Saturday, October 4, 2014

যুলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের আমল এবং কুরবানীর মাসায়েল




ভূমিকা: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদের জন্য ইসলাম ধর্মকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। দরূদ ও শান্তির অবিরাম ধারা বর্ষিত হোক নবীকুল শিরোমণি মুহাম্মদ (সা) এবং তাঁর পবিত্র বংশধর ও সম্মানিত সাথীদের উপর।
রাসূল (সাল্লাল্লাহী আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “আমার উম্মতের বয়স ষাট থেকে সত্তর বছরের মাঝখানে”। (তিরমিজী) অন্যান্য নবীর উম্মতদের তুলনায় উম্মতে মুহাম্মাদীর বয়স যদিও কম কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদেরকে এমন কিছু মূল্যবান সময় দান করেছেন যাতে অল্প সময়ে অল্প আমল করেও আল্লাহর কাছে অতীতের উম্মতগুলির চেয়ে অধিক প্রিয় বলে গণ্য হতে পারবে। আল্লাহ তায়ালা উম্মতে মুহাম্মদ মুহাম্মাদীকে যেসমস্ত ফজীলতপূর্ণ সময় দান করেছেন, তার মধ্যে জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন অন্যতম।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহী আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেন, “জিল হজ্জ মাসের প্রথম দশকের চাইতে উত্তম এমন কোন দিন নেই, যে দিনগুলোর সৎ আমল আল্লাহর নিকট অধিক পছন্দনীয়”। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! (সাল্লাল্লাহী আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর পথে জিহাদও নয়? রাসূল (সাল্লাল্লাহী আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদও নয়। অবশ্য সেই মুজাহিদ ব্যক্তির কথা ভিন্ন, যে স্বীয় জান-মাল নিয়ে জিহাদে বেড়িয়ে পড়ে। অতঃপর উহার কিছুই নিয়ে প্রত্যাবর্তন করেনা। (বুখারী)
তাই প্রতিটি মুসলিম ব্যক্তির উচিৎ এই দশটি দিনের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার সৎ আমল বেশী করে সম্পাদন করার মাধ্যমে এই মহান ফজীলত অর্জন করে আল্লাহর নৈকট্য লাভে সচেষ্ট হওয়া। আমরা এই প্রবন্ধে জিল হজ্জ মাসের প্রথম দশকের কতিপয় ফজীলতপূর্ণ আমলের বর্ণনা করব ইনশাআল্লাহ।
১) হজ্জ ও উমরা পালন করা: الحج والعمرة
হজ্জ ইসলামের পঞ্চম রোকন। সামর্থবান ব্যক্তির উপর ইহা জীবনে একবার আদায় করা ফরজ। হজ্জের ফজিলতে অনেক সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। রাসূল (সাল্লাল্লাহী আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি হজ্জ করল, এবং হজ্জ করা অবস্থায় কোন পাপের কাজে লিপ্ত হয়নি, সে এমন নিষ্পাপ অবস্থায় প্রত্যাবর্তন করল, যেমন নিষ্পাপ অবস্থায় মায়ের পেট থেকে জন্ম গ্রহণ করেছিল”। (বুখারী) আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহী আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “এক উমরা থেকে অপর উমরা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কৃত অপরাধ সমূহ উমরার মাধ্যমে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। আর মকবুল হজ্জের পুরস্কার আল্লাহর কাছে জান্নাত ছাড়া অন্য কিছু নয়। (বুখারী)
২) রোযা পালন করা: الصيام  ইমাম নববী বলেন, “এই দিন গুলোতে রোযা পালন করা মুস্তাহাব। বিশেষ করে যে ব্যক্তি হজ্জে যায়নি, তার জন্য আরাফার দিন অর্থাৎ জিল হজ্জ মাসের ৯ তারিখে রোযা রাখা মুস্তাহাব”। আবু কাতাদাহ (রা:) হতে বর্ণিত রাসূল (সাল্লাল্লাহী আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আরাফার দিবসের রোযা বিগত এবং আগত এক বছরের গুনাহ মোচন করে দেয়। (সহীহ মুসলিম) তবে যিনি হজ্জের করতে গিয়ে আরাফার মাঠে অবস্থান করছেন, তার জন্য রোজা রাখা বৈধ নয়।
৩) বেশী বেশী তাকবীর বলাঃ الإكثار من التكبير
জিল হজ্জ মাসের চাঁদ উঠার পর থেকেই উঁচু আওয়াজে বেশী বেশী তাকবীর পাঠ করা সুন্নত। ফরজ নামাযের পর, মসজিদে, বাজারে এবং রাস্তায় চলার সময় এ তাকবীর বেশী করে পাঠ করা। মহিলাগণ নিচু আওয়াজে তাকবীর পাঠ করবে। তবে দলবদ্ধভাবে সমস্বরে তাকবীর পাঠ করা সুন্নতের পরিপন্থী। কারণ সাহবাদের থেকে দলবদ্ধভাবে তাকবীর পাঠ করার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়না। অথচ তারা ছিলেন সৎকাজে আমাদের চেয়ে অনেক অগ্রগামী। এই তাকবীর দু‘ ধরণের।
(ক) অনির্দিষ্ট তাকবীর: التكبير المطلق
সময় ও স্থান নির্ধারণ না করে বাড়ী, মসজিদ, রাস্তা ও বাজারে উঁচু আওয়াজে তাকবীর পাঠ করা। জিল হজ্জের প্রথম দিন থেকে ঈদের দিন পর্যন্ত এ তাকবীর চলতে থাকবে। ইমাম বুখারী (রঃ) বলেন, ইবনে উমর ও আবু হুরায়রা (রা:) এই দিন গুলোতে তাকবীর বলতে বলতে বাজারে যেতেন। তাদেরকে তাকবীর বলতে শুনে লোকেরাও তাকবীর পাঠ করত।
(খ) নির্দিষ্ট তাকবীর:  অর্থাৎ নির্দিষ্টভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর তাকবীর পাঠ করা। এই তাকবীর জিল হজ্জ মাসের ৯ তারিখ ফজরের নামাযের পর থেকে শুরু করে আইয়ামে তাশরীক তথা জিল হজ্জ মাসের ১৩তারিখ সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত চলতে থাকবে।
তাকবীরের শব্দ:
الحمد ألله أكبر , ألله أكبر, لاإله إلا الله, والله أكبر , الله أكبر ولله
বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লাইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।
৪) ঈদুল আযহার বিধান সমূহ: أحكام عيد الأضحى
ক) পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করা: التتطهر
ঈদের দিন সকাল বেলা গোসল করা, সাধ্যানুযায়ী নতুন কাপড় পরিধান করা এবং সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নত। তবে মহিলাগণ সুগন্ধি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবে।
খ) ঈদের নামায আদায় করা: صلاة العيد
মুসলমানদের সাথে ঈদগাহে গিয়ে ঈদের নামায আদায় করা এবং ঈদের মাঠে ইমাম সাহেবের খুৎবা শ্রবণ করা। ইবনে উমর (রা:) হতে বর্ণিত, “নবী (সাল্লাল্লাহী আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই ঈদের দিন তাকবীর পাঠ করতে করতে ঈদের মাঠের দিকে বের হতেন।” বৃষ্টি বা অন্য কোন কারণে মাঠে যেতে অসম্ভব হলে মসজিদেও ঈদের নামায আদায় করা যায়। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমীয়া সহ কতিপয় আলেমের মতে ঈদের নামায আদায় করা ওয়াজিব। কেননা আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন:
فصل لربك وانحر
“তুমি তোমার প্রভুর জন্য নামায আদায় কর এবং কুরবানী কর”। (আল কাউছারঃ২) তবে অধিকাংশ আলেমের মতে তা
সুন্নাতে মুআক্কাদাহ; ওয়াজিব নয়। মহিলাদের জন্যও ঈদগাহে যাওয়া এবং ঈদের নামায আদায় করা বৈধ। তবে বেপর্দা হয়ে এবং সুগন্ধি ব্যবহার করে নয়। এমন কি ঋতুবতী মহিলাগণও ঈদের মাঠে গমন করবে। তারা নামায আদায় করবেনা। বরং মুসলমানদের সাথে দু‘আয় শরীক হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে আমাদের দেশের কিছু আলেম মহিলাদের ঈদের নামাযে আসাকে হারাম ফতোয়া দিয়ে থাকেন।
গ) পায়ে হেঁটে ঈদের নামাযে গমন করা: إلى الصلاة مشيا الذهاب
সম্ভব হলে পায়ে হেটে ঈদগাহে যাওয়া। ঈদের মাঠে যাওয়ার সময় এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং আসার সময় অন্য রাস্তা ফেরত আসা সুন্নত। (বুখারী)
ঘ) ঈদের নামায আদায়ের পদ্ধতি: كيفية أداء صلاة العيد
বিনা আযানে ও বিনা ইকামতে তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত বার তাকবীরে দুই রাকাত নামায আদায় করা। প্রথম রাকাতে তাকবীরে তাহরীমার পর কিরাত পাঠের পূর্বে সাত তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাকাতে কিরাতের পূর্বে পাঁচ তাকবীর পাঠ করা। সহীহ হাদীসে এভাবেই তাকবীরের সংখ্যা উল্লেখিত হয়েছে।
ঙ) ঈদের শুভেচ্ছা প্রদান করা: تبادل تهاني العيد
ঈদের আনন্দ বিনিময় করা এবং একে অপরকে শুভেচ্ছা প্রদান করা জায়েজ আছে। শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় একথা বলা যায়, (تقبل الله منا ومنكم) অর্থাৎ আল্লাহ তা‘য়ালা আমাদের ও আপনাদের সৎ আমলগুলো কবুল করুন।
চ) ঈদের দিন পানা-হার করা: الأكل والشرب يوم عيد الأضحى
দুই ঈদের দিনে পানা-হারের ব্যাপারে রাসূল (সাল্লাল্লাহী আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নত হল ঈদুল ফিতরের দিন ঈদের নামাযের পূর্বে কিছু খেয়ে ঈদের নামাযে গমন করা। আর ঈদুল আজহার দিন না খেয়ে ঈদের মাঠে যাওয়া। বুরায়দা (রা:) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহী আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিতরের দিন না খেয়ে বের হতেন না। এবং ঈদুল আজহার দিন না খেয়ে বের হতেন এবং নামায থেকে এসে কুরবানী করে কুরবানীর গোশত থেকে খেতেন। (আহমদ) অনেকে এটাকে রোযা বলে থাকেন। রোযা বলা ঠিক নয়। কারণ দুই ঈদের দিন রোযা রাখা হারাম।
ছ) কুরবানী করা: ذبح الأضحية
সামর্থবান ব্যক্তির উপর কুরবানী করা সুন্নাতে মুআক্কাদা। কুরবানী দেওয়ার ক্ষমতা রাখে এমন ব্যক্তির জন্য কুরবানী না দেওয়া মাকরূহ। অনেক আলেম আল্লাহর বাণী: (فصل لربك وانحر) “আপনার প্রতিপালকের জন্য নামায আদায় করুন এবং কুরবানী করুন।” এই আয়াতকে দলীল হিসাবে গ্রহণ করে কুরবানী দেওয়াকে ওয়াজিব বলেছেন। ইবনে উমর (রা:) বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহী আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনাতে দশ বছর অবস্থান করেছেন। তিনি প্রতি বছরই কুরবানী করেছেন। (তিরমিজী-আহমদ) কুরবানী নিজ হাতে করা উত্তম। নিজে করতে না পারলে
অন্যকে দিয়ে করা যেতে পারে। কুরবানী জবাই করার সময় বিসমিল্লাহ আল্লাহ আকবার বলে জবাই করবে। জবাই করার সময় কুরবানী আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার দু‘আ করা মুস্তাহাব।
জ) কুরবানীর পশু নির্বাচন: اختيار المواشي للأضحية
উট, গরু, ছাগল, দুম্বা-ভেড়া ও মহিষ দিয়ে কুরবানী করা বৈধ। তবে কুরবানীর পশুর ক্ষেত্রে শর্ত হল তা সকল প্রকার দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত হতে হবে। ইমাম বুখারী ও মুসলিম আনাস
(রা:) হতে বর্ণনা করেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহী আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিং বিশিষ্ট দু‘টি কাল মুখ ও কাল পা বিশিষ্ট ভেড়া দিয়ে কুরবানী করেছেন। (বুখারী) চার প্রকার পশু দিয়ে কুরবানী করা সিদ্ধ নয়। সুস্পষ্ট অন্ধ, সুস্পষ্ট রোগ বিশিষ্ট, সুস্পষ্ট খোঁড়া এবং একেবারে দুর্বল ও গোশত হীন যা জবেহ করার স্থান পর্যন্ত হেটে যেতে অক্ষম। (তিরমিজী)
একটি ছাগল বা দুম্বা এক পরিবারের পক্ষ থেকে যথেষ্ট হবে। যদিও পরিবারের লোক সংখ্যা অনেক হয়ে থাকে। একটি উটে দশজন এবং একটি গরুতে সাত জন পর্যন্ত শরীক হয়ে কুরবানী করা বৈধ। এব্যাপারে সহীহ হাদীস রয়েছে। তবে ছাগল-খাসীতে শরীক হওয়া জায়েজ নাই। আমাদের দেশে কুরবানীর গরুর সাথে ভাগে আকিকা দেওয়ার নিয়ম প্রচলিত আছে। হাদীসে এর কোন প্রমাণ পাওয়া যায়না। সুতরাং ইহা আল্লাহর রাস্তায় কুরবানী করার মত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত নিয়ে খেলা-ধুলার শামিল।
ঝ) কুরবানীর পশুর বয়স: أعمار مواشي الأضحية
কুরবানীর পশুর জন্য শর্ত হল, তার বয়স পূর্ণ হতে হবে। ভেড়া-দুম্বার ক্ষেত্রে ছয় মাস পূর্ণ হতে হবে। (নাসাঈ) ছাগল-খাসীর বয়স এক বছরের কম হলে তার দ্বারা কুরবানী চলবে না। গরুর বয়স দুই বছর পূর্ণ হতে হবে। উটের বয়স পাঁচ বছর পূর্ণ হতে হবে। (মুসলিম)
ঞ) কুরবানী করার সময়: أوقات ذبح الأضحية
ঈদের নামাযের পর থেকেই কুরবানী করার সময় শুরু হয়। ঈদের নামাযের পূর্বে জবাই করলে তা কুরবানী হিসাবে গ্রহণযোগ্য হবেনা। কেহ যদি নামাযের আগেই জবাই করে ফেলে, তবে তাকে নামাযের পর তদস্থলে আর একটি পশু জবাই করতে হবে। কুরবানী করার শেষ সময় হল জিল হজ্জ মাসের ১৩তারিখ সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। অর্থাৎ ঈদের দিন এবং ঈদের পর তিন দিন। পরের তিন দিনকে হাদীসের পরিভাষায় আইয়ামে তাশরীক বলা হয়। তাশরীক অর্থ সূর্যের আলোতে শুকানো। সাহাবিগণ এই দিনগুলিতে কুরবানীর গোশত কেটে টুকরো টুকরো করে রৌদ্রে শুকাতেন বলে এই দিনগুলোকে আইয়ামে তাশরীক বলা হয়।
ট) কুরবানীর গোশত খাওয়া:
কুরবানীর গোশত থেকে অল্প হলেও খাওয়া সুন্নত। রাসূল (সাল্লাল্লাহী আলাইহি ওয়া সাল্লাম)মদীনাতে অভাবী লোক থাকার কারণে কুরবানীর গোশত তিন দিনের বেশী রাখতে নিষেধ করেছিলেন।পরবর্তীতে যখন মুসলমানদের অবস্থার পরিবর্তন হল, তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহী আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর গোশতযতদিন ইচ্ছা রেখে দেওয়ার অনুমতি প্রদান করেছেন।
ঠ) কুরবানী দাতা যা থেকে বিরত থাকবে: الأشياء التي يبتعد عنها المضحي
যে ব্যক্তি কুরবানী দিতে ইচ্ছা করবে, তার জন্য জিল হজ্জ মাসের চাঁদ উঠার পর থেকে কুরবানীর করার পূর্ব পর্যন্ত মাথার চুলহাত বা পায়ের নক কাটা সম্পূর্ণ নিষেধ। উম্মে সালামা (রা:) হতে বর্ণিত রাসূল (সাল্লাল্লাহী আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেন, যখন তোমরা জিল হজ্জ মাসের চাঁদ দেখবে এবং তোমাদের কেহ কুরবানী করার ইচ্ছাপোষণ করবে, সে যেন কুরবানীর পশু জবাই করার পূর্বে তার মাথার চুল বা হাত-পায়ের নখকাটা থেকে বিরত থাকে। (মুসলিম-আহমদ) এই বিধান শুধুমাত্র পরিবারের যে কুরবানী করবে, তার জন্য স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্য এ বিধানের অন্তর্ভুক্তনয়।
ড) কুরবানীর গোশত বণ্টন করা: توزيع لحوم الأضاحي
কুরবানী দাতার জন্য সুন্নত হল নিজে পরিবারসহ কুরবানীর গোশত খাবে, প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনকে উপহার দিবে এবং গরীব-মিসকিনকে ছদকা করবে। আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন, “তোমরা উহার গোশতখাও এবং ফকীর ও অভাবগ্রস্তদেরকে খেতে দাও”। (সূরা হজ্জঃ২৮)
অনেক উলামায়ে দ্বীন কুরবানীর গোশত তিন ভাগে বণ্টন করে একভাগ নিজে খাওয়া, একভাগ ধনী আত্মীয়দেরকে হাদীয়া দেওয়া এবং আর একভাগ ফকীর-মিসকিনদেরকে দান করা পছন্দ করতেন। তবে এধরণের বণ্টন করা ওয়াজিব নয়।
ঢ) মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী করা: الأضحية عن الميت
মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী করা তিন ধরণের হতে পারে। যথা:
(১) নিজের কুরবানিতে পরিবারের মৃত ও জীবিত ব্যক্তিদেরকে নিয়তের মাধ্যমে শামিল করা। ইহা বৈধ। নবী (সাল্লাল্লাহী আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে এধরণের কুরবানী করার কথা প্রমাণিত আছে। এভাবে দেওয়া কুরবানীর গোশত পরিবারের সবাই খেতে পারবে।
(২) মৃত ব্যক্তি জীবিত থাকা অবস্থায় তাঁর পক্ষ থেকে কুরবানী করার ওসীয়ত করে থাকলে ওসীয়ত বাস্তবায়ন করার জন্য মৃত ব্যক্তির তরফ থেকে কুরবানী করা জায়েজ আছে।
(৩) মৃত ব্যক্তির জন্য আলাদাভাবে কুরবানী করা। এব্যাপারে বিদ্যানগণ মতবিরোধ করেছেন। কারণ এ ধরণের কুরবানী করার কথা হাদীসের মাধ্যমে সরাসরি প্রমাণিত নাই। আল্লামা ইবনু উসাইমীন ছদকা স্বরূপ মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী করা বৈধ বলে মত প্রকাশ করেছেন। এভাবে কুরবানী করলে গোশত দরিদ্রদের মাঝে ছাদকাহ করে দিতে হবে। নিজে খাওয়া যাবে না।
আল্লাহর কাছে প্রার্থনা এই যে তিনি যেন আমাদের সমস্ত সৎ আমল কবুল করেন ।

No comments:

Post a Comment