Friday, November 17, 2017

প্রচলিত মিলাদে কেয়াম প্রসংঙ্গে বিদআতীদের অজ্ঞতার জবাবঃ



No automatic alt text available.


প্রচলিত মিলাদে কেয়াম প্রসংঙ্গে বিদআতীদের অজ্ঞতার জবাবঃ

~
মীলাদে কেয়াম করা প্রসংঙ্গ
কেয়াম কাকে বলে
কেয়াম শব্দের আভিধানিক অর্থ দাঁড়ানো। আর মুআশারা তথা সমাজ সামাজিকতার পরিভাষায় কেয়াম বলতে বোঝায় কারও আগমনে দাঁড়ানো। আর মীলাদ প্রসঙ্গে উল্লেখিত কেয়াম: দ্বারা বোঝানো হয় বিশেষ ধরনের কাসীদা পাঠ করার পর রাসূল সাঃ মজলিসে হাজির হয়েছেন ধারণায় ইয়া নবী…” বলার সময় দাঁড়িয়ে যাওয়া এবং দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সালাম দেয়া।
সমাজ-সামাজিকতায় কেয়ামের হুকুম
কোন বুযুর্গ তথা সম্মানী ব্যক্তি যখন স্বশরীরে আগমন করেন,তখন কোন কোন মুহূর্তে কোন ধরণের বাড়াবাড়ি ছাড়াছাড়ি ছাড়া কেয়াম করা (আগন্তুক ব্যক্তির সম্মানে দাঁড়িয়ে যাওয়া)বৈধ। এ ব্যাপারে ইমাম নববী (রহঃ)
قوموا الى سيدكم
(অর্থাৎ, তোমরা তোমাদের নেতার কাছে গিয়ে দাঁড়াও) হাদীস দ্বারা প্রমাণ পেশ করেছেন।
অন্যান্য উলামায়ে কেরাম এর ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন এ ভাবে যে, হযরত সাআদ ইবনে মুআয (রাঃ) আঘাত প্রাপ্ত ছিলেন। নবী কারীম সা. তাঁকে গাধার পিঠ থেকে নামানোর জন্য মজলিস থেকে উঠেছিলেন। এটা কোন সম্মান প্রদর্শনের নিমিত্তে দাঁড়ানো নয়। এ ব্যপারে মুসনাদে আহমদে বিবরণ নিম্ন রূপঃ
قوموا الى سيدكم فانزاره من الحمار
অর্থাৎ, তোমরা তোমাদের নেতার কাছে গিয়ে দাঁড়াও তাঁকে গাধার পিঠ থেকে নামাও। এজন্যই
الى سيدكم
তোমাদের নেতার কাছে কথাটা বলেছে-
لسيدكم
নেতার জন্য কথাটা বলেননি। (মুসনাদে আহমদ)
যাহোক উপরোক্ত হাদীস অকাট্য অর্থ বোধক না হওয়ায় এ ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরামের আমল কি ছিল এবং নবী কারীম সাঃ কোন আমলটিকে পছন্দ করতেন, তা দেখা দরকার এবং সেটাই হবে আমাদের আমল। আর এ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে জানা যায় হযরত আনাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত নিমোক্ত হাদীস দ্বারা-
عن انس قال– لم يكن شخص احب اليهم من رسول لله صلى الله عليه وسلم وكانوا اذا رآوه لم يقوموا لما يعلمون من كراهيته لذلك– رواه الترمذى فى اباب الاستيذان عن رسول الله صلى الله عليه وسلم– باب ماجاء فى كراهية قيام الرجل للرجل وقال هذا حديث حسن صحيح غريب ورواه احمد حديث رقم ١٢٢٨٥ واسناده صحيح كذا فى هامشه
অর্থাৎ, হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, সাহাবায়ে কেরামের কাছে নবী কারীম সাঃ এর জাত মোবারকের চেয়ে বড় সম্মানের ও প্রিয় এ দুনিয়াতে আর কোন কিছুই ছিল না, এতদসত্বেও তাঁরা নবী কারীম সাঃ কে দেখলে দাঁড়াতেন না। যেহেতু তারা জানতেন নবী কারীম সাঃ এ কাজটিকে (তাঁর সম্মানে দাঁড়িয়ে যাওয়া ক্বেয়াম করাকে) অপছন্দ করেন । (তিরমিযী ও মুসনাদে আহমদ)
কিয়ামে আবু উমাম রাঃ এর হাদীস
ﻋﻦ ﺍﺑﻲ ﺍﻣﺎﻣﺔ ﺭﺽ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻌﻢ: ﻻﺗﻘﻮﻣﻮﺍ ﻛﻤﺎ ﻳﻘﻮﻡ
ﺍﻻﻋﺎﺟﻢ ﻳﻌﻈﻢ ﺑﻌﻀﻬﺎ ﺑﻌﻀﺎ
(মেশকাত৪০৩)
অর্থ তোমরা একে অপরকে সম্মানসূচক কিয়ামকরবে না। এখানে সম্মানসূচক কিয়াম স্পষ্ট নিষেধ করা হয়েছে।
সম্মান সূচক কিয়ামকে নবীপাক সাঃ নিষিদ্ধ করেছেন
ﻻﺗﻘﻮﻣﻮﺍলাতাকূমূ শব্দের উল্লেখ দ্বারা। এমনকি তিনি এটিকে অপছন্দ করতেন বলে প্রমাণ রয়েছে। দেখুন মেশকাতের ৪০৩ নং পৃষ্ঠার প্রথম হাদীসটিতে।
সেখানে উল্লেখ আছে
ﻛﺎﻧﻮﺍ ﺍﺫﺍ ﺭﺃﻭﻩ ﻟﻢ ﻳﻘﻮﻣﻮﺍ ﻟﻤﺎ ﻳﻌﻠﻤﻮﻥ ﻣﻦ ﻛﺮﺍﻫﻴﺘﻪ ﻟﺬﺍﻟﻚ.
“…লিমা ইয়ালামূনা মিন কিরাহিয়াতিহী লিযালিকা
সাহাবী আনাস বললেন, আমরা তাঁকে দেখলে দাড়াতাম না। কারণ তিনি এটি অপছন্দনীয় মনে করতেন।
মীলাদে কেয়াম-এর হুকুম
পূর্বে উল্লেখিত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, নবী কারীম সাঃ নিজের জন্য কেয়াম করাকে অপছন্দ করতেন। তাই সাহাবায়ে কেরাম নবী কারীম সাঃ এর প্রতি চরম ভালবাসা ও মহব্বত পোষণ করা সত্বেও নবী কারীম সাঃ যখন স্বশরীরে উপস্থিত হতেন তখন তাঁকে দেখতে পেয়েও তাঁরা দাঁড়াতেন না। তাই মীলাদ-মাহফিলে রাসূল সাঃ এর নাম আসলে যদি মেনে নেয়া হয় যে, তিনি হাজির হয়ে যান তবুও কেয়াম করা যাবে না। কেননা, নবী কারীম সাঃ এর জীবদ্দশায় ও তাঁর জন্য কেয়াম করা হত না এবং তিনি তাঁর উদ্দেশ্যে কেয়াম করা তথা দাঁড়িয়ে যাওয়াকে পছন্দ করতেন না। তদুপরি মীলাদ-মাহফিলে রাসূল সাঃ এর নাম আসলে সেখানে রাসূল সাঃ এর আগমন ঘটে এটা শরীআতের কোন দলীল দ্বারাও প্রমাণিত নয়।
বরং রাসূল সাঃ এর উদ্দেশ্যে দুরূদ পাঠ করা হলে তিনি সেখানে হাজির হন না বরং নির্ধারিত ফেরেশতারা রাসূল সাঃ এর কাছে সে দুরূদ পৌঁছে দেন-এ কথা স্পষ্টঃ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে । হাদীসে এরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من صلى على عند قبرى سمعته ومن صلى على نائيا ابلغته رواه البيهقى فى شعب الايمان فى باب فى تعظيم النبى صلى الله عليه وسلم واجلاله وتوقيره حديث رقم ١٥٨٣ وللحديث شواهد ساقها السخارى فى القول البديع
অর্থাৎ, হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন যে, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে আমার কবরের নিকট এসে আমার উপর দুরূদ পাঠ করবে আমি তা সরাসরি শুনব, আর যে দূরে থেকে আমার উপর দুরূদ পাঠ করবে তা আমার নিকট পৌঁছানো হবে। (শুআবুল ঈমান)
অন্য এক হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,
عن عبدالله بن مسعود رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان لله ملئكته سياحين فى الارض يبلغونى من امتى السلام رواه الدرمى فى كتاب الرقاق باب فى فضل الصلاة على النبى صلى الله عليه وسلم . حديث رقم .٢٧٧٤
واسناده صحيح كذا فى هامشه. ورواه النسائى فى كتاب الافتتاح باب التسليم على النبى صلى الله عليه وسلم . ورواه ابن حبان صحيحه .حديث رقم ٩۰٢. واللفظ للدارمى
অর্থাৎ, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন যে, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, আল্লাহর কতক ফেরেশতা রয়েছেন, যারা পৃথিবীতে ভ্রমণ করেন এবং আমার উম্মতের সালাম আমার নিকট পৌঁছান। (নাসায়ী, দারিমী ও ইবনে হিব্বান)

No comments:

Post a Comment