নামায প্রসঙ্গ দুইটি মিথ্যা বানোয়াট জাল হাদিস!
১/ জামাআতে নামাায় আদায়ে নবীগণের সাথে হজ্জ করল!
২/ মুত্তাকী আলিমের পিছনে নামায, নবীর পিছনে নামায আদায়ে করল!
------------------------------------------------
১/ জামাআতে সালাত আদায় করা মুমিনের অন্যতম দায়িত্ব। কুরআনে মুমিনগণকে একত্রে সালাত আদায়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অগণিত সহীহ হাদীসে জামাআতে সালাত আদায়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জামাআত ছেড়ে একা সালাত আদায়কারীকে মুনাফিক বলা হয়েছে। আযান শোনার পরেও যে ব্যক্তি অসুস্থতা বা ভয়ের ওযর ছাড়া জামাআতে না এসে একা সালাত আদায় করবে তার সালাত কবুল হবে না বলে সহীহ হাদীসে বলা হয়েছে।
‘জামাতে সালাত আদায়ের’ বিধান সম্পর্কে ফিকহী পরিভাষাগত মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, কেউ বলেছেন ওয়াজিব ও কেউ বলেছেন ফরয। এ মতভেদ একান্তই পরিভাষাগত। কারণ সকলেই একমত যে, পুরুষের জন্য ওযর ছাড়া ফরয সালাত একা আদায় করলে কঠিন গোনাহ হবে। সালাত হবে কি না সে বিষয়ে কিছু মতভেদ রয়েছে।
এ সকল সহীহ হাদীসের পাশাপাশি জালিয়াতগণ এ বিষয়ে অনেক জাল হাদীস তৈরি করেছে। আর এ বিষয়েও সহীহ হাদীসগুলো বাদ দিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ সব জাল হাদীসই বই পুস্তকে লেখা হয় ও ওয়াযে বলা হয়। সহীহ হাদীসে বলা হয়েছে যে, ইশা ও ফজরের সালাত জামাতে আদায় করলে সারারাত্র তাহাজ্জুদের সালাত আদায়ের সাওয়াব হবে, ফজরের সালাত জামাতে আদায় করলে আল্লাহর দায়িত্বে থাকা যাবে ... ইত্যাদি। কিনত এ সকল ‘সামান্য’ সাওয়াবের কথায় মন না ভরায় জালিয়াতগন বানিয়েছে:
مَنْ صَلَّى صَلاَةَ الصُّبْحِ فِيْ الْجَمَاعَةِ فَكَأَنَّمَا حَجَّ مَعَ آَدَمَ خَمْسِيْنَ حَجَّةً..
‘‘যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামাআতে আদায় করল সে যেন আদম (আ) এর সাথে ৭০ বার হজ্জ করল ...।’’ এভাবে প্রত্যেক ওয়াক্তের সাথে একজন নবীকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে...।[1]
অনুরূপ বানোয়াট কথার মধ্যে রয়েছে: যে ব্যক্তি ফজর ও ইশার সালাত জামাতে আদায় করল, সে যেন আদমের (আ) পিছনে সালাত আদায় করল...। এভাবে এক এক সালাতের জন্য এক এক নবীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে...।[2]
[1] সুয়ূতী, যাইলুল লাআলী, পৃ.৮৩; সাগানী, আল-মাউদূ‘আত পৃ. ৪২; পাটনী, তাযকিরা, পৃ. ৩৯, ১০৬; শাওকানী, আল-ফাওয়াইদ ১/৫৫। [2] অধ্যাপিকা কামরুন নেসা দুলাল, নেক কানুন, পৃ ১০২-১০৩।
==========================
২/ মুত্তাকী আলিমের পিছনে সালাত নবীর পিছনে সালাত
জামাআতে সালাত আদায়ের কারণে সাওয়াব বৃদ্ধির কথা সহীহ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি। বিভিন্ন হাদীসে কুরআনের তিলাওয়াত ও জ্ঞানে পারদর্শী, হাদীসের জ্ঞানে পারদর্শী, হিজরত ও অন্যান্য নেক আমলে অগ্রবর্তী ব্যক্তিগণকে ইমামতি প্রদানের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে ইমামের ‘তাকওয়া’ বা ‘ইলমের’ কারণে মুক্তাদিগণের ‘সাওয়াব’ বা ‘বরকত’ বেশি হবে, এরূপ অর্থে কোনো সহীহ হাদীস বর্ণিত হয় নি। এ অর্থে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে সবই অত্যন্ত যয়ীফ অথবা বানোয়াট। এইরূপ একটি ভিত্তিহীন কথা:
مَنْ صَلَّى خَلْفَ عَالِمٍ تَقِيٍّ، فَكَأَنَّمَا صَلَّى خَلْفَ نَبِيٍّ
‘‘যে ব্যক্তি কোনো মুত্তাকি আলিমের পিছনে সালাত আদায় করল, সে যেন একজন নবীর পিছনে সালাত আদায় করল।’’
ফিক্হের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘হেদায়া’-র প্রণেতা আল্লামা আলী ইবনু আবী বাক্র মারগীনানী (৫৯২ হি) জনশ্রুতির উপর নির্ভর করে এ কথাটিকে হাদীস হিসাবে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু মুহাদ্দিসগণ অনুসন্ধান করে নিশ্চিত হয়েছেন যে, এ কথাটি কোনো হাদীস নয়। কোনো সহীহ বা যয়ীফ সনদে তা কোনো গ্রন্থে সংকলিত হয় নি। এজন্য আল্লমা যাইলায়ী, ইরাকী, ইবনু হাজার, সুয়ূতী, সাখাবী, তাহির পাটনী, মোল্লা আলী কারী, আজলূনী প্রমুখ মুহাদ্দিস এ কথাটিকে জাল হাদীস হিসাবে তালিকাভুক্ত করেছেন।[1]
[1] মারগীনানী, হেদায়া ১/৫৭; যাইলায়ী, নাসবুর রাইয়াহ ২/২৬; ইবনু হাজার, আদ-দিরাইয়া ১/১৬৮; সাখাবী, আল-মাকাসিদ, পৃ. ৩১১; মোল্লা আলী কারী, আল-মাসনূ, পৃ. ১৫২; আল-আসরার, পৃ. ১৪৭, ২৩৫; আজলূনী, কাশফুল খাফা ২/৩৭, ১২২, ৩৩৭; তাহির পাটনী, তাযকিরাতুল মাউদূ‘আত, পৃ. ৪০; শাওকানী, আল-ফাওয়াইদ ১/৫৫।
========================
বই: হাদিসের নামে জালিয়াতি
লেখক: খন্দকার ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রাহিঃ)
No comments:
Post a Comment