"মীলাদুন্নবী উদযাপন" শিয়াগণ কর্তৃক প্রাথমিক প্রবর্তন।
লেখকঃ ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমাহুল্লাহ।
দুই ঈদের বাইরে কোনো দিবসকে সামাজিকভাবে উদযাপন শুরু হয় হিজরী ৪র্থ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে শিয়াদের উদ্যোগে। সর্বপ্রথম ৩৫২ হিজরীতে (৯৬৩ খ্রি.) বাগদাদের আব্বাসী খলীফার প্রধান প্রশাসক ও রাষ্ট্রের প্রধান নিয়ন্ত্রক বনী বুয়াইহির শিয়া শাসক মুইজ্জুদ্দৌলা ১০-ই মুহাররাম আশুরাকে শোক দিবস ও জিলহজ্ব মাসের ৮ তারিখ "গাদীর খুম"[1] দিবস ঈদ ও উৎসব দিবস হিসাবে পালন করার নির্দেশ দেন। তার নির্দেশে এই দুই দিবস সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদার সাথে পালন করা হয়। যদিও শুধুমাত্র শিয়ারাই এই দুই দিবস পালনে অংশগ্রহণ করেন, তবুও তা সামাজিকরূপ গ্রহণ করে। কারণ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার ফলে আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ প্রথম বৎসরে এই উদযাপনে বাধা দিতে পারেননি। পরবর্তী যুগে যতদিন শিয়াদের প্রতিপত্তি ছিল এই দুই দিবস উদযাপন করা হয়, যদিও তা মাঝে মাঝে শিয়-সুন্নী ভয়ংকর সংঘাত ও গৃহযুদ্ধের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।[2]
ঈদে মীলাদুন্নবী উদযাপন করার ক্ষেত্রেও শিয়াগণ আগ্রহী ভূমিকা পালন করেন। উবাইদ বংশের রাফেযী ইসমাঈলী শিয়াগণ [3] ফাতেমী বংশের নামে আফ্রিকার উত্তরাংশে রাজত্ব স্থাপন করেন। ৩৫৮ হিজরীতে (৯৬৯ খ্রি.) তারা মিশর দখল করে তাকে ফাতেমী রাষ্ট্রের কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলেন এবং পরবর্তী ২ শতাব্দীরও অধিকাল মিশরে তাদের শাসন ও কর্তৃত্ব বজায় থাকে। গাজী সালাহুদ্দীন আইঊবীর মিশরের নিয়ন্ত্রন গ্রহণের মাধ্যমে ৫৬৭ হিজরীতে (১১৭২ খ্রি.) মিশরের ফাতেমী শিয়া রাজবংশের সমাপ্তি ঘটে।[4]
এই দুই শতাব্দীর শাসনকালে মিশরের ইসমাঈলী শিয়া শাসকগণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ২ ঈদ ছাড়াও আরো বিভিন্ন দিন পালন করতেন, তন্মধ্যে অধিকাংশই ছিল জন্মদিন। তারা অত্যেন্ত আনন্দ, উৎসব ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ৭টি জন্মদিন পালন করতেনঃ (১). রাসূলে আকরাম ﷺ-এর জন্মদিন, (২). আলী (রাঃ)-এর জন্মদিন, (৩). ফাতেমা (রাঃ)-এর জন্মদিন, (৪). হাসান (রাঃ)-এর জন্মদিন, (৫). হুসাইন (রাদিয়াল্লাহু আনহুম)-এর জন্মদিন, (৬). তাদের জীবিত খলীফার জন্মদিন ও (৭). ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মদিন (বড়দিন বা ক্রিসমাস)।[5]
সুত্রঃ
[1] এ দিনে রাসূলুল্লাহ ﷺ আলীকে (রাঃ) তার পরবর্তী নেতা হিসাবে ঘোষণা দেন বলে শিয়াগণ দাবি করেন।
[2] ইবনু কাসির, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, প্রাগুক্ত ৭/৬৪২, ৬৫৩, ৮/ ৩, ৯, ১১, ১৫, ১৬, ১৭..
[3] আগাখানী, বুহরা ও বাতেনী শিয়াদের পূর্বপুরুষ।
[4] বিস্তারিত দেখুনঃ মাহমূদ শাকির, আত-তারিখুল ইসলামী, ৬/ ১১১-১১২, ১২৩-১২৪, ১৩৬-১৩৭, ১৬৫-১৬৮, ১৮০-১৮২, ১৯৩-১৯৬, ২০৮-২০৯, ২৩৩, ২৪৮, ২৬৫, ২৮৭-২৮৯, ৩০৩-৩০৭।
[5] আল-মাকরীযী, আহমদ ইবনু আলী, আল-মাওয়ায়িজ ইতিবার বি যিকরিল খুতাতি ওয়াল আসার পৃ. ৪৯০-৪৯৫।
বইঃ এহইয়াউস সুনান, ৫২৩-৫২৪ পৃ.
লেখকঃ ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহ.
No comments:
Post a Comment