আদম (আঃ) সন্তান................
প্রতি ১হাজারে মানুষে ৯৯৯জন জাহান্নামে যাবে..!
--------------------------------------------
আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ)
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মহান আল্লাহ ডাকবেন, হে আদম (‘আঃ)! তখন তিনি জবাব দিবেন, আমি হাযির, আমি সৌভাগ্যবান এবং সকল কল্যাণ আপনার হতেই। তখন আল্লাহ বলবেন, জাহান্নামীদেরকে বের করে দাও। আদম (‘আঃ) বলবেন, জাহান্নামী কারা? আল্লাহ বলবেন, প্রতি হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন। এ সময় ছোটরা বুড়ো হয়ে যাবে। প্রত্যেক গর্ভবতী তার গর্ভপাত করে ফেলবে। মানুষকে দেখাবে নেশাগ্রস্তের মত যদিও তারা নেশাগ্রস্ত নয়। বস্তুতঃ আল্লাহর শাস্তি কঠিন- (হাজ্জঃ ২)। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যে সেই একজন কে? তিনি বললেন, তোমরা সুসংবাদ গ্রহন কর। কেননা তোমাদের মধ্যে হতে একজন আর এক হাজারের অবশিষ্ট ইয়াজুজ-মাজুজ হবে। অতঃপর তিনি বললেন, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তাঁর কসম। আমি আশা করি, তোমরা সমস্ত জান্নাতবাসীর এক তৃতীয়াংশ হবে। [আবূ সা’ঈদ (রাঃ) বলেন] আমরা এ সংবাদ শুনে আবার আল্লাহু আকবার বলে তাকবীর দিলাম। তিনি আবার বললেন, আমি আশা করি তোমরা সমস্ত জান্নাতীদের অর্ধেক হবে। এ কথা শুনে আমরা আবারও আল্লাহু আকবার বলে তাকবীর দিলাম। তিনি বললেন, তোমরা তো অন্যান্য মানুষের তুলনায় এমন, যেমন সাদা ষাঁড়ের দেহে কয়েকটি কাল পশম অথবা কালো ষাঁড়ের শরীরে কয়েকটি সাদা পশম।
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩৩৪৮
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
-------------------
আবু সায়িদ খুদরি (রাঃ)
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলবেনঃ হে আদম, সে বলবেঃ সদা উপস্থিত এবং তোমার সন্তুষ্টির জন্য প্রচেষ্টার পর প্রচেষ্টা, কল্যাণ কেবল তোমার হাতেই। তিনি বলবেনঃ জাহান্নামী দল বের কর। তিনি বলবেনঃ জাহান্নামী দল কোনটি? তিনি বলবেনঃ প্রত্যেক হাজার থেকে নয়শত নিরানব্বই জন, তখনি ছোটরা বার্ধক্যে উপনীত হবে। সকল গর্ভবতী তার গর্ভ পাত করবে, তুমি দেখবে মানুষরা মাতাল, অথচ তাদের সাথে মাতলামি নেই, কিন্তু আল্লাহর শাস্তি খুব কঠিন। তারা বললঃ হে আল্লাহর রাসূল আমাদের থেকে সে একজন কে? তিনি বললেনঃ “সুসংবাদ গ্রহণ কর, তোমাদের থেকে একজন ও ইয়াজুজ-মাজুজ থেকে এক হাজার। অতঃপর তিনি বলেনঃ যার হাতে আমার নফস তার কসম করে বলছিঃ আমি আশা করি তোমরা জান্নাতিদের এক চতুর্থাংশ হবে”। আমরা তাকবীর বলে উঠলাম। তিনি বললেনঃ “আমি আশা করছি তোমরা জান্নাতের এক তৃতীয়াংশ হবে”। আমরা তাকবীর বললাম। তিনি বললেনঃ “আমি আশা করছি তোমরা জান্নাতের অর্ধেক হবে”। আমরা তাকবীর বললাম। তিনি বললেনঃ “মানুষের ভিতরে তোমরা সাদা ষাঁড়ের গায়ে একটি কালো চুলের ন্যায়, অথবা কালো ষাঁড়ের গায়ের একটি সাদা চুলের ন্যায়”। [বুখারি, মুসলিম ও নাসায়ি]
আল লু'লু ওয়াল মারজান, হাদিস নং ৭০
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
-------------------
আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ)
আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা‘আলা ডেকে বলবেন, হে আদাম! তিনি বলবেন, আমি তোমার খিদমতে হাযির। সমগ্র কল্যাণ তোমারই হাতে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ্ তা‘আলা বলবেন, জাহান্নামীদের (জাহান্নামে দেয়ার জন্য) বের কর। আদাম (‘আ.) আরয করবেন, কী পরিমাণ জাহান্নামী বের করব? আল্লাহ্ তা‘আলা বলবেন, প্রতি এক হাজারে নয়শ’ নিরানব্বই জন। বস্তুত এটা হবে ঐ সময়, যখন (ক্বিয়ামাতের ভয়াবহ অবস্থা দর্শনে) বাচ্চা বৃদ্ধ হয়ে যাবে। (আয়াত): আর গর্ভবতীরা গর্ভপাত করে ফেলবে; মানুষকে দেখবে মাতাল সদৃশ যদিও তারা নেশাগ্রস্ত নয়। বস্তুত আল্লাহ্র শাস্তি কঠিন- (সূরাহ হাজ্জ ২২/২)। এটা সাহাবাগণের কাছে বড় কঠিন মনে হল। তখন তাঁরা বললেনঃ হে আল্লাহ্র রাসূল! আমাদের মধ্য থেকে সেই লোকটি কে হবেন? তিনি বললেনঃ তোমরা এই মর্মে সুসংবাদ গ্রহণ কর যে ইয়ায়ুয ও মাযূয থেকে এক হাজার আর তোমাদের মাঝ থেকে হবে একজন। এরপর তিনি বললেনঃ শপথ ঐ মহান সত্তার, যাঁর হাতের মুঠোয় আমার জান। আমি আকাঙক্ষা রাখি যে তোমরা বেহেশতীদের এক-তৃতীয়াংশ হয়ে যাও। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আমরা ‘আল হামদুলিল্লাহ্’ ও ‘আল্লাহু আকবার’ বললাম। তিনি আবার বললেনঃ শপথ ঐ মহান সত্তার, যাঁর হাতে আমার জান। আমি অবশ্যই আশা করি যে তোমরা বেহেশ্তীদের অর্ধেক হয়ে যাও। অন্য সব উম্মাতের মাঝে তোমাদের তুলনা হচ্ছে কাল ষাঁড়ের চামড়ার মাঝে সাদা চুল বিশেষ। অথবা সাদা চিহ্ন, যা গাধার সামনের পায়ে হয়ে থাকে। (বুখারী পর্ব ৮১ : /৪৬ হাঃ ৬৫৩০, মুসলিম ১/৯৬ হাঃ ২২২)
রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১৩৩
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
-------------------
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর আ’স (রাঃ)
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমার উম্মতের মধ্যে দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে এবং সে চল্লিশ পর্যন্ত অবস্থান করবে। আমি জানি না চল্লিশ দিন, চল্লিশ মাস, না চল্লিশ বছর। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা ঈসা ইবনে মারয়্যাম -কে পাঠাবেন। তিনি তাকে খুঁজে বের করে ধ্বংস করবেন। অতঃপর লোকেরা (দীর্ঘ) সাত বছর ব্যাপী (এমন সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে) কাল উদযাপন করবে, যাতে দুজনের পারস্পরিক কোন প্রকার শত্রুতা থাকবে না। তারপর মহান আল্লাহ শাম দেশ থেকে শীতল বায়ু চালু করবেন যা জমিনের বুকে এমন কোন ব্যক্তিকে জীবিত ছাড়বে না, যার অন্তরে অণু পরিমাণ মঙ্গল অথবা ঈমান থাকবে। এমনকি তোমাদের কেউ যদি পর্বত-গর্ভে প্রবেশ করে, তাহলে সেখানেও প্রবেশ করে তার জীবন নাশ করবে। (তারপর ভূপৃষ্ঠে) দুর্বৃত্ত প্রকৃতির লোক থেকে যাবে, যারা কাম-প্রবৃত্তি চরিতার্থের ব্যাপারে ক্ষিপ্ত গতিমান পাখির মত হবে, একে অপরের বিরুদ্ধে শত্রুতা ও রক্তপাত করার ক্ষেত্রে হিংস্র পশুর ন্যায় হবে। যারা কখনো ভাল কাজের আদেশ করবে না এবং কোন মন্দ কাজে বাধা দেবে না। শয়তান তাদের সামনে মানবরূপ ধারণ করে আত্মপ্রকাশ করবে ও বলবে, ‘তোমরা আমার আহবানে সাড়া দেবে না?’ তারা বলবে, ‘আমাদেরকে আপনি কি আদেশ করছেন?’ সে তখন তাদেরকে মূর্তি পূজার আদেশ দেবে। আর এসব কর্মকাণ্ডে তাদের জীবিকা সচ্ছল হবে এবং জীবন সুখের হবে। অতঃপর শিঙ্গায় (প্রলয় বীণায়) ফুঁৎকার দেওয়া হবে। যে ব্যক্তিই সে শব্দ শুনবে, সেই তার ঘাড়ের একদিক কাত ক’রে দেবে ও অপর দিক উঁচু ক’রে দেবে। সর্বাগ্রে এমন এক ব্যক্তি তা শুনতে পাবে, যে তার উটের (জন্য পানি রাখার) হওয লেপায় ব্যস্ত থাকবে। সে শিঙ্গার শব্দ শোনামাত্র অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যাবে। তার সাথে সাথে তার আশে-পাশের লোকরাও অজ্ঞান হয়ে (ধরাশায়ী হয়ে) যাবে। অতঃপর আল্লাহ শিশিরের ন্যায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পাঠাবেন। যার ফলে পুনরায় মানবদেহ (উদ্ভিদের ন্যায়) গজিয়ে উঠবে। তারপর যখন দ্বিতীয়বার শিঙ্গা বাজানো হবে, তখন তারা উঠে দেখতে থাকবে। তাদেরকে বলা হবে, ‘হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের দিকে এগিয়ে এসো।’ (অন্য দিকে ফিরিশতাদেরকে হুকুম করা হবে যে,) ‘তোমরা ওদেরকে থামাও। ওদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ তারপর বলা হবে, ‘ওদের মধ্য থেকে জাহান্নামে প্রেরিতব্য দল বের করে নাও।’ জিজ্ঞাসা করা হবে, ‘কত থেকে কত?’ বলা হবে, ‘প্রতি হাজারে নয়শ’ নিরানববই জন।’ বস্তুতঃ এ দিনটি এত ভয়ংকর হবে যে, শিশুকে বৃদ্ধ বানিয়ে দেবে এবং এ দিনেই (মহান আল্লাহ নিজ) পায়ের গোছা অনাবৃত করবেন।’’
জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৮১৯
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
-------------------
ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ)
তিনি বলেন, আমরা এক সফরে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ছিলাম। চলার পথে তিনি ও তাঁর সাহাবিগণ আগে পিছে হয়ে গেলেন। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূরা হাজ্জ এর প্রথম এ দুটি আয়াতের মাধ্যমে নিজের আওয়াজ বড় করলেনঃ "হে মানুষ! তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর। কিয়ামাতের প্রকম্পন এক ভয়াবহ ব্যাপার ... বস্তুত আল্লাহ্ তা'আলার শাস্তি বড় কঠিন"-(সূরা হাজ্জ ১-২)। তাঁর সাহাবীগন এই ডাক শুনতে পেয়ে নিজেদের জন্তু্যানের গতি দ্রুত করলেন এবং জেনে নিলেন যে, তিনি কিছু বলবেন। (সাহাবীগন তাঁর নিকট পৌঁছালে) তিনি বললেনঃ তোমরা কি জানো সেই দিন কোনটি? তারা বললেন, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলই বেশী ভালো জানেন। তিনি বললেনঃ এটা সেই দিন যেদিন আল্লাহ্ তা'আলা আদম (আঃ) কে ডেকে বলবেন- "হে আদম দোজখের ফৌজ তৈরি কর। তিনি বলবেনঃ হে আমার প্রতিপালক, দোজখের ফৌজ কারা এবং তাদের সংখ্যা কত? তিনি বলবেন, প্রতি হাজারে নয়শ নিরানব্বই জন দোজখে যাবে এবং একজন জান্নাতে যাবে"। সাহাবীগণ এই কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন। তখন কারো মুখে হাসি ছিলনা। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই অবস্থা দেখে বললেনঃ কাজ করতে থাকো এবং সুসংবাদ গ্রহণ কর। সেই সত্তার শপথ যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন! তোমরা দুটি জীবের সাক্ষাৎ পাবে। তাদের সাথে যাদের সাক্ষাৎ হবে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি হবে। এ দুটি জীব হল ইয়া'যুজ ও মা'যুজ এবং আদম সন্তান ও ইবলিশের সন্তানদের মধ্যে যারা মারা গেছে তারা। বর্ণনাকারী বলেন, এতে লোকদের চিন্তা ও বিষণ্ণতা কিছুটা দূর হয়ে গেলো। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা কাজ কর এবং সুসংবাদ গ্রহণ কর। সেই সত্তার শপথ যার হাতে মুহাম্মাদের প্রান! (অন্যান্য জাতীর তুলনায়) তোমাদের দৃষ্টান্ত হল, উটের পার্শ্বদেশের তিলক অথবা চতুষ্পদ জন্তুর বাহুর দাগের মত।
সহীহ বুখারী (৪৭৪১), মুসলিম (১/১৩৯)
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৩১৬৯
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
-------------
ইয়া’কুব ইবনু ‘আসিম ইবনু ‘উরওয়াহ্ ইবনু মাস’উদ আস্ সাকাফী (রাযি:)
তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাযি:)-কে আমি এ কথা বলতে শুনেছি যে, একদা জনৈক লোক তার কাছে এসে বললেন, এ কেমন হাদীস আপনি বর্ণনা করেছেন যে, এতো এতো দিনের মধ্যে কিয়ামাত সংঘটিত হবে। এ কথা শুনে তিনি বললেন, ‘সুবহানাল্লাহ’ অথবা ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ অথবা অবিকল কোন শব্দ। তারপর তিনি বললেন, আমি তো শুধু এ কথাই বলেছিলাম যে, অচিরেই তোমরা এমন ভয়াবহ ঘটনা প্রত্যক্ষ করবে যা ঘর-বাড়ী জ্বালিয়ে দিবে। এ ঘটনা কায়িম হবেই হবে। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বললেনঃআমার উম্মাতের মধ্যেই দাজ্জালের আবির্ভাব হবে এবং সে চল্লিশ পর্যন্ত অবস্থান করবে। আমি জানি না চল্লিশ দিন, না চল্লিশ মাস, না চল্লিশ বছর। এ সময় আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন মারইয়াম তনয় ‘ঈসা(‘আ:)-কে প্রেরণ করবেন। তাঁর আকৃতি ‘উরওয়াহ্ ইবনু মাস’উদ-এর অবিকল হবে। তিনি দাজ্জালকে সন্ধান করে তাকে ধ্বংস করে দিবেন। তারপর সাতটি বছর লোকেরা এমনভাবে অতিবাহিত করবে যে, দু’ব্যক্তির মধ্যে কোন শত্রুতা থাকবে না। তখন আল্লাহ তা’য়ালা সিরিয়ার দিক হতে শীতল বাতাস প্রবাহিত করবেন। ফলে যার হৃদয়ে কল্যাণ বা ঈমান থাকবে, এ ধরণের কোন লোকই এ দুনিয়াতে আর বেঁচে থাকবে না। বরং এ ধরণের প্রত্যেকের জান আল্লাহ তা’য়ালা কবয করে নিবেন। এমনকি তোমাদের কোন লোক যদি পর্বতের গভীরে গিয়ে আত্মগোপন করে তবে সেখানেও বাতাস তার কাছে পৌঁছে তার জান কবয করে নিবে। আবদুল্লাহ (রাযি:) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, তখন খারাপ লোকগুলো পৃথিবীতে অবশিষ্ট থাকবে। দ্রুতগামী পাখী এবং জ্ঞানশূন্য হিংস্রপ্রাণীর ন্যায় তাদের স্বভাব হবে। তারা কল্যাণকে অকল্যাণ বলে জানবে না এবং অকল্যাণকে অকল্যাণ বলে মনে করবে না। এ সময় শাইতান এক আকৃতিতে তাদের কাছে এসে বলবে, তোমরা কি আহবানে সাড়া দিবে না? তারা বলবে, আপনি আমাদেরকে কোন বিষয়ের আদেশ করেছেন? তখন সে তাদেরকে মূর্তি পূজার নির্দেশ দিবে। এমতাবস্থায়ও তাদের জীবনোপকরণে প্রশস্ততা থাকবে এবং তারা স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন-যাপন করবে। তখনই শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে। যে এ আওয়াজ শুনবে সে তার ঘাড় একদিকে অবনমিত করবে এবং অন্যদিকে উত্তোলন করবে। এ আওয়াজ সর্বপ্রথম ঐ লোকই শুনতে পাবে, যে তার উটের জন্য হাওয সংস্করণের কাজে নিযুক্ত থাকবে। আওয়াজ শুনামাত্রই সে অজ্ঞান হয়ে লুটে পড়বে। সাথে সাথে অন্যান্য লোকেরাও অজ্ঞান হয়ে যাবে। অত:পর মহান আল্লাহ শুক্র ফোঁটার অথবা ছায়ার ন্যায় বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। বর্ণনাকারী নু’মান (রহ) সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এতে মানুষের শরীর পরিবর্ধিত হবে। আবার শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে। অকস্মাৎ তারা দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে। অত:পর আহবান করা হবে যে, হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট আসো। অত:পর (ফেরেশতাদের বলা হবে) তাদেরকে থামাও, কারণ তাদেরকে প্রশ্ন করা হবে। তারপর আবারো বলা হবে, জাহান্নামী দল বের করো। জিজ্ঞেস করা হবে, কত জন? উত্তরে বলা হবে, প্রত্যেক হাজার থেকে নয়শ’ নিরানব্বই জন। অত:পর তিনি বললেন, এ-ই তো ঐদিন, যেদিন কিশোরকে পরিনত করবে বৃদ্ধে এবং এ-ই চরম সঙ্কটাপন্ন অবস্থার দিন। (ই.ফা. ৭১১৪, ই.সে. ৭১৬৮)
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৭২৭১
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
-------------------
আবূ সা’ঈদ (রাঃ)
রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মহামহিম আল্লাহ (কিয়ামাত দিবসে) আহ্বান করবেন, হে আদাম! তিনি উত্তরে বলবেন, আমি আপনার সামনে উপস্থিত, আপনার কাছে শুভ কামনা করি এবং সকল কল্যাণ আপনারই হাতে। মহান আল্লাহ বলবেন : জাহান্নামী দলকে বের কর। আদাম (‘আঃ) জিজ্ঞেস করবেন : জাহান্নামী দল কতজনে? মহান আল্লাহ বলবেন : প্রতি হাজার থেকে নয়শ’ নিরানব্বই। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এটাই সে মুহূর্ত যখন বালক হয়ে যাবে বৃদ্ধ, সকল গর্ভবতী তাদের গর্ভপাত করে ফেলবে আর মানুষকে দেখবে মাতাল সদৃশ যদিও তারা নেশাগ্রস্ত নয়, বস্তুতঃ আল্লাহর ‘আযাব বড়ই কঠিন। রাবী বলেন, কথাগুলো সহাবাগণের কঠিন মনে হলো। তাঁরা বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমাদের মধ্যে কে সে ব্যক্তি? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আনন্দিত হও। ইয়া’জূয ও মা’জূযের সংখ্যা এক হাজার হলে তোমাদের সংখ্যা হবে একজন। তারপর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কসম সে সত্তার যাঁর হাতে আমার প্রাণ! অবশ্যই আমি আশা রাখি যে, তোমরা জান্নাতীদের এক চতুর্থাংশ হবে। (সহাবা বলেন,) আমরা আল্লাহর প্রশংসা করলাম এবং ‘আল্ল-হু আকবার’ ধ্বনি দিলাম। তারপর আবার তিনি বললেন, শপথ সে সত্তার, যাঁর হাতে আমার জীবন! অবশ্যই আমি আশা রাখি, জান্নাতীদের মধ্যে তোমরা তাদের এক তৃতীয়াংশ হবে। সহাবা বলেন, আমরা বললাম ‘আলহাম্দু লিল্লাহ’ এবং ‘আল্ল-হু আকবার’ ধ্বনি দিলাম। তারপর আবার রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কসম সে সত্তার, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! আমি আশা রাখি যে, তোমরা জান্নাতীদের অর্ধেক হবে এবং তোমরা অন্যান্য উম্মাতের মধ্যে কালো ষাঁড়ের গায়ে একটি সাদা পশমের ন্যায় অথবা গাধার পায়ের চিহ্নের সদৃশ। (ই.ফা. ৪২৫; ই.সে. ৪৩৯)
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৪২০
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
-------------------
আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ)
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ ডেকে বলবেন, হে আদাম! তিনি বলবেন, আমি তোমার খিদমতে হাযির। যাবতীয় কল্যাণ তোমারই হাতে। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ্ বলবেন, জাহান্নামীদের (নিক্ষেপ করার জন্য) বের কর। আদাম (আঃ) বলবেন, কী পরিমাণ জাহান্নামী বের করব? আল্লাহ্ বলবেন, প্রতি হাজারে নয়শ’ নিরানব্বই জন। আর এটা ঘটবে ঐ সময়, যখন (ক্বিয়ামাতের ভয়াবহতায়) শিশু বুড়িয়ে যাবে। (আয়াত) : আর প্রত্যেক গর্ভবতী গর্ভপাত করে ফেলবে, আর মানুষকে দেখবে মাতাল, যদিও তারা প্রকৃতপক্ষে মাতাল নয়, কিন্তু আল্লাহ্র শাস্তি বড়ই কঠিন (যার কারণে তাদের ঐ অবস্থা ঘটবে)- (সূরাহ হাজ্জ ২২/২)। এ ব্যাপারটি সহাবাগণের নিকট বড় কঠিন মনে হল। তখন তাঁরা বললেনঃ হে আল্লাহ্র রসূল! আমাদের মধ্য থেকে (মুক্তি প্রাপ্ত) সেই লোকটি কে হবেন? তিনি বললেনঃ তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর যে ইয়াযুয ও মাযূয থেকে এক হাজার আর তোমাদের হবে একজন। এরপর তিনি বললেনঃ শপথ ঐ সত্তার, যাঁর করতলে আমার প্রাণ! আমি আশা রাখি যে তোমরা জান্নাতীদের এক-তৃতীয়াংশ হবে। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আমরা ‘আল হামদুলিল্লাহ্' ও ‘আল্লাহু আকবর’ বলে উঠলাম। তিনি আবার বললেনঃ শপথ ঐ সত্তার, যাঁর হাতের মুঠোয় আমার প্রাণ! আমি অবশ্যই আশা রাখি যে তোমরা জান্নাতীদের অর্ধেক হবে। অন্য সব উম্মাতের তুলনায় তোমাদের দৃষ্টান্ত হচ্ছে কাল ষাঁড়ের চামড়ায় একটি সাদা চুলের মত। অথবা সাদা দাগ, যা গাধার সামনের পায়ে হয়ে থাকে। [৩৩৪৮; মুসলিম ১/৯২, হাঃ ২২২, আহমাদ ১১২৮৪] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬০৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৮৬)
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৬৫৩০
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
-------------------
আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ)
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলা বলবেন, হে আদম! তিনি বলবেন, হে রব! আমার সৌভাগ্য, আমি হাজির। তারপর তাকে উচ্চৈঃস্বরে ডেকে বলা হবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাকে নির্দেশ দিতেছেন যে, তোমার বংশধর থেকে একদলকে বের করে জাহান্নামের দিকে নিয়ে আস। আদাম (‘আ.) বলবে, হে রব! জাহান্নামী দলের পরিমাণ কী? বলবে, প্রতি হাজার থেকে আমার ধারণা যে, বললেন, নয়শত নিরানব্বই, এ সময় গর্ভবতী মহিলা গর্ভপাত করবে, শিশুরা বৃদ্ধ হয়ে যাবে এবং তুমি মানুষকে দেখবে মাতাল; অথচ তারা নেশাগ্রস্ত নয়। বস্তুত আল্লাহ্র শাস্তি কঠিন। [পরে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ আয়াতটি পাঠ করলেন] ঃ এ কথা লোকদের কাছে ভয়ানক মনে হল, এমনকি তাদের চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, প্রতি হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন তো ইয়াজুজ-মাজূজ থেকে নেয়া হবে এবং তোমাদের মধ্য থেকে একজন। আবার মানুষদের মধ্যে তোমাদের তুলনা হবে যেমন সাদা গরুর পার্শ্ব মধ্যে যেন একটি কালো পশম অথবা কালো গরুর পার্শ্বে যেন একটি সাদা পশম। আমি অবশ্য আশা রাখি যে, জান্নাতবাসীদের মধ্যে তোমরাই হবে এক-চতুর্থাংশ। (রাবী বলেন) আমরা সবাই খুশীতে বলে উঠলাম, ‘আল্লাহু আকবার’। এরপর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা হবে জান্নাতবাসীদের এক তৃতীয়াংশ। আমরা বলে উঠলাম, ‘আল্লাহু আকবার’। তারপর তিনি বললেন, তোমরা হবে জান্নাতবাসীদের অর্ধেক। আমরা বলে উঠলাম, ‘আল্লাহু আকবার’।
আ’মাশ থেকে উসামার বর্ণনায় এসেছে تَرَى النَّاسَ سُكَارَى وَمَا هُمْ بِسُكَارَى এবং তিনি বলেন, প্রতি হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন।
জারীর, ঈসা, ইবনু ইউসুফ ও আবূ মু‘আবিয়াহ্র বর্ণনায় سُكَرَى এবং وَمَا هُمْ بِسُكَارَى রয়েছে। [৩৩৪৮] (আ.প্র. ৪৩৮০, ই.ফা. ৪৩৮২)
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৪৭৪১
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
----------------------------------
সংকলনে-মোহাম্মাদ আবু হানিফ (দুবাই)
মুসলিম টিভি-ইসলামিক মিডিয়া সেন্টার
No comments:
Post a Comment