আল্লামা আব্দুল আযীয বিন আব্দল্লাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহ বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, (إن الله خلق آدم على صورته) নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা আদমকে তাঁর আকারে-আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। ইমাম বুখারী এবং মসুলিম এই হাদীছ বর্ণনা করেছেন। এখানে صورته এর মাধ্যকার (ه )সর্বনামটি আল্লাহ তাআলার দিকেই প্রত্যাবর্তন করেছে। অর্থাত আদমকে আল্লাহর আকৃতিতে সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে কতক আলেম বলেছেন, যমীর বা সর্বনামটি আদমের দিকেই ফিরেছে। অর্থাত আল্লাহ তাআলা আদমকে আদমের জন্য নির্দিষ্ট আকৃতিতেই সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু মুহাক্কেক আলেমগণ তাদের প্রতিবাদ করেছেন। ইমাম আহমাদ বিন হান্বাল, ইসহাক বিন রাহওয়াইসহ একদল আলেম বর্ণনা করেছেন যে, যমীরটি আল্লাহর দিকেই ফিরেছে। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া এবং তার সুযোগ্য শিষ্য ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুমাল্লাহ বলেছেন যে, সর্র্বনামটি আল্লাহর দিকেই ফিরেছে।
সেই হিসাবে হাদীছের অর্থ হলো আল্লাহ তাআলা আদমকে তাঁর সুরতে অর্থাত শ্রবণকারী, দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন, বাকশক্তি সম্পন্ন এবং ইচ্ছাশক্তি ও স্বেচ্ছায় কর্ম সম্পাদনকারী হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। এতে করে সাব্যস্ত হয়না যে, আদম হুবহু আল্লাহর মতই। নাউযুবিল্লাহ। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ﴿ لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَ هُوَ السَّميْعُ الْبَصِيْر﴾ “তাঁর সদৃশ আর কোনো কিছুই নেই। তিনি সর্বশ্রোতা এবং সর্বদ্রষ্টা”। (সূরা শুরাঃ ১১) আল্লাহ তাআলা সূরা ইখলাসে বলেন,
﴿قل هواللَّهُ الأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِى لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ﴾
“হে নবী তুমি বলো! আল্লাহ একক, অমূখাপেক্ষী, তিনি কাউকে জন্ম দেন নি। তিনি কারো জাত নন এবং তাঁর সমকক্ষও কেউ নেই”।
সুতরাং على صورته এর মধ্যে কোনো তাশবীহ নেই। অর্থাত এটি আবশ্যক হয়না যে, আদম সকল দিক বিবেচনায় আল্লাহর মতই। এটিই সত্য ও সঠিক কথা।
কতক লোক তাশবীহ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় صورته এর মধ্যকার যমীরকে আল্লাহর দিকে ফিরাতে অস্বীকার করেছেন। আল্লাহর সাথে আদমের তাশবীহ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ইমাম ইবনে খুযায়মা তার كتاب التوحيد এর মধ্যে صورته এর ه সর্বনামকে আল্লাহর দিকে ফিরানোর প্রতিবাদ করেছেন। তার এই মত সঠিক নয়। তাই আলেমগণ তার প্রতিবাদ করেছেন। তারা বলেছেন, এখান থেকে কোনাভাবেই তাশবীহ আবশ্যক হয়না। ইমাম আহমাদ বিন হান্বাল, ইমাম ইসহাক বিন রাহওয়াই, ইবনে কুতাইবা এবং আরো অনেক আলেম বলেছেন, (ه) সর্বনামটি আল্লাহর দিকে ফিরলেও তাতে তাশবীহ আবশ্যক হয়না।
ইমাম যাহাবী, শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া, ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহ এবং অন্যান্য আলেম বলেছেন, সঠিক কথা হলো যমীরটি আল্লাহর দিকেই ফিরেছে। এই জন্যই অন্য একটি সহীহ হাদীছে এসেছে, (خلق آدم على صورة الرحمن) আদমকে পরম করুনাময় আল্লাহর সুরতে সৃষ্টি করা হয়েছে। এখানে সর্বনামটি সুস্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে। এতে বুঝা যাচ্ছে যে, صورته মধ্যকার সর্বনামটি আল্লাহর দিকেই ফিরেছে। সুতরাং আদমকে রাহমানের সুরাতেই সৃষ্টি করা হয়েছে। অর্থাত আদম শ্রবণকারী, দ্রষ্টা এবং সে যখন ইচ্ছা কথা বলতে পারে। এমনি আরো অন্যান্য সিফাত দিয়ে আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে এতে কোনো তাশবীহ কিংবা আল্লাহর সিফাতের ধরণ বর্ণনা করা আবশ্যক হয়না। কেননা আল্লাহর কোনো মেছাল ও সদৃশ নেই। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
﴿ لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَ هُوَ السَّميْعُ الْبَصِيْر﴾ “তাঁর সদৃশ আর কোনো কিছুই নেই। তিনি সর্বশ্রোতা এবং সর্বদ্রষ্টা”। আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, فَلاَ تَضْرِبُواْ لِلّهِ الأَمْثَالَ “তোমরা আল্লাহর সদৃশাবলী স্থির করোনা। (সূরা নাহালাঃ ৭৪)
উপরোক্ত হাদীছে আদমের সাথে আল্লাহর তাশবীহ দেয়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উদ্দেশ্য ছিলনা। বরং এখানে আদমের সম্মান ও মর্যাদা বর্ণনা করা উদ্দেশ্য ছিল। তিনি আদমকে তাঁর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। এই জন্যই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের চেহারায় মারতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন, (إن الله خلق آدم على صورته) নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা আদমকে তাঁর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। (বুখারী এবং মসুলিম) সুতরাং কোনো মুমিনের জন্য কারো চেহারায় আঘাত করা বৈধ নয়। চেহারায় প্রহার করা এবং চেহারাতে উলকি চিহ্ন অঙ্কন করা জায়েয নয়। বরং যেই সহীহ হাদীছে মানুষের চেহারায় প্রহার করতে নিষেধ করা হয়েছে, সে অনুযায়ী আমল করা আবশ্যক। আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক অবগত রয়েছেন
No comments:
Post a Comment