Thursday, May 21, 2015

সমাজে নিচু লোকদের নেতৃত্ব কিয়ামতের আরেকটি আলামত।




আসসালামু আলাইকুম
সমাজে নিচু লোকদের নেতৃত্ব কিয়ামতের আরেকটি আলামত। 
যতই কিয়ামত ঘনিয়ে আসবে ততই সমাজের নিচু শ্রেণীর লোকেরা সমাজের নেতৃত্ব দিবে। বর্তমান মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ ক্ষমতাধররা ধর্মীয় জ্ঞানে মূর্খ এবং ধার্মিকতায় একেবারেই শূন্যের কোঠায় ; অথচ ধর্মীয় দৃষ্টিকোণে সমাজের নেতৃত্ব ওরাই দিবেন যাঁরা হবেন ধর্মীয় জ্ঞানে পণ্ডিত ও আল্লাহ্ভীরু। কারণ, তাঁরাই হচ্ছেন আল্লাহ্ তা’আলার নিকট একমাত্র সম্মানের পাত্র। 
এ কারণেই রাসূল (সাঃ) কোন এলাকার দায়িত্বশীল নিয়োগ করতেন এমন ব্যক্তিকে যিনি ছিলেন উপস্থিত সবার মধ্যে বেশি জ্ঞানের অধিকারী এবং উক্ত কাজের সত্যিকারের উপযুক্ত। তেমনিভাবে তাঁর খলীফাগণও উক্ত নিয়োগ পদ্ধতি পালন করেন। 
একদা নাজরানবাসীরা রাসূল (সাঃ) এর নিকট তাদের উপর দায়িত্বশীল হিসেবে একজন আমানতদার ব্যক্তি কামনা করছিলো। তখন রাসূল (সাঃ) বলেনঃ 
لَأَبْعَثَنَّ إِلَيْكُمْ رَجُلاً أَمِيْنًا حَقَّ أَمِيْنٍ ، فَاسْتَشْرَفَ لَهُ النَّاسُ ، فَبَعَثَ أَبَا عُبَيْدَةَ بْنَ الْجَرَّاحِ 
অর্থাৎ নিশ্চয়ই আমি তোমাদের নিকট একজন সত্যিকার আমানতদার ব্যক্তি পাঠাবো। তখন সবাই উঁকিঝুঁকি মারছিলো রাসূল (সাঃ) কাকে পাঠাবেন তা জানার জন্য। অতঃপর রাসূল (সাঃ) হযরত আবু ’উবাইদাহ্ বিন্ র্জারাহ্ (রাঃ) কেই পাঠিয়ে দিলেন। (বুখারী, হাদীস ৪৩৮১) 
নিম্নে উক্ত আলামত সম্পর্কে কয়েকটি হাদীস বর্ণিত হলোঃ 
আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ 
إِنَّهَا سَتَأْتِيْ عَلَى النَّاسِ سِنُوْنَ خَدَّاعَةٌ ، يُصَدَّقُ فِيْهَا الْكَاذِبُ ، وَيُكَذَّبُ فِيْهَا الصَّادِقُ، وَيُؤْتَمَنُ فِيْهَا الْخَائِنُ ، وَيُخَوَّنُ فِيْهَا الْأَمِيْنُ ، وَيَنْطِقُ فِيْهَا الرُّوَيْبِضَةُ ، قِيْلَ: وَمَا الرُّوَيْبِضَةُ ؟ قَالَ: السَّفِيْهُ يَتَكَلَّمُ فِيْ أَمْرِ الْعَامَّةِ 
অর্থাৎ অচিরেই এমন কিছু বছর আসবে যাতে মানুষ ধোকা খাবে। তাতে মিথ্যাবাদীকে সত্যবাদী মনে করা হবে এবং সত্যবাদীকে মিথ্যাবাদী মনে করা হবে। আত্মসাৎকারীকে আমানতদার মনে করা হবে এবং আমানতদারকে আত্মসাৎকারী মনে করা হবে। সে সময় রুওয়াইবেযা কথা বলবে। রাসূল (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হলোঃ রুওয়াইবেযা কে? তিনি বললেনঃ রুওয়াইবেযা হচ্ছে সে বেকুব লোক যে জাতীয় ব্যাপারে কথা বলবে। (আহ্মাদ্ ১৫/৩৭-৩৮) 
আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ 
وَإِذَا كَانَتِ الْعُرَاةُ الْحُفَاةُ رُؤُوْسَ النَّاسِ فَذَاكَ مِنْ أَشْرَاطِهَا 
অর্থাৎ যখন জামা-কাপড় ও জুতোবিহীন লোকেরা মানুষের নেতৃত্ব দিবে তখনই মনে করবে কিয়ামত অতি সন্নিকটে। (মুসলিম, হাদীস ৯) 
’উমর বিন্ খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ 
مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ : أَنْ يَّغْلِبَ عَلَى الدُّنْيَا لُكَعُ ابْنُ لُكَعٍ 
অর্থাৎ কিয়ামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে অযোগ্য অপদার্থ লোক দুনিয়ার নেতৃত্ব দেয়া। (মায্মা’উয্যাওয়ায়িদ্ ৭/৩২৫) 
আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ 
إِذَا أُسْنِدَ الْأَمْرُ إِلَى غَيْرِ أَهْلِهِ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ 
অর্থাৎ যখন নেতৃত্ব অযোগ্যের হাতে তুলে দেয়া হয় তখনই কিয়ামতের অপেক্ষা করবে। (বুখারী, হাদীস ৬৪৯৬) 
আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ 
مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ ... أَنْ يَّعْلُوَ التُّحُوْتُ الْوُعُوْلَ ، أَكَذَلِكَ يَا عَبْدَ اللهِ بْنَ مَسْعُوْدٍ سَمِعْتَهُ مِنْ حِبِّيْ ؟ قَالَ: نَعَمْ ؛ وَرَبِّ الْكَعْبَةِ ، قُلْنَا : وَمَا التُّحُوْتُ ؟ قَالَ: فُسُوْلُ الرِّجَالِ وَأَهْلُ الْبُيُوْتِ الْغَامِضَةِ يُرْفَعُوْنَ فَوْقَ صَالِحِيْهِمْ ، وَالْوُعُوْلُ: أَهْلُ الْبُيُوْتِ الصَّالِحَةِ 
অর্থাৎ কিয়ামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে ”তু’হুত” (নিচু লোকেরা) ”উ’ঊল” (ভালো লোকের) উপর নেতৃত্ব দিবে। বর্ণনাকারী হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্’ঊদ্ (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করেনঃ হে আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্’ঊদ্! তুমি কি উক্ত হাদীসটি আমার প্রিয় নবী থেকে শুনছিলে? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ, কা’বার প্রভুর কসম! আমি তা প্রিয় নবী থেকে শুনেছি। শ্রোতারা বললোঃ ”তু’হুত” কি? তিনি বললেনঃ ”তু’হুত” মানে নিচু লোক। অপ্রসিদ্ধ ঘরের লোকেরা ভালো লোকদের উপর মর্যাদা পাবে। আর ”উ’ঊল” মানে ভালো ঘরের লোকেরা। (মায্মা’উয্যাওয়ায়িদ্ ৭/৩২৭) 
আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ 
لاَ تَذْهَبُ الدُّنْيَا حَتَّى تَصِيْرَ لِلُكَعِ ابْنِ لُكَعٍ 
অর্থাৎ দুনিয়া নিঃশেষ হবে না যতক্ষণ না তা অযোগ্য অপদার্থ লোকের হাতে চলে যাবে। (আহ্মাদ্ ১৬/২৮৪ স’হী’হুল্ জামি’, হাদীস ৭১৪৯) 
’হুযাইফাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ 
لاَ تَقُوْمُ السَّاعَةُ حَتَّى يَكُوْنَ أَسْعَدُ النَّاسِ بِالدُّنْيَا لُكَعُ ابْنُ لُكَعٍ 
অর্থাৎ কিয়ামত কায়িম হবে না যতক্ষণ না দুনিয়ার সব চাইতে ভাগ্যবান ব্যক্তি হবে অযোগ্য অপদার্থ। (আহ্মাদ্ ৫/৩৮৯ স’হী’হুল্ জামি’, হাদীস ৭৩০৮) 
এ দ্বীনহারা ঈমানহারা ব্যক্তিরাই একদা সুন্দর সুন্দর বিশেষণে বিশেষিত হবে। 
’হুযাইফাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ একদা রাসূল (সাঃ) আমানত উঠিয়ে নেয়া সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেনঃ 
يُقَالُ لِلرَّجُلِ: مَا أَعْقَلَهُ وَمَا أَظْرَفَهُ وَمَا أَجْلَدَهُ ، وَمَا فِيْ قَلْبِهِ مِثْقَالُ حَبَّةِ خَرْدَلٍ مِنْ إِيْمَانٍ
অর্থাৎ তখন কারো কারোর সম্পর্কে এ কথাও বলা হবে যে, লোকটি কতই না বুদ্ধিমান! কতই না চালাক! কতই না বীর সাহসী! অথচ তার 
অন্তরে একটি সরিষা পরিমাণও ঈমান নেই। (বুখারী, হাদীস ৬৪৯৭)

No comments:

Post a Comment