Monday, July 13, 2015

Questions & Answers




প্রশ্ন (১/১৬১): ঈদ ও জুম‘আর ছালাতের এক রাক‘আত ছুটে গেলে কিভাবে আদায় করতে হবে? অনুরূপভাবে জানাযার ছালাতে তাকবীর ছুটে গেলে করণীয় কী?
উত্তর : ঈদ ও জুম‘আর ছালাতের এক রাক‘আত ছুটে গেলে পরের রাক‘আত পড়ে নিতে হবে। তবে দুই রাক‘আতই যদি ছুটে যায় তাহলে চার রাক‘আত পড়তে হবে (বায়হাক্বী, মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা, ইরওয়াউল গালীল ৩/৮১ ও ৮২ পৃঃ)। জানাযার তাকবীর ছুটে গেলে আদায় করতে হবে না; বরং ইমামের সাথে সালাম ফিরাতে হবে (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৭৭)।
প্রশ্ন (২/১৬২) : বিতর ছালাতে কুনূত পড়ার সময় হাত তোলা যাবে কি?
উত্তর : হাত তোলা যাবে। ছাহাবায়ে কেরাম হাত তুলতেন (বুখারী, কুর্রাতুল আইনাইন বিরাফইল ইয়াদাইন, হা/৯৩ ও ৯৫; সনদ ছহীহ; ইরওয়াউল গালীল ২/১৮১ পৃঃ; ফাতাওয়া ওছায়মীন ১৪/১৩৬-৩৭ পৃঃ)।
প্রশ্ন (৩/১৬৩) : জানাযার ছালাতে তাকবীর দেয়ার সময় হাত তোলার মারফূ হাদীছ নেই। সুতরাং হাত তোলা যাবে না বলে জনৈক আলেম ফৎওয়া দিয়েছেন। উক্ত সিদ্ধান্ত কি সঠিক হয়েছে?
উত্তর : জানাযার ছালাতের তাকবীর সমূহে হাত উঠানো যায়। কারণ মারফূ‘ হাদীছ রাসূল (ছাঃ) থেকে না পাওয়া গেলেও ছহীহ সূত্রে মাওকূফ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যেমন আনাস (রাঃ) জানাযার প্রত্যেক তাকবীরে হাত তুলতেন (যাদুল মা‘আদ ১/৪৯২ পৃঃ)।
প্রশ্ন (৪/১৬৪) : আল্লাহ্র ৯৯টি নামের হাদীছটি ছহীহ না যঈফ। জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর : আল্লাহ্র গুণবাচক নাম ৯৯টি মর্মে ছহীহ হাদীছ রয়েছে (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২২৮৭)। তবে যে হাদীছে নামগুলো উল্লেখ রয়েছে সে হাদীছটি যঈফ (তিরমিযী, মিশকাত হা/২২৮৮)।
প্রশ্ন (৫/১৬৫) : প্রবাসে চাকুরীর নির্দিষ্ট সময় থাকার কারণে আমরা অনেকেই জুম‘আর ছালাত জামা‘আতে আদায় করে পারি না। সেই ছালাত কি যোহর হিসাবে জামা‘আত করে পড়া যাবে?
উত্তর : উক্ত জুম‘আর ছালাত যোহর হিসাবে ক্বছর করে পড়া যাবে। রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম ছালাত ক্বছর করার সময় জামা‘আতেও পড়তেন। এ মর্মে অনেক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৩৩৪ ও ১৩৩৮, ‘সফরের ছালাত’ অনুচ্ছেদ)।
প্রশ্ন (৬/১৬৬) : ইক্বামতের উত্তর দিতে হবে কি?
উত্তর : ইক্বামতের জবাব দিতে হবে। নবী করীম (ছাঃ) সাধারণভাবে বলেন, মুয়াযযিন যা বলেন তোমরাও তাই বল (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৬৫৭) । উক্ত হাদীছে থেকে ইক্বামতের উত্তর দেওয়ার কথা প্রমাণিত হয় (আলবানী, মিশকাত হা/৬৭০-এর টীকা দ্রঃ)। তাছাড়া অন্য হাদীছে আযান ও ইক্বামত দু’টিকেই আযান বলা হয়েছে (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৬৬২)।
উল্লেখ্য যে, ‘ক্বাদ ক্বা-মাতিছ ছালাহ’-এর জবাবে ‘আক্বা-মাহাল্লাহু ওয়া আদামাহা’ বলার হাদীছটি যঈফ (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৬৭০)। সুতরাং উত্তরে ‘ক্বাদ ক্বা-মাতিছ ছালাহ’-ই বলতে হবে।
প্রশ্ন (৭/১৬৭) : জুম‘আর ছালাতের পরে চার রাক‘আত সুন্নাত আদায় করতে হয়। অনুরূপ জুম‘আর পূর্বে চার রাক‘আত পড়া যাবে কি?
উত্তর : জুম‘আর ছালাতের পূর্বে নির্দিষ্টভাবে চার রাক‘আত সুন্নাত পড়ার প্রমাণে কোন ছহীহ হাদীছ পাওয়া যায় না। তবে নিম্নে দু’রাক‘আত পড়তে হবে (মুসলিম, মিশকাত হা/১৪১১)। আর বেশী পড়ার নির্ধারিত কোন সংখ্যা নেই। যত রাক‘আত সম্ভব পড়তে পারে (মুসলিম, মিশকাত হা/১৩৮২)।
প্রশ্ন (৮/১৬৮) : জুম‘আর দুই খুৎবার মাঝে ইমাম মিম্বরে বসে দরূদ পড়েন। এর দলীল জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর : দুই খুৎবার মাঝে দরূদ কিংবা অন্য কিছু পড়ার কোন প্রমাণ নেই। এটি নতুন সৃষ্টি। সুতরাং উক্ত অভ্যাস বর্জন করতে হবে (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৪০)।
প্রশ্নঃ (৯/১৬৯): সুন্নাত ছালাতের পর তাসবীহ গণনা সহ আয়াতুল কুরসী পড়া যাবে কি?
উত্তর : যেকোন ছালাতের পর তাসবীহ পড়া যায় (মুসলিম, মিশকাত হা/৯৬৭)। তবে হাদীছে বিশেষভাবে আয়াতুল কুরসী ফরয ছালাতের পরে পড়ার কথা এসেছে (নাসাঈ আল-কুবরা হা/৯৯২৮; আলোচনা দ্রঃ সিলসিলা ছহীহাহ হা/৯৭২)।
প্রশ্নঃ (১০/১৭০) : জনৈক ব্যক্তি কবরে মাটি দেওয়ার সময় নিম্নের দো‘আ পড়েন, اللَّهُمَّ أَجِرْهَا مِنْ الشَّيْطَانِ وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ اللَّهُمَّ جَافِ الْأَرْضَ عَنْ جَنْبَيْهَا وَصَعِّدْ رُوْحَهَا وَلَقِّهَا مِنْكَ رِضْوَانًا । উক্ত দো‘আ কি ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত?
উত্তর : উক্ত দো‘আটি ইবনু মাজাহতে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু হাদীছটি যঈফ। এর সনদে হাম্মাদ ইবনু আব্দুর রহমান নামে একজন রাবী আছেন, যিনি সকল মুহাদ্দিছের ঐকমত্যে যঈফ (ইবনে মাজাহ হা/১৫৫৩)।
প্রশ্ন (১১/১৭১) : জনৈক আলেম বলেন, রাসূল (ছাঃ) একটি আয়াত দ্বারা সমস্ত রাত্রি ছালাত আদায় করেন? উক্ত কথা কি সঠিক?
উত্তর : একদিন এরূপ করেছিলেন (বুখারী হা/৪৬২৫, ৪৭৪০; মুসলিম হা/২৮৬০; তিরমিযী ১৪২৩)। কারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিয়মিত অভ্যাস এরূপ ছিল না।
প্রশ্ন (১২/১৭২) : স্বামীর পায়ের নীচে স্ত্রীর জান্নাত এবং মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের জান্নাত মর্মে যে কথা সমাজে চালু আছে তার ছহীহ দলীল জানতে চাই।
উত্তর : স্বামীর পায়ের নীচে স্ত্রীর জান্নাত এরূপ হাদীছ নেই। তবে এরূপ হাদীছে এসেছে স্বামীই হচ্ছে জান্নাত, স্বামীই হচ্ছে জাহান্নাম (নাসাঈ কুবরা, সিলসিলা ছাহীহাহ হা/২৬১২, ১৯৩৪)। আর মায়ের পায়ের নীচে জান্নাত এ হাদীছ ‘হাসান ছহীহ’ (নাসাঈ হা/৩১০৪)।
প্রশ্ন (১৩/১৭৩) : জন্মদিন উপলক্ষে নবজাতক ছেলেকে স্বর্ণের আংটি বা চেইন দেওয়া হয় এবং বিবাহ উপলক্ষে বরকে স্বর্ণালংকার উপহার দেয়া হয়। এগুলো কি শরী‘আত সম্মম?
উত্তর : দিবস পালন শরী‘আত সম্মত নয়। উপহার দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ছেলে ছোট হোক আর বড় হোক পুরুষের জন্য স্বর্ণ ব্যবহার করা হারাম (তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৩৫৪)। বিবাহ উপলক্ষে উপহার দেওয়াও বৈধ নয়।
প্রশ্ন (১৪/১৭৪) : বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকমের দাড়ি রাখার অভ্যাস চালু আছে। মুখের কোন্ পর্যন্ত এবং কতটুকু দাড়ি রাখতে হবে?
উত্তর : এভাবে মাপজোক করে নয়, বরং পরিষ্কার নির্দেশ হ’ল দাড়ি ছেড়ে দাও ও গোঁফ ছাটো এবং মুশরিকদের বিপরীত কর’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪৪২১)। অতএব যতটুকু দাড়ি, ততটুকু ছাড়তে হবে।
প্রশ্ন (১৫/১৭৫) : অনেক আলেম খাওয়ার সময় সালাম দিতে নিষেধ করেন। এর পক্ষে ছহীহ দলীল জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর : মুসলমানের পরস্পরের প্রতি যে ৬টি শিষ্টাচারের কথা শরী‘আতে বর্ণিত হয়েছে, তন্মধ্যে একটি হ’ল, ‘সাক্ষাত হ’লে সালাম করা (নাসাঈ হা/১৯৩৮; মিশকাত হা/৪৬৩০)। এটি খাওয়া ও খাওয়ার বাইরে যেকোন সময়ে হ’তে পারে। এমনকি পেশাবরত অবস্থায় রাসূল (ছাঃ)-কে সালাম দিলে তিনি পরে তার জওয়াব দিয়েছেন (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৬৭)। সালাম না দিলে কাউকে খেতে ডেকোনা’ মর্মে বর্ণিত হাদীছটি মওযূ বা জাল (যঈফাহ হা/১৭৩৬)। অতএব সালাম দিলে তাকে খেতে ডাকতে হবে ভেবেই হয়তবা অনেকে সালাম দিতে নিষেধ করেন। অথচ এর কোন বিশুদ্ধ ভিত্তি নেই।
প্রশ্ন (১৬/১৭৬) : রোগী দেখতে গেলে ৭০ হাযার ফেরেশতা তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কিন্তু যারা ডাক্তার তারা তো সর্বদা রোগীর পাশে থাকেন তাদের জন্যও কি একই হুকুম?
উত্তর : ডাক্তারগণ রোগী দেখতে যাওয়া ব্যক্তিদের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হবেন না। তারা তাদের দায়িত্ব পালনের জন্য রোগীর পার্শ্বে থাকেন। পক্ষান্তরে রোগী দেখতে যাওয়া ব্যক্তিদের দুনিয়ার কোন স্বার্থ জড়িত থাকে না। তবে ডাক্তারগণ যদি মানবিক তাকীদে ও নেকী হাছিলের শুদ্ধ নিয়তে তাদের দায়িত্ব পালন করেন তাহ’লে তারা নেকী পাবেন; কিন্তু সেটা রোগী দেখতে যাওয়ার মত নয় (বুখারী ১ম খন্ড হা/১)।
প্রশ্ন (১৭/১৭৭) : যে ব্যক্তি রাত্রে শয়নকালে সূরা ইয়াসীন পাঠ করে, সে সকালে নিষ্পাপ হয়ে জেগে উঠে। উক্ত হাদীছ কি ছহীহ?
উত্তর : হাদীছটি জাল (যঈফুল জামে‘ ৫৭৮৭; মওযূ‘আত ১ম খন্ড পৃঃ ২৪৭)।
প্রশ্ন (১৮/১৭৮) : হিজড়া পশু কুরবানী করা যাবে কি না?
উত্তর : কুরবানীর জন্য উপযুক্ত বিবেচিত হ’তে হ’লে প্রাণীকে শারিরীকভাবে নিখুঁত হ’তে হবে (নাসাঈ হা/৪৩৬৯, মুওয়াত্ত্বা, তিরমিযী প্রভৃতি, মিশকাত হা/১৪৬৩, ৬৪, ৬৫)। তবে শুধু হিজড়া হওয়া মৌলিক কোন ত্রুটি নয়। সুতরাং তা কুরবানী করা বা সাধারণভাবে যবেহ করা বৈধ যদি এর গোশত ক্ষতিকর প্রমাণিত না হয়। এরূপ পশু কুরবানী দেওয়া বা না দেওয়া কুরবানীদাতার রুচির উপর নির্ভরশীল।
প্রশ্ন (১৯/১৭৯) : রাশি গণনা করা ও তার প্রতি বিশ্বাস করা কি শরী‘আত সম্মত? গণকের দেওয়া আংটি বা পাথর ব্যবহার করা যাবে কি?
উত্তর : গণকের নিকট গিয়ে রাশি গণনা করা, তার কথা বিশ্বাস করা, তার দেয়া আংটি ও পাথর ব্যবহার করা হারাম। এতে তার ৪০ দিনের ছালাত কবুল হবে না। আর সে হবে নবী (ছাঃ)-এর আনিত বিধানকে অস্বীকারকারী (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৫৯৫)।
প্রশ্নঃ (২০/১৮০) : যে সমস্ত ছালাতে সরবে ক্বিরাআত পড়ার হুকুম রয়েছে, সেই ছালাতগুলো একাকী পড়লে ক্বিরাআত নীরবে পড়া যাবে কি?
উত্তর : নীরবে পড়া যাবে না; বরং একাকী হলেও সরবে পড়তে হবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৬/৪১১ পৃঃ)। তবে মাসবূক ব্যক্তি নিম্নস্বরে ক্বিরাআত পড়বে। যাতে অন্য মুছল্লীর সমস্যা না হয় (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৬/৪১৫ পৃঃ)।
প্রশ্ন (২১/১৮১) : জানাযার ছালাত পড়াতে গিয়ে ইমাম ভুল করলে করণীয় কী? এই ভুলের জন্য মুক্তাদী দায়ী হবে কি?
উত্তর : ইমাম ভুল করে ছালাত শেষ করলে তার জন্য আর কিছু করণীয় নেই। কারণ জানাযার ছালাতে কোন লোকমা নেই (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২০৭ পৃঃ)। তাই ইমাম-মুক্তাদী কেউ দায়ী হবেন না।
প্রশ্ন (২২/১৮২) : কালোজিরার গুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তরঃ কালোজিরাতে মৃত্যু ছাড়া সকল রোগের ঔষধ রয়েছে (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪৫২০)।
প্রশ্ন (২৩/১৮৩) : হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, মানুষ মারা গেলে সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু অন্য হাদীছে রয়েছে, মৃত্যুর পর তার পক্ষ থেকে হজ্জ ও ছাদাক্বা করলে তাও পৌঁছে। এই দুই হাদীছের সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর : উক্ত হাদীছে তার নিজস্ব আমল বন্ধ হওয়ার কথা বলা হয়েছে (মুসলিম, মিশকাত হা/২০৩)। কিন্তু তার নামে কেউ হজ্জ বা ছাদাক্বা করলে তা তার কাছে পৌঁছবে। কারণ এটা তার করা আমল নয় (মুসলিম, মিশকাত হা/১৯৫০)।
প্রশ্ন (২৪/১৮৪) : জনৈকা মহিলার ২ জন মেয়ে ছাড়া আর কেউ নেই। সে সমানভাবে দুই মেয়েকে সমস্ত সম্পদ লিখে দিয়েছে। তার উক্ত কাজ কি শরী‘আত সম্মত হয়েছে? বর্তমানে সে মৃত।
উত্তর : কাজটি বৈধ হয়নি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ প্রত্যেক হকদারকে তার হক দিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং কোন ওয়ারিছের জন্য কোন অছিয়ত নেই’ (আবুদাঊদ হা/৩৫৬৫, সনদ ছহীহ)।
কোন ব্যক্তি যদি পুত্র ছাড়া কেবল একটি মেয়ে রেখে মারা যায়, তাহ’লে সে মেয়েটি তার যাবতীয় সম্পদের অর্ধেক পাবে। আর দু’জন বা তদোধিক হ’লে দুই তৃতীয়াংশ পাবে। কন্যাগণের অংশ এর বেশী নেই। বাকীটা আছাবা সূত্রে অন্য উত্তরাধিকারীগণ পাবেন (নিসা ১১)।
প্রশ্ন (২৫/১৮৫) : জনৈক আলেম বলেন, যে ইমাম বা খত্বীবের হজ্জ করা ও যাকাত দেওয়ার সাধ্য নেই, তিনি হজ্জ ও যাকাতের আলোচনা করতে পারবেন না। উক্ত দাবী কি ঠিক?
উত্তর : উক্ত দাবী সঠিক নয়। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তোমরা আমার পক্ষ হ’তে একটি আয়াত জানা থাকলেও তা অন্যকে পৌঁছে দাও’ (বুখারী, মিশকাত হা/১৯৮, ‘ইলম’ অধ্যায়)।
প্রশ্ন (২৬/১৮৬) : ‘বিসমিল্লাহ’র পরিবর্তে ৭৮৬ লেখা যাবে কি?
উত্তর : এরূপ সাংকেতিক সংখ্যায় বিসমিল্লাহ লেখা যাবে না। ‘বিসমিল্লাহ’-এর শব্দগুলোর বিশেষ গাণিতিক মান বের করে ৭৮৬ সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। ব্যবহারকারীরা মনে করে, এর দ্বারা ‘বিসমিল্লাহ’-কে যত্রতত্র অমর্যাদাকর ব্যবহার থেকে রক্ষা করা যায়। এটা নিতান্তই বালসুলভ চিন্তা। ‘বিসমিল্লাহ’কে ‘বিসমিল্লাহ’-এর জায়গায় রেখেই এর মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে; অস্পষ্ট সংকেতে উচ্চারণেই বরং এর প্রতি চরম অবমূল্যায়ন হয়।
প্রশ্ন (২৭/১৮৭) : কেউ যদি বলে কুরআনের কসম বা কা‘বার কসম তাহ’লে কি শিরক হবে?
উত্তর : মানুষ কসম করতে পারে কেবলমাত্র আল্লাহ্র নামে (বুখারী হা/৩৮৩৬, মুসলিম হা/৪৩৪৮)। অন্যের নামে কসম করা শিরক (তিরমিযী, সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/৩৪১৯)। ইবনুল আরাবী বলেন, যদি কোন ব্যক্তি জেনে-শুনে এরূপ শপথ করে, সে ব্যক্তি কাফির। আর যদি কেউ অজ্ঞতার বশে বা নিজের অজান্তে বলে ফেলে, তবে পরক্ষণেই لا اله الا الله বললে তার অন্তর ভুল থেকে সঠিকতার দিকে ঘুরে যায় (ফাৎহুল বারী হা/৪৫৭৯)।
প্রশ্ন (২৮/১৮৮) : আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘ওয়া খালাক্বনা -কুম আযওয়া-জা’। এর দ্বারা কি শুধু মানুষের কথা বলা হয়েছে? যদি তাই হয় তাহলে এক ব্যক্তি দু’টি বা তিনটি বিয়ে করে কেন? উক্ত আয়াতের ব্যখ্যা সম্পর্কে জানতে চাই।
উত্তর : এখানে জোড়া জোড়া সৃষ্টির অর্থ ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের নর ও মাদী সৃষ্টি করা (তাফসীরে ফাৎহুল ক্বাদীর ৫ম খন্ড, পৃঃ ২৬৪)।
প্রশ্ন (২৯/১৮৯) : ছালাতে কাতারবন্দী হওয়ার সময় ডান থেকে কাতার করবে না বাম থেকে?
উত্তর : ইমামের পিছন থেকে কাতারবন্দি হবে, যাতে ইমাম মাঝখানে হয় এবং তার ডানে ও বামে মুছল্লী সমান হয়। আনাস বিন মালেক বলেন, একদা নবী করীম (ছাঃ) ছালাত আদায় করলেন। তখন আমি ও আমার ছোট ভাই তাঁর পিছনে দাঁড়ালাম। আমার বৃদ্ধা মা উম্মে সুলায়েম দাঁড়ালেন আমাদের পিছনে (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১১০৮)। উক্ত হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, দ্বিতীয় কাতারের মুছল্লীরাও ইমামের পিছন থেকে কাতারবন্দি হবে। এক্ষণে ছালাতের দ্বিতীয় কাতারে ডান দিক থেকে দাঁড়ানোর যে প্রথা সমাজে চালু আছে সঠিক নয়।
প্রশ্ন (৩০/১৯০) : পাশাপাশি দুইটি পৃথক মসজিদের একটিতে পরুষ ও একটি মহিলা ছালাত আদায় করে থাকে। সাউন্ড বক্সের মাধ্যমে একই সঙ্গে জামা‘আত করা যাবে কি?
উত্তর : যাবে। যদি দেখে বা শুনে ইমামের রকূ, সিজদা, কওমা বুঝা যায় তাহ’লে অন্য মসজিদ বা অন্য স্থান থেকেও জামা‘আতে ছালাত আদায় করা জায়েয। মুক্তাদী ও ইমামের মাঝখানে রাস্তা বা দেয়াল থাকলেও কোন দোষ নেই, যদি মুক্তাদী ইমামের তাকবীরে তাহরীমা সহ সব তাকবীর শুনতে পায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর শয়নকক্ষে রাত্রির নফল ছালাত আদায় করেন। কক্ষের বাহির থেকে লোকেরা তাঁর ইক্তেদা করে দুই বা তিন রাক‘আত (বুখারী, ‘আযান’ অধ্যায়, হা/৭২৯, অনুচ্ছেদ-৮০)।
তবে এজন্য স্থানিক নৈকট্য থাকতে হবে। রেডিও বা টিভির মাধ্যমে ইক্তেদা করে দূরবর্তী স্থানে ছালাত আদায় করা যাবে না (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৮০ টীকা দ্রঃ)।
প্রশ্ন (৩১/১৯১): জনৈক পাকিস্থানী ইমাম বলেন, ছালাতের পূর্বে টাখনুর নীচের কাপড় গুটিয়ে নিয়ে অনেকে ছালাত আদায় করে। এতে তার ছালাত হবে না। এর সত্যতা জানতে চাই।
উত্তর : মূলতঃ টাখনুর নীচে কাপড় পরিধান করা ও ছালাত আদায় দু’টি দুই বিষয়। টাখনুর নীচে কাপড় পরা নিঃসন্দেহে একটি বড় অপরাধ যা বহু ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত (মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/৪৩১১)। সেটা ছালাতের মধ্যে হোক আর ছালাতের বাইরেই হোক। একজন প্রকৃত মুসলিমের জন্য এরূপ দ্বিমুখী আচরণ অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
প্রশ্ন (৩২/১৯২) : তাবলীগের জনৈক মুরববী বলেন, আল্লাহ যার প্রতি দিনে দশবার রহমতের দৃষ্টিতে তাকান তার জামা‘আতে ছালাত পড়ার সুযোগ হয়। আর যার দিকে ৪০ বার রহমতের দৃষ্টিতে তাকান তার হজ্জ করার সৌভাগ্য হয়। আর যার দিকে ৭০ বার তাকান তার তাবলীগে যাওয়ার সুযোগ হয়। উক্ত বক্তব্য কি সঠিক।
উত্তর : উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ বানাওয়াট ও ভিত্তিহীন। এখানে প্রচলিত বিদ‘আতী তাবলীগে যাওয়ার বিষয়টিকে জামা‘আতে ছালাত আদায় ও হজ্জ করার চাইতে উত্তম কাজ বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়েছে। অতএব এইসব বিদ‘আতীদের সঙ্গ ত্যাগ করা উচিত। এদের কোন বয়ান শুনবেন না এবং এদের কোন বইও পড়বেন না।
প্রশ্ন (৩৩/১৯৩) : যে ব্যক্তি কুরআন তেলাওয়াত করবে ও তার হালালকে হালাল ও হারামকে হারাম জ্ঞান করে আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। সেই সাথে তার পরিবারের এমন দশজন লোকের সুফারিশ কবুল করা হবে যাদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত। হাদীছটি তাফসীর মাহফিলে বলা হয়ে থাকে। হাদীছটির সনদ সম্পর্কে জানতে চাই?
উত্তর : হাদীছটি অত্যন্ত যঈফ। ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন, উক্ত হাদীছের সনদে হাফছ ইবনু সুলায়মান নামক একজন দুর্বল রাবী আছে (যঈফ তিরমিযী হা/২৯০৫; ‘ফাযায়েলুল কুরআন’ অধ্যায়; মিশকাত হা/২১৪১)।
প্রশ্ন (৩৪/১৯৪) : কী পরিমাণ সম্পদ থাকলে হজ্জ করা ফরয?
উত্তর : নিরাপদ ও সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ দৈহিক সক্ষমতা থাকলে এবং আর্থিকভাবে কা‘বা ঘরে যাওয়া ও আসার সমপরিমাণ সম্পদ থাকলে তার ওপর হজ্জ ফরয (আলে ইমরান ৯৭)। অনেকের উপর হজ্জ ফরয হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন অজুহাতে অলসতা করেন। অথচ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি হজ্জের সংকল্প করে, সে যেন দ্রুত সেটা সম্পাদন করে’ (আবুদাঊদ, দারেমী, মিশকাত হা/২৫২৩)।
প্রশ্ন (৩৫/১৯৫) : চার ইমামের মধ্যে কোন্ কোন্ ইমাম ছালাতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন?
উত্তর : প্রসিদ্ধ চার ইমামের মধ্যে ইমাম আবু হানীফা ছাড়া বাকী তিন ইমাম ছালাতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন। ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) শুধু তাকবীরে তাহরীমার সময় রাফ‘উল ইয়াদাইন করতেন (ZzndvZzj AvnIqvhx 1g LÊ 548 c„t)|
প্রশ্ন (৩৬/১৯৬) : মানুষ ও জিন যে বয়সে মারা যায় ক্বিয়ামতের দিন কি সেই বয়সেই উঠানো হবে?
উত্তর : ঐ সময় জান্নাতীদের বয়স ৩০ অথবা ৩৩ হবে (তিরমিযী হা/২৫৪৫; মিশকাত হা/৫৬৩৯ ‘ক্বিয়ামতের অবস্থা’ অধ্যায় ‘জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ-৫)। অনুরূপ বয়স হবে জাহান্নামীদের। তবে উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (তিরমিযী হা/২৫৬২; মিশকাত হা/৫৬৪৮)। জিনদের বয়স কত হবে সে সম্পর্কে কিছু জানা যায় না। তবে একই রূপ হবে বলে অনুমতি হয়। আল্লাহ সর্বাধিক অবগত। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ক্বিয়ামতের দিন যখন ইসরাফীল (আঃ) দ্বিতীয় ফুঁৎকার দিবেন তখন মানুষকে নগ্নপদে, নগ্নদেহে ও খাতনা বিহীন অবস্থায় উঠানো হবে (সূরা আম্বিয়া ১০৪; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫৫৩৫ ও ৫৫৩৬)।
প্রশ্ন (৩৭/১৯৭) : ঈদে মীলাদুন্নবীর নামে যে মিছিল বা জশনে জুলূসের প্রচলন দেশে রয়েছে তার বিপরীতে একই দিনে যদি সীরাত মাহফিল বা রাসূল (ছাঃ)-এর জীবনী আলোচনা সমাবেশ অথবা কোন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় তাতে কি গোনাহ হবে?
উত্তর : বলার অপেক্ষা রাখে না ঈদে মীলাদুন্নবী একটি সুস্পষ্ট বিদ‘আত, যা ৬০৫ মতান্তরে ৬২৫ হিজরীতে ইরাকে প্রথম চালু হয়। তাই এ দিনকে উপলক্ষ করে যা কিছুই করা হোক না কেন তা বিদ‘আতী আমল হিসাবে গণ্য হবে (লাজনা দায়েমা, ফৎওয়া নং ৫৭২৩)। রাসূল (ছাঃ)-এর জীবনী ও তাঁর নির্দেশিত পথ সম্পর্কে জানার জন্য বছরের নির্দিষ্ট কোন দিন নয়, বরং সারা বছরই উন্মুক্ত। এর জন্য বছরের সেই দিনকেই যদি নির্দিষ্ট করা হয় যে দিনটি বিদ‘আতী আমল উদযাপনের জন্য সুপ্রসিদ্ধ, তবে তাও নিঃসন্দেহে বিদ‘আতী আমল হিসাবে গণ্য হবে। সন্দেহ নেই যে, বিদ‘আত এমন পাপ যা আল্লাহ্র গযবকে ত্বরান্বিত করে। আর এদিন উপলক্ষে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা আরও গোনাহের কাজ।
প্রশ্ন (৩৮/১৯৮) : ভূমিকম্পের আলামত পশু-পক্ষী জানতে পারে কি?
উত্তর : উক্ত বিষয় সম্পর্কে শারঈ কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না।
প্রশ্ন (৩৯/১৯৯) : যে বিবাহ অনুষ্ঠানে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, গান-বাজনা ও শরী‘আত বিরোধী কার্যকলাপ হয়, সেই দাওয়াতে অংশগ্রহণ করা যাবে কি?
উত্তর : এধরনের দাওয়াতে অংশ গ্রহণ করা উচিত নয়। আল্লাহ তাঁর রাসূলকে বলেন, ‘ঐসব লোকদের পরিত্যাগ করুন যারা তাদের ধর্মকে ক্রীড়া ও কৌতুকরূপে গ্রহণ করেছে এবং পার্থিব জীবন যাদেরকে ধোঁকায় ফেলেছে (আন‘আম ৭০)।
প্রশ্ন (৪০/১০০) : যাদের নেকী ও গুনাহ সমান হবে তারা জান্নাতে যাবে না জাহান্নামে যাবে?
উত্তর : তারা জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে একটি উঁচু জায়গায় অবস্থান করবে। তারাই হবে আ‘রাফবাসী (তাফসীরে ইবনে কাছীর ১/২২৫ পৃঃ, সূরা আ‘রাফ ৪৬ ও ৪৭ নং আয়াতের আলোচনা দ্রঃ)।

No comments:

Post a Comment