Sunday, July 29, 2018

ইসলামিক দৃষ্টিকোন থেকে মহিলাদের তাবলীগ/তালীম কতটুকু জায়েজ।



Image may contain: text



প্রশ্ন ০৬: মহিলারা কি তালিম করতে গিয়ে ঘর থেকে বের হতে পারবে?
তারা কিভাবে দ্বীন প্রচার করবে?
📝(সাইফুল্লাহ্ বিন নূরুল ইসলাম)

📙উত্তর:
'তালিম' হচ্ছে আরবি শব্দ। যার বাংলা অর্থ হলো : উপদেশ /শিক্ষা/ শিষ্টাচার।

ইসলামিক দৃষ্টি কোন থেকে তালিম দেওয়া বলতে বুঝায়, কাউকে ইসলামিক শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়া।
আর যদি মহিলারা এই কাজ করে থাকে তাদের বলা হয় 'মহিলা তালিম'। 
যা বর্তমানে উপমহাদেশ গুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে ব্যাপকভাবে।

মহিলা তালীমকে আবার মহিলা তাবলীগি ও বলা হয়। তালিম বা তাবলীগের মূল উদ্দেশ্য হলো 'ইসলাম প্রচার।'
ইসলামিক দৃষ্টিকোন থেকে তালীম/তাবলীগ:
📖আল্লাহ বলেন:
"আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত যারা আহবান জানাবে সৎকর্মের প্রতি নির্দেশ দেবে, ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে, আর তারাই হলো সফলকাম।"(সূরা আল-ইমরান :১০৪)

ইসলামের যারা তালিম করে থাকে তারা মূলত ইসলাম প্রচারের মাধ্যমেই তালিম করে থাকে।
📑আর রাসূল বলেছেন:
"প্রচার কর একটি আয়াত হলেও, আর সেটা বনি-ঈসরাইলের ঘটনা হলে ও দোষ নেই।"
( সহীহ বুখারী :৩৪৬১ )

📑আনাস বিন মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেন:
রসূলুল্লাহ (স:) বলেছেন :
"জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের(নর-নারী) উপর ফরয।" 
(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ২২৪)

সুতরাং প্রত্যেক মুসলমানেরই ধর্ম শিক্ষা ও প্রচার করা জরুরী।
এবার আসুন দেখি, 
🚫🚫ইসলামিক দৃষ্টিকোন থেকে মহিলাদের তাবলীগ/তালীম কতটুকু জায়েজ।

আমরা পবিত্র কুরআনের অায়াত গুলোর দিকে লক্ষ করি তাহলে দেখবো আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের পৃথিবীতে পথ-প্রদর্শণ করানোর জন্য অনেক নবী~রাসূল পাঠিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে কোন নবী , রাসূল ই মহিলা ছিলনা। এবং নবী অর্থ যদি নবুওয়াত প্রাপ্তি হিসেবে নেন, তাহলে দেখবেন ইসলামে কোন মহিলা নবী ই নেই।
অথচ আল্লাহর দ্বীন প্রচারে নবী-রাসূলরাই বিশেষ ভূমিকা রাখেন, রেখেছেন।
রাসূল (স:) এর যুগে যারা দ্বীন প্রচার করতেন তারা সবাই পুরুষ সাহাবী ছিলেন। কখনো রাসূল (স:) নিজেও দ্বীন প্রচারের জন্য কোন স্ত্রীকে নিয়ে বেরিয়ে যাননি, কখনো তিনি আয়েশা (রা:)কে বলেননি যে, আয়েশা (রা:) তুমি আজ ওমুকের বাড়ীতে ইসলাম বুঝাতে যাবে, আর আমি অন্য পাড়াতে প্রচার করবো। এবং রাসূল (স:) পূর্ণ জীবনে এমন কোন সহীহ হাদিস ও নেই যে, যেখানে বলা আছে মহিলাদের বাইরে বেরিয়ে গিয়ে দ্বীন প্রচার করতে হবে। এটা মহিলাদের জন্য ফরয নয়।
📙তবে বুখারী ও মুসলিমের হাদিসে আসছে:
কারোর (নারীর) যদি দ্বীনি বিষয়ে ভাল জানা থাকে তবে তাঁর কাছ থেকে আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশিরা দ্বীন শিক্ষার জন্য যাবে।

🚨তাহলে বুঝা যায় , কোন নারী দ্বীন প্রচারের জন্য বাইরে বেরিয়ে যাবেনা। বরং তার কাছ থেকে অন্যরা জেনে নিবে।
🎯🎯তবে কোন কোন আলেম বলেছেন, মহিলাদের যদি গভীর বিশুদ্ধ জ্ঞান থাকে দ্বীন বিষয়ে তাহলে তারা নিজেদের বাড়িতে দ্বীনি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারে নারীদের জন্য। তবে এতে 'স্বামীর' অনুমতি থাকতে হবে।
🔴🔴 মহিলা তালীমে কুরআন হাদিসের নামে মিথ্যা ,জয়ীফ ও মনগড়া কিচ্ছা কাহিনী প্রচার করার ব্যাপারে:
অধিকাংশ মহিলারাই কুরআন হাদিস সমন্ধে সহীহ জ্ঞান রাখে না। বর্তমানে যারা তালীম দিচ্ছে তার ৯৮% ওর বেশি মহিলারা মিথ্যা গল্প গুজুব দিয়ে উপদেশ দিচ্ছে। তারা যেসব বই পড়ে, তারমধ্যে রয়েছে,ফাযায়েলে নামায, ফাযায়েলে হজ্জ্ব, ফাযায়েলে যাকাত, ফাযায়েলে রোযা, উজীফা শরীফ ও নিয়ামুল কোরআনসহ অন্যান্য বই।
যাতে শির্ক আর কুফরি তে ভরপুর। ফলে তারা সহীহ জ্ঞান রাখে ও না প্রচার ও করতে পারে না। এতে করে প্রায় সবাই অধিকাংশ আমল মিথ্যার উপর করে যাচ্ছে। ফলে পরকাল অসাড়।
🚨পরিনাম:
🎯🎯 মহিলাদের তালীম দিতে গিয়ে দেখা যায়, অনেক মহিলারাই অল্প জেনে বেশি বলে, এতে করে ইসলামে নতুন কিছু তৈরী হয়। যাকে বলা হয়'বিদআত'। যার পরিনাম জাহান্নাম।
এছাড়া ও অপ্রীতিকর হলে ও কথাটি বলতে হয় যে, তালীম দিতে গিয়ে কিছু কিছু মহিলারা পরকিয়ায় ও জড়িয়ে যায়। যার শাস্তি ইসলামে ,পাথর মেরে মেরে হত্যা করা।
🎯🎯 কখনো কখনো তাদের বাইরে ও রাত যাপন করতে হয়। যেমন আজকের প্রশ্ন ছিল, মহিলারা তালিম দিতে গিয়ে রাত যাপন করতে পারে কিনা।
স্বামীর অনুমতি ছাড়া কোন মহিলা নফল রোযা ও রাখতে পারবে না। অথচ আল্লাহর কাছে নফল রোযার গুরুত্ব কত যে বেশি, সেটা নফল রোযার গুরুত্বের অধ্যায়ে আলোচনা করবো ইনশা-আল্লাহ্ ।
আর কোন স্বামী যদি অনুমতি দেয় তার স্ত্রীকে নিজের অবর্তমানে অপরিচিত নতুন কোন স্থানে থাকার (মাহরাম ব্যতীত),তাহলে সে স্বামী "দাইউসের"অন্তর্ভুক্ত হবে।

🎯🎯 মহিলারা তালীমের কাছ করতে গিয়ে স্ত্রী হিসেবে স্বামীর সেবা / কামনা যথাযথভাবে পূরণ করতে অক্ষম। কারণ তারা অনেক সময়ই দূরে দূরে অবস্থান করে ও দীর্ঘ সময় পার করে। ফলে স্বামীর হক্ক যথাথত ভাবে স্ত্রী আদায় করতে পারে না।
অথচ আল্লাহ্ বলেন:
স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শস্য ক্ষেত্র । 
তোমরা যখন যেভাবে ইচ্ছে তাদের ব্যবহার কর।( বাকারা: ২২৩)
🎯🎯 অনেক সময় তারা তাদের সন্তানদের সেবা শুশুষ্রা ও যথাযথভাবে দেখা-শোনা করতে পারেনা। ফলে মা হওয়ার মহৎ ফযীলত ও পুরষ্কার তা থেকে তারা বঞ্চিত হয়। মাঝে মাঝে তারা Family planning করতে ও বাধ্য হয়।

সবশেষে বলতে চাই , মহিলাদের দ্বীন প্রচার করতে বেরিয়ে পড়া খুূই 'জঘন্য' কাজ। এমনকি দ্বীন প্রচারে আল্লাহ্ নিজে ও মহিলাদের সিলেকশন করেন নি।
উপদেশ: যদি কোন মহিলারা ইসলামের জ্ঞান সহীহ ভাবে থাকে, তাহলে সে দ্বীন প্রচারের জন্য যা করতে পারে তাহলো:
১. তার কাছে আসলে শিখাতে পারে।
২. দ্বীনি বিষয়ে লিখতে পারে..
৩. নারীদের শিক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠান করতে পারে ( স্বামীর অনুমতি ক্রমে)।
৪. মানুষকে ইসলামিক সহীহ বই উপহার দিতে পারে।
৫. স্যোসল নেটওয়ার্কে ইসলাম প্রচার করতে পারে। (তবে সতর্কতার সহীত,মহিলাদের প্রতি ই)
৬/ নিজেদের নিকস্থদের মধ্য আলোচনা করতে পারে। ইত্যাদি।

🚨তবে আল্লাহ সুবহানাহু তা'লা উপরের গুলো বলেননি। বলেছেন বিভিন্ন ইসলামিক স্কলার।
📖এবার শুনুন আল্লাহ্ কি বলেছেন:
"হে নবী পত্নীগণ! 
তোমরা অন্য নারীদের মত নও; 
যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, 
তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, ফলে সেই ব্যক্তি কু-বাসনা করে, যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে।" (সূরা আহযাব-৩২)

📖আরো বলেন:
"তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে-মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না। নামায কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে। হে নবী পরিবারের সদস্যবর্গ। আল্লাহ কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে।" (সূরা আহযাব-৩৩)
📖 এছাড়াও আরো বলেন:
"আল্লাহর আয়াত ও জ্ঞানগর্ভ কথা, যা তোমাদের গৃহে পঠিত হয় তোমরা সেগুলো স্মরণ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ সূক্ষনদর্শী, সর্ববিষয়ে খবর রাখেন।" (সূরা আহযাব-৩৪)

🔝উপরের তিনটি আয়াত থেকে বুঝা গেল, প্রত্যেক মহিলারা যদি কোরআন পাঠ করে, আবৃত থাকে ও নিজের পরিবারকে সংশোধন করার চেষ্টা করে তাহলে নিজ হাতেই পৃথিবীর ৮০% এর বেশি ঘর সংশোধন হয়ে যাবে। এর চেয়ে উত্তম আর কি হতে পারে। মেয়েদের কে বলি, আপনি আপনার বাবা, স্বামী ও সন্তান দের বেলায় আরো যত্নশীল হোন, তাদের সত্যিকার অর্থেই আপনি তাদের ভাল বাসেন।
নিচের আয়াতটি দিয়েই শেষ করতে চাই, 
আল্লাহ্ বলেন:

"নিশ্চয় মুসলমান পুরুষ, মুসলমান নারী, ঈমানদার পুরুষ, ঈমানদার নারী, অনুগত পুরুষ, অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ, সত্যবাদী নারী, ধৈর্য্যশীল পুরুষ, ধৈর্য্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ, বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ, দানশীল নারী, রোযা পালণকারী পুরুষ, রোযা পালনকারী নারী, যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী পুরুষ, , যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী নারী, আল্লাহর অধিক যিকরকারী পুরুষ ও যিকরকারী নারী-তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরষ্কার।" 
(সূরা আহযাব-৩৫)

আল্লাহ্ সবাইকে কবুল করুক।আমীন।
আরো জানতে জয়েন করুন:

নিজ ঘরের বাহিরে নারীদের দ্বীনি তালিম করা বৈধ কিনা?
একটি এলাকায় নারীদের তালিম করার বর্নণা, ঠিক এমনটাই- একটি আলাদা ঘরে পূর্ণ পর্দার সাথে সপ্তাহে দুই দিন শুক্রবার ও সোমবার বাদ যোহর দ্বীনি বিষয় ও মাসআলা মাসায়েল আলোচনা করা হয়। একজন মহিলা মজলিসটি পরিচালনা করেন। এতে আশপাশের মহিলারাই অংশগ্রহণ করেন। তবে পাঁচ-ছয় মাইল দূরবর্তী এলাকার স্বল্প সংখ্যক মহিলাও অভিভাবকের অনুমতিক্রমে মাহরাম ছাড়া এসে থাকেন। পাঁচ-ছয় মাইল দূর থেকে মাহরাম ছাড়া আসাকে কেন্দ্র করে কিছু মানুষ প্রশ্ন তুলেছে। এখানে জানার বিষয় হলো তিনটি- ক) পার্শ্ববর্তী ও পাঁচ-ছয় মাইল দূর থেকে পর্দার সাথে মহিলাদের মাহরাম ছাড়া আসাটা কেমন? খ) পর্দা রক্ষা করে কোনো মহিলা নিজ বাড়িতে তালীমের ব্যবস্থা করতে পারবে কি না?
ক) মহিলাদের শিক্ষার ব্যবস্থা প্রধানত নিজ ঘরেই হওয়া চাই। তারা মাহরাম পুরুষ যথা বাপ, দাদা, আপন ভাই, চাচা, মামার কাছে দ্বীন শিক্ষা করবে। হ্যাঁ, মাহরামদের মধ্যে যোগ্য আলেম না পাওয়া গেলে নিজ মহল্লার কোনো দ্বীনী শিক্ষায় শিক্ষিত দ্বীনদার মহিলার নিকট গিয়ে দ্বীন শিক্ষা করবে। তবে শর্ত হল, স্বামী বা অভিভাবকের অনুমতি নিয়ে পূর্ণ শরয়ী পর্দার সাথে আসা যাওয়া করবে এবং সন্ধ্যার পূর্বেই ঘরে পৌঁছে যাবে। তাই কোনো মহল্লায় মহিলারা কর্তৃক আয়োজিত তালীমের মজলিসে অন্য নারীরা আসতে পারেন। তবে পাঁচ-ছয় মাইল দূর থেকে এভাবে তালীমে আসা সমীচীন নয়; তারা নিজেদের মহল্লায় তালীমের ব্যবস্থা করবেন এবং ঘরে বসে দ্বীনী কিতাবপত্র পাঠ করবেন। [সূরা আহযাব : ৩৩; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/৩৬০]
খ) প্রত্যেক নর-নারীর প্রয়োজনীয় দ্বীন শিক্ষা করা ফরজ। আর পূর্ণ পর্দার সাথে অভিজ্ঞ শিক্ষিকা দ্বারা দ্বীনী শিক্ষার ব্যবস্থা করা প্রশংসণীয় ও ছওয়াবের কাজ। মহিলাদের জন্য দ্বীনী তালীমের ব্যবস্থা করেছেন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। হাদীস শরীফে আছে, একদিন মহিলা সাহাবীগণ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আরয করলেন, পুরুষদের কারণে আমরা আপনার নিকটবর্তী হতে পারি না। তাই আপনি আমাদের জন্য আলাদা একটি দিন নির্ধারণ করুন। তিনি তাদের জন্য বিশেষভাবে এক দিনের ওয়াদা করলেন এবং বললেন, তোমরা অমুক দিন অমুকের বাড়িতে একত্র হও। এরপর তিনি সেদিন তাদের কাছে গিয়ে ওয়াজ করলেন। [সহীহ বুখারী ১/২০; উমদাতুল কারী ২/১২৩

No comments:

Post a Comment