Friday, January 15, 2016

‎ইসলামের‬ প্রথম স্তম্ভ হচ্ছে:





‎ইসলামের‬ প্রথম স্তম্ভ হচ্ছে: “শাহাদা” [যার আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে ”সাক্ষ্য”] বা এই ঘোষণা দেয়া যে,আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন ইলাহ্ (বা উপাস্য) নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসূল।
আমরা এখানে প্রদত্ত ২টি সাক্ষ্যকে দুইভাগে আলাদা আলাদা আলোচনা করবো ইনশা’আল্লাহ্।
শাহাদার প্রথম অংশের “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” ঘোষণা হচ্ছে আসলে [negation বা] অস্বীকার করা ও [affirmation বা] নিশ্চিত করা – এই দুইয়ের সমন্বয় [বা combination]। প্রথমে অন্য কোন [প্রকৃত] “ইলাহ্”র অস্তিত্ব অস্বীকার করা হয়েছে এবং পরে একমাত্র প্রকৃত ইলাহ্, আল্লাহর অস্তিত্বকে ব্যতিক্রম হিসেবে প্রত্যয়ন করা হয়েছে। এটাকে আরবী ভাষায় সবচেয়ে শক্তিশালী [বা all inclusive] এক ঘোষণা বলে গণ্য করা হয় – যেখানে ঘোষণায় [বা statement-এ] কোন ফাঁক থাকে না – পরে অন্য কিছু জুড়ে দেয়ার আর কোন অবকাশ থাকে না।
এভাবে বলা হলে, এর অর্থ দাঁড়ায় যে:“কোন বিচারেই এমন আর কেউ নেই, যাকে সত্যিকার অর্থে উপাসনা করা যায় বা সত্যিকার অর্থে যার ইবাদত করা যায় – কেবল আল্লাহ্ ছাড়া।” এখানে আসলে “তাওহীদ” বলে যে ইসলামী ধারণা রয়েছে – আল্লাহর বিশ্বাসের ব্যাপারে তারই ঘোষণা দেয়া হচ্ছে: তাওহীদের এই ঘোষণায় আসলে আল্লাহকে সকল সৃষ্টি থেকে সম্পূর্ণ পৃথক করে দেখানো হচ্ছে – যা আমরা ইতিপূর্বে, এই ব্লগেই “আর কিছুই আল্লাহর মত নয়”, “আপনার ধর্ম-বিশ্বসকে শুদ্ধ করুন”, “আল্লাহ সংক্রান্ত সঠিক বিশ্বাস” এই ধরনের শিরোনামের আওতায় informally আলোচনা করেছি।
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” ঘোষণার শর্ত:
মুসলিমরা জানেন যে, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” ঘোষণা হলো জান্নাতের চাবিকাঠি – অনেকেই মনে করে থাকেন যে, এই ঘোষণা কেবল মুখে উচ্চারণ করলেই তারা নিশ্চিত জান্নাত লাভ করবেন। বাস্তবে মৌখিকভাবে কেবল এই ঘোষণা দেয়া জান্নাতে যাবার জন্যে পর্যাপ্ত নয়। আমরা জানি যে, মদীনার মুনাফিকরা সবাই “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” ঘোষণা দিত – তবু আল্লাহ্ বলেছেন যে, তারা জাহান্নামের নিম্নতম অংশে নিক্ষিপ্ত হবে এবং তারা হচ্ছে মিথ্যাবাদী।
যেমন অনেক ‘আলেমরাই বলে গেছেন, এই সাক্ষ্য বা ঘোষণা হচ্ছে জান্নাতের চাবি – কথাটা সত্য, কিন্তু এই ঘোষণাকে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে।
আল হাসান আল বসরী একবার এক লোককে জিজ্ঞেস করেছিলেন“তুমি মৃত্যুর জন্যে কি প্রস্তুতি গ্রহণ করেছো?” সে বলেছিল “এই ঘোষণা ও সাক্ষ্য: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’।” হাসান বসরী তাকে বলেন,“সেজন্য কিছু শর্তপূরণ করতে হবে।”
বিখ্যাত তাবেঈ ওহাব ইবন মুনাব্বিহকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে “ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ ঘোষণাটা কি জান্নাতের চাবি নয়?” তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, “হ্যাঁ, তবে প্রতিটি চাবিরই খাঁজ রয়েছে – যদি সঠিক খাঁজের চাবি, তালায় লাগানো হয়, তবে (উদ্দিষ্ট) দরজা খুলে যাবে। নতুবা তা খুলবে না।” এই খাঁজের ব্যাপারটাই ঠিক করে দেবে যে, কোন কোন মুসলিম “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” ঘোষণা থেকে উপকৃত হবেন, আর কারা সারাদিনে বহুবার এই বাক্য উচ্চারণ করেও উপকৃত হবেন না।
শাহাদার শর্ত [বা condition] নিয়ে আলোচনা করার আগে, একটা বিষয় পরিস্কার করা প্রয়োজন – যে কোন বিষয়ে খণ্ডিত ভাবে কেবল ১টি আয়াত বা ১টি হাদীসের ভিত্তিতে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ [বা conclusion draw] করা উচিত নয়। ঠিক যেমন কোন ১টি হাদীস পড়ে কেউ মনে করে থাকতে পারেন যে, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” মুখে বললেই যে কেউ বেহেস্তে যেতে পারবে। বরং সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে, কোন বিষয়ের উপর যাবতীয় আয়াতসমূহ ও হাদীসসমূহ একত্রিত করে তারপর সেগুলো যাচাই করে তবে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া উচিত।
কুর’আনের আয়াত সমূহ ও হাদীস পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখলে, শাহাদার অনেক কয়টি শর্ত বা পূর্বশর্ত বেরিয়ে আসে। প্রত্যেক মুসলমানেরই উচিত, শাহাদার ঘোষণা দেয়ার সময় [বা ঘোষণা দিতে গিয়ে], তিনি সে সব শর্তগুলো নিজের জীবনে পূরণ করেছেন কি না – তা নিশ্চিত করা। আমরা ইনশা’আল্লাহ্ শাহাদার ঘোষণার জন্যে পূরণীয় শর্তগুলি পর্যায়ক্রমে আলোচনা করবো ।

No comments:

Post a Comment