Wednesday, May 20, 2015

উম্মতে মুহাম্মদীর মাঝে র্শিকের দ্রুত বিস্তার কিয়ামতের আরেকটি আলামত।




আসসালামু আলাইকুম
উম্মতে মুহাম্মদীর মাঝে র্শিকের দ্রুত বিস্তার কিয়ামতের আরেকটি আলামত। 
বর্তমানে মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র র্শিক ও র্শিক জাতীয় আমল অতি দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। কবর পূজা, মূর্তি পূজা আজ মুসলিম বিশ্বের আনাচে-কানাচে পুরোদমেই চলছে। ওলীদের কবর থেকে হরদম বরকত নেয়া হচ্ছে। মানুষ তাকে চুমু খাচ্ছে ও অতি সম্মান করছে। কবরের জন্য যে কোন বস্তু মানত করা হচ্ছে। ওলীদের কবরকে নিয়ে বার্ষিক ওরস মাহফিলও করা হচ্ছে। বরং এ যুগের অনেক কবর পূর্বেকার লাত, উয্যা, মানাতকেও ছাড়িয়ে গেছে। 
সাউবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ 
إِذَا وُضِعَ السَّيْفُ فِيْ أُمَّتِيْ ؛ لَمْ يُرْفَعْ عَنْهَا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ ، وَلاَ تَقُوْمُ السَّاعَةُ حَتَّى تَلْحَقَ قَبَائِلُ مِنْ أُمَّتِيْ بِالْمُشْرِكِيْنَ ، وَحَتَّى تَعْبُدَ قَبَائِلُ مِنْ أُمَّتِيْ الْأَوْثَانَ 
অর্থাৎ যখন আমার উম্মতের মধ্যে হত্যাকাণ্ড শুরু হবে তখন তা আর কিয়ামত পর্যন্ত উঠিয়ে নেয়া হবে না। কিয়ামত কায়িম হবে না যতক্ষণ না আমার উম্মতের মধ্য থেকে কোন না কোন সম্প্রদায় মুশ্রিকদের সাথে মিশে যায় এবং মূর্তি পূজা করে। (আবু দাউদ/’আউনুল্ মা’বূদ্ ১১/৩২২-৩২৪ তিরমিযী ৬/৪৬৬ স’হীহুল্ জা’মি’, হাদীস ৭২৯৫) 
আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ 
لاَ تَقُوْمُ السَّاعَةُ حَتَّى تَضْطَرِبَ أَلَيَاتُ نِسَاءِ دَوْسٍ حَوْلَ ذِيْ الْخَلَصَةِ 
অর্থাৎ কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না দাউস্ গোত্রের মহিলারা পাছা নাচিয়ে যুল্খালাসা নামক মূর্তির তাওয়াফ করবে। (বুখারী, হাদীস ৭১১৬ মুসলিম, হাদীস ২৯০৬ বাগাওয়ী, হাদীস ৪২৮৫ ইব্নু হিব্বান, হাদীস ৬৭১৪ আব্দুর রায্যাক, হাদীস ২০৭৯৫)
’আয়িশা থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ 
لاَ يَذْهَبُ اللَّيْلُ وَالنَّهَارُ حَتَّى تُعْبَدَ اللَّاتُ وَالْعُزَّى 
অর্থাৎ দিন-রাত নিঃশেষ হবে না তথা কিয়ামত কায়িম হবে না যতক্ষণ না লাত ও ’উয্যার পূজা করা হয়। (মুসলিম, হাদীস ২৯০৭) 
’আয়িশা বলেনঃ আমি উক্ত হাদীস শুনে রাসূল (সাঃ) কে বললামঃ হে আল্লাহ্’র রাসূল! আমি তো মনে করতাম, যখন আল্লাহ্ তা’আলা নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল করেছেনঃ 
هُوَ الَّذِيْ أَرْسَلَ رَسُوْلَهُ بِالْهُدَى وَدِيْنِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّيْنِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُوْنَ 
অর্থাৎ তিনিই সেই সত্তা যিনি স্বীয় রাসূলকে পাঠিয়েছেন হিদায়াত তথা কুর’আন এবং সত্য ধর্ম দিয়ে। যেন তিনি বিজয়ী করতে পারেন উক্ত ধর্মকে সকল ধর্মের উপর। যদিও তা মুশ্রিকরা অপছন্দ করে। (তাওবাহ্ : ৩৩) 
আমি তো মনে করতাম যে, যখন আল্লাহ্ তা’আলা উক্ত আয়াত নাযিল করেছেন তখন ইসলাম ধর্ম অবশ্যই পরিপূর্ণরূপে পুরো বিশ্বে প্রকাশ পাবে। রাসূল (সাঃ) তা শুনে বললেনঃ 
إِنَّهُ سَيَكُوْنُ مِنْ ذَلِكَ مَا شَاءَ اللهُ ، ثُمَّ يَبْعَثُ اللهُ رِيْحًا طَيِّبَةً فَتَوَفَّى كُلَّ مَنْ فِيْ قَلْبِهِ مِثْقَالُ حَبَّةِ خَرْدَلٍ مِنْ إِيْمَانٍ ، فَيَبْقَى مَنْ لاَ خَيْرَ فِيْهِ ، فَيَرْجِعُوْنَ إِلَى دِيْنِ آبَائِهِمْ 
অর্থাৎ তুমি যা মনে করতে তাই হবে। তবে যতো দিন আল্লাহ্ তা’আলা তা ইচ্ছে করবেন। অতঃপর আল্লাহ্ তা’আলা এমন এক ধরনের উত্তম হাওয়া বইয়ে দিবেন যা প্রত্যেক মু’মিন বান্দাহ্কে দুনিয়া থেকে নিয়ে যাবে যার অন্তরে একটি রাইয়ের দানা পরিমাণও ঈমান রয়েছে। এরপর এমন সব লোক বেঁচে থাকবে যাদের মধ্যে কোন কল্যাণই থাকবে না এবং তারা সবাই নিজ বাপ-দাদার ধর্মের দিকে আবারো ফিরে যাবে। (মুসলিম, হাদীস ২৯০৭) 
নবী (সাঃ) এর উক্ত ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে প্রতিফলিত হয়েছে। দাউস্ ও তার আশেপাশের গোত্রগুলো একদা যুল্খালাসা নামক মূর্তির পূজা শুরু করেছে। তখন শায়েখ মুহাম্মাদ বিন্ আব্দুল ওয়াহ্হাব (রাহিমাহুল্লাহ্) তাদেরকে তাওহীদের দিকে ডাকলেন। শায়েখের দা’ওয়াতে উদ্বুদ্ধ হয়ে ইমাম আব্দুল আজিজ বিন্ মুহাম্মাদ বিন্ স’ঊদ্ (রাহিমাহুল্লাহ্) যুল্খালাসা অভিমুখে দা’য়ীদের একটি দল পাঠান। যাঁরা সবাইকে বুঝিয়ে শুনিয়ে উক্ত মূর্তি ধ্বংস করতে সক্ষম হন। তবে অত্র এলাকায় স’ঊদ্ বংশের ক্ষমতা কিছু দিনের জন্য অকার্যকর হলে মূর্খরা আবারো যুল্খালাসার পূজা শুরু করে দেয়। অতঃপর স’ঊদ্ বংশের প্রভাবশালী রাষ্ট্রপতি আব্দুল আজীজ বিন্ আব্দুর রহ্মান আবারো ক্ষমতায় আরোহণ করলে তিনি তা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেন। 
র্শিক শুধু গাছ, পাথর আর কবর পূজার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং তা আরো অনেক ব্যাপক। বর্তমান যুগে দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে আল্লাহ্ তা’আলার পাশাপাশি তাগুতদেরকেও বিশেষ অবস্থান দেয়া হচ্ছে। তারা নিজেদের পক্ষ থেকে মনগড়া সংবিধান রচনা করে মানুষের উপর তা চাপিয়ে দেয়। ধীরে ধীরে মানুষও তা সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নেয়। 
আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
اِتَّخَذُوْا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَاباً مِّنْ دُوْنِ اللهِ وَالْمَسِيْحَ ابْنَ مَرْيَمَ وَمَا أُمِرُوْا إِلاَّ لِيَعْبُدُوْا إِلَهاً وَّاحِداً ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ سُبْحَانَهُ عَمَّا يُشْرِكُوْنَ 
অর্থাৎ তারা আল্লাহ্ তা’আলাকে ছেড়ে নিজেদের আলিম, ধর্ম যাজক ও র্মাইয়ামের পুত্র মাসীহ্ (ঈসা) (আঃ) কে প্রভু বানিয়ে নিয়েছে। অথচ তাদেরকে শুধু এতটুকুই আদেশ দেয়া হয়েছে যে, তারা একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলারই ইবাদাত করবে। তিনি ব্যতীত সত্যিকার কোন মা’বূদ নেই। তিনি তাদের র্শিক হতে একেবারেই পূতপবিত্র। (তাওবাহ্: ৩১)
’আদি’ বিন্ হাতিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ 
أَتَيْتُ النَّبِيَّ وَفِيْ عُنُقِيْ صَلِيْبٌ مِنْ ذَهَبٍ فَقَالَ : يَا عَدِيُّ! اِطْرَحْ عَنْكَ هَذَا الْوَثَنَ، وَسَمِعْتُهُ يَقْرَأُ فِيْ سُوْرَةِ بَرَاءَةٍ: اِتَّخَذُوْا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَاباً مِّنْ دُوْنِ اللهِ قَالَ: أَمَا إِنَّهُمْ لَمْ يَكُوْنُوْا يَعْبُدُوْنَهُمْ وَلَكِنَّهُمْ كَانُوْا إِذَا أَحَلُّوْا لَهُمْ شَيْئاً اِسْتَحَلُّوْهُ وَإِذَا حَرَّمُوْا عَلَيْهِمْ شَيْئاً حَرَّمُوْهُ 
অর্থাৎ আমি নবী (সাঃ) এর দরবারে গলায় স্বর্ণের ক্রুশ ঝুলিয়ে উপস্থিত হলে তিনি আমাকে ডেকে বলেনঃ হে ’আদি’! এ মূর্তিটি (ক্রুশ) গলা থেকে ফেলে দাও। তখন আমি তাঁকে উক্ত আয়াতটি পড়তে শুনেছি। হযরত ’আদি’ বলেনঃ মূলতঃ খ্রিষ্টানরা কখনো তাদের আলিমদের উপাসনা করতো না। তবে তারা হালাল ও হারামের ব্যাপারে বিনা প্রমাণে আলিমদের সিদ্ধান্ত মেনে নিতো। আর এটিই হচ্ছে আলিমদেরকে প্রভু মানার অর্থ তথা আনুগত্যের র্শিক। (তিরমিযী, হাদীস ৩০৯৫)
হালাল ও হারামের ব্যাপারে বিনা প্রমাণে আলিমদের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া যদি এতো বড়ো অপরাধ হয়ে থাকে তা হলে যারা ইসলামী জীবন ব্যবস্থাকে অবজ্ঞা করে ইসলাম বিরোধী মতবাদ তথা ধর্ম নিরপেক্ষ, সমাজতন্ত্র, সাম্যবাদ, পাশ্চাত্য পুঁজিবাদ ও জাতীয়তাবাদকে জীবন সাফল্যের একান্ত চাবিকাঠি বলে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে তা প্রচারে মদমত্ত হয়ে উঠে তারা কি আবার মুসলমান হতে পারে?

No comments:

Post a Comment