Sunday, November 22, 2015

ইসলামের প্রকৃত বিয়ে ও বর্তমান চিত্র।




ইসলামে নারী ও পুরুষের মধ্যে সম্পর্ক
স্থাপনের জন্য বিয়েই একমাত্র বৈধ উপায়,
একমাত্র বিধিবদ্ধ ব্যবস্থা। বিয়ে ছাড়া
অন্য কোন ভাবে নারী পরুষের মিলন ও
সম্পর্ক স্থাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বিয়ে হচ্ছে
পুরুষ ও নারীর মাঝে সামাজিক পরিবেশে ও সমর্থনে শরীয়ত মোতাবেক অনুষ্ঠিত এমন এক সম্পর্ক স্থাপন, যার ফলে দু’জনে একত্রে বসবাস ও পরস্পরে দাম্পত্য সম্পর্ক ও সন্তান উৎপাদন সম্পর্ণরূপে বৈধ হয়ে যায় এবং যার
ফলে পরস্পরের ওপর অধিকার ও দায়িত্ব
কর্তব্য অবশ্য পালনীয় হয়ে দাঁড়ায়।
রাসূলাল্লাহ (স.) বলেন, আল্লাহ “দাম্পত্য
সম্পর্ককে নৈকট্য ও আত্মীয়তার মাধ্যম
হিসেবে নিধারণ করেছেন এবং এটাকে
অবশ্যকীয় বিষয় করেছেন যার কারণে
আত্মীয়তার বন্ধন মজবুত হয়। সমগ্র মানব মানবীর মধ্যে এই বিষয়ে আকর্ষণ ও
অনুরাগকে সহজাত করেছেন এবং বংশের দ্বারা সম্মানিত করেছেন”।
এ প্রসঙ্গে সুমহান আল্লাহ বলেন:”তিনি সেই সত্তা যিনি অপবিত্র পানি হতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং বৈবাহিক সম্পর্ককে বংশ ও আত্মীয়তার অন্যতম মানদণ্ড নির্ধারণ করেছেন। আর আপনার প্রতিপালক প্রবল পরাক্রমশালী
(সূরা ফোরকান ৫৪)।
ইসলামে বিয়ের শর্ত মূলত তিনটি। প্রথমত:ছেলে এবং মেয়ে দু’জন দু’জনকে অবশ্যই পছন্দ হতে হবে।
সাক্ষী থাকবে দু’জন এবং মেয়েকে
দেনমোহর দিতে হবে। ছেলের সামর্থ
অনুযায়ী যে দেনমোহর দিতে সক্ষম তা
মেয়ে যদি মেনে নেয় তাহলেই হবে
ইসলামের বিয়ে। কিন্তু আমরা যদি সমাজের দিকে তাকিয়ে দেখি তাহলে দেখতে পাই ইসলামের সম্পূর্ণ বিপরীত।
আমাদের সমাজে একজন পাত্রের অভিভাবক কোরবানীর হাটের গরুর মত পাত্রের দাম হাকেন। যে যত দাম বেশী দেবে বিয়েটা শেষ পর্যন্ত সেখানেই হয়। এখানে অভিভাবকরা পাত্র পাত্রীর পছন্দ অপছন্দের মূল্যায়ন করে কম।
আর মেয়ের অভিভাবকরা একটা মেয়েকে
পার করার জন্য পাত্র পক্ষের চাহিদা পূরণ
করার জন্য সাধ্যের বাইরে চেষ্টা করেন,
অনেক সময় দেখা যায় পাত্র পক্ষের এই
চাহিদা পূরণ করার জন্য জায়গা-জমি, সহায়- সম্পত্তিও বিক্রি করতে হয়। তারপরও যদি শ্বশুর বাড়ির নির্যাতন থেকে নিস্তার পাওয়া যেত! নববধুর হাতের মেহেদীর রং মুছতে না মুছতেই শুরু হয় নতুন উৎপীড়ন।
প্রতিদিন যৌতুকের বলী হচ্ছেন হাজার
হাজার নারী, কাউকে আত্মহত্যা করতে
বাধ্য করা হচ্ছে। কতগুলো ঘটনা আমরা
জানি আর কতগুলো ঘটনা আমাদের
অজানাই থেকে যায়। আমরা যদি
মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলোর দিকে
তাকাই তাহলে আমাদের উপমহাদেশের
বিপরীত চিত্র দেখতে পাবো। সেখানে
পাত্রীর অভিভাবকরা মোটা অংকের
দেনমোহর হাঁকেন, যা একজন পাত্রের
সাধ্যের বাইরে। তাই সেখানে একজন ছেলে বিয়ে করার আগেই প্রায় প্রৌঢ়ত্বে
পদার্পণ করেন, অনেকে বিবাহে আগ্রহ
হারিয়ে ফেলেন, অনেকে তাদের চাহিদা
পূরণ করতে হয় আরব উপমহাদেশের বাইরে গিয়ে অবৈধ উপায়ে। পাশ্চাত্য সমাজের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, সেখানে নারী পুরুষরা বিয়েকে একটা বোঝা হিসাবে মনে করে। ওদের দর্শন হল, অর্থ উপার্জন কর এবং যত পারো ভোগ কর।
যতদিন যৌবন থাকে এই দর্শনে তারা
বিশ্বাসী থাকে, পরে যখন জীবন
বার্দ্ধক্যের দিকে ঝুঁকতে থাকে এই দর্শনের
প্রতি আস্থাও কমতে থাকে, লক্ষ লক্ষ
নারী-পুরুষ পড়ে অনিশ্চয়তায়। কোন পরিবার নেই, মনের ভাব আদান-প্রদান করার কেউ নেই। প্রচণ্ড হতাশায় দিন কাটাতে হয়। এই হতাশা কাটাতে নির্ভর করতে হয় মাদকের ওপরে, জীবনের উপার্জিত সম্পদ ব্যয় হতে থাকে মাদক আর বিভিন্ন অপরাধমূলক
কর্মকাণ্ডে। একসময় হাসপাতালে বা
বৃদ্ধাশ্রমে প্রাণত্যাগ করে।
বর্তমানে আমাদের সমাজে একটা বিয়ে
মানেই পাত্র এবং পাত্রী উভয় পক্ষের
অর্থের অপচয়। অথচ আমরা যদি রসূলুল্লাহর (স.) আদরের মেয়ে জান্নাতের রাণী ফাতেমাকে (রা.) বিয়ে দিলেন তাঁর
চাচাতো ভাই আলীর (রা.) সঙ্গে। বিয়ে
ঠিক হবার পর রসূলুল্লাহ (স.) আলীকে (রা.) জিজ্ঞেস করলেন তাঁর কাছে কি আছে? আলী (রা.) জবাব দিলেন কিছুই নেই। থাকার মধ্যে আছে একটি ঘোড়া, একটি তলোয়ার আর একটি লোহার বর্ম। মহানবী (স.) তাকে বললেন, ‘আর কিছুই যখন নেই তখন বর্মটি বিক্রি করে অর্থ নিয়ে এসো।’ তাই করা হলো এবং ঐ অর্থ দিয়ে বিয়ের খরচ চালানো হলো এবং দেনমোহর হলো চারশত মিসকাল রূপা।
আরেকটি উদাহরণ।
দিই- একজন সাহাবীর বিয়ের প্রশ্ন উঠলে
রসূলুল্লাহ (স.) তাকে জিজ্ঞেস করলেন,
‘দেনমোহর দেওয়ার মত তোমার কি আছে?
সাহাবী বললেন, ‘আমার কোন কিছুই তো
নেই।’ রসূলুল্লাহ (স.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি কুরআনের কোন আয়াত জানো?
সাহাবী বললেন, ‘হ্যাঁ। আমি কুরআনের
এতগুলি আয়াত জানি।’ রসূলুল্লাহ (স.) বললেন, ‘তোমার দেনমোহর হচ্ছে তুমি এই আয়াতগুলি তোমার স্ত্রীকে শিক্ষা
দেবে।’ তখন এভাবেই বিয়ে হল। চিন্তা করে দেখুন ইসলামের বিয়ে কত সাধারণ ও সহজ!
আল্লাহর রাসূল (স.) কি পারতেন না তাঁর
আদরের কন্যার বিয়ে অতি জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে দিতে? কিন্তু প্রকৃত ইসলাম বর্তমান সমাজের এই অপচয় মোটেও সমর্থন করে না।

No comments:

Post a Comment