প্রথমত,
(বাংলাদেশ সময়) ৯ ও ১০ই মুহাররম তথা ২০ ও ২১-শে সেপ্টেম্বর বৃহস্পতি ও শুক্রবার -এই দুইদিন আশূরার সিয়াম রাখার নিয়ত করুন ইনশাআল্লাহ!
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন "আশূরার সিয়ামের ব্যাপারে আমি আল্লাহর নিকট আশা করছি যে, তিনি বিগত এক বছরের পাপ ক্ষমা করে দিবেন"[সহীহ মুসলিমঃ হাদীস নং ২৬৩৬]।
তাছাড়া,
এ মাসে অধিক পরিমাণে নফল সওম পালন করা উত্তম। রাসূল (সা.) বলেন, "ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হল গভীর রাতের সালাত আর রমাযানের পর সর্বোত্তম সওম হল আল্লাহর মাস মুহাররমের সওম"[সহীহ মুসলিমঃ হাদীস নং ২৬৪৬]।
মূলত,
আশুরা ই মুহাররাম বলতে মুহাররাম মাসের ১০তারিখকে বুঝায়। আশুরা শব্দটি আরবী শব্দ আশারা থেকে এসেছে। আরবী 'আশারা' শব্দের অর্থ ১০। আর আশারা বা আশুরা ই মুহাররাম অর্থ ১০ই মুহাররাম বা মুহাররম মাসের ১০তারিখ।
তবে,
আশূরার সিয়াম মুহাররমের ১০ তারিখে শুধু একদিন না, তা ৯ ও ১০ তারিখ এই দু’দিন।
প্রেক্ষাপটঃ
ইবনু আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, "যখন থেকে রাসূল (সা.) আশূরার সওম পালন শুরু করলেন এবং অন্যদেরকেও এ সওম পালনের নির্দেশ দিলেন তখন সাহাবারা (রা.) বলে উঠলেন, এটাতো ইয়াহূদী ও খৃস্টানদের সম্মান করার দিন। উত্তরে রাসূল (সা.) বললেন, ইনশাআল্লাহ আগামী বছর ৯ তারিখেও সওম পালন করব। কিন্তু পরবর্তী বছর আসার আগেই রাসূল (সা.) মৃত্যু বরণ করেছিলেন"[সহীহ মুসলিমঃ হাদীস নং ২৫৫৬]।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বর্ণিত: “নাবী (সা.) যখন মদিনায় এলেন তখন দেখলেন ইয়াহূদীরা আশূরার দিন সিয়াম রাখে। তখন তিনি বললেন: কেন তোমরা সিয়াম রাখো?
তারা বলল: এটি উত্তম দিন। এ দিনে আল্লাহ মূসা (আলাইহিস সালাম) কে মুক্ত করেছেন আর ফির'আউনের সম্প্রদায়কে ডুবিয়ে দিয়েছেন; তাই মূসা (আ.) এ দিনে সিয়াম রাখতেন। তখন নাবী (সা.) বললেন: তোমাদের চেয়ে আমরা মূসার অধিক নিকটবর্তী। ফলে তিনি (সা.) এ দিন সিয়াম রাখলেন এবং অন্যদেরকেও সিয়াম রাখার নির্দেশ দিলেন” [সহীহুল বুখারীঃ হাদীস নং ৩৩৯৭]।
সুতরাং,
আশূরার সাথে বা আশুরার সিয়ামের সাথে কারবালার কোন সম্পর্ক নেই।
অনেকেই, কারবালায় হুসাইন (রাঃ)-কে হত্যার কারনে আশূরার শোক পালন করে। তাজিয়া মিছিল, কালো কাপড় পরিধান, এই মাসে বিবাহ বা এরূপ আনুষ্ঠানিকতা বর্জন ইত্যাদির মাধ্যমে শোক প্রকাশ করে।
অথচ,
কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পর উক্ত মৃত ব্যক্তির জন্য তিন দিনের বেশী শোক পালন করা ইসলামে নিষিদ্ধ। [সহীহুল বুখারীঃ হাদীস নং ৫৩৪১]।
দেখা যায়,
অনেকে শোক পালনার্থে নিজ গালে, পিঠে, বুকে চপেটাঘাত করে, বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র দিয়ে নিজের দেহকে রক্তাক্ত করে, হায় হুসাইন হায় হুসাইন বলে চিৎকার করে, জামার বক্ষ ছিন্ন করে ইত্যাদি এসবই মুর্খতা ও জাহেলিয়াত। ইসলামের সাথে এসবের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই।
নাবী (সা.) বলেন: "যারা শোকে গন্ডে চপেটাঘাত করে, জামার বক্ষ ছিন্ন করে এবং জাহিলী যুগের মত চিৎকার দেয়, তারা আমাদের দলভুক্ত নয়"[সহীহুল বুখারীঃ হাদীস নং ১২৯৭]।
লক্ষণীয়,
মুহাররম মাস শুরু হলেই বিশেষকরে পুরান ঢাকায় একশ্রেণীর মূর্খদের ইসলামের নামে ঢাক ঢোল পিটিয়ে মানুষের নিকট হতে চাঁদা আদায় করতে দেখা যায়। তাছাড়া গলায় বা শরীরে ঘন্টা বেধে খালি পায়ে শোক মিছিল করতে দেখা যায়।
অথচ,
ইসলামে এর সাথে বা এই মাসের সাথে এসব কর্মকান্ডের কোনোই সম্পর্ক নেই। নিঃসন্দেহে এসব কর্মকান্ড বিদ'আত ও চরম বাড়াবাড়ি যা অনেক ক্ষেত্রে শির্কও বটে।
যেখানে যেকোনো বাদ্যযন্ত্রই ইসলামে হারাম, সেখানে কি করে সমাজে এসব ইসলামের নামে চলতে পারে..!
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- "আমার উম্মাতের মধ্যে অবশ্যই এমন কতগুলো দলের সৃষ্টি হবে, যারা ব্যভিচার, রেশমী কাপড়, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে.."।[সহীহুল বুখারীঃ হাদীস নং ৫৫৯০]।
মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে সকল প্রকার শির্ক ও বিদ'আত থেকে বেচে থাকার এবং কুরআন ও সহীহ হাদীসের প্রমাণসহ ইসলামকে জানার, মানার ও তা অন্যকে জানানোর তৌফিক দিন..
আমিন।
No comments:
Post a Comment