প্রতিদিন সুরা মুলক তেলাওয়াত করার ফযীলত
প্রতিদিন সুরা মুলক তেলাওয়াত করা গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নত। অনেকে মনে করেন, সুরা মুলক শুধুমাত্র রাতের বেলাতেই পড়তে হবে, এটা ঠিক নয়। সুরা মুলক কেউ রাতের বেলা পড়লে সেটা উত্তম, তবে সুবিধামতো সময়ে দিনে বা রাতে, যেকোনো সময়েই তা পড়া যাবে। এই সুরার ফযীলত পাওয়ার জন্য হাদীসে যা বোঝানো হয়েছে হয়েছে তা হচ্ছে, এই সুরার দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা, সম্ভব হলে সুরাটি মুখস্থ করা, এর অর্থ বোঝা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সুরাটি নিয়মতি পড়া। সুরাটি মুখস্থ করে সালাতে পড়তে পারলে আরো ভালো। তবে মুখস্থ না থাকলে সালাতের বাইরে দেখে দেখে পড়লেও এই সুরার পূর্ণ ফযীলত পাওয়া যাবে।
.
নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিদিন সুরা মুলক পড়তেন
জাবির রাদিয়াল্লাহ আ’নহু থেকে বর্ণিত। “নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সুরাহ ‘আলিফ লাম মীম তানজিলুল কিতাব’ (সুরাহ আস-সাজদা) ও ‘তাবারাকাল্লাযী বিয়াদিহিল মুলকু’ (সুরা আল-মুলক) না পড়ে ঘুমাতেন না।” তিরমিযীঃ ২৮৯২, আহমাদঃ ১৪৬৫৯, সুনানে দারেমি, হাদীসটি সহীহ, ইমাম বুখারীর ‘আদাবুল মুফরাদ’ নাসায়ী, সিলসিলাহ সহীহাহঃ ৫৮৫।
.
সুরা মুলক নিয়মিত পাঠ করলে কবরের আজাব থেকে রক্ষা করবে
আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’উদ রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সুরা মুলক (তিলাওয়াতকারীকে) কবরের আজাব থেকে প্রতিরোধকারী।” হাকিমঃ ৩৮৩৯, তাবাকাতে আসবাহানিয়্যিনঃ ২৬৪। ইমাম হাকিম ও ইমাম যাহাবী হাদীসটির সনদকে সহীহ বলেছেন, শায়খ আলবানী হাসান সহীহ বলেছেন, সিলসিলাতুল সহীহাহঃ ১১৪০।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউ’দ রাদিয়াল্লাহ আনহু বলেন, “যে ব্যক্তি প্রত্যেক রাতে তাবারাকাল্লাযী বিয়াদিহিল মুলকু (সুরা মুলক) পাঠ করবে এর মাধ্যমে মহীয়ান আল্লাহ তাকে কবরের আজাব থেকে রক্ষা করবেন। তিনি আরো বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের যামানায় এই সুরাটিকে আমরা কবরের আজাব থেকে রক্ষাকারী আল-মানিআ’হ বা সুরক্ষাকারী বলতাম। সুরা মুলক মহান আল্লাহর কিতাবের এমন একটি সুরা, যে ব্যক্তি প্রতি রাতেই এই সুরাটি পাঠ করে সে অধিক করলো এবং অতি উত্তম কাজ করলো।” আন-নাসায়ীঃ ৬/১৭৯, শায়খ আলবানীর মতে হাদীসটি হাসান সহীহ, সহীহ আত-তারগীব ওয়াল তারহীব ১৪৭৫, ইমাম হাকিম ও ইমাম যাহাবী হাদীসটির সনদকে সহীহ বলেছেন।
.
সুরা মুলক পাঠ করলে কিয়ামতের দিন সুপারিশ করে জান্নাতে নিয়ে যাবে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কুরআনে ত্রিশ আয়াত বিশিষ্ট এমন একটি সুরা আছে, যা তার পাঠকারীর জন্য সুপারিশ করবে এবং শেষা পর্যন্ত তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে। আর সেটা হলো তাবা-রাকাল্লাযী বিয়াদিহিল মুলক (সুরা মুলক)।” তিরমিযীঃ ২৮৯১, আবু দাউদঃ ১৪০০, ইবনে মাজাহঃ ৩৭৮৬, মুসনাদে আহমাদ। ইমাম তিরমিযী বলেছেন হাদীসটি সহীহ, ইবনে তাইমিয়্যা মাজমুঃ ২২/২২৭, শায়খ আলবানী, সহীহ তিরমিযী ৩/৬, সহীহ ইবনে মাজাহ ৩০৫৩।
.
সুরা মুলক তেলাওয়াত করা নিয়ে প্রাসংগিক কিছু কথা
সউদী আরবের স্থায়ী ফতোয়া বোর্ডের সম্মানিত আলেমদের ফতোয়া হচ্ছে, “(সুরা মুলক নিয়ে সবগুলো) হাদীসের আলোকে বলা যায় যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সুরা মুলক বিশ্বাস করবে এবং নিয়মিত তেলাওয়াত করবে, এই সুরা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে এবং যে সুরাটিতে যে হুকুম-আহকাম দেওয়া আছে সেইগুলো মেনে চলবে, কেয়ামতের দিন তার জন্য এই সুরাটি শাফায়াত বা সুপারিশ করবে।” ফতাওয়া আল-লাজনাহ আদ-দায়ি’মাহঃ ৪/৩৩৩, ৩৩৫।
সুতরাং, এই সুরাটি নিয়মিত তেলাওয়াত করার পাশাপাশি, সুরাটির তর্জমা ও তাফসীর জানতে হবে, আয়াতগুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে হবে। আল্লাহ তাআ’লা আমাদের সকলকে সেই তোওফিক দান করুন, আমিন।
No comments:
Post a Comment