উত্তর : কাজগুলো নিম্নে দেখা যাক-
১. সন্তানের মৃত্যতে ধৈর্য ধারণ করা ও আল্লাহ্র প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা। আল্লাহ্র রাসূল (সা:) বলেন: “যখন কোনও ব্যক্তির সন্তান মারা যায়, মহান আল্লাহ্ ফেরেশতাদের জিজ্ঞেস করেন: তোমরা কি আমার বান্দার সন্তানের জান কবজ করেছো? ফেরেশতারা বলবেন: হ্যাঁ। আল্লাহ্ আবার বলেন: তোমরা কি তার কলিজার টুকরোকে কবজ করেছো? তারা বলেন: হ্যাঁ। আল্লাহ্ বলেন: আমার বান্দা কী বললো? ফেরেশতারা বলেন: সে আপনার প্রশংসা করেছে এবং নিজেকে নিবৃত রেখেছে। আল্লাহ্ বলেন: আমার বান্দার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি বানাও এবং এর নাম দাও “বায়তুল-হামদ” (প্রশংসাগৃহ)”। [আহ্মাদ, তিরমিযী]
২. জামাতের নামাজে কাতারের ফাঁক বন্ধ করা। আল্লাহ্র রাসূল (সা:) বলেন: “যে ফাঁক বন্ধ করলো আল্লাহ্ তার জন্য জান্নাতে বাড়ি বানান এবং এই কাজের জন্য তার মর্যাদাকে বৃদ্ধি করেন”। [আহ্মাদ, আত-তাবারানী]
৩. ঠিক মতো অজু করে ১২ রাক’আত সুন্নত নামাজ পড়া। আল্লাহ্র রাসূল (সা:) বলেন: “যে মুসলিম বান্দাই ঠিকমতো পানি লাগিয়ে অজু করবে এবং তারপর আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে ১২ রাক’আত নফল নামাজ পড়বে যা ফরজ নয় তার জন্য আল্লাহ জান্নাতে একটি বাড়ি বানান”। আমরা ফরজ নামাজগুলোর সাথে যে সুন্নত নামাজগুলো পড়ি সেটিই এখানে প্রযোজ্য - অর্থাৎ ফজরের আগে দুই রাক'আত, যুহরের আগে চার ও পরে দুই রাক'আত, মাগরিবের পর দুই রাক'আত ও 'ঈশার পর দুই রাক'আত।
৪. মসজিদ বানানো বা বানানোর কাজে অংশগ্রহণ করা। আল্লাহ্র রাসূল (সা:) বলেন: “যে মসজিদ বানালো এবং সেটা লোক দেখানো বা শোনানোর জন্য করলো না, আল্লাহ্ তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি বানান”। [আত-তাবারানী]
৫. সূরাহ্ আল-ইখলাস ১০ বার পড়া। আল্লাহ্র রাসূল (সা:) বলেন: “যে দশ বার ‘ক্বুল হুওয়া-ল্লাহু আহাদ’ পড়লো, আল্লাহ্ তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি বানান”। [আহ্মাদ]
৬. বাজারে বা মার্কেটে ঢুকলে এই যিক্র করা “লা ইলাহা ইল্লা-ল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারীকা-লাহ, লাহুল-মুলকু ওয়া-লাহুল-হামদু য়ুহ্য়ী ওয়া-য়ুমীতু ওয়া-হুওয়া হায়্যুন লা য়ামূত, বি-য়াদিহিল-খাইর ওয়া-হুওয়া ‘আলা কুল্লি শাই-ইন ক্বাদীর”। [অর্থ: আল্লাহ্ ব্যতীত কোনও উপাস্য নেই, তিনি একক ও অংশীদারবিহীন। সব রাজত্বই তার ও তারই জন্য সকল প্রশংসা। তিনিই জীবন দান করেন ও মৃত্যুও দেন তিনিই – নিজে তিনি জীবিত – মৃত্যুবরণ করেন না। তার হাতেই সকল মঙ্গল এবং তিনি সবকিছুর ওপরই ক্ষমতাধর।] আল্লাহ্র রাসূল (সা:) বলেন: “যে মার্কেটে ঢুকে বললো: ‘লা ইলাহা – (বাকিটা)’ তার জন্য আল্লাহ্ দশ লক্ষ হাসানাহ্ (ভালো) লেখেন, দশ লক্ষ মন্দ মুছে দেন, তার মর্যাদা দশ লক্ষ বৃদ্ধি করেন এবং তার জন্য জান্নাতে বাড়ি বানান”। [ইব্ন মাজাহ]
৭. তর্ক পরিহার করা নিজের কথা সঠিক হয়ে থাকলেও।
৮. মিথ্যা পরিহার করা মজা করে হলেও।
৯. সুন্দর চরিত্র ও ব্যবহার।
ওপরের তিনটি কাজের ব্যাপারে আল্লাহ্ রাসূল (সা:) বলেন: “আমি তাকে গ্যারান্টি দিচ্ছি - জান্নাতের সীমান্তে একটি বাড়ির – যে তর্ক পরিহার করলো নিজে সঠিক হয়েও, জান্নাতের মাঝে একটি বাড়ির – যে মিথ্যা পরিহার করলো মজা করে হলেও, এবং জান্নাতের ওপরে একটি বাড়ির – যে তার চরিত্র ও ব্যবহারকে সুন্দর করলো”। [আবূ দা’উদ]
১০. দুহা-র নামাজ পড়া চার রাক’আত ও যুহরের ফরজ নামাজের আগে চার রাক’আত সুন্নত পড়া। দুহা-র নামাজ হোলো সূর্য উঠে যাবার পর পড়া নফল নামাজ যা সর্বনিম্ন দুই রাক’আত থেকে যতখুশি পড়া যায়। আল্লাহ্র রাসূল (সা:) বলেন: “যে চার রাক’আত দুহা-র নামাজ ও যুহরের আগে চার রাক’আত নামাজ পড়লো তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি বানানো হয়”। [আত-তাবারানী]
১১. অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া ও কারও সাথে সাক্ষাৎ করা কেবল আল্লাহ্র জন্য। আল্লাহ্র রাসূল (সা:) বলেন: “যে অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গেল অথবা তার কোনও ভাইকে দেখতে গেল আল্লাহ্র জন্য, একজন আহ্বানকারী (ফেরেশতাদের পক্ষ থেকে) তাকে আহ্বান করে বলবেন: ‘তোমার মঙ্গল হোক, মঙ্গল হোক তোমার পথের এবং জান্নাতে তুমি একটি ঘর পাও”। [তিরমিযী] এখানে ভাই বলতে রক্তসম্পর্কের ভাই শুধু বোঝানো হচ্ছে না, যে কোনও ব্যক্তি যে তার ভাইয়ের মতো সেও এখানে প্রযোজ্য। আল্লাহ্র জন্য ভাইয়ের সাক্ষাৎ করার অর্থ হোলো কোনও প্রয়োজন ছাড়া কেবল এই কারণে ভাইয়ের সাক্ষাৎ করা যে এটা করলে আল্লাহ্ খুশি হন।
No comments:
Post a Comment