وَعَنْ عَبَّادِ بْنِ تَمِيْمٍ عَنْ عَمِّه قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِى الْمَسْجِدِ مُسْتَلْقِيًا وَاضِعًا إِحْدٰى قَدَمَيْهِ عَلَى الْأُخْرٰى. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
১/ আব্বাদ ইবনু তামীম (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর চাচা হতে বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মাসজিদের মধ্যে চিৎ হয়ে এক পা অপর পায়ের উপর রেখে শায়িত অবস্থায় দেখেছি। [সহীহ : বুখারী ৪৭৫, মুসলিম ৭৫-(২১০০), আবূ দাঊদ ৪৮৬৬, তিরমিযী ২৭৬৫, আহমাদ ১৬৪৪৯, মা‘রিফাতুস্ সুনান ওয়াল আসার লিল বায়হাক্বী ২৭৭২, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৩৩৩৪, আল আদাবুল মুফরাদ ১১৮৫, শু‘আবুল ঈমান ৪৭১৫।]
হাদিসের ব্যাখ্যাঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চিৎ হয়ে শুয়ে এক পা অপর পায়ের উপর রেখে শায়িত ছিলেন। এর অর্থ হলো পা লম্বা করে এক পা অপর পায়ের মধ্যে প্রবেশ করা অবস্থায় অথবা একটির উপর অপরটি সোজাসুজিভাবে স্থাপন করে শুয়েছেন। এভাবে শয়ন করলে সতর খুলে যায় না। সুতরাং এরূপ শয়ন করা নিষিদ্ধ নয়। কিমত্মু পা খাড়া করে একটিকে অপরটির উপরে রাখা দ্বারা যেহেতু সতর খুলে যাওয়ার আশংকা রয়েছে, তাই তা নিষিদ্ধ। এভাবে শয়ন করা হলে : ১. পায়ের উপর পা রেখে চিৎ হয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লে সতর খুলে যেতে পারে। ২. এতে বুকে পিঠে ব্যথা হতে পারে। ৩. এরূপ শয়ন দেখতে ভদ্রতার পরিপন্থী। এ সমস্ত কারণে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চিৎ হয়ে পায়ের ওপর পা রেখে শয়ন করতে নিষেধ করেছেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: نَهٰى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَرْفَعَ الرَّجُلُ إِحْدٰى رِجْلَيْهِ عَلَى الْأُخْرٰى وَهُوَ مُسْتَلْقٍ عَلٰى ظَهْرِه. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
২ ] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন ব্যক্তিকে চিৎ হয়ে শুয়ে এক পা খাড়া করে অপর পা তার উপরে রাখতে নিষেধ করেছেন। [সহীহ : মুসলিম ৭২-(২০৯৯) সহীহাহ্ ১২৫৫, তিরমিযী ২৭৬৭ আবূ দাঊদ ৪৮৬৫, মা‘রিফাতুস্ সুনান ওয়াল আসার লিল বায়হাক্বী ২৭৭২, আহমাদ ১৪৭৭০, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ২২৬০, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৫৫৩, সুনানুন্ নাসায়ী আল কুবরা ৯৭৫১, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৩৩৩৩।]
হাদিসের ব্যাখ্যাঃ দু’টি হাদীসের মাঝে দ্বন্দ্ব ও সমাধান : জাবির (রাঃ)-এর হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, চিৎ হয়ে এক পায়ের উপর অপর পা তুলে শয়ন করা নিষিদ্ধ। পক্ষান্তরে ‘আববাদ ইবনু তামীম (রাঃ) হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, স্বয়ং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাসজিদে এরূপ শয়ন করেছেন। সুতরাং বাহ্যিকভাবে উভয় হাদীসে দ্বন্দ্ব পরিলক্ষিত হয়। মুহাদ্দিসগণ যেভাবে সমাধান দিয়েছেন তা নিম্নে বর্ণনা করা হলো : ক. ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ সম্ভাবনা রয়েছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে চিৎ হয়ে শয়ন করা পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন, যা হারাম বুঝায় না। বরং সাবধানতার জন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন। খ. কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ সম্ভবত রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রয়োজনে এভাবে শয়ন করেছিলেন, তার ক্লান্তি দূর করা ক্ষণিকের জন্য ‘আববাদ ইবনু তামীম (রাঃ) যেভাবে দেখেছিলেন, সেভাবে শুয়েছিলেন। গ. ইমাম খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, জাবির (রাঃ)-এর হাদীস ‘আববাদ ইবনু তামীম (রাঃ)-এর হাদীস দ্বারা রহিত হয়ে গেছে। ঘ. তাছাড়া আববাদ (রাঃ)-এর হাদীসটি ফে‘লী ও জাবির (রাঃ)-এর হাদীসটি কওলী- এ ধরনের হাদীসদ্বয়ের দ্বন্দ্ব দেখা দিলে কওলী হাদীসকে প্রাধান্য দেয়া হয়। ঙ. ‘আববাদ (রাঃ)-এর হাদীসটি হা-বোধক, আর জাবির (রাঃ)-এর হাদীসটি না-বোধক, এরূপ ক্ষেত্রে না-বোধক হাদীস প্রাধান্য লাভ করে থাকে, চ. রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক পা খাড়া করে তার উপর অপর পা রেখে শয়ন করেননি। হয়তো বা শয়ন করে থাকলেও সাথে সাথে উভয় পা সোজা করেছেন। বর্ণনাকারী যে অবস্থায় দেখেছেন তাই বর্ণনা করেছেন।
মন্তব্য : কাজেই বুঝা গেল চিৎ হয়ে শয়ন করলে সাবধান থাকা চাই। এটা হারাম নয় বরং উত্তম। সুতরাং হাদীস দু’টিতে কোন দ্বন্দ্ব নেই। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ৪০৯৯; মিরক্বাতুল মাফাতীহ ৪৭০৮ ও ৪৭০৯)
وَعَنْهُ أَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ:لَا يَسْتَلْقِيَنَّ أَحَدُكُمْ ثُمَّ يَضَعُ رِجْلَيْهِ عَلَى الْأُخْرٰى. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
৩ ] উক্ত রাবী [জাবির (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ কখনো এমনভাবে চিৎ হয়ে শয়ন করবে না যে, এক পা খাড়া করে অপর পা তার উপর থাকে। [সহীহ : মুসলিম ৭৪-(২০৯৯), সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ১২৫৫।]
হাদিসের ব্যাখ্যাঃ চিৎ হয়ে শোয়া বলতে বুঝায় পিঠ নিচে রেখে বুক উপরের দিকে দিয়ে শয়ন করাকে চিৎ হয়ে শয়ন করা বুঝায়। এটা আবার দু’ ধরনের হতে পারে। ক. দুই পা সোজাভাবে বিছিয়ে এক পায়ের উপর অপর পা রাখা। এ অবস্থায় সতর খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই বিধায় এভাবে শয়ন করা জায়িয। খ. চিৎ হয়ে শয়ন করে এক পায়ের হাঁটু খাড়া করে অপর পা তার উপর রাখা এভাবে শয়ন করা সতর খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বিধায় এরূপ শয়ন করা নিষিদ্ধ। (মিনহাতুল মুসলিম ৭০/২০৯৯)
No comments:
Post a Comment