Friday, October 13, 2017

স্বামীর সংসারে স্ত্রীর অধিকার কি:


Image may contain: one or more people and text


ইসলাম আল্লাহর মনোনীত পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। তাই ইসলামে যেভাবে নারীর অধিকার সংরক্ষিত হয়েছে, ঠিক তেমনি স্থান পেয়েছে স্বামীর অধিকারও। ইহকাল ও পরকালের সফলতা ও উন্নতির পথ বাতলে দিয়েছে ইসলাম। তাই যেভাবে কোরআন-হাদিসে স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য ও অধিকার নিয়ে আলোচনা হয়েছে, ঠিক তেমনি আলোকপাত হয়েছে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য ও অধিকার প্রসঙ্গেও।
ইসলাম সব মানুষকে নিজ নিজ কর্তব্য আদায়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে। অন্যের ওপর নিজ অধিকার কামনার প্রতি তেমন জোর দেয়নি। আর বর্তমান পৃথিবীটা হচ্ছে অধিকার আদায়ের যুগ। সবাই নিজ নিজ অধিকার আদায়ে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। অন্যের থেকে অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে চলছে দুর্বার আন্দোলন, মিছিল-মিটিং ও হরতাল-অবরোধ। তবে সবাই নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে কতটুকু মনোযোগী? শ্রমিক মালিক থেকে নিজ অধিকার আদায়ে ব্যস্ত, আবার মালিকপক্ষ চাচ্ছে তাদের পূর্ণাঙ্গ অধিকার। পুরুষ নিজ অধিকার আদায় করে নিতে বদ্ধপরিকর। নারী দাবি করছে আমার অধিকার দাও।
পুরুষ নিজ অধিকার আদায় করে নিতে বদ্ধপরিকর। নারী দাবি করছে আমার অধিকার দাও। কিন্তু কোনো আল্লাহর বান্দা এ চিন্তা করার সুযোগ পাচ্ছে না যে আমার ওপর যে দায়িত্বগুলো ছিল সেগুলো আমি যথাযথ পালন করছি তো, না তাতে কোনো অবহেলা হচ্ছে?
স্ত্রীর অধিকার ও মর্যাদা
মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সঙ্গে উত্তম আচরণ করো। আর যদি তাকে তোমার অপছন্দও হয়, তবু তুমি যা অপছন্দ করছ হয়তো আল্লাহ তাতে সীমাহীন কল্যাণ দিয়ে দেবেন। ’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৯)
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো মুমিন পুরুষ মুমিন নারীর ওপর রুষ্ট হবে না। কেননা যদি তার কোনো কাজ খারাপ মনে হয়, তাহলে তার এমন গুণও থাকবে, যার জন্য সে তার ওপর সন্তুষ্ট হতে পারবে। ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৪৬৯)
অন্য হাদিসে রয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক ভালো মানুষ তারাই, যারা তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে। ’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১১৬২)
রাসুলুল্লাহ (সা.) পুরুষদের নির্দেশ দিয়েছেন—‘তুমি যখন খাবে, তাকেও খাওয়াবে এবং তুমি যখন পরিধান করবে, তাকেও পরাবে। তার চেহারায় কখনো প্রহার করবে না। তার সঙ্গে অসদাচরণ করবে না। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২১৪২; মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৮৫০১)
ইসলামী শরিয়তে স্বামীর ওপর স্ত্রীর জন্য যে অধিকার সাব্যস্ত করেছে, তার সারকথা হচ্ছে—এক. প্রয়োজনমাফিক অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের ভালো ব্যবস্থা করা; দুই. স্ত্রীর সঙ্গে সদাচরণ করা; তিন. মাঝেমধ্যে মাহরাম আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেওয়া; চার. প্রয়োজনমাফিক দ্বীন শেখানোর ব্যবস্থা করা; পাঁচ. শরিয়তে নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত রাখা; ছয়. প্রয়োজনমতো সহবাস ও জৈবিক চাহিদা পূরণ করা ইত্যাদি। (সুরা নিসা : আয়াত ১৯, আলকাবায়ের, জাহাবি পৃষ্ঠা. ১৭৫)
স্ত্রীর বাসস্থান
স্ত্রী যদি উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে হয়, তাহলে সে যদি স্বামীর পরিবার থেকে আলাদা ভিন্ন ঘরের দাবি করে, তাহলে স্বামীর সামর্থ্য অনুযায়ী তাকে ভিন্ন ঘরের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। স্বামীর মা-বাবার সঙ্গে যৌথভাবে থাকতে স্ত্রী বাধ্য নয়। আর মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে হলে তাকে স্বামীর পরিবারের সঙ্গে এক ঘরে রাখা গেলেও তার পৃথক কক্ষ, টয়লেট, গোসলখানা, পাকের ঘরসহ যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিস করারও দাবি করতে পারবে। এ ক্ষেত্রেও স্বামীর পরিবারের সঙ্গে যৌথভাবে থাকতে স্ত্রীকে বাধ্য করা যাবে না। আর নিম্নবিত্ত পরিবারের হলে টয়লেট, গোসলখানা, পাকের ঘর ইত্যাদি ভিন্ন দিতে বাধ্য না হলেও তার জন্য একটি পৃথক কক্ষের ব্যবস্থা করতে হবে, যার হস্তক্ষেপ স্ত্রী ছাড়া অন্য কেউ করতে পারবে না। ওই কক্ষে স্বামীর মা-বাবা, ভাইবোন বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতে পারবে না। স্ত্রীর এমন কক্ষ দাবি করার অধিকার ইসলাম স্বীকৃত। (বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২৩, রদ্দুল মুহতার : ৩/৬০১)
নারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য
শরিয়ত স্বামীর যে অধিকার স্ত্রীর ওপর সাব্যস্ত করেছে, তা হচ্ছে—(ক) স্বামীর অনুগত ও নিজেকে হেফাজতে রাখবে; (খ) স্বামীর ঘরের সম্পদ ও সন্তানসন্ততির রক্ষণাবেক্ষণ করবে; (গ) স্বামীর অনুমতি ছাড়া কাউকে ঘরে থাকার অনুমতি দেবে না; (ঘ) বিশেষ জৈবিক চাহিদা পূরণে স্বামী যখন ডাকবে, শরীয় ওজর না থাকলে তাতে অবশ্যই সাড়া দেবে এবং (ঙ) স্বামীর গৃহেই অবস্থান করবে, তার অনুমতি ছাড়া কোথাও যাবে না ইত্যাদি। (সুরা নিসা : আয়াত ৩৪, বুখারি হাদিস : ৫১৯৫, সুনানে তিরমিজি হাদিস : ৩০৮৭)
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা নারীদের প্রতি ভালো আচরণের উপদেশ দাও। কেননা, তারা তোমাদের ঘরে অবস্থানরত থাকবে। এর বেশি তাদের ওপর তোমাদের অধিকার নেই। হ্যাঁ, যদি তারা অশ্লীল কাজে লিপ্ত হয়, তখন বিছানা আলাদা করতে পারো অথবা হালকা প্রহার করতে পারো। তবে তারা অনুগত হলে তাদের কষ্ট দিয়ো না। তাদের ওপর তোমাদের অধিকার যেরূপ রয়েছে, তদ্রূপ তোমাদের ওপরও তাদের অধিকার রয়েছে। তাদের ওপর তোমাদের অধিকার হলো, তারা তোমাদের অপছন্দ হয়—এমন লোককে তোমাদের বিছানায় আসতে দেবে না এবং অনুমতি ছাড়া তোমাদের কাউকে ঘরে থাকার অনুমতি দেবে না। তোমাদের ওপর তাদের অধিকার হলো, তাদের জন্য উত্তম খাবার ও পোশাকের ব্যবস্থা করা। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১১৬৩)
সুতরাং ওপরে উল্লিখিত বিষয়াদি ছাড়া স্ত্রীর কাছে স্বামী এর বেশি কিছুর দাবি করতে পারে না এবং এর অতিরিক্ত কিছুর জন্য তার ওপর চাপ প্রয়োগ করতে পারে না। বেশি কিছু করলে সেটা স্ত্রীর এখতিয়ার। তা স্ত্রীর পক্ষ থেকে অতিরিক্ত সেবা হিসেবেই গণ্য করতে হবে।

No comments:

Post a Comment