Tuesday, November 4, 2014

Quran 39:65




প্রশ্নঃ (৭৬) রিয়া বা মানুষকে দেখানো ও শুনানোর নিয়তে ইবাদত করার বিধান কি?
উত্তরঃ যে ইবাদত ‘রিয়া’ মিশ্রিত হয় তা তিনি প্রকারঃ
প্রথম প্রকারঃ ইবাদত মূলতঃ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যই করা হয়। যেমন দৃষ্টি আকর্ষণ এবং মানুষের প্রশংসা পাওয়ার উদ্দেশ্য ‘সালাত’ আদায় করা। ইহা শিরক এবং এ প্রকার ইবাদত বাতিল।
দ্বিতীয় প্রকারঃ ইবাদত করার মধ্যবর্তী অবস্থায় ‘রিয়ায়’ পতিত হওয়া। অর্থাৎ যেমন ইবাদত শুরুর সময় একনিষ্ঠভাবে অরম্ভ করে কিন্তু ইবাদতের মধ্যবর্তী সময়ে ‘রিয়া’ সৃষ্টি হয়। এ ধরনের ইবাদত দু’অবস্থা হতে খালি নয়ঃ
প্রথম অবস্থাঃ যদি উক্ত ইবাদতের প্রথমাংশ শেষাংশের সাথে সম্পৃক্ত না থাকে তাহলে প্রথমাংশ শুদ্ধ হবে এবং দ্বিতীয় অংশ বাতিল হবে। এর উদাহরন হল, যেমন কোন ব্যাক্তি একশত টাকা দান করার ইচ্ছা পোষণ করল। এর মধ্যে ৫০টাকা দান করল খালেস নিয়তে। বাকী ৫০টাকা দান করল লোক দেখানোর নিয়তে। পরের ৫০টাকা দান করার সময় রিয়া মিশ্রিত হওয়ার কারণে তা বাতিল বলে গণ্য হবে।
দ্বিতীয় অবস্থাঃ যদি ইবাদতটির শেষাংশ প্রথমাংশের উপর ভিত্তিশীল হয় তবে এর দুটি অবস্থা।
(ক) ইবাদতকারী ব্যাক্তি ‘রিয়াকে’ প্রতিহত করবে এবং ‘রিয়ার’ উপর স্থির হবে না। এমতাবস্থায় ‘রিয়া’ ইবাদতে কোন প্রকার প্রভাব ফেলবে না, অথবা কোন ক্ষতিও করবে না। যেমন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ আমার উম্মাতের মনের মধ্যে যেসমস- কথা উদিত হয় সেগুলোকে ক্ষমা করে দিবেন। যদি তা কাজে পরিণত না করে বা মুখে তা উচ্চারণ না করে।
(খ) অপর অবস্থাটি হলঃ ইবাদতকারী ‘রিয়ার’ প্রতি তুষ্ট থাকবে এবং ‘রিয়া’কে অন্তরে প্রতিহত করবে না। এমতাবস্থায় তাঁর পূর্ণ ইবাদতটি বাতিল হয়ে যাবে। কেননা ইবাদতের শেষাংশ প্রথমাংশের উপর ভিত্তিশীল। যেমন কোন ব্যাক্তি ‘সালাতে’ দাঁড়াল ইখলাসের সাথে, অতঃপর দ্বিতীয় রাকাতে তাঁর অন্তরে ‘রিয়া’র উদয় হল এবং উক্ত ব্যাক্তি ‘রিয়া’র প্রতি তুষ্ট থাকল (অন্তরে ‘রিয়া’কে প্রতিহত করল না) এমতাবস্থায় পূর্ণ ‘সালাত’ বাতিল হয়ে যাবে। কেননা ‘সালাতের’ শেষাংশের সাথে প্রথমাংশ সম্পৃক্ত রয়েছে।
তৃতীয় প্রকারঃ ইবাদত সমাপ্ত করার পর যদি ইবাদতকারীর অন্তরে ‘রিয়া’র উদ্ভব ঘটে, তবে তা ইবাদতে কোন প্রকার প্রভাব ফেলবে না বা ইবাদতটি বাতিলও হবেনা। কারণ বিশুদ্ধভাবে তা সম্পাদিত হয়েছে। সম্পাদিত হওয়ার পর রিয়ার কারণে তা নষ্ট হবেনা।
ইবাদত দেখে কেউ প্রশংসা করলে এবং তাতে ইবাদতকারী খুশী হলে তা রিয়ার অন্তর্গত হবেনা। কারণ এটি ইবাদত সমাপ্ত হওয়ার পর প্রকাশিত হয়েছে। আনুগত্যের কাজ করার পর মানুষ খুশী হবে, এটাই স্বাভাবিক। বরং এটি তার ঈমানের প্রমাণ বহন করে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
مَنْ سَرَّتْهُ حَسَنَتُهُ وَسَاءَتْهُ سَيِّئَتُهُ فَذَلِكُمُ الْمُؤْمِنُ
“নেকীর কাজ করে যে খুশী হয় এবং পাপের কাজকে যে খারাপ মনে করে, সেই প্রকৃত মুমিন।” রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেনঃ
تِلْكَ عَاجِلُ بُشْرَى الْمؤْمِنِ ইহা মু’মিনের আগাম শুভ সংবাদ।
ফুটনোটঃ
গ্রন্থঃ ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম
বিভাগঃ ঈমান
লেখক/সংকলকঃ শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ)

No comments:

Post a Comment