প্রশ্নঃ ১৫-ই আগস্ট ‘জাতীয় শোক দিবস’ পালন করা কোন মুসলিমের জন্য বৈধ কিনা?
উত্তরঃ ১৫-ই আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি স্বরণীয় তারিখ। ১৯৭৫ সালের এই দিনে তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান শেখ মুজিবর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়। একজন মুসলিম হিসাবে এধরণের হত্যাকাণ্ডে আমরা ব্যাথিত। অতঃপর আমরা বলতে চাই যে, এই দিবসকে কেন্দ্র করে আমাদের দেশে যা কিছুর প্রচলন আছে, ইসলাম তার কোনটাকেই সমর্থন করে না। নিম্নে আমরা ১৫-ই আগস্ট উপলক্ষ্যে ‘ইসলাম বিরোধী’ যা কিছু হয়, অত্যন্ত সংক্ষিপ্তভাবে সেইগুলো উল্লেখ করছি এবং একজন মৃত মুসলিমের জন্য আমরা যারা জীবিত আছি, তাদের কি করনীয় সে সম্পর্কেও আলোচনা করার চেষ্টা করছি।
=============
শোকসভার আয়োজনঃ
মৃত ব্যক্তির জন্য শোক প্রকাশের উদ্যেশ্যে কোন নির্দিষ্ট জায়গায় (যেমন- মসজিদ, শিক্ষা প্রতিস্থান, কমিউনিটি সেন্টার ইত্যাদিতে) একত্রিত হওয়া বিদআ’ত। সেটা মৃত্যুর তিনদিন পরে ‘কুলখানি’ হোক , চল্লিশ দিন পরে ‘চল্লিশা’ হোক, আর বাৎসরিক ‘মৃত্যুবার্ষিকী’ হোক, অথবা অনির্দিষ্ট যে কোন দিনে ‘স্বরণসভা’ হোক না কেন।
উত্তরঃ ১৫-ই আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি স্বরণীয় তারিখ। ১৯৭৫ সালের এই দিনে তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান শেখ মুজিবর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়। একজন মুসলিম হিসাবে এধরণের হত্যাকাণ্ডে আমরা ব্যাথিত। অতঃপর আমরা বলতে চাই যে, এই দিবসকে কেন্দ্র করে আমাদের দেশে যা কিছুর প্রচলন আছে, ইসলাম তার কোনটাকেই সমর্থন করে না। নিম্নে আমরা ১৫-ই আগস্ট উপলক্ষ্যে ‘ইসলাম বিরোধী’ যা কিছু হয়, অত্যন্ত সংক্ষিপ্তভাবে সেইগুলো উল্লেখ করছি এবং একজন মৃত মুসলিমের জন্য আমরা যারা জীবিত আছি, তাদের কি করনীয় সে সম্পর্কেও আলোচনা করার চেষ্টা করছি।
=============
শোকসভার আয়োজনঃ
মৃত ব্যক্তির জন্য শোক প্রকাশের উদ্যেশ্যে কোন নির্দিষ্ট জায়গায় (যেমন- মসজিদ, শিক্ষা প্রতিস্থান, কমিউনিটি সেন্টার ইত্যাদিতে) একত্রিত হওয়া বিদআ’ত। সেটা মৃত্যুর তিনদিন পরে ‘কুলখানি’ হোক , চল্লিশ দিন পরে ‘চল্লিশা’ হোক, আর বাৎসরিক ‘মৃত্যুবার্ষিকী’ হোক, অথবা অনির্দিষ্ট যে কোন দিনে ‘স্বরণসভা’ হোক না কেন।
কোথাও কোথাও এ রীতি প্রচলিত রয়েছে, মৃত্যুর চল্লিশতম দিনে, অথবা প্রতি বৎসর মৃত্যুদিবসে শোকসভার ও খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করা হয়। এ ধরনের দিবস নির্ধারিত করে শোকসভার আয়োজন করার শারঈ’ কোন ভিত্তি নেই। এ কাজ পরবর্তী যুগের মানুষদের মনগড়া উদ্ভাবন যা নিঃসন্দেহ একটি বিদাআ’ত কাজ। ইমাম বিন বায (রহঃ) ‘আহকামুল জানায়িয’ গ্রন্থে (পৃষ্ঠা ১১৪-১১৫) বলেনঃ “এই রীতি ইসলাম পূর্ব যুগে মিসরের ফিরআ’উনদের মাঝে প্রচলিত ছিল। পরবর্তীতে তা বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীর মধ্যে বিস্তার লাভ করে’।’
==========
শোক প্রকাশের উদ্যেশ্যে কালো পোশাক কিংবা ব্যাজ পরিধান করাঃ
বর্তমানে দেখা যায় যে, শোক প্রকাশের জন্য মৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা এবং মৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবরা ‘কালো পোশাক’ বা ‘কালো ব্যাজ’ ধারন করে থাকে। এ কাজেরও শারঈ’ কোন ভিত্তি নেই।
======
শোক কতদিন পালন করবে?
স্বামী মারা গেলে মহিলার জন্য ‘ইদ্দত’ (৪ মাস ১০ দিন) পর্যন্ত শোক পালন করা ‘ওয়াজিব’ এবং, অন্যদের জন্য তিন দিনের বেশী শোক পালন নিষিদ্ধ।
উম্মু হাবীবা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ “আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী কোন মহিলার জন্য কারো মৃত্যুতে তিন দিনের বেশী শোক পালন করা বৈধ নয়। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুতে চার মাস দশ দিন শোক পালন করবে।’’
সহীহ বুখারীঃ ১২৮০; মুসলিমঃ ১৪৮৬।
উম্মু আতিয়াহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ “কোন মৃত ব্যক্তির জন্য আমাদেরকে তিন দিনের অধিক শোক পালন করা হতে নিষেধ করা হতো। কিন্তু স্বামীর ক্ষেত্রে চার মাস দশ দিনের অনুমতি ছিল।’’
সহীহ বুখারীঃ ৩১৩, ১২৭৮,১২৭৯, ৫৩৪০-৫৩৪৩; মুসলিম ৯৩৮; আল-লু’লু ওয়াল মারজান ৯৫১
=======
জীবিত ব্যাক্তিদের যে সমস্ত কর্ম দ্বারা মৃত ব্যাক্তি উপকৃত হয়ঃ
# যেকোনো মুসলিম ব্যাক্তি কর্তৃক মৃত মুসলিম ব্যাক্তির জন্য দু’আঃ
“হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ও ঈমানে অগ্রণী আমাদের ভাইদেরকে তুমি ক্ষমা কর। আর যারা ঈমান এনেছে তাদের ব্যাপারে আমাদের অন্তরে কোন হিংসা-বিদ্বেষ রেখ না।’’ [সুরা হাশরঃ ১০]
রাসুল (সাঃ) বলেনঃ “একজন মুসলিম বান্দাহ তার ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার জন্য দুআ’ করলে তা কবুল হয়।’’ [সহীহ মুসলিমঃ ৬৮২২]
# আবু হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ “মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে তখন তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়, শুধুমাত্র তিন প্রকার আমল ছাড়াঃ
১. সাদকাহ জারিয়াহ,
২. এমন ‘ইলম’ যার দ্বারা লোকেরা উপকৃত হওয়া যায়,
৩. এমন সুসন্তান, যে তার জন্য দু’আ করবে।’’
সহীহ মুসলিমঃ ৪১১৫।
# মৃত ব্যাক্তির পক্ষ থেকে মানতের সওম পালন করাঃ
ইবন আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। এক মহিলা সমুদ্র ভ্রমনকালীন সময়ে নযর মেনে ছিল যে, তাকে যদি আল্লাহ্ রক্ষা করেন তাহলে একমাস সওম পালন করবে। তাকে আল্লাহ্ তায়ালা রক্ষা করেন কিন্তু সওম আদায় করার পূর্বেই সে মারা যায়। তার মেয়ে অথবা তার বোন রাসুল (সাঃ) এর নিকট এ ব্যপারে করনীয় জিজ্ঞেস করলে, তিনি তাকে সেই মহিলার পক্ষ থেকে সওম পালন করার নির্দেশ দিলেন।’’
আহমাদঃ ১৯০৪৮; আবু দাউদঃ ২৮৭৭; নাসাঈঃ ৩৭৫৬।
# “মৃত ব্যাক্তির পক্ষ থেকে ঋণ আদায় করা।’’
ইবনু মাযাহঃ ২৪২৪; আহমাদঃ ১৬৯৩।
# ‘’জানাজার সলাত আদায় করা’’ মুসলিম ১৫৭৬; তিরমিযি ৯৫০; নাসাঈ ১৯৬৪; আহমাদ ১৩৩০; ইবন মাযাহ ১২০৯
# ‘’দাফনের পর মৃত ব্যাক্তির জন্য দু’আ করা’’আবু দাউদ ৩২২১
# ‘’মৃত ব্যাক্তির পক্ষ থেকে সাদকাহ করা’’ বুখারী ১৩৮৮; মুসলিম ১০০৪, ১৬৩০; আবু দাউদ ২৮৮১; নাসাঈ ৩৬৪৯, ৩৬৫২; ইবন মাযাহ ২৭১৬, ২৭১৭; আহমাদ ৮৬২৪, ২৩৭৩০
# ‘’মৃত ব্যাক্তির পক্ষ থেকে হাজ্জ আদায় করা’’ আবু দাউদ ২৮৮৩
ইত্যাদির মাধ্যমে সহীহভাবে প্রমানিত মৃত ব্যাক্তিরা কিভাবে জীবিতদের দ্বারা উপকৃত হতে পারে।
হে সম্মানিত মুসলিম ভাই! আপনারা একটু লক্ষ্য করুন উপরোক্ত কুরআনের আয়াত ও হাদীসগুলোর মাধ্যমে প্রমানিত হয় জীবিতদের উপরোক্ত কর্মগুলোর দ্বারা মৃতরা উপকৃত হয়।
হে আমার সম্মানিত মুসলিম ভাই! আসুন আমরা কুরআন ও হাদিস অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির ব্যাপারে করনীয় সম্পর্কে সচেষ্ট হই। মহান আল্লাহ আমাদের তৌফীক দান করুন।
- ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
==========
শোক প্রকাশের উদ্যেশ্যে কালো পোশাক কিংবা ব্যাজ পরিধান করাঃ
বর্তমানে দেখা যায় যে, শোক প্রকাশের জন্য মৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা এবং মৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবরা ‘কালো পোশাক’ বা ‘কালো ব্যাজ’ ধারন করে থাকে। এ কাজেরও শারঈ’ কোন ভিত্তি নেই।
======
শোক কতদিন পালন করবে?
স্বামী মারা গেলে মহিলার জন্য ‘ইদ্দত’ (৪ মাস ১০ দিন) পর্যন্ত শোক পালন করা ‘ওয়াজিব’ এবং, অন্যদের জন্য তিন দিনের বেশী শোক পালন নিষিদ্ধ।
উম্মু হাবীবা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ “আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী কোন মহিলার জন্য কারো মৃত্যুতে তিন দিনের বেশী শোক পালন করা বৈধ নয়। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুতে চার মাস দশ দিন শোক পালন করবে।’’
সহীহ বুখারীঃ ১২৮০; মুসলিমঃ ১৪৮৬।
উম্মু আতিয়াহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ “কোন মৃত ব্যক্তির জন্য আমাদেরকে তিন দিনের অধিক শোক পালন করা হতে নিষেধ করা হতো। কিন্তু স্বামীর ক্ষেত্রে চার মাস দশ দিনের অনুমতি ছিল।’’
সহীহ বুখারীঃ ৩১৩, ১২৭৮,১২৭৯, ৫৩৪০-৫৩৪৩; মুসলিম ৯৩৮; আল-লু’লু ওয়াল মারজান ৯৫১
=======
জীবিত ব্যাক্তিদের যে সমস্ত কর্ম দ্বারা মৃত ব্যাক্তি উপকৃত হয়ঃ
# যেকোনো মুসলিম ব্যাক্তি কর্তৃক মৃত মুসলিম ব্যাক্তির জন্য দু’আঃ
“হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ও ঈমানে অগ্রণী আমাদের ভাইদেরকে তুমি ক্ষমা কর। আর যারা ঈমান এনেছে তাদের ব্যাপারে আমাদের অন্তরে কোন হিংসা-বিদ্বেষ রেখ না।’’ [সুরা হাশরঃ ১০]
রাসুল (সাঃ) বলেনঃ “একজন মুসলিম বান্দাহ তার ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার জন্য দুআ’ করলে তা কবুল হয়।’’ [সহীহ মুসলিমঃ ৬৮২২]
# আবু হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ “মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে তখন তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়, শুধুমাত্র তিন প্রকার আমল ছাড়াঃ
১. সাদকাহ জারিয়াহ,
২. এমন ‘ইলম’ যার দ্বারা লোকেরা উপকৃত হওয়া যায়,
৩. এমন সুসন্তান, যে তার জন্য দু’আ করবে।’’
সহীহ মুসলিমঃ ৪১১৫।
# মৃত ব্যাক্তির পক্ষ থেকে মানতের সওম পালন করাঃ
ইবন আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। এক মহিলা সমুদ্র ভ্রমনকালীন সময়ে নযর মেনে ছিল যে, তাকে যদি আল্লাহ্ রক্ষা করেন তাহলে একমাস সওম পালন করবে। তাকে আল্লাহ্ তায়ালা রক্ষা করেন কিন্তু সওম আদায় করার পূর্বেই সে মারা যায়। তার মেয়ে অথবা তার বোন রাসুল (সাঃ) এর নিকট এ ব্যপারে করনীয় জিজ্ঞেস করলে, তিনি তাকে সেই মহিলার পক্ষ থেকে সওম পালন করার নির্দেশ দিলেন।’’
আহমাদঃ ১৯০৪৮; আবু দাউদঃ ২৮৭৭; নাসাঈঃ ৩৭৫৬।
# “মৃত ব্যাক্তির পক্ষ থেকে ঋণ আদায় করা।’’
ইবনু মাযাহঃ ২৪২৪; আহমাদঃ ১৬৯৩।
# ‘’জানাজার সলাত আদায় করা’’ মুসলিম ১৫৭৬; তিরমিযি ৯৫০; নাসাঈ ১৯৬৪; আহমাদ ১৩৩০; ইবন মাযাহ ১২০৯
# ‘’দাফনের পর মৃত ব্যাক্তির জন্য দু’আ করা’’আবু দাউদ ৩২২১
# ‘’মৃত ব্যাক্তির পক্ষ থেকে সাদকাহ করা’’ বুখারী ১৩৮৮; মুসলিম ১০০৪, ১৬৩০; আবু দাউদ ২৮৮১; নাসাঈ ৩৬৪৯, ৩৬৫২; ইবন মাযাহ ২৭১৬, ২৭১৭; আহমাদ ৮৬২৪, ২৩৭৩০
# ‘’মৃত ব্যাক্তির পক্ষ থেকে হাজ্জ আদায় করা’’ আবু দাউদ ২৮৮৩
ইত্যাদির মাধ্যমে সহীহভাবে প্রমানিত মৃত ব্যাক্তিরা কিভাবে জীবিতদের দ্বারা উপকৃত হতে পারে।
হে সম্মানিত মুসলিম ভাই! আপনারা একটু লক্ষ্য করুন উপরোক্ত কুরআনের আয়াত ও হাদীসগুলোর মাধ্যমে প্রমানিত হয় জীবিতদের উপরোক্ত কর্মগুলোর দ্বারা মৃতরা উপকৃত হয়।
হে আমার সম্মানিত মুসলিম ভাই! আসুন আমরা কুরআন ও হাদিস অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির ব্যাপারে করনীয় সম্পর্কে সচেষ্ট হই। মহান আল্লাহ আমাদের তৌফীক দান করুন।
- ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
No comments:
Post a Comment