Sunday, December 4, 2016

ঈদ এ মিলাদুন্নবী একটি জঘন্য বিদ’আতঃ





জন্মের সময়কাল কে আরবীতে ‘মীলাদ’ বা ‘মাওলিদ’ বলা হয়। সে হিসাবে ‘মীলাদুন্নবী’-র অর্থ দাঁড়ায় ‘নবীর জন্ম মুহূর্ত’। নবীর ﷺ এর জন্মের বিবরণ, কিছু ওয়ায ও নবীর রূহের আগমন কল্পনা করে তার সম্মানে উঠে দাঁড়িয়ে ‘ইয়া নাবী সালামু আলাইকা’ বলা ও সবশেষে জিলাপী (তবরক) বিতরণ -এই সব মিলিয়ে ‘মীলাদ মাহফিল’ ইসলাম প্রবর্তিত ‘ঈদুল ফিতর’ ও ‘ঈদুল আযহা’ নামক দু’টি বার্ষিক ঈদ উৎসবের বাইরে ‘ঈদে মীলাদুন্নবী’ নামে তৃতীয় আরেকটি ধর্মীয়(?) অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
.
☞ ইতিহাসঃ
‘ঈদে মীলাদুন্নবী’ নামে যে তৃতীয় আরেকটি ‘ঈদ’ আমাদের দেশে উৎযাপিত হচ্ছে তা কিন্তু রাসুল ﷺ ও তাঁর সাহাবীগণ পালন করে যেতে পারেন নি। কারন এই ‘ঈদ’ এর সৃষ্টি হয়েছে রাসুল ﷺ এর মৃত্যুর বহু বছর পর।
ক্রুসেড বিজেতা মিসরের সুলতান ছালাহুদ্দীন আইয়ূবী (৫৩২-৫৮৯ হিঃ) কর্তৃক নিযুক্ত ইরাকের ‘এরবল’ এলাকার গভর্ণর আবু সাঈদ মুযাফ্ফর উদ্দীন কুকুবুরী (৫৮৬-৬৩০ হিঃ) সর্বপ্রথম কারো মতে ৬০৪ হিজরী ও কারো মতে ৬২৫ হিজরীতে মীলাদের প্রচলন ঘটান; রাসূল ﷺ এর মৃত্যুর ৫৯৩ বা ৬১৪ বছর পরে। এই দিন তারা মীলাদুন্নবী উদযাপনের নামে চরম স্বেচ্ছাচারিতায় লিপ্ত হতেন। গভর্ণর নিজে তাতে অংশ নিতেন। [আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ (দারুল ফিকর, ১৯৮৬) পৃঃ ১৩/১৩৭]
আর এই অনুষ্ঠানের সমর্থনে তৎকালীন আলেম সমাজের মধ্যে সর্বপ্রথম এগিয়ে আসেন আবুল খাত্ত্বাব ওমর বিন দেহিইয়াহ (৫৪৪-৬৩৩ হিঃ)। তিনি মীলাদের সমর্থনে বহু জাল ও বানাওয়াট হাদীছ জমা করেন।
.
☞ ক্বিয়াম প্রথাঃ
সপ্তম শতাব্দী হিজরীতে মীলাদ প্রথা চালু হওয়ার প্রায় এক শতাব্দীকাল পরে আল্লামা তাক্বিউদ্দীন সুবকী (৬৮৩-৭৫৬ হিঃ) কর্তৃক ক্বিয়াম প্রথার প্রচলন ঘটে বলে কথিত আছে। [আবু ছাঈদ মোহাম্মাদ, মিলাদ মাহফিল (ঢাকা ১৯৬৬), পৃঃ ১৭]
তবে এর সঠিক তারিখ ও আবিষ্কর্তার নাম জানা যায় না।
.
☞ ধরনঃ
বাংলাদেশে দুই ধরনের মীলাদ চালু আছে। একটি ক্বিয়ামযুক্ত, অন্যটি ক্বিয়াম বিহীন। ক্বিয়ামকারীদের যুক্তি হল, তারা রাসূলের ﷺ এর সম্মানে উঠে দাঁড়িয়ে থাকেন। এর দ্বারা তাদের ধারণা যদি এই হয় যে, মীলাদের মাহফিলে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর রূহ মুবারক হাজির হয়ে থাকে, তবে এই ধারণা সর্বসম্মতভাবে কুফরী। হানাফী মাযহাবের কিতাব ‘ফাতাওয়া বাযযারিয়া’তে বলা হয়েছে,
مَنْ ظَنَّ أنَّ أرواحَ الأمواتِ حاضرةٌ نَعْلَمُ يَكْفُرُ
-যে ব্যক্তি ধারণা করে যে, মৃত ব্যক্তিদের রূহ হাযির হয়ে থাকে, সে ব্যক্তি কাফের। [মীলাদে মুহাম্মাদী পৃঃ ২৫, ২৯]

অনুরূপভাবে ‘তুহফাতুল কুযাত’ কেতাবে বলা হয়েছে, 
-যারা ধারণা করে যে, মীলাদের মজলিসগুলিতে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর রূহ মুবারক হাযির হয়ে থাকে, তাদের এই ধারণা স্পষ্ট শিরক। রাসূলুল্লাহ ﷺ স্বীয় জীবদ্দশায় তাঁর সম্মানার্থে উঠে দাঁড়ানোর বিরুদ্ধে কঠোর ধমকি প্রদান করেছেন। [তিরমিযী, আবূদাঊদ; মিশকাত হা/৪৬৯৯ ‘আদাব’ অধ্যায়]
অথচ মৃত্যুর পর তাঁরই কাল্পনিক রূহের সম্মানে দাঁড়ানোর উদ্ভট যুক্তি ধোপে টেকে কি?
.
☞ হুকুমঃ
ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন একটি সুস্পষ্ট বিদ‘আত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
-যে ব্যক্তি আমাদের শরীআতে এমন কিছু নতুন সৃষ্টি করল, যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত। [ মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৪০]
তিনি আরো বলেন,
-তোমরা দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি করা হতে সাবধান থাক। নিশ্চয়ই প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই বিদ‘আত ও প্রত্যেক বিদ‘আতই গোমরাহী’। জাবের (রাঃ) হতে অন্য বর্ণনায় এসেছে,
وَكُلَّ ضَلاَلَةٍ فِى النَّارِ 
-এবং প্রত্যেক গোমরাহীর পরিণাম জাহান্নাম। [আহমাদ, আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/১৬৫; নাসাঈ হা/১৫৭৯ ‘ঈদায়েন-এর খুৎবা’ অধ্যায়]

ইমাম মালেক (রহঃ) স্বীয় ছাত্র ইমাম শাফেঈকে বলেন, 
-রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তাঁর সাহাবীদের সময়ে যে সব বিষয় ‘দ্বীন’ হিসাবে গৃহীত ছিল না, বর্তমান কালেও তা ‘দ্বীন’ হিসাবে গৃহীত হবে না। যে ব্যক্তি ধর্মের নামে ইসলামে কোন নতুন প্রথা চালু করল, অতঃপর তাকে ভাল কাজ বা বিদ‘আতে হাসানাহ বলে রায় দিল, সে ধারণা করে নিল যে, আল্লাহ্র রাসূল ﷺ স্বীয় রিসালাতের দায়িত্ব পালনে খেয়ানত করেছেন। [আল-ইনছাফ, পৃঃ ৩২]
.
☞ মীলাদ বিদ‘আত হওয়ার ব্যাপারে চার মাযহাবের ঐক্যমতঃ
‘আল-ক্বাওলুল মু‘তামাদ’ গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, চার মাযহাবের সেরা বিদ্বানগণ সর্বসম্মতভাবে প্রচলিত মীলাদ অনুষ্ঠান বিদ‘আত হওয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছেন। তাঁরা বলেন, এরবলের গভর্ণর কুকুবুরী এই বিদ‘আতের হোতা। তিনি তার আমলের আলেমদেরকে মীলাদের পক্ষে মিথ্যা হাদীছ তৈরী করার ও ভিত্তিহীন ক্বিয়াস করার হুকুম জারি করেছিলেন।
.
☞ উপমহাদেশের ওলামায়ে কেরামঃ
মুজাদ্দিদে আলফে ছানী শায়খ আহমাদ সারহিন্দী, আল্লামা হায়াত সিন্ধী, রশীদ আহমাদ গাংগোহী, আশরাফ আলী থানভী, মাহমূদুল হাসান দেউবন্দী, আহমাদ আলী সাহারানপুরী প্রমুখ ওলামায়ে কেরাম ছাড়াও আহলেহাদীছ বিদ্বানগণ সকলে এক বাক্যে প্রচলিত মীলাদ অনুষ্ঠানকে বিদ‘আত ও গুনাহের কাজ বলেছেন।

No comments:

Post a Comment