Thursday, November 16, 2017

সালাতুর রাসূল (সা:)-(পর্ব-৯)



No automatic alt text available.


সালাতুর রাসূল (সা:)-(পর্ব-৯)
--------------------------
রাফ‘উল ইয়াদায়েন:
----------------
রাফ‘উল ইয়াদায়েন এর অর্থ- দু’হাত উঁচু করা। এটি আল্লাহর নিকটে আত্মসমর্পণের অন্যতম নিদর্শন।রুকূ থেকে উঠে ক্বওমাতে দাঁড়িয়ে দু’হাত ক্বিবলামুখী স্বাভাবিকভাবে কাঁধ বা কান বরাবর উঁচু করে তিন বা চার রাক‘আত বিশিষ্ট ছালাতে মোট চারস্থানে ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন’ করতে হয়। (১) তাকবীরে তাহরীমার সময় (২) রুকূতে যাওয়ার সময় (৩) রুকূ থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াবার সময় এবং (৪) ৩য় রাক‘আতে দাঁড়িয়ে বুকে হাত বাঁধার সময়। এমনিভাবে প্রতি তাশাহ্হুদের বৈঠকের পর উঠে দাঁড়াবার সময় রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতে হয়।

অধিকাংশ মুছল্লী শুধুমাত্র তাকবীর তাহরীমা (ছালাত শুরুর সময় তাকবীর) বলার সময় রফউল ইয়াদায়ন বা হাত উত্তোলন করে থাকে; কিন্তু পরবর্তীতে রুকুর আগে ও পরে তা করে না। আবার অনেকে তাকবীর তাহরীমার সময়ও করে না। এটা সুন্নাত বিরোধী। কেননা ছহীহ্ বুখারী ও মুসলিমসহ বিভিন্ন গ্রন্থের একাধিক ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, উক্ত ক্ষেত্র সমূহে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাত উত্তোলন করেছেন।
রাফ‘উল ইয়াদায়েন করার পক্ষে প্রধান দলীল সমূহ:
--------------------------------------
(১) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে দেখেছি, তিনি যখন সালাতের জন্য দাঁড়াতেন তখন কাঁধ পর্যন্ত দু’ হাত উঠাতেন, এবং তিনি যখন রুকু’র জন্য তাকবীর বলতেন তখনও এরূপ করতেন, আবার যখন রুকু’ থেকে মাথা উঠাতেন তখনও এ রকম করতেন এবং সামি আল্লাহু লিমান হামিদাহ বলতেন। তবে তিনি সাজদাহর সময় এমন করতেন না। [সহীহুল বুখারীঃ ৭৩৪, ৭৩৫, মুসলিম, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ, আহমাদ, মুয়াত্তা মালিক, মায়াত্তা মুহাম্মাদ, ত্বাহাভী, বায়হাক্বী, তিরিমিযী।]

(২) মালিক ইবনুল হুওয়াইরিস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন সালাতের জন্য তাকবীর দিতেন তখন কান পর্যন্ত দু’ হাত উঠাতেন। একইভাবে তিনি রুকু’তে যাওয়ার সময় কান পর্যন্ত দু’ হাত উঠাতেন এবং রুকু’ থেকে উঠার সময়ও কান পর্যন্ত হাত উঠাতেন ও সামিআল্লাহুলিমান হামিদাহ বলতেন। [সহীহ মুসলিমঃ হা/৩৯১, সহীহ সুনানে ইবনে মাজাহ, সহীহ আবূ দাউদ, ইরওয়াঃ ২/৬৭, হাদীসটি সহীহ।]
(৩) আলী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে তাকবীরে তাহরীমাহর সময়, রুকু’র সময়, রুকু’ হতে মাথা উঠানোর সময় এবং দু’ রাক’আত শেষে তৃতীয় রাক’আতে দাঁড়ানোর সময়ে রফ’উল ইয়াদাইন করতে দেখেছেন। [বায়হাক্বীঃ ২/৮০, বুখারীর জুযউল ক্বিরআত, আবূ দাউদ, ইবনে মাজাহ।]
(৪) ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে সালাত আদায় করেছি। তিনি তাকবীর দিয়ে সালাত আরম্ভ করে দু’হাত উঁচু করলেন। অতঃপর রুকু’ করার সময় এবং রুকু’র পরেও দু’হাত উঁচু করলেন। [আহমাদ, বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত, ইবনে মাজাহ, আবূ দাউদ।]
(৫) মুহাম্মাদ ইবনু ‘আমর বলেন, আমি নাবী (সাঃ) এর দশজন সাহাবীর মধ্যে আবূ হুমাইদের নিকট উপস্থিত ছিলাম, তাঁদের (আবূ হুমাইদ, আবূ উসাইদ, সাহল ইবনু সা’দ, মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ- (রাঃ) প্রমুখ সাহাবীগণের) মধ্যে একজন আবূ ক্বাতাদাহ ইবনু রবয়ী (রাঃ) ও ছিলেন। তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সালাত সম্পর্কে আপনাদের চাইতে বেশি অবগত। তাঁরা বললেন, তা কিভাবে? আল্লাহর শপথ! আপনি তো আমাদের চেয়ে তাঁর অধিক নিকটবর্তী ও অধিক অনুসরণকারী ছিলেন না। তিনি বললেন, বরং আমি তো তাঁকে পর্যবেক্ষন করেছিলাম। তাঁরা বললেন, এবার তাহলে উল্লেখ করুন। তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন সালাতে দাঁড়াতেন তখন দু’হাত উঁচু করতেন এবং যখন রুকু’ করতেন, রুকু’ থেকে মাথা উঠাতেন, এবং দু’ রাক’আত শেষে তৃতীয় রাক’আতে দাঁড়াতেন তখনও দু’ হাত উঁচু করতেন। এ বর্ণনা শুনে তাঁরা সবাই বললেন, আপনি সত্যই বলেছেন। [বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত, সহীহ ইবনু মাজাহ, সহীহ আবূ দাউদ।]

No comments:

Post a Comment