Sunday, March 27, 2016

জাদু শেখা এবং তদনুযায়ী আমল করা কুফরী।




মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ وَٱتَّبَعُواْ مَا تَتۡلُواْ ٱلشَّيَٰطِينُ عَلَىٰ مُلۡكِ سُلَيۡمَٰنَۖ وَمَا كَفَرَ سُلَيۡمَٰنُ وَلَٰكِنَّ ٱلشَّيَٰطِينَ كَفَرُواْ يُعَلِّمُونَ ٱلنَّاسَ ٱلسِّحۡرَ﴾ [البقرة: ١٠٢]
“তারা ঐ শাস্ত্রের অনুসরণ করল, যা সুলায়মানের রাজত্বকালে শয়তানরা আবৃত্তি করত।
সুলায়মান কুফরী করেন নি; বরং শয়তানরাই কুফরী করেছিল। তারা মানুষকে জাদুবিদ্যা শিক্ষা দিত” (বাক্বারাহ ১০২)।
অন্য আয়াতে এসেছে,
﴿يُؤۡمِنُونَ بِٱلۡجِبۡتِ وَٱلطَّٰغُوتِ﴾ [النساء: ٥١]
“তারা জাদু এবং তাগূতকে বিশ্বাস করে” (নিসা ৫১)। উক্ত আয়াতে الْجِبْتِ (জিব্‌ত) শব্দের অর্থ হচ্ছে, জাদু। এখানে আল্লাহ জাদুকে তাগূতের সাথে তুলনা করেছেন। সেজন্য তাগূতের প্রতি ঈমান আনা যেমন কুফরী, জাদুকে বিশ্বাস করাও তেমনি কুফরী।
মহান আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেন,
﴿ وَمِن شَرِّ ٱلنَّفَّٰثَٰتِ فِي ٱلۡعُقَدِ ٤ ﴾ [الفلق: ٤]
“(আশ্রয় প্রার্থনা করছি) গ্রন্থিতে ফুঁৎকার দিয়ে জাদুকারিণীদের অনিষ্ট থেকে” (ফালাক্ব ৪)। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«اجْتَنِبُوا السَّبْعَ الْمُوبِقَاتِ»
“তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক বিষয় থেকে বেঁচে থাকো...'। সাতটি ধ্বংসাত্মক বস্তুর মধ্যে তিনি জাদুর কথাও উল্লেখ করেছেন। জুনদুব (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, “জাদুকারীর শাস্তি হচ্ছে, তাকে তরবারী দিয়ে আঘাত করতে হবে”। অর্থাৎ মুসলিম সরকার তাকে হত্যা করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ عَقَدَ عُقْدَةً ثُمَّ نَفَثَ فِيهَا فَقَدْ سَحَرَ وَمَنْ سَحَرَ فَقَدْ أَشْرَكَ»
“যে গিঁঠ দিল এবং গিরায় ফুঁক দিল, সে জাদু করল। আর যে জাদু করল, সে শির্ক করল” (মুসলিম)। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,
«لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَطَيَّرَ أَوْ تُطُيِّرَ لَهُ، أَوْ تَكَهَّنَ أَوْ تُكُهِّنَ لَهُ، أَوْ سَحَرَ أَوْ سُحِرَ لَهُ»
“সেই ব্যক্তি আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়, যে মন্দের লক্ষণ গ্রহণ করে, বা লক্ষণ বের করায়, অনুরূপভাবে যে ভবিষ্যদ্বাণী করে বা করায় অথবা যে জাদু করে বা করায়” (বাযযার)। ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) তাঁর গভর্ণরগণকে নির্দেশ দিয়ে লিখেছিলেন যে,
«اقْتُلُوا كُلَّ سَاحِرٍ وَسَاحِرَةٍ»
“তোমরা প্রত্যেকটি জাদুকর এবং জাদুকরীকে হত্যা কর” (বুখারী)।
👉 নিজেদের দেহে আঘাত করা, শক্ত কোনো বস্তু খাওয়া ইত্যাদি যেসব কর্মকাণ্ড ভেলকিবাজরা করে থাকে এটা কি তাদের কেরামত?
ভেলকিবাজরা এ জাতীয় যেসব কাজ করে থাকে, তা জাদু এবং এর মাধ্যমে মানুষের চোখে জাদু করা হয়। ফলে তারা বাস্তব জিনিসটা আর দেখতে পায় না।
যেমনটি মূসা আলাইহিস সালাম-এর সময়ে ঘটেছিল; তিনি দেখতে পাচ্ছিলেন যে, জাদুকরদের রশিগুলি চলছে, অথচ সত্যিকার অর্থে সেগুলি চলছিল না। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿يُخَيَّلُ إِلَيۡهِ مِن سِحۡرِهِمۡ أَنَّهَا تَسۡعَىٰ ٦٦ ﴾ [طه: ٦٦]
“তাদের জাদুর প্রভাবে তাঁর মনে হচ্ছিল, যেন সেগুলি (জাদুকরদের রশিগুলো ও লাঠিগুলো) ছুটাছুটি করছে” (ত্ব-হা ৬৬)।
যদি ভেলকিবাজদের নিকটে আয়াতুল কুরসী এবং সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস পড়া হয়, তাহলে আল্লাহ্‌র ইচ্ছায় জাদু এবং ভেলকিবাজি নষ্ট হয়ে যাবে। মনে রাখতে হবে, কারামত বা অলৌকিক ঘটনা নেককার, তাওহীদপন্থী এবং শির্ক-বিদ‘আত মুক্ত ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারো দ্বারা ঘটা সম্ভব নয়। কোনো মুমিনের কল্যাণার্থে বা তার থেকে অকল্যাণ দূর করার জন্য কারামত ঘটে থাকে। কারামত অর্থ এই নয় যে, সে অন্যান্য মুমিনের চেয়ে উত্তম।
👉 চিকিৎসার জন্য জাদুকরের কাছে যাওয়া জায়েয আছে কি?
কোনো অবস্থাতেই জাদুকর বা জাদুকরীর কাছে যাওয়া জায়েয নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জাদু দিয়ে জাদু নষ্ট করার বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,
«هِيَ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ»
“এটি হচ্ছে শয়তানের কাজ” (আবূ দাঊদ)।
👉 জ্যোতিষী, গণক, ভবিষ্যদ্বক্তা ইত্যাদির কাছে যাওয়া কি বৈধ?
তাদের কাছে যাওয়া এবং তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হারাম। এদের থেকে মানুষকে সাবধান করা ওয়াজিব।
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ أَتَى عَرَّافًا أَوْ كَاهِنًا فَصَدَّقَهُ بِمَا يَقُولُ فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ»
“যে ব্যক্তি গণক বা জ্যোতিষীর কাছে আসল এবং তার কথা বিশ্বাস করল, সে মুহাম্মাদের উপর অবতীর্ণ বিষয়ের সাথে কুফরী করল” (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ)।
অন্য হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ أَتَى عَرَّافًا فَسَأَلَهُ عَنْ شَىْءٍ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلاَةٌ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً»
“যে ব্যক্তি গণকের কাছে আসে এবং তার কাছে কিছু জিজ্ঞেস করে, চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার ছালাত কবূল হয় না” (মুসলিম)।
👉 জাদুতে আক্রান্ত হওয়ার আগে বা পরে তা থেকে বাঁচার উপায় কি?
সকাল এবং সান্ধ্যকালীন যিকর-আযকারের প্রতি যত্নশীল হওয়া। বিশেষ করে সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার নিম্নোক্ত দো‘আটি পড়তে হবে,
«بِسْمِ اللَّهِ الَّذِى لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَىْءٌ فِى الأَرْضِ وَلاَ فِى السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ»
“আল্লাহ্‌র নামে শুরু করছি, যার নামে শুরু করলে আসমান ও যমীনের কোনো কিছুই কোনো ক্ষতি করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা এবং সর্বজ্ঞ”। আরো পড়তে হবে,
«أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ»
“আমি আল্লাহ্‌র পরিপূর্ণ কালিমা দ্বারা তার সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”
সন্তান-সন্ততির জন্য এই দো‘আ পড়তে হবে,
«أُعِيذُكُمْ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ»
“আমি তোমাদের জন্য আল্লাহ্‌র পরিপূর্ণ কালিমা দ্বারা প্রত্যেকটি শয়তান, ক্ষতিকর কীট-পতঙ্গ এবং কুনযর থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”
এছাড়া সকাল-সন্ধ্যায় সূরা এখলাছ, সূরা ফালাক্ব এবং সূরা নাস তিনবার করে পড়তে হবে। আর রাতে আয়াতুল কুরসী এবং সূরা বাক্বারাহ্‌র শেষ আয়াত দু’টি পড়তে হবে।
আর জাদুতে আক্রান্ত হলে সাথে সাথে এ মর্মে কুরআনুল কারীম ও সহীহ হাদীসে বর্ণিত আয়াত এবং দো‘আসমূহ পড়তে হবে।
আল্লাহ্ তাআলা আমাদের সবাইকে সকল প্রকার কুফরী কার্যাবলি থেকে হেফাজতে রাখুন আমীন ।

No comments:

Post a Comment