Thursday, August 16, 2018

কুরবানীর পশু!



No automatic alt text available.


কুরবানীর পশু!
================
❏ আল্লাহর উদ্দেশ্যে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি:
 কুরবানীর পশু উৎসর্গ করা হবে কেবল এক আল্লাহর উদ্দেশ্যে, অন্য করো জন্য নয়, কেননা কুরবানী হচ্ছে ইবাদত। তিনি বলেন:
-‘বলুন! আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতি পালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে, তাঁর কোন শরীক নেই, আর আমি এর জন্যই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম।[সূরা আল-আনআম : ১৬২-১৬৩]
.
 আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে কুরবানীর পশু উৎসর্গ বা যবেহ করা যাবে না, বরং এ প্রকার কাজ শির্ক। এ ব্যাপারে কঠোর শাস্তির বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
-‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে পশু যবেহ করে আল্লাহ তার উপর লা‘নত করেন।’ [সহীহ মুসলিম] 
.
❏ পশুর ধরন:
এমন পশু দ্বারা কুরবানী দিতে হবে যা শরিয়ত নির্ধারণ করে দিয়েছে। সেগুলো হল উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা। এগুলোকে কুরআনের ভাষায় বলা হয় ‘বাহীমাতুল আনআম’। যেমন ইরশাদ হয়েছে:
-‘আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কুরবানীর নিয়ম করে দিয়েছি; তিনি তাদেরকে জীবনোপকরণ স্বরূপ যে সকল চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছেন, সেগুলোর উপর যেন তারা আল্লাহর নাম স্মরণ করে। [সূরা আল-হাজ্জ: ৩৪]
.
❏ পশুর বয়স:
শরিয়তের দৃষ্টিতে কুরবানীর পশুর বয়সের দিকটা খেয়াল রাখা জরুরী। উট পাঁচ বছরের হতে হবে। গরু বা মহিষ দু বছরের হতে হবে। ছাগল, ভেড়া, দুম্বা হতে হবে এক বছর বয়সের। হাদীসে এসেছে, জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, 
-‘তোমরা অবশ্যই মুসিন্না (নির্দিষ্ট বয়সের পশু) কুরবানী করবে। তবে তা তোমাদের জন্য দুষ্কর হলে ছয় মাসের মেষ-শাবক কুরবানী করতে পার।’ [মুসলিম- ১৯৬৩]
.
❏ পশুর গুনাগুন:
গুণগত দিক দিয়ে উত্তম হল কুরবানীর পশু হৃষ্টপুষ্ট, অধিক গোশত সম্পন্ন, নিখুঁত, দেখতে সুন্দর হওয়া। কুরবানীর পশু যাবতীয় দোষ-ত্রুটি মুক্ত হতে হবে। যেমন হাদীসে এসেছে, বারা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, 
-“রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন আর আমার হাত তার হাতের চেয়েও ছোট; তারপর বললেন, চার ধরনের পশু, যা দিয়ে কুরবানী জায়েয হবে না। (অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে পরিপূর্ণ হবে না) অন্ধ; যার অন্ধত্ব স্পষ্ট, রোগাক্রান্ত; যার রোগ স্পষ্ট, পঙ্গু; যার পঙ্গুত্ব স্পষ্ট এবং আহত; যার কোনো অংগ ভেংগে গেছে। নাসায়ির বর্ণনায় ‘আহত’ শব্দের স্থলে ‘পাগল’ উল্লেখ আছে।” [তিরমিযি-১৫৪৬, নাসায়ি- ৪৩৭১, হাদীসটি সহীহ]
.
❏ ভাগ:
উট ও গরু-মহিষের সাত ভাগে কুরবানী দেয়া যায়। যেমন হাদীসে এসেছে, জাবের ইবন আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, 
-‘উট ও গরু দ্বারা সাত জনের পক্ষ থেকে কুরবানী করা বৈধ।’ [ইব্ন মাজাহ- ৩১৩২]
১০ ভাগেও উট কুরবানী করা যায়। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন,
-‘আমরা রাসূল ﷺ এর সাথে এক সফরে ছিলাম। এমতাবস্থায় কুরবানীর ঈদ উপস্থিত হলো। তখন আমরা সাতজনে একটি গরু ও দশজনে একটি উটে শরীক হলোম। [তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১৪৬৯, সনদ সহীহ]
.
❏ মৃত ব্যক্তির পক্ষ হতে কুরবানী করাঃ
প্রকৃতপক্ষে কুরবানীর প্রচলন জীবিত ব্যক্তিদের জন্য। যেমন আমরা দেখি রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তাঁর সাহাবাগণ নিজেদের পক্ষে কুরবানী করেছেন। আমাদের দেশে যেভাবে শুধুমাত্র মৃত ব্যক্তির নামে একটি কোরবানী বা একটি ভাগে কোরবানী দেওয়ার হয়, তার পক্ষে রসুল (ﷺ) বা তাঁর সাহাবাগণ থেকে কোন দলিল পাওয়া যায় না। সুতরাং এভাবে কোরবানী না দেওয়াই উত্তম। তবে কেউ চাইলে এভাবে মৃতদের কুরবানীর সাওয়াবে শরীক করতে পারে -‘আমি নিজের ও নিজের পরিবার এবং জীবিত ও মৃত আত্মীয়-স্বজনদের পক্ষে থেকে কোরবানী করছি’ –এভাবে কুরবানী করার মাধ্যমে।
.
বিদ্যানদের কেউ কেউ মৃত ব্যক্তিদের পক্ষ হতে কুরবানী করার পক্ষে মত দিয়েছেন। যদিও তারা বলেছেন এটা হবে মৃতদের নামে শুধুমাত্র সাদাকার উদ্দেশ্যে। এবং এই কোরবানীর গোস্ত পুরাটাই গরীব মিসকিনদের মাঝে বিলিয়ে দিতে হবে। নিজেরা এক টুকরাও খাওয়া যায়েজ হবে না।

No comments:

Post a Comment