Saturday, April 11, 2015

শেইখ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহাব (রহঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী




আসসালামু আলাইকুম
শেইখ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহাব (রহঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী
শেইখ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহাব (রহঃ) নাজদের উয়াইনাহ শহরে ১১১৫ হিজরি তে জন্ম গ্রহণ করেন। তার ১০ বছর হওয়ার পুরবেই কুর'আন হিফ্‌য করেন ।আপন পিতার নিকট ফিক্‌হ অধ্যয়ন করেন এবং দেশের বিভিন্ন উলামাদের নিকট তাফসির এবং হাদিস চর্চায় লিপ্ত হন। বিশেষ করে মদীনার নববীয়ার উলামাদের নিকট শরীয়তের বিভিন্ন দিক নিয়ে পড়াশোনা করেন। আল্লাহ্‌র কিতাব ও রাসূলের সুন্নাহ হতে তাওহীদ বুঝেন ।অতঃপর তার নিজের দেশ নাজদ এবং তার আশে পাশের অঞ্চলের শির্ক,কবর পূজা, বিদ'আত এবং নানা রকমের কুসংস্কার এবং ইসলামের পরিপন্থী কাজ দেখে শঙ্কিত হলেন।
নিজ দেশের বিয়ে প্রাপ্ত যুবতী মেয়েদের দেখলেন, পুরুষ খেজুর গাছের কাছে দুয়া করছে,"ওহে বনস্পতি,বছর না ঘুরতেই আমি চাই পতি"
হিযাজে দেখলেন, সাহাবায়ে কেরাম/আহলে বায়েত এবং রাসূল (সঃ) এর কবর গুলো কে কেন্দ্র করে ইবাদাত হচ্ছে,যা হওয়ার কথা ছিল বায়তুল্লাহ তথা আল্লাহ্‌র ঘরে। কবর কে সমনে রেখে সিজদা / তওয়াফ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল। মদীনায় তিনি শুনলেন, আল্লাহ ছাড়া রাসূল(সঃ) এর কাছে মানুষ প্রার্থনা করছে।মনের কামনা বাসনা মিটানোর ফরিয়াদ করছে। অথচ এটা ছিল নবী (সঃ) এর দাওয়াতের বিপরীত বিষয়,যে তা চাওয়া ছিল আল্লাহ্‌র কাছে।
আল্লাহ বলেন,আর নির্দেশ হয়েছে আল্লাহ ব্যতীত এমন কাউকে ডাকবে না, যে তোমার ভাল করবে না মন্দও করবে না। বস্তুতঃ তুমি যদি এমন কাজ কর, তাহলে তখন তুমিও জালেমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (সূরা ইউনুসঃ১০৬)
এবং রাসূল (সঃ) বলেছেন, যখন তুমি কিছু চাইবে তখন আল্লাহ্‌রই নিকট চাইবে এবং যখন সাহায্য চাইবে আল্লাহ্‌র নিকটই চাইবে।"(তিরমিযি )
মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহাব (রহঃ) একমাত্র আল্লাহ্‌কে ডাকতে এবং তার কাছেই চাইতে এবং তাওহীদ কে গ্রহণ করতে মানুষ কে আহবান করা শুরু করলেন।

১।বাতিল পন্থিদের বিরোধিতা: যে তাওহীদের দাওয়াতের দায়িত্ব শেইখ হাতে নিয়ে ছিলেন, সেই দাওয়াতের ১ম বিরোধিতা শুরু করলেন,সে জামানার কিছু বিদআত পন্থি আলেমরা। আর এটাই স্বাভাবিক। তাওহীদের দুশমন রা সেই যুগেও রাসুল(সঃ) এর তাওহীদের দাওয়াতের বিরোধিতা করেছিল। তারা বলেছিল ,"সে কি বহু উপাস্যের পরিবর্তে এক উপাস্যের উপাসনা সাব্যস্ত করে দিয়েছে।"(সূরা ছোয়াদঃ৫)

শেইখের শত্রু রা তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করে দিল। তাকে হত্যা করতে চেষ্টা চালাল। কিন্তু আল্লাহ তাকে হেফাজত করলেন। এবং আল্লাহ তার এক জন সহযোগী নিযুক্ত করে দিলেন । যার ফলে তিনি হেযাজ এবং অন্যান্য অঞ্চলেও তাওহীদি দাওয়াত ছড়িয়ে দিতে প্রচেষ্টা চালিয়ে গেলেন।
তার দাওয়াতের সাফল্য দেখে, তার বিরোধিতা কারিরা বলতে শুরু করল যে তিনি ৫ম মাযহাবের প্রবর্তন করেছেন। অথচ তিনি ছিলেন হাম্বলি মাযহাবের অনুসারী।
ওরা আরো বলল যে তিনি রাসূল(সঃ) কে ভালবাসেন না এবং তার উপর দুরুদ্ব পরেন না! অথচ তিনি অই সময় ১টি কিতাব লিখেন"মুখতাসারু সিরাতুল রাসূল(সঃ)"। আর এই কিতাব পরলেই বুঝা যাবে তিনি রাসূল (সঃ) কে কত টুকু ভালবাসতেন।
২।অনেকে তাকে হাদিসের বর্ণিত"নাজদ"এর ফিতনা বাযের আবির্ভাব ঘটেছে বলা শুরু করল। রাসূল(সঃ) বলেছেন, হে আল্লাহ, তুমি আমাদের শাম এবং ইয়েমেন বরকত দান কর।সকলে বলল আর আমাদের নাজদে ? তিনি বললেন, ওখান থেকে শয়তানের শিং উদিত হবে।(বুখারি,মুস লিম)
ইবন হাযার আস্কালিন প্রমুখ উল্লেখ করেন, হাদিসে উল্লেখিত নাজদ হল ইরাকের নাজদ শহর। আর ইরাকেই যত বড় বড় ফিতনা দেখা যায়। আলী(রাঃ) এবং হুসাইন(রাঃ) তাদের যুগে তাদের কেন্দ্র করে যুদ্ধ এবং তাদের শহীদ হওয়া। বরং হেযাজের নাজদে কোন ফিতনাই দেখা যায়নি যেমনটি ইরাকে দেখা দিয়েছে। আর হেযাজের নাজদে কেউ যদি শেইখের তাওহীদি দাওয়াতকে ফিতনা বলে থাকে তাহলে সহজেই অনুমেয় এই দাওয়াতকে যারা ফিতনা বলে তাদের পূর্বে কারা বলেছিল তাওহীদ এর দাওয়াত কে ফিতনা ! বরং হেযাজের নাজদে যে তাওহীদের বীজ বপন হয়েছিল তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পরেছে।আর যেটা ছিল নাবী রাসূল (আ) দের মিশন।

৩।তৎকালীন যুগে ভারত উপমহাদেশ থেকে আগত হাজ্জ্বী সাহেবরা মক্কা মদীনাতে হাজ্জ্ব পালন করতে আসে তারা তাওহীদের দাওয়াত নিয়ে যায় এবং দেশে গিয়ে তারা সেই তাওহীদের দাওয়াত দিতে থাকে।আর সেখানেও বাধ সাজে কিছু বিদ'আত পন্থি আলেমরা সমাজ এবং সেই সুযোগে ইংরেজ রা তাওহীদ বাদীদের"ওয়াহাবী"নাম দিয়ে তাদের মুসলিম সমাজ থেকে আলাদা করতে চায়। আর কিছু মুর্খ আলেমরাও ইংরেজ দের ফাঁদে পা দেয় এবং তারা ওয়াহাবী বলে তাওহীদ বাদীদের গালি দিতে থাকে।
আর মুর্খ আলেম সমাজ এটা জানলোনা যে , ওয়াহাব হল আল্লাহ্‌র একটি নাম।যার অর্থ হল মহাদাতা। আল্লাহ শেইখ কে মহাদাতা হিসেবে তাওহীদের জ্ঞান দান করেছেন যা দিয়ে সমাজ সংস্কার করেছেন। আর আজো যারা তাওহীদ নিয়ে কাজ করছেন তাদের কেই এই গালি দেয় তাদের উত্তরসূরিরা।
আল্লাহ যেন আমাদের তাওহীদের জ্ঞান দান করেন,যেমন করেছিলেন শেইখ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহাব বিন সালমান বিন আলী আত-তামীমী রাহিমাহুল্লাহ কে। আমীন।

No comments:

Post a Comment