Friday, October 13, 2017

আমাদের সমাজে প্রচলিত দুইটি মিথ্যা জাল হাদিস:



Image may contain: one or more people and outdoor


আমাদের সমাজে প্রচলিত দুইটি মিথ্যা জাল হাদিস:
১) বাতিনী ইলম গুপ্ত রহস্য নবী-ফিরিশতাগণও জানে না! 
২) বাতিনী ইলম গুপ্ত রহস্য আল্লাহ ইচ্ছামত নিক্ষেপ করেন!
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
জালিয়াতগণ হাসান বসরী পর্যন্ত জাল সনদ তৈরি করে বলেছে, হাসান বসরী (২২-১০৯হি) বলেছেন, আমি সাহাবী হুযাইফা ইবনুল ইয়ামানকে (৩৬ হি) জিজ্ঞাসা করলাম, ইলম বাতিন কী? তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ইলম বাতিন কী? তিনি বলেন, আমি জিবরীলকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ইলম বাতিন কী? তিনি বলেন, আমি আল্লাহকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ইলম বাতিন কী? আল্লাহ বলেন,

يَا جِبْرِيْلُ، هُوَ سِرٌّ بَيْنِيْ وَبَيْنَ أَحِبَّائِيْ وَأَوْلِيَائِيْ وَأَصْفِيَائِيْ أُوْدِعُهُ فِيْ قُلُوْبِهِمْ لاَ يَطَّلِعُ عَلَيْهِ مَلَكٌ مُقَرَّبٌ وَلاَ نَبِيٌّ مُرْسَلٌ
‘‘হে জিবরীল, তা হলো, আমার ও আমার প্রিয়পাত্র ও ওলীগণের মধ্যকার গোপন বিষয়। আমি তা তাদের অন্তরের মধ্যে প্রদান করি। কোনো নৈকট্যপ্রাপ্ত ফিরিশতা বা কোনো নবী-রাসূলও তা জানতে পারেন না।’’
৫ম-৬ষ্ঠ হিজরী শতকের আলিম শীরাওয়াইহি ইবনু শাহরদার দাইলামী (৫০৯ হি) তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘আল-ফিরদাউস’-এ এ কথাটিকে হাদীস হিসাবে সংকলিত করেছেন। কিন্তু আল্লামা ইবনু হাজার আসকালানী, জালালুদ্দীন সুয়ূতী, ইবনু আর্রাক কিনানী, মোল্লা আলী কারী প্রমুখ প্রাজ্ঞ মুহাদ্দিস হাদীসটির জালিয়াতি উদ্ঘাটন করেছেন। হাদীসটির বর্ণনাকারীগণ মিথ্যাবাদী ও হাদীস জালিয়াতি করতেন বলে প্রমাণিত। শুধু তাই নয়। জালিয়াতগণের কাজে কিছু ভুল থেকে যায়। এখানে তারা বলেছে, হাসান বসরী হুযাইফাকে (রা) প্রশ্ন করেছিলেন। অথচ প্রকৃত পক্ষে হাসান বসরী জীবনে হুযাইফাকে দেখেনও নি, তার কাছ থেকে কিছু জিজ্ঞাসা করা তো দূরের কথা।[1]
[1] দাইলামী, আল-ফিরদাউস ২/৩১২; ইবনু আর্রাক, তানযীহ ১/২৮০, মোল্লা কারী, আল-মাসনূ, পৃ ৯২-৯৩। 
____________________________________

২/বাতিনী ইলম গুপ্ত রহস্য আল্লাহ ইচ্ছামত নিক্ষেপ করেন
এ জাতীয় আরেকটি জাল ও বাতিল কথা হলো:
عَلْمُ الْبَاطِنِ سِرٌّ مِنْ أَسْرَارِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ وَحُكْمٌ مِنْ أَحْكاَمِ اللهِ، يَقْذِفُهُ فِيْ قُلُوْبِ مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ.
‘‘বাতিনের ইল্ম আল্লাহর গুপ্ত রহস্যগুলোর একটি এবং আল্লাহর বিধানাবলির একটি। তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার অন্তরে চান তা নিক্ষেপ করেন।’’
এ বাতিল কথাটি কেউ কেউ অন্যভাবে বলেছেন:
عِلْمُ الْبَاطِنِ سِرٌّ مِنْ سِرِّيْ أَجْعَلُهُ فِيْ قَلْبِ عِبَادِيْ وَلاَ يَقِفُ عَلَيْهِ أَحَدٌ غَيْرِيْ
‘‘বাতিনের ইল্ম আমার গুপ্ত রহস্যসমূহের একটি আমি আমার বান্দাদের অন্তরে স্থাপন করি। আর আমি ছাড়া কেউ তা জানে না।’’[1]
হাদীসটির একটি সনদ আছে। সনদটি অজ্ঞাত পরিচয় রাবীগণের সমষ্টি। আল্লামা যাহাবী, সুয়ূতী, ইবনু আর্রাক প্রমুখ হাদীসটিকে জাল বলে উল্লেখ করেছেন। তবে মজার ব্যাপার হলো, আল্লামা সুয়ূতী নিজে হাদীসটিকে জাল হিসাবে চিহ্নিত করে তার ‘যাইলুল লাআলী’ গ্রন্থে সংকলন করেছেন। কিন্তু তিনি তাঁর ‘আল-জামিউস সাগীর’ গ্রন্থে হাদীসটি ‘যয়ীফ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অথচ তিনি দাবি করেছেন যে, ‘জামি সাগীর’ পুস্তকে তিনি কোনো জাল হাদীস উল্লেখ করবেন না। এ থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, সকল প্রাজ্ঞ আলেমেরই ভুল হতে পারে এবং কারো কথাই নির্বিচারে গ্রহণ করা যায় না।[2]
[1] সিররুল আসরার, পৃ. ২৩। [2] দাইলামী, আল-ফিরদাউস ৩/৪২; ইবনুল জাওযী, আল-ইলালুল মুতানাহিয়া ১/৮৩; সুয়ূতী, যাইলুল লাআলী, পৃ. ৪৪; আল-জামি আস-সাগীর ২/১৬০; ইবনু আর্রাক, তানযীহ ১/২৮০; আলবানী, যায়ীফুল জামি, পৃ. ৫৪৫; যায়ীফাহ ৩/৩৭১। 
_________________________________
বই: হাদিসের নামে জালিয়াতি
লেখক: খন্দকার ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রাহিঃ)

No comments:

Post a Comment