বসরা নামক অঞ্চলে কিছু লোক বের হয়েছিলো, যারা মনে করতোঃ ‘তাক্বদীর’ বলতে কিছু নেই, সবকিছু তাৎক্ষনিকভাবে ঘটে থাকে। তাক্বদীর অস্বীকার করেছিলো বলে এই পথভ্রষ্ট লোকদেরকে ‘ক্বাদরিয়া’ বলা হতো। যাই হোক সেখান থেকে কিছু তাবেয়ী মুসলমান মক্কায় হজ্জ বা উমরা করতে আসেন এবং এমন সময় তারা সৌভাগ্যক্রমে আবদুল্লাহ ইবন উমর ইবন খাত্তাব (রাঃ) এর সাথে মসজিদে দেখা পেয়ে যান। তারা তাঁর কাছে গিয়ে একজন তাঁর ডানপাশে এবং আর একজন বামপাশে বসেন, এবং তাক্বদীর অস্বীকারকারী ক্বাদরিয়াদের ব্যপারে তাকে প্রশ্ন করেন। আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) তাদেরকে বলন, “তাদের সাথে তোমাদের দেখা হলে বলে দিও যে, তাদের সাথে আমার কোন সস্পর্ক নেই এবং আমার সঙ্গে তাদেরও কোন সম্পর্ক নেই । আল্লাহর কসম! তাদের মধ্য থেকে কেউ যদি ওহুদ পাহাড় পরিমাণ সোনার মালিক হয় এবং তা আল্লাহর রাস্তায় দান করে, তাক্বদীরের প্রতি ঈমান না আনা পর্যন্ত আল্লাহ তা কবুল করবেন না।”
[সহীহ মুসলিমঃ হাদীস নং-১]

No comments:

Post a Comment