Saturday, June 27, 2015

তারাবির সালাতের অনুমোদনঃ




তারাবির সালাতের অনুমোদনঃ
========================
আব্দুর রহমান ইব্‌ন আব্দুল কারি রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন:
خَرَجْتُ مَعَ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ ـ رضى الله عنه ـ لَيْلَةً فِي رَمَضَانَ، إِلَى الْمَسْجِدِ، فَإِذَا النَّاسُ أَوْزَاعٌ مُتَفَرِّقُونَ يُصَلِّي الرَّجُلُ لِنَفْسِهِ، وَيُصَلِّي الرَّجُلُ فَيُصَلِّي بِصَلاَتِهِ الرَّهْطُ فَقَالَ عُمَرُ إِنِّي أَرَى لَوْ جَمَعْتُ هَؤُلاَءِ عَلَى قَارِئٍ وَاحِدٍ لَكَانَ أَمْثَلَ. ثُمَّ عَزَمَ فَجَمَعَهُمْ عَلَى أُبَىِّ بْنِ كَعْبٍ، ثُمَّ خَرَجْتُ مَعَهُ لَيْلَةً أُخْرَى، وَالنَّاسُ يُصَلُّونَ بِصَلاَةِ قَارِئِهِمْ، قَالَ عُمَرُ نِعْمَ الْبِدْعَةُ هَذِهِ، وَالَّتِي يَنَامُونَ عَنْهَا أَفْضَلُ مِنَ الَّتِي يَقُومُونَ. يُرِيدُ آخِرَ اللَّيْلِ، وَكَانَ النَّاسُ يَقُومُونَ أَوَّلَهُ
-আমি ওমর ইব্‌ন খাত্তাবের (রাঃ) সাথে রমযানের রাতে মসজিদে যাই, তখন মানুষেরা পৃথকভাবে নিজ নিজ সালাত আদায় করছিল। আবার কেউ কতক লোকের সাথে জামাতসহ সালাত আদায় করছিল। ওমর (রাঃ) বললেন: আমার মনে হয় এক ইমামের পিছনে তাদের সকলের সালাত আদায়ের ব্যবস্থা করলে, খুব সুন্দর হবে। অতঃপর তিনি উবাই ইব্‌ন কাবের পিছনে সবাইকে সালাত আদায়ের নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে কোন রাতে আমি তার সাথে বের হয়ে দেখি লোকেরা এক ইমামের পিছনে সালাত আদায় করছে, তখন ওমর বললেন: এটা খুব সুন্দর ব্যবস্থা। তবে যারা এ সালাতে অনুপস্থিত, তারা উত্তম এদের থেকে, অর্থাৎ শেষ রাতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে প্রথম রাতে যারা ঘুমাচ্ছে, তারা এদের চেয়ে উত্তম। তখন মানুষেরা প্রথম রাতে সালাত আদায় করত। [বুখারি হা/২০১০; মালেক ১/১১৪; আব্দুর রায্‌যাক হা/৭৭২৩; ইব্‌ন আবি শায়বাহ ২/১৬৫]
ইমাম মালেকের এক বর্ণনায় আছে: ওমর ইব্‌ন খাত্তাব (রাঃ) উবাই ইব্‌ন কাব ও তামিমুদ দারি (রাঃ) কে সবার সাথে এগারো রাকাত সালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন: ইমাম সাহেব শত আয়াতের অধিক বিশিষ্ট সূরাসমূহ তিলাওয়াত করতেন, আমরা দীর্ঘ কিয়ামের কারণে লাঠির ওপর ভর করতাম, আমরা ফজরের আগ মুহূর্ত ব্যতীত বাড়ি ফিরতাম না। [মালেক ১/১১৫; আব্দুর রায্‌যাক হা/৭৭৩০, ইব্‌ন আবি শায়বাহ ২/১৬২]
ইব্‌ন খুযাইমার এক বর্ণনায় আছে: ওমর বলেন,
-আল্লাহর শপথ, আমার ধারণা আমি যদি এক ইমামের পিছনে তাদের সবাইকে একত্র করি, তাহলে খুব ভাল হবে। অতঃপর ওমর (রাঃ) চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তিনি উবাই ইব্‌ন কা‘বকে সবার সাথে সালাত আদায়ের নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে ওমর (রাঃ) তাদের দেখতে যান, তখন সবাই এক ইমামের পিছনে সালাত আদায় করছিল, তিনি বলেন: এটা খুব সুন্দর ব্যবস্থা। যারা এ সালাত থেকে ঘুমিয়ে আছে তারা উত্তম, (অর্থাৎ প্রথম রাতে ঘুমিয়ে যারা শেষ রাতে সালাত আদায় করে)। তখন লোকেরা প্রথম রাতে সালাত আদায় করত। তারা রমযানের শেষার্ধে কাফেরদের ওপর লানত করত:
الَّلهُمَّ قَاتِلْ الكَفَرَةَ الَّذِينَ يَصُدُّونَ عَنْ سَبِيلِك، ويُكَذِّبونَ رُسُلَكَ، ولا يُؤْمِنُونَ بِوَعْدِك، وخَالِفْ بينَ كَلِمَتهِم، وأَلْقِ في قُلُوبِهِم الرُّعْبَ، وأَلْقِ عَلَيْهِم رِجْزَكَ وعَذَابَكَ إِلهَ الحَقِّ،
-হে আল্লাহ, তুমি কাফেরদের ধ্বংস কর, যারা তোমার রাস্তা থেকে মানুষদের বিরত রাখে, তোমার রাসূলকে মিথ্যারোপ করে, তোমার প্রতিশ্রুতির ওপর ঈমান আনে না। তুমি তাদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি কর, তাদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার কর। হে সত্য ইলাহ, তুমি তাদের ওপর তোমার আযাব ও শাস্তি নাযিল কর।
অতঃপর নবী ﷺ উপর দরূদ ও সালাম পাঠ করে মুসলিমদের জন্য কল্যাণের দো‘আ ও ইস্তেগফার করবে। তিনি বলেন: তারা কাফেরদের ওপর লানত, নবীর ওপর দরূদ ও মুমিনদের জন্য দো‘আ-ইস্তেগফার শেষে বলতেন:
الَّلهُمَّ إِياكَ نَعْبُدُ، ولَكَ نُصَلِّي ونَسْجُدُ، وإِلَيكَ نَسْعَى ونَحْفِدُ، ونَرْجُو رَحمَتكَ رَبَّنا، ونَخَافُ عَذَابَكَ الجِدَّ، إِنَّ عَذَابكَ لمن عَادَيتَ مُلْحِق،
-হে আল্লাহ আমরা একমাত্র তোমার ইবাদত করি, তোমার জন্য সালাত আদায় করি ও সেজদা করি। আমরা তোমার নিকট দৌড়ে যাই ও তোমার নিকট দ্রুত ধাবিত হই। তোমার রহমত প্রত্যাশা করি হে আমাদের রব, তোমার আযাব ভয় করি, নিশ্চয় তোমার আযাব তোমার শত্রুদের নিশ্চিত স্পর্শ করবে। অতঃপর তাকবীর বলবে ও সেজদার জন্য ঝুঁকবে। [ইব্‌ন খুযাইমা হা/১১০০; আলবানি সহীহ ইব্‌ন খুযাইমার টিকায় হাদিসটি সহিহ বলেছেন]
■শিক্ষা ও মাসায়েলঃ
=================
✔১). তারাবির সালাত সুন্নত, নবী ﷺ তার সূচনা করেন, কিন্তু মুসলিমদের ওপর ফরয হওয়ার আশঙ্কায় তিনি তা ত্যাগ করেন। লোকেরা এ সালাত একা একা আদায় করত তার ও আবু বকরের যামানায়, যখন ওমর (রাঃ) এর যুগ আসে তিনি সবাইকে এক ইমামের পিছনে একত্র করেন। এভাবে তিনি নবীর সুন্নত জীবিত করেন। তার যামানা ও তার পরবর্তী যামানার মুসলিমগণ একমত যে, তারাবির জামাত মুস্তাহাব। [একাধিক আলেম এ মতের ওপর ইজমা বর্ণনা করেছেন, তার মধ্যে অন্যতম ইমাম নববী, দেখুন: তাহযিবুল আসমা ওয়াল লুগাত: (২/৩৩২) ]
✔২). কম মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তি কখনো এমন সুন্নত জীবিত করেন, অধিক মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তি যা করতে পারেন নি। যেমন মহান এ সুন্নত জীবিত করার তওফিক আল্লাহ ওমরকে দিয়েছেন, আবু বকরকে দেননি, অথচ তিনি ওমরের চেয়ে উত্তম। সকল কল্যাণের ক্ষেত্রে তিনি ওমরের চেয়ে অগ্রগামী ছিলেন। ওমর বলেছেন: -আল্লাহর শপথ আমি কোন জিনিসে তার অগ্রগামী হতে পারব না। [ আবু দাউদ হা/১৬১৮, তিরমিযি হা/৩৬৭৫, তিনি হাদিসটি হাসান ও সহিহ বলেছেন]
রমযানে আলি (রাঃ) যখন মসজিদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করতেন, তাতে বাতি জ্বালানো দেখে বলতেন: -আল্লাহ ওমর (রাঃ) এর কবরকে নূরান্বিত করুন, যেমন তিনি আমাদের মসজিদগুলো নূরান্বিত করেছেন। [ইব্‌ন আসাকের তার তারিখে বর্ণনা করেছেন (৪৪/২৮০), এবং ইব্‌ন আব্দুল বার তার তামহিদ গ্রন্থে: (৮/১১৯)]। অর্থাৎ সালাতে তারাবিহ দ্বারা।
তাই মুসলিম কোন কল্যাণের ব্যাপারে নিজেকে ছোট বা হীন মনে করবে না, আল্লাহ তার থেকে এমন খিদমত নিতে পারেন, যা তার চেয়ে উত্তম ব্যক্তিদের থেকে নেননি। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, তিনি যাকে ইচ্ছা এ অনুগ্রহ দান করেন।
✔৩). মুসলিমদের জামাত ও তাদের একতা বিচ্ছিন্নতা থেকে উত্তম। ইমামের কর্তব্য মুসলিমদের মাঝে একতা প্রতিষ্ঠা করা।
✔৪). সুন্নতের ব্যাপারে ইমামের ইজতিহাদ মেনে নেয়া অন্যদের ওপর অবশ্য জরুরী, এতে তার আনুগত্য করা ওয়াজিব। যেমন ওমর যখন তাদের সবাইকে এক ইমামের পিছনে একত্র করেন, সাহাবায়ে কেরাম তা মেনে নেন ও ওমরের আনুগত্য করেন।
✔৫). সবাই মিলে সুন্নত জীবিত করা ও একসাথে ইবাদত আদায় করা বরকতপূর্ণ। কারণ জমাতে প্রত্যেকের দো‘আ প্রত্যেককে অন্তর্ভুক্ত করে। এ জন্য জামাতের সালাত একাকী সালাতের চেয়ে পঁচিশ থকে সাতাশগুণ বেশি ফযিলত রাখে। সায়িদ ইব্‌ন জুবাইর রহ. বলেছেন,
-আমার নিকট সূরা গাশিয়াহ পাঠকারী ইমামের পিছনে সালাত আদায় করা অধিক উত্তম, একাকী সালাতে আমার একশ আয়াত তিলাওয়াত করার চেয়ে। [ইব্‌ন আব্দুল বার ফিত তামহিদ ৮/১১৮ ]
✔৬). কারণবশত কোন আমল ত্যাগ করলে, কারণ শেষে তা পুনরায় আরম্ভ করা দুরস্ত আছে, যেমন ওমর (রাঃ) রমযানের তারাবির জামাত পুনরায় আরম্ভ করেন।
✔৭). কুরআনের হাফেয ও কুরআনের অধিক জ্ঞানের অধিকারী ব্যক্তি যথাসম্ভব ইমামতি করবেন, যেমন ওমর তাদের মধ্যে বড় কারী উবাই ইব্‌ন কা‘বকে প্রাধান্য দিয়েছেন। এটা উত্তম কিন্তু ওয়াজিব নয়, কারণ ওমর তামিমে দারিকেও ইমামতির দায়িত্ব দিয়েছেন, অথচ তার চেয়ে বড় কারী সাহাবিদের মধ্যে বিদ্যমান ছিল।
✔৮). তারাবির সালাতে অন্যান্য মুসলিমদের ন্যায় নারীরা মসজিদে উপস্থিত হতে পারবে, অনুরূপ ফিতনার আশঙ্কা না থাকলে শুধু নারীদের পুরুষ ইমামতি করতে পারবে।
✔৯). ইমাম যদি ইমামতের নিয়ত না করে, তবু মুসল্লি তার পিছনে ইকতিদা করতে পারবে।
✔১০). দুই সালাম অথবা চার সালাম অথবা কিয়ামের পর যদি ইমামের বিরতি নেয়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে এ বিরতিতে মুক্তাদির নফল পড়া বৈধ নয়। ইমাম আহমদ এটা মাকরুহ বলেছেন, তিনজন সাহাবি থেকে তিনি তা বর্ণনা করেন: উবাদাহ ইব্‌ন সামেত, আবু দারদাহ ও উকবাহ ইব্‌ন আমের রাদিয়াল্লাহু আনহুম। [আল-ইস্তেযকার: (২/৭২) ]
✔৬). এক ইমামের পিছনে তারাবিহ শেষ করে, যদি অন্য ইমামের পিছনে তারাবির জমাতে শরীক হয়, এতে দোষ নেই। [আনাস ইব্‌ন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু এটা বৈধ বলেছেন, ইমাম আহমদ বলেছেন এতে কোন সমস্যা নেই। দেখুন: মুগনি ১/৪৫৭ ]
✔১২). রমযানের নফল ব্যতীত অন্য নফলের জন্য ক্রমান্বয়ে একত্র হওয়া বৈধ নয়, বরং অন্যান্য নফল একসাথে আদায় করা বিদআত, যেমন রাতের নফলের জন্য একত্র হওয়া অথবা নির্দিষ্ট রাতে নফল আদায়ের জন্য একত্র হওয়া ইত্যাদি। কারণ নবী ﷺ রমযান ব্যতীত কোন নফলে সাহাবিদের একত্র করেন নি। তিনি যেহেতু ফরয হওয়ার আশঙ্কায় ত্যাগ করেছেন, তাই পরবর্তীতে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তা জীবিত করেন।

No comments:

Post a Comment