Thursday, November 29, 2018

জানাযার সালাতের পদ্ধতি খুবই সহজ:



No automatic alt text available.


 জানাযার সালাতের পদ্ধতি খুবই সহজ:
যেমন-
- ১ম তাকবীরের পর সূরা ফাতিহা পাঠ করা।
(সূরা ফাতিহা বাদ দিয়ে সানা পড়ার প্রচলিত নিয়ম সুন্নত সমর্থিত নয়)।
- ২য় তাকবীরের পর দরুদ পাঠ (যা সালাতের শেষ তাশাহুদে পাঠ করা হয়)।
- ৩য় তাকবীরের পর জানাযার বিশেষ দুআ পাঠ।
- এবং ৪র্থ তাকবীরের পর সালাম ফেরানো।

 সূরা ফাতিহা ও দরুদ তো প্রায় সকল নামাযীর জানা থাকার কথা। এগুলো জানা থাকলে কেবল বাকি জানাযার দুআটি মুখস্থ করার চেষ্টা করুন। কিন্তু মুখস্থ না থাকলেও অন্যান্য মুসল্লিদের সাথে জানাযায় অংশ গ্রহণ করবেন। আর উক্ত দুআটির স্থানে চুপ না থেকে যে সব দুআ-তাসবীহ জানা আছে সেগুলো পড়বেন। যেমন, সুবহানাল্লা-হ, আল হামদু লিল্লা-হ, লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ..উত্যাদি। পরে তা শিখে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে। দুআ মুখস্থ হয় নি বলে জানাযা থেকে দূরে থাকা ঠিক নয়। আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমীন।
 আপনি আপনার পিতা, মাতা, ভাই, বোন ও স্ত্রী-সন্তানদের জানাযার সালাত আদায় করতে পারেন। ইসলামী শরিয়তে এতে কোন আপত্তি নাই।
 “মৃত ব্যক্তির রক্ত সম্পর্কিত কেউ জানাযা দিলে তার সওয়াব বেশি” ইসলামী শরিয়তে এমন কিছু আছে বলে আমার জানা নাই। তবে কোন ব্যক্তি যখন নিজের রক্ত সম্পর্কীয় ব্যক্তির জানাযা আদায় করবে তখন স্বভাবতই তার আন্তরিকতা বেশি থাকে। কারণ তারা রক্ত সম্পর্কীয় এবং প্রিয়জন। আর যে ইবাদতে যত বেশি আন্তরিকতা থাকে তা ততই উত্তম। এবং ইখলাস বা আন্তরিকতাপূর্ণ দুআ কবুলের সম্ভাবনাও বেশি থাকে। আল্লাহু আলাম।
আমরা যেন দ্বীন সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞানার্জন করে সে আলোকে আমাদের জীবন পরিচালনা করতে পারি এবং আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্ত বান্দা হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ করতে পারি-মহান আল্লাহর নিকট সে তাওফিক কামনা করছি। আল্লাহুম্মা আমীন।
▬▬▬🌐🌐🌐▬▬▬

আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব

✴️✴️✴️✴️✴️
#জানাযার সালাতে ৩য় তাকবিরের পর যে দুয়াটি পড়বেন---
*মৃত ব্যক্তির জন্য দো‘আ*
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ، وَعَافِهِ، وَاعْفُ عَنْهُ، وَأَكْرِمْ نُزُلَهُ، وَوَسِّعْ مُدْخَلَهُ، وَاغْسِلْهُ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ، وَنَقِّهِ مِنَ الْخَطَايَا كَمَا نَقَّيْتَ الثَّوْبَ الأَبْيَضَ مِنَ الدَّنَسِ، وَأَبْدِلْهُ دَاراً خَيْراً مِنْ دَارِهِ، وَأَهْلاً خَيْراً مِنْ أَهْلِهِ، وَزَوْجَاً خَيْراً مِنْ زَوْجِهِ، وَأَدْخِلْهُ الْجَنَّةَ، وَأَعِذْهُ مِنْ عَذَابِ القَبْرِ [وَعَذَابِ النَّارِ]
*হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন, তাকে দয়া করুন, তাকে পূর্ণ নিরাপত্তায় রাখুন, তাকে মাফ করে দিন, তার মেহমানদারীকে মর্যাদাপূর্ণ করুন, তার প্রবেশস্থান কবরকে প্রশস্ত করে দিন। আর আপনি তাকে ধৌত করুন পানি, বরফ ও শিলা দিয়ে, আপনি তাকে গুনাহ থেকে এমনভাবে পরিষ্কার করুন যেমন সাদা কাপড়কে ময়লা থেকে পরিষ্কার করেছেন। আর তাকে তার ঘরের পরিবর্তে উত্তম ঘর, তার পরিবারের বদলে উত্তম পরিবার ও তার জোড়ের (স্ত্রী/স্বামীর) চেয়ে উত্তম জোড় প্রদান করুন। আর আপনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান এবং তাকে কবরের আযাব [ও জাহান্নামের আযাব] থেকে রক্ষা করুন।*
আল্লা-হুম্মাগফির লাহু, ওয়ারহামহু, ওয়া ‘আ-ফিহি, ওয়া‘ফু ‘আনহু, ওয়া আকরিম নুযুলাহু, ওয়াওয়াসসি‘ মুদখালাহু, ওয়াগসিলহু বিলমা-য়ি ওয়াস্‌সালজি ওয়ালবারাদি, ওয়ানাক্বক্বিহি মিনাল খাতা-ইয়া কামা নাক্কাইতাস সাওবাল আবইয়াদা মিনাদদানাসি, ওয়া আবদিলহু দা-রান খাইরাম মিন দা-রিহি, ওয়া আহলান খাইরাম মিন আহলিহি, ওয়া যাওজান খাইরাম মিন যাওজিহি, ওয়া আদখিলহুল জান্নাতা, ওয়া আ‘য়িযহু মিন ‘আযা-বিল ক্বাবরি [ওয়া ‘আযাবিন্না-র] (মুসলিম ২/৬৬৩, নং ৯৬৩)

✴️✴️✴️✴️✴️✴️
জানাযা বিষয়ে আরো কিছু প্রশ্নোত্তর---
#প্রশ্ন - যে ব্যক্তি জানাযা ও দাফনে অংশগ্রহণ করবে সে কি দু’কিরাত নেকি পাবে?
উত্তর – হ্যাঁ, সে দু’কিরাত নেকি পাবে। 
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জানাযায় অংশগ্রণ করত নামাজ পর্যন্ত অপেক্ষা করবে সে এক কিরাত নেকি পাবে, আর যে জানাযায় অংশগ্রহণ করে দাফন পর্যন্ত অপেক্ষা করবে সে দু’কিরাত নেকি পাবে”।জিজ্ঞসা করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! দু’কিরাত বলতে কি বুঝায়? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “দুইটি বড় পাহাড় সমপরিমাণ”। (বুখারি ও মুসলিম)

#প্রশ্ন - জানাযায় অংশগ্রহণকারীর যদি আংশিক সালাত ছুটে যায় তাহলে তা আদায় করতে হবে কি?
উত্তর – হ্যাঁ, ছুটে যাওয়া অংশ সাথে সাথে আদায় করে নিবে। যদি ইমামকে তৃতীয় তাকবীরে পায় তাহলে সে তাকবির বলে সূরা ফাতিহা পড়বে, ইমাম যখন চতুর্থ তাকবীর বলবে তখন সে দ্বিতীয় তাকবীর বলে রাসূলের উপর দরুদ পড়বে, ইমাম যখন সালাম ফিরাবে তখন সে তৃতীয় তাকবীর বলে দু’আ পড়বে অতঃপর চতুর্থ তাকবির দিয়ে সালাম ফিরাবে।

#প্রশ্ন : - জানাযার সালাতে সূরা ফাতিহা পড়ার হুকুম কি?
উত্তর – জানাযার সালাতে সূরা ফাতিহা পড়া ওয়াজিব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ“তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখ, সেভাবেই সালাত আদায় কর”। (বুখারি)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ“ঐ ব্যক্তির কোন সালাত হয়নি, যে সূরা ফাতিহা পাঠ করে নি”। (বুখারি ও মুসলিম)

#প্রশ্ন:- জানাযায় অধিক সংখ্যক লোকের অংশ গ্রহণে কি বিশেষ কোন ফজিলত আছে?
উত্তর - সাহাবি আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
“যদি কোন মুসলিম মৃত্যুবরণ করে, আর তার জানাযায় চল্লিশ জন লোক এমন উপস্থিত হয়, যারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করে না, আল্লাহ মৃত ব্যক্তির ব্যাপারে তাদের সুপারিশ কবুল করবেন”। (মুসলিম)
তাই আলেমগণ বলেছেন, যে মসজিদে মুসল্লি বেশী হয়, জানাযার জন্য ঐ মসজিদ অন্বেষণ করা মুস্তাহাব, মুসল্লি যত বেশী হবে ততই মৃতের জন্যে কল্যাণ হবে, কারণ এতে সে অধিক মানুষের দু’আ পাবে।

#প্রশ্ন : জানাযার ছালাত আদায়ের পর দলবদ্ধভাবে হাত তুলে দো‘আ করা এবং দাফন করার পর পুনরায় হাত তুলে দো‘আ করা কী শরী‘আত সম্মত?
উত্তর : জানাযা হ’ল মুসলিম মাইয়েতের জন্য একমাত্র দো‘আর অনুষ্ঠান। এর বাইরে সবকিছু বিদ‘আত। প্রশ্নে বর্ণিত উভয়টিই বিদ‘আতী প্রথা। বিশেষ করে জানাযার ছালাত আদায়ের পর হাত তুলে সম্মিলিত দো‘আ করার নিয়মটি সম্প্রতি চালু হয়েছে। উক্ত প্রথার প্রমাণে কোন দলীল নেই। তবে দাফনের পর সকলে ব্যক্তিগতভাবে মাইয়েতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। 
এ সময় ‘আল্লাহুম্মাগফিরলাহু ওয়া ছাবিবতহু’ বলতে পারে (আবুদাঊদ হা/৩২২১)। 
এছাড়া আল্লাহুম্মাগফিরলাহু ওয়ার হামহু.. মর্মে বর্ণিত দো‘আটিও পড়তে পারে (মুসলিম হা/৩৩৬)।

No comments:

Post a Comment