Saturday, March 21, 2015

স্বপ্ন ও তার ব্যাখ্যা




স্বপ্ন ও তার ব্যাখ্যা
===========
ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে সীরিন রহ. বলেছেন :
স্বপ্ন তিন ধরনের হয়ে থাকে। মনের কল্পনা ও অভিজ্ঞতা। শয়তানের ভয় প্রদর্শন ও কুমন্ত্রণা ও আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সুসংবাদ। (বর্ণনায় : বুখারি)
স্বপ্ন তিন প্রকার:
==========
এক. মনে মনে যা সারাদিন কল্পনা করে তার প্রভাবে ঘুমের মধ্যে ভাল-মন্দ কিছু দেখা। এগুলো আরবীতে আদগাছু আহলাম বা অলীক স্বপ্ন বলে।
দুই. শয়তানের কুমন্ত্রণা ও প্রভাবে স্বপ্ন দেখা। সাধারণত এ সকল স্বপ্ন ভীতিকর হয়ে থাকে।
তিন. আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে ইশারা, ইঙ্গিত হিসাবে স্বপ্ন দেখা।
১-হাদিসে এসেছে
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, নবুওয়তে আর কিছু অবশিষ্ট নেই, বাকী আছে কেবল মুবাশশিরাত (সুসংবাদ)। সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, মুবাশশিরাত কী? তিনি বললেন: ভাল স্বপ্ন। (বর্ণনায় : সহীহ বুখারি)
এ হাদিস থেকে আমরা যা জানতে পারলাম:
এক. স্বপ্ন নবুওয়তের একটি অংশ। নবি ও রাসূলদের কাছে জিবরীল যেমন সরাসরি ওহী নিয়ে আসতেন, তেমনি স্বপ্নের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নবি ও রাসূলদের কাছে প্রত্যাদেশ পাঠাতেন।দুই. মুসলিম জীবনে স্বপ্ন শুধু একটি স্বপ্ন নয়। এটা হতে পারে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে স্বপ্নদ্রষ্টার প্রতি একটি বার্তা।তিন. আল মুবাশশিরাত অর্থ সুসংবাদ। সঠিক স্বপ্ন যা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে হয়ে থাকে, তা স্বপ্ন দ্রষ্টার জন্য একটি সুসংবাদ।
২-হাদিসে এসেছে
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, দিন যত যেতে থাকবে, কিয়ামত নিকটে হবে, মুমিনদের স্বপ্নগুলো তত মিথ্যা হতে দূরে থাকবে। ঈমানদারের স্বপ্ন হল নবুওয়তের ছিচল্লিশ ভাগের একভাগ। (বর্ণনায় : বুখারি ও মুসলিম) অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, তোমাদের মধ্যে যে লোক যত বেশী সত্যবাদি হবে তার স্বপ্ন তত বেশী সত্যে পরিণত হবে।
এ হাদিস থেকে আমরা জানতে পারলাম :
এক. মুমিনের জীবনে স্বপ্ন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেয়ামত যত নিকটে আসবে ঈমানদারের স্বপ্ন তত বেশী সত্য হতে থাকবে।
দুই. ঈমানদারের জীবনে স্বপ্ন এত গুরুত্ব রাখে যে, তাকে নবুওয়তের ছিচল্লিশ ভাগের এক ভাগ বলা হয়েছে।
তিন. মানুষ যত বেশী সততা ও সত্যবাদিতার চর্চা করবে সে ততবেশী সত্য স্বপ্ন দেখতে পাবে।
চার. যদি কেউ চায় সে সত্য স্বপ্ন দেখেব, সে যেন সৎ, সততা ও সত্যবাদিতার সাথে জীবন যাপন করে।
৩-হাদিসে এসেছে
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যে নিদ্রার মধ্যে আমাকে দেখে সে যেন বাস্তবেই আমাকে দেখেছে। কারণ, শয়তান আমার আকৃতি ধারণ করতে পারে না। (বুখারি ও মুসলিম)
এ হাদিস থেকে আমরা জানতে পারলাম :
এক. যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে স্বপ্নে দেখবে সে সত্যিকারভাবেই তাকে দেখেছে।
দুই. শয়তানের কুমন্ত্রণা ও প্রভাবে মানুষ স্বপ্ন দেখে থাকে। শয়তান মানুষকে বিভিন্ন স্বপ্ন দেখাতে পারে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আকৃতি ধরে ধোকা দিতে পারে না।
তিন. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্বপ্নে দেখা একটি সৌভাগ্য। খুব কম ঈমানদারই আছেন, যারা এ সৌভাগ্যটি অর্জন করেছেন।

No comments:

Post a Comment