Monday, March 21, 2016

সত্য বলো, মিথ্যে বলো না





আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, 
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
_______________
«إِنَّ الصِّدْقَ يَهْدِي إِلَى البِرِّ، وَإِنَّ البِرَّ يَهْدِي إِلَى الجَنَّةِ، وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَصْدُقُ حَتَّى يَكُونَ صِدِّيقًا. وَإِنَّ الكَذِبَ يَهْدِي إِلَى الفُجُورِ، وَإِنَّ الفُجُورَ يَهْدِي إِلَى النَّارِ، وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَكْذِبُ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللَّهِ كَذَّابًا»
_______________
‘নিশ্চয় সত্য পুণ্য বা ভালো কাজের পথ দেখায় আর ভালো কাজ বা পুণ্য জান্নাতের পথ দেখায়। [এভাবে] একজন ব্যক্তি সত্য বলতে বলতে [আল্লাহ ও মানুষের কাছে] সত্যবাদী হিসেবে গণ্য হয়। [পক্ষান্তরে] মিথ্যা অপরাধের পথ দেখায় আর অপরাধ জাহান্নামের দিকে ধাবিত করে। [এভাবে] একজন ব্যক্তি মিথ্যা বলতে বলতে (আল্লাহ ও মানুষের কাছে) মিথ্যাবাদী হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়ে যায়’। (বুখারী : ৬০৯৪; মুসলিম : ৬৮০৩)
_______________
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা : সত্যবাদিতা একটি প্রশংসনীয় ও সর্বজন প্রিয় গুণ। সত্যবাদিতা মানুষকে অন্যের কাছে প্রিয় বানায়। অপরের দৃষ্টিতে বানায় সম্মানিত ও গ্রহণযোগ্য। সত্য মানুষকে অসংখ্য পাপ থেকে রক্ষা করে। পুণ্য বা নেকির পথে পরিচালিত করে। কেউ যখন প্রতিনিয়ত সত্য বলার অভ্যাস গড়ে তোলে, তখন সত্য বলা তার স্বভাবে পরিণত হয়।
_______________
এ পর্যায়ে উন্নীত হলে আল্লাহ তার নাম লিপিবদ্ধ করেন সেই সব সত্যবাদীদের তালিকায়, যাদেরকে বলা হয় ‘সিদ্দীক’ তথা মহাসত্যবাদী। কিয়ামতের দিন যারা আল্লাহর বিশেষ মর্যাদা লাভের মধ্য দিয়ে নবী ও শহীদদের সঙ্গে ভিআইপি বা বিশেষ সম্মানের পাত্র হিসেবে গণ্য হবেন।
_______________
‪#‎পক্ষান্তরে‬ মিথ্যা মানুষের কাছে একটি ঘৃণিত ও চির নিন্দিত স্বভাব। মিথ্যাবাদীকে খোদ তার আপনজনেরাও অপছন্দ করে। মিথ্যা মানুষকে পাপের পথে পরিচালিত করে। একটি সামান্য পাপ বহু পাপের দিকে পরিচালিত করে। এভাবে পাপ করতে করতে সে বেখেয়ালে জাহান্নামের পথে ধাবিত হয়। আগুনের চির আবাস হয়ে যায় তার গন্তব্য। মানুষ যখন অহরহ মিথ্যা বলতে থাকে, মিথ্যা বলা তার স্বভাবে পরিণত হয়। মিথ্যাকথন স্বভাবে পরিণত হলে আল্লাহ তাকে কায্‌যাব বা ‘মহামিথ্যাবাদী’র তালিকাভুক্ত করেন।
_______________
বিষয়টি আরেকটু খোলাসা করা যাক। ধরো, তোমরা মাদরাসা বা বিদ্যালয়ে যাও, সেখানে কিন্তু তোমার আব্বু-আম্মু সঙ্গে থাকেন না। ফলে সেখানে তুমি কী করছো না করছ তা তাঁরা দেখেন না। তুমি হয়তো টিফিন বা ছুটির সময় খেলতে গিয়ে তোমার সহপাঠীকে অপ্রত্যাশিতভাবে মেরে বসলে কিংবা ক্লাসে বসার জায়গা নিয়ে একে অন্যের সঙ্গে হুড়োহুড়ি করতে গিয়ে হালকা মারামারিতে জড়িয়ে গেলে অথবা সুযোগ পেলে তোমার পাশে বসা ছেলেটির পেন্সিল বা বই লুকিয়ে রাখলে- সবগুলোই কিন্তু অপরাধ। কোনোটাই তোমার করা উচিত নয়। এখন তুমি যদি ভাবো, আম্মুর কাছে ফিরে গিয়ে এসব বলতে হবে, সত্যি সত্যি সব বিবরণ দিতে হবে, তখন আম্মু তোমাকে বকে দেবেন কিংবা তোমার আচরণে মনে কষ্ট নেবেন যা তুমি মোটেও কামনা কর না, তাহলে এ চিন্তাই তোমাকে বাধা দেবে এসব করা থেকে।
_______________
এ ক্ষেত্রে যদি মিথ্যে বলতে যাও তবে দেখ কত বিপত্তি দেখা দেবে। তুমি যদি বিদ্যালয় থেকে ফিরে আম্মুর কাছে ওসব দুষ্টুমির কথা গোপন করো আর তাঁর জিজ্ঞাসার উত্তরে বলো, আমি আজ স্কুলে কোনো দুষ্টুমি করিনি আম্মু, তাহলে একটি মিথ্যে বললে। এরপর পরেরদিন যখন যার সঙ্গে দুষ্টুমি করেছো তার আম্মু এসে বিচার দেবেন, তখন এই একটি মিথ্যে লুকাতে গিয়ে তোমাকে অনেকগুলো মিথ্যার আশ্রয় নিতে হবে। তারপরও কিন্তু তুমি সত্য ঘটনা আড়াল করতে পারবে না। সত্য বেরিয়েই আসবে। তখন কী হবে? আম্মু খুব কষ্ট পাবেন। ভাববেন যে ছেলেটাকে আমি এত আদর করি, রোজ তার জন্য সব কিছু করে দেই, রাত জেগে ওর অসুখের সময় সেবা করি সে কিনা মিথ্যে বলে! সেই আমাকে অন্যের কাছে ছোট করে!
_______________
এখন ভেবে দেখো, একটি মিথ্যে বলার কারণে তোমাকে অনেকগুলো মিথ্যে বলতে হলো। তারপর ধরা খেয়ে লজ্জিত হতে হলো। সর্বোপরি মাকে মনে কষ্ট দিয়ে জাহান্নামের আগুনে জ্বলার সম্ভাবনা সৃষ্টি হলো। অথচ প্রথমেই যদি তুমি সত্য বলে দিতে, তাহলে আম্মু তোমাকে বুঝিয়ে দিতেন এসব করতে নেই। এতে করে মিথ্যেও বলতে হত না। আবার তাঁকে কষ্ট দিয়ে জাহান্নামের দিকেও যেতে হয় না। বরং সত্য বলার সুবাদে তুমি সত্যবাদী হয়ে আল্লাহকে খুশি করে জান্নাতের পথিক হতে পারতে।
_______________
এ জন্যই বহু হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিথ্যা থেকে সতর্ক করেছেন। সত্য ও সত্যবাদিতায় উদ্বুদ্ধ করেছেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনও মিথ্যাকে নিরুৎসাহিত ও সত্যকে উৎসাহিত করেছেন। ইরশাদ হয়েছে,
﴿ إِنَّمَا يَفۡتَرِي ٱلۡكَذِبَ ٱلَّذِينَ لَا يُؤۡمِنُونَ بِ‍َٔايَٰتِ ٱللَّهِۖ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡكَٰذِبُونَ ١٠٥ ﴾ [النحل: ١٠٥]
‘একমাত্র তারাই মিথ্যা রটায়, যারা আল্লাহর আয়াতসমূহে ঈমান রাখে না। আর তারাই মিথ্যাবাদী’। {সূরা আল-ফুরকান, আয়াত : ১০৫}
_______________
তিনি আরও ইরশাদ করেন,
﴿ وَلَا تَقُولُواْ لِمَا تَصِفُ أَلۡسِنَتُكُمُ ٱلۡكَذِبَ هَٰذَا حَلَٰلٞ وَهَٰذَا حَرَامٞ لِّتَفۡتَرُواْ عَلَى ٱللَّهِ ٱلۡكَذِبَۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَفۡتَرُونَ عَلَى ٱللَّهِ ٱلۡكَذِبَ لَا يُفۡلِحُونَ ١١٦ ﴾ [النحل: ١١٦]
‘আর তোমাদের জিহ্বা দ্বারা বানানো মিথ্যার উপর নির্ভর করে বলো না যে, এটা হালাল এবং এটা হারাম, আল্লাহর উপর মিথ্যা রটানোর জন্য। নিশ্চয় যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা রটায়, তারা সফল হবে না’। {সূরা আল-ফুরকান, আয়াত : ১১৬}
_______________
আরেক সূরায় আল্লাহ বলেন,
﴿ ۞أَلَمۡ تَرَ إِلَى ٱلَّذِينَ تَوَلَّوۡاْ قَوۡمًا غَضِبَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِم مَّا هُم مِّنكُمۡ وَلَا مِنۡهُمۡ وَيَحۡلِفُونَ عَلَى ٱلۡكَذِبِ وَهُمۡ يَعۡلَمُونَ ١٤ ﴾ [المجادلة: ١٤]
‘তুমি কি তাদের লক্ষ্য করনি, যারা এমন এক কওমের সাথে বন্ধুত্ব করে যাদের উপর আল্লাহর গযব নিপতিত হয়েছে? তারা তোমাদের দলভুক্ত নয় এবং তোমরাও তাদের দলভুক্ত নও। আর তারা জেনে শুনেই মিথ্যার উপর কসম করে’। {সূরা আল-মুজাদালা, আয়াত : ১৪}
_______________
সুতরাং সমাজের সকল অপরাধ থেকে বাঁচতে হলে আমাদেরকে সর্বদা সত্য বলতে হবে। সত্যবাদিতার জীবন গড়তে হবে। আর সর্বোতভাবে পরিহার করতে হবে মিথ্যা ও মিথ্যাবাদিতাকে। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

No comments:

Post a Comment