Thursday, April 23, 2015

মানুষের জিব্বার কোন হাড় নায় কিন্তু জিব্বা এতো শক্তিশালী যে, মুহূর্তের মধ্যে নিজেকে এবং অন্যকে ধ্বংস করে ফেলে।




আসসালামুলাইকুম,
মানুষের জিব্বার কোন হাড় নায়
কিন্তু জিব্বা এতো শক্তিশালী যে,
মুহূর্তের মধ্যে নিজেকে এবং অন্যকে
ধ্বংস করে ফেলে
তাই কথা বলার সময় সাবধান!
একদা আব্দুল্লাহ (রাঃ) সাফার উপর চড়ে বললেন, ‘হে জিভ! ভালো কথা বল্; সফলতা পাবি। চুপ থাক্; লাঞ্ছিত হওয়ার পূর্বে নিরাপত্তা পাবি।’ লোকেরা বলল, ‘হে আবু আব্দুর রহমান! একথা আপনি নিজে বলছেন, নাকি কারো নিকট শুনেছেন?’ তিনি বললেন, ‘না, বরং আমি আল্লাহর রসূল (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, “আদম সন্তানের অধিকতর পাপ তার জিহ্বা থেকেই সংঘটিত হয়।”(সিলসিলাহ সহীহাহ ৫৩৪নং)
বাক্সংযমের নির্দেশ ও গুরুত্ব
আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ- الَّذِينَ هُمْ فِي صَلاتِهِمْ خَاشِعُونَ- وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ﴾
অর্থাৎ, অবশ্যই মুমিনরা সফলকাম হয়েছে; যারা নিজেদের নামাযে বিনয়নম্র, যারা অসার ক্রিয়া-কলাপ হতে বিরত থাকে------।(সূরা মু’মিনূন ১-৩ আয়াত)
﴿وَالَّذِينَ لا يَشْهَدُونَ الزُّورَ وَإِذَا مَرُّوا بِاللَّغْوِ مَرُّوا كِرَاماً﴾
“যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না এবং অসার ক্রিয়া-কথার স¤মুখীন হলে ভদ্রতার সাথে তা পরিহার করে অতিক্রম করে।”(সূরা ফুরকান ৭২আয়াত)
﴿مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ إِلاَّ لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ﴾
“মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে তা লিপিবদ্ধ করার জন্য তৎপর প্রহরী তাদের নিকটেই রয়েছে।”(সূরা ক্বাফ ১৮ আয়াত)
﴿وَلا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْؤُولاً﴾
“যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই সে বিষয়ে অনুমান দ¡ারা পরিচালিত হয়ো না। কর্ণ, চক্ষু, হƒদয় -ওদের প্রত্যেকের বিষয়ে কৈফিয়ত তলব করা হবে।” (সূরা বানী ইসরাঈল ৩৬ আয়াত)
﴿يَوْمَ تَشْهَدُ عَلَيْهِمْ أَلْسِنَتُهُمْ وَأَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُمْ بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ﴾
“যেদিন তাদের বিরুদ্ধে তাদের জিভ, হাত ও পা তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেবে---।”(সূরা নূর ২৪ আয়াত)
﴿وَيْلٌ لِكُلِّ هُمَزَةٍ لُمَزَةٍ﴾
“দুর্ভোগ (বা অয়ল দোযখ) প্রত্যেক সেই ব্যক্তির, যে পশ্চাতে ও স¤মুখে লোকের নিন্দা করে।”(সূরা হুমাযাহ ১ আয়াত)
রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে ঈমান রাখে সে যেন উত্তম কথা বলে নতুবা চুপ থাকে।”(বুখারী ও মুসলিম)
আবু মূসা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! মুসলমানদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি কে?’ তিনি বললেন, “যে ব্যক্তির জিব ও হাত থেকে অন্য মুসলমানরা নিরাপদে থাকে।”(বুখারী ও মুসলিম)
সুফিয়ান বিন আব্দুল্লাহ বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমাকে এমন এক কর্ম বলে দিন যাতে আমি দৃঢ়-স্থির থাকব।’ তিনি বললেন, “বল, ‘আমার প্রতিপালক আল্লাহ।’ অতঃপর তাতে দৃঢ়-স্থির থাক।” আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! সবচেয়ে অধিক কোন জিনিসকে আমার উপর আশঙ্কা করেন?’ তিনি ¯¦ীয় জিহ্বা ধারণ করে বললেন, “এইটাকে।”(তিরমিযী)
তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি আমার জন্য তার রসনা ও গুপ্তাঙ্গের যামিন হবে, আমি তার জন্য বেহেশতের যামিন হব।”(বুখারী, সহীহুল জামে’ ৬৪৯৩নং)
“বান্দা নির্বিচারে এমনও কথা বলে যার দরুন সে পূর্ব ও পশ্চিম বরাবর স্থান দোযখে পিছলে যায়।”(বুখারী ও মুসলিম)
“মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টির এমনও কথা বলে যার মঙ্গলের কথা সে ধারণাই করতে পারে না অথচ আল্লাহ তার দরুন কিয়ামত দিবস অবধি তার জন্য তাঁর সন্তুষ্টি লিপিবদ্ধ করেন। আবার মানুষ আল্লাহর অসন্তুষ্টির এমনও কথা বলে যার অমঙ্গলের কথা সে ধারণাই করতে পারে না অথচ আল্লাহ তার দরুন কিয়ামত দিবস পর্যন্ত তার জন্য তাঁর অসন্তুষ্টি লিপিবদ্ধ করেন।”(সহীহুল জামে’ ১৬১৫ নং)
“মানুষ এমনও কথা বলে যাতে সে কোন ক্ষতি আছে বলে মনেই করেনা অথচ তার দরুন সে ৭০ বছরের পথ জাহান্নামে অধঃপতিত হয়।”(ঐ ১৬১৪ নং)
“তুমি তোমার জিহ্বাকে সংযত কর, তোমার গৃহ যেন তোমার জন্য প্রশস্ত হয় এবং তুমি তোমার পাপের উপর রোদন কর।”(ঐ ১৩৮৮ নং)
“প্রত্যেক প্রভাতে আদম সন্তানের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জিহ্বাকে বিনয়ের সাথে বলে, আমাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর; যেহেতু আমরা তোমারই অনুবর্তী। সুতরাং তুমি সোজা হলে আমরা সোজা হই, নচেৎ তুমি টেরা হলে আমরাও টেরা হয়ে যাই।”(ঐ ৩৪৯নং)
“তোমার জিহ্বা দ্বারা ভালো কথা ছাড়া অন্য কিছু বলো না এবং ভালো ছাড়া অন্য কিছুর প্রতি তোমার হাত বাড়ায়ো না।”(সিলসিলাহ সহীহাহ ১৫৬০নং)
“তোমরা অশ্লীল (অকথ্য বা বাজে কথা) বলো না।”(সহীহুল জামে’ ২৪৭০নং)
একদা আব্দুল্লাহ (রাঃ) সাফার উপর চড়ে বললেন, ‘রে জিভ! ভালো কথা বল্; সফলতা পাবি। চুপ থাক্; লাঞ্ছিত হওয়ার পূর্বে নিরাপত্তা পাবি।’ লোকেরা বলল, ‘হে আবু আব্দুর রহমান! একথা আপনি নিজে বলছেন, নাকি কারো নিকট শুনেছেন?’ তিনি বললেন, ‘না, বরং আমি আল্লাহর রসূল (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, “আদম সন্তানের অধিকতর পাপ তার জিহ্বা থেকেই সংঘটিত হয়।”(সিলসিলাহ সহীহাহ ৫৩৪নং)
সুতরাং মিতভাষিতা মু’মিনের এক অমূল্য সদ্গুণ। জিহ্বা নিয়ন্ত্রণে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রেম লাভ হয়। জনপ্রিয় হয়ে উঠে তার ব্যবহার ও চরিত্র। পাপের সংখ্যা যায় কমে। মানুষের সাথে ব্যবহারে তার সম্পর্ক সুন্দর, সুদৃঢ় ও মধুর থাকে। ঝামেলা-ঝঞ্ঝাট, তিরস্কার ও অশান্তি থেকে তার হƒদয়-মন নিরাপদে শান্তি লাভ করে থাকে।
------
জিভের আপদ
শাইখ আব্দুল হামিদ ফাইজি আল-মাদানি

No comments:

Post a Comment