★আল্লাহ তায়ালাকে 'নূর' বলা হয়েছে সূরা নূরের ২৪নং আয়াতে।
★আল-কুরআনকে 'নূর' বলা হয়েছে সূরা আরাফ-১৫৭, নিসা-১৭৪, আনআম-১২২ এবং ইব্রাহিম-১ নং আয়াতে।
★তাওরাত ও ইন্জিলকে 'নূর' বলা হয়েছে সূরা আনআম-৯১, সূরা মায়েদা-৪৪ ও ৪৬ নং আয়াতে।
★ দ্বীন ইসলামকে 'নূর' বলা হয়েছে সূরা আস-সাফ-৮ এবং আত-তাওবা-৩২ নং আয়াতে।
★সূরা মায়েদার ১৫ নং আয়াতে কুরআন, ইসলাম, মতান্তরে মুহাম্মদ (স)কে নূর বলা হয়েছে।
★সূরা আহযাবের ৪৫-৪৬ নং আয়াতে নবী মুহাম্মাদ (স)কে 'উজ্জ্বল প্রদীপ' বলা হয়েছে।
উপরের আয়াতসমূহ দ্বারা একথা প্রমাণিত হয়না যে, আল্লাহ নূরের তৈরি (নাউজুবিল্লাহ)। কারন আল্লাহ তায়ালা সৃষ্ট নন- তিনি স্রষ্টা। একথাও প্রমাণিত হয়না যে, তাওরাত, ইন্জিল ও কুরআন নূরের তৈরি। কারন আল্লাহ যেমন সৃষ্ট নন, তেমন আল্লাহর কথাও সৃষ্ট নয়। দ্বীন ইসলামও নূরের তৈরি নয়। কারন এটিও কোন মূর্ত বস্তু নয়।
যদি আল্লাহ, কুরআন ও ইসলামকে 'নূর' বল্লে নূরের তৈরি না হয়, মুহাম্মাদ (স)কে নূর বল্লেই কেন তিনি নূরের তৈরি হয়ে যাবেন????
আসলে এখানে 'নূর' বলতে এমন একটি অর্থ গ্রহণ করা হয়েছে যা আল্লাহর জন্য যেমন প্রযোজ্য, কুরঅান তাওরাত ও ইন্জিলের জন্যও তেমন প্রযোজ্য। দ্বীন ইসলামের জন্য যেমন প্রযোজ্য, তেমন নবী মুহাম্মাদ (স)এর জন্যও প্রযোজ্য।
এবার আসুন দেখি সেই অর্থটা কী???
দুনিয়ার প্রায় সকল মুফাস্সিরে কুরআন উপরোক্ত আয়াতসমূহে নূরের অর্থ গ্রহণ করেছেন "হাদী" বা "সঠিক পথ প্রদর্শক"।
আল্লাহ যেমন সঠিক পথ প্রদর্শক, আল্লাহর অবিকৃত কিতাবসমূহও তেমন সঠিক পথ প্রদর্শক। দ্বীন ইসলাম যেমন সঠিক পথ প্রদর্শক, নবী মুহাম্মাদ (স)ও তেমন সঠিক পথ প্রদর্শক। সকল ক্ষেত্রে একই অর্থ প্রযোজ্য।
আল-কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় ليخرجكم من الظلمات الي النور যাতে করে তোমাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোতে বের করে আনেন" বলতে 'সঠিক পথ' বুঝানো হয়েছে। (সূরা বাকারা-২৫৭, মায়িদা-১৬, হাদীদ-৯, ইব্রাহিম-৫, নিসা-৭, আহযাব-৩৩, তাগাবুন-৮, ত্বালাক-১১ ইত্যাদি)।
সূরা নূর-৪০, যুমার-২২ এবং হাদীদ-২৮ নং আয়াতে 'নূর' বলতে সরাসরি 'সঠিক পথ' বুঝানো হয়েছে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার প্রিয় নবীকে কেন 'নূর' বলেছেন তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন সূরা আশ-শূরায়-
وَكَذَٰلِكَ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ رُوحًا مِّنْ أَمْرِنَا ۚ مَا كُنتَ تَدْرِي مَا الْكِتَابُ وَلَا الْإِيمَانُ وَلَـٰكِن جَعَلْنَاهُ نُورًا نَّهْدِي بِهِ مَن نَّشَاءُ مِنْ عِبَادِنَا ۚ وَإِنَّكَ لَتَهْدِي إِلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ
'এমনিভাবে আমি আপনার কাছে এক ফেরেশতা প্রেরণ করেছি আমার আদেশক্রমে। আপনি জানতেন না, কিতাব কি এবং ঈমান কি? কিন্তু আমি একে করেছি #নূর, যাতে আমি আমার বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা পথ প্রদর্শন করি। নিশ্চয় আপনি সরল পথ প্রদর্শন করেন।' (আশ্-শূরা-৫২)
কোন কিছুকে 'নূর' বল্লেই কি নূরের তৈরি হয়ে যায়?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
সূরা ইউনূস-৫ এবং নূহ-১৬ নং আয়াতে চাঁদকেও 'নূর' বলা হয়েছে-
هُوَ الَّذِي جَعَلَ الشَّمْسَ ضِيَاءً وَالْقَمَرَ نُورًا وَقَدَّرَهُ مَنَازِلَ لِتَعْلَمُوا عَدَدَ السِّنِينَ وَالْحِسَابَ ۚ مَا خَلَقَ اللَّهُ ذَٰلِكَ إِلَّا بِالْحَقِّ ۚ يُفَصِّلُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ
'তিনিই সে মহান সত্তা, যিনি বানিয়েছেন সুর্যকে উজ্জল আলোকময়, আর চন্দ্রকে #নূর এবং নির্ধারিত করেছেন এর জন্য মনযিল সমূহ, যাতে করে তোমরা চিনতে পার বছরগুলোর সংখ্যা ও হিসাব। আল্লাহ এই সমস্ত কিছু এমনিতেই সৃষ্টি করেননি, কিন্তু যথার্থতার সাথে। তিনি প্রকাশ করেন লক্ষণসমূহ সে সমস্ত লোকের জন্য যাদের জ্ঞান আছে।' (ইউনুস-৫)
وَجَعَلَ الْقَمَرَ فِيهِنَّ نُورًا وَجَعَلَ الشَّمْسَ سِرَاجًا
'এবং সেখানে চন্দ্রকে রেখেছেন #নূররূপে এবং সূর্যকে রেখেছেন প্রদীপরূপে।' (নূহ-১৬)
তাই বলে কি চাঁদও নূরের তৈরি? সবাই জানে চাঁদ নূরের তৈরি নয় এবং এর নিজস্ব কোন আলোও নাই। সূর্যের ধার করা আলোতেই প্রতিফলিত হয় চাঁদ।
তারপরও ইসলামে শির্কের অনুপ্রবেশ ঘটানোর চেষ্টায় রত একটি ভ্রান্ত দল রাসূলুল্লাহ (স)কে নূরের তৈরি প্রমাণ করার জন্য কতগুলো জাল হাদীস রচনা করেছে। তন্মধ্যে একটি প্রসিদ্ধ জাল হলো:
"আল্লাহ সর্বপ্রথম আমার নূরকে সৃষ্টি করেছেন"।
এই কথাটি সিহাহ সিত্তাহ তো দূরের কথা, অন্য কোন হাদীস গ্রন্থেও পাওয়া যায়নি। মুজাদ্দিদে আলফে সানী হযরত আহমদ ইবনু আবদুল আহাদ সারহিন্দী (রহ) এ সকল জাল ও ভিত্তিহীন বর্ণনার প্রতিবাদ করেছেন বারংবার (মাকতুবাত শরীফ ১/১, পৃষ্ঠা ৬৭, ৬৮, মাকতুব-৪৩)।
যতটুকু জানা যায়, ৭ম হিজরির জালিয়াতগণ এই কথাগুলোকে সর্বপ্রথম হাদীস হিসেবে প্রচার করে। ১০ম হিজরিতে এসে কথাটিকে আরো একধাপ বাড়িয়ে 'মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাকে' আছে বলে প্রচার করতে থাকে। ইমাম সুয়ূতী ও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ তন্নতন্ন করে খুঁজেও 'মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাকে' কথাটি পাননি বলে দাবি করেছেন (সুয়ূতী, আল-হাবী ১/৩৮৪-৩৮৬)।
কথাটি সহীহ হাদিসেরও বিপরীত। রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, "আল্লাহ সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর কলমকে নির্দেশ দিয়েছেন ভবিষ্যতে যা যা ঘটবে তা লিখতে"।
কিন্তু ইসলামে শির্ক ঢুকানোর অপচেষ্টাকারীরা কতগুলো জাল হাদীস দিয়ে অসংখ্য সহীহ হাদীস বাতিল করার চেষ্টায় লিপ্ত শুধু তা নয়, অসংখ্য মুফাসসিরের তাফসির বাতিল করে দেয়ারও দুঃসাহস দেখিয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, "যে ব্যক্তি আমার নামে মিথ্যা বল্ল, সে জাহান্নামে জায়গা করে নিল"। আল্লাহ আমাদের সবাইকে 'সঠিক পথ' প্রদর্শন করুন। আমিন।
(ড. খন্দকার আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহঃ এর গ্রন্থ অবলম্বনে)
=====================================
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি নূরের তৈরি হতেন তবে-
★তিনি অজু গোসল করতেন না। কারন নূরের দেহে অজু গোসল লাগেনা।
★তিনি টয়লেটে যেতেন না। কারন নূরের দেহে এটারও দরকার নেই।
★তিনি পানাহার করতেন না। কারন নূরের দেহে পদার্থের তৈরি খাবারের প্রয়োজন নাই।
★তিনি বিয়েশাদী করতেন না। কারন তাঁর স্ত্রীগণ নূরের তৈরি নন।
★তিনি নূরের তৈরি হলে তাঁর ছেলেমেয়েরাও নূরের তৈরি হতো।
★তাঁর মা-বাবারাও নূরের তৈরি নন।
★নূরের তৈরি হলে তাঁর দেহ কাচের চেয়েও স্বচ্ছ হতো।
★সর্বোপরি তিনি নূরের তৈরি হলে তাঁর আনুগত্য করা আমাদের উপর ফরয হতোনা। কারন পদার্থের তৈরি মানবদেহের পক্ষে নূরের তৈরি দেহের অনুকরন করা সম্ভব নয়। আল্লাহ তায়ালা জালিম নন যে, তিনি মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় এমন কাজ চাপিয়ে দিবেন!
--------------------------------------------------------------------
আসল কথা:
মানুষ মাটির তৈরি, ফেরেস্তা নূরের তৈরি এবং জ্বিন আগুনের তৈরি। আদম আঃ মাটির তৈরি আর উনাকে সকল ফেরেস্তা ও জ্বিনদের সর্দার শয়তান/ ইবলিশকে দিয়ে সেজদা করার হুকুম দিয়েছিলেন আল্লাহ্। তাহলে সবার উপরে কি? অবশ্যই মাটির মানুষ, কারণ নূর এবং আগুন দিয়ে মাটিকে সেজদা করা হয়েছিল, এজন্য সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ। তারপরও যারা বলেন নবী নূরের তৈরি, তাইলে কি নবির চেয়ে মানুষ শ্রেষ্ঠ (নাউজুবিল্লাহ)। নিজের মাথাটা কাজে লাগান, সব কিছু সঠিক জানবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আদম আলাইহিস সালামের অন্যতম সন্তান। সুতরাং তাঁরও আদিসৃষ্টি মাটি থেকেই। মুহাম্মাদ (সাঃ)কে অতি প্রাকৃতিক ক্ষমতার অধিকারী বানিয়ে তাকে স্রষ্টার আসনে বসানোই এ তত্ত্ববাদীদের মূল লক্ষ্য যা শিরক ছাড়া কিছু নয়। যারা বলে নবি নূরের তৈরি, তারা ইয়াহুদি খ্রিস্টানের দালাল। খ্রিস্টানরা ঈসা নবিকে বাড়াতে বাড়াতে আল্লার পুত্র বানাইসে। ঠিক, ভন্ড কবর পুজারি মাজার পুজারিরা নবিকে আবদুল্লাহ থেকে নুরুল্লাহ করে দিচ্ছে! কত বড় মুশরিক এরা! নবি আল্লার আবেদ আর তাকে আল্লার নুরের অংশ (সমান) বানাইছে, (নাওজুবিললাহ)। মুসলিমদের মুশরিক বানানোর এ এক গভীর ষড়যন্ত্র- যেমনটা করেছিল পূর্ববর্তী নবীর অনুসারীরা, বিশেষ করে ঈসা(আঃ)-এর ক্ষেত্রে। ঈশ্বরের সাথে তুলনা করতে হলে অথবা কাউকে ঈশ্বর বানাতে হলে তার অতি প্রাকৃতিক গুণাবলীর কথা বলতে হবে, তাকে অপরাপর মানবমন্ডলী থেকে ভিন্ন প্রকৃতির দেখাতে হবে। যেহেতু সরাসরি মুহাম্মাদ (সাঃ)কে খোদা বা খোদার পুত্র বলার সুযোগ নেই। যারা বলেন রাসুল (সঃ) নূরের তৈরি তাদের কাছে আমার কিছু প্রশ্ন..পারলে উওর দিন???
(১) রসুল্লাহ (সঃ) এর স্ত্রীরা কিসের তৈরি?
(২) রসুল্লাহ (সঃ) এর সন্তান গুলো কিসের তৈরি?
(৩) নূর এবং মাটি কি করে এক হয়?
(৪) রসুল্লাহ (সঃ) পিতা-মাতা কিসের তৈরি? ==================
কেউ কেউ এ প্রসঙ্গে চুপ থাকার নীতি অবলম্বন করছেন। অথচ আল্লাহ তার নবীকে বলে দিচ্ছেন ঘোষনা করার জন্য-
"বলুন, আমিও তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহই একমাত্র ইলাহ। অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার পালনকর্তার এবাদতে কাউকে শরীক না করে।" সূরা কাহফ-১১০
قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَمَن كَانَ يَرْجُو لِقَاء رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا
No comments:
Post a Comment