Sunday, April 5, 2015

পৃথিবী VS পরকাল




পৃথিবী VS পরকাল
আজকালকার যুগে এমন মুসলিম খুঁজে পাওয়া মুশকিল যে আখিরাত সম্পর্কে সচেতন। বরং ৯৮% মুসলিমরাই আখিরাত সম্পর্কে গাফেল। তাদের যদি জিজ্ঞাস করা হয়- ভাই, আপনি কি আখিরাতে, জান্নাত, জাহান্নামে বিশ্বাস করেন? তবে তারা উত্তর দেয়-ভাই এটা আপনি কি বললেন? অবশ্যই করি, নিঃসন্দেহে করি। তাদের উত্তর শুনে মনে হয় তারাই আসল মুত্তাকী।
যাদের পরিচয় সম্পর্কে আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেছেন- " তারা (মুত্তাকীরা) আখিরাতের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখে।" (সুরা বাকারাঃ ৪)।
এখানে আল্লাহ্‌ মুত্তাকীদের বিশ্বাসী সম্পর্কে শুধু "বিশ্বাস" শব্দটি উল্লেখ করেননি। বরং "দৃঢ় বিশ্বাস" শব্দটি উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ মুত্তাকী তারাই যারা দুনিয়ার জীবন তো যেন তেন পরকালের জীবনকেই মনে প্রানে বিশ্বাস করে এবং পরকালের জীবনকেই সব থেকে বেশি প্রাধান্য দেয়।
এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে আজকালকার যুগের নামে মাত্র মুসলিমদের আখিরাত সম্পর্কে জিজ্ঞাস করলে যখন তারা এমন উত্তরই দেয় যেন মনে হয় তারাই আসল মুত্তাকী তবে আখিরাতের সফলতার জন্য কোন প্রচেষ্টা নেই কেন?
দুনিয়ার জীবনের ক্ষেত্রে তো তাদের বলতে হয় না। দুনিয়ার জীবনের জন্য তো কিভাবে বড় একটা চাকুরী পাওয়া যায়, কিভাবে বড় একটা ব্যাবসা ধরা যায়, কিভাবে বেশি বেশি ইনকাম করা যায়, কিভাবে একটা
স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ জীবন অর্জন করা যায়, কিভাবে জীবনে সফলতা পাওয়া যায় এই বিষয়ে তো তাদের মেহনত, প্রচেষ্টার কোন ত্রুটি থাকে না। সেই ছোট বেলা থেকে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়- কিভাবে পরীক্ষায় ফার্স্ট হওয়া যায়, কিভাবে ভাল রেজাল্ট করা যায়, কিভাবে ভাল একটা স্কুলে চান্স পাওয়া যায়, স্কুল লেভেল শেষ করার পর কিভাবে ভাল একটা কলেজে চান্স পাওয়া যায়, অতঃপর কিভাবে ভাল একটা ভার্সিটিতে চান্স পাওয়া যায়, অতঃপর কিভাবে ভাল একটা জব পাওয়া যায়, এভাবে সারা জীবন প্রচেষ্টা চলতেই থাকে।
এই দুনিয়ার জীবনে সফলতা পাওয়ার জন্য এত চেষ্টা করতে, এত যুদ্ধ করতে বলতে হয় না। কিন্তু যেই আখিরাতের জীবনই আসল জীবন, যেই আখিরাতের জীবনই চিরস্থায়ী জীবন সেই জীবনের সফলতার জন্য তাদেরকে বলে কয়েও ফেরানো যায়না, চিন্তাশীল করা যায় না।
আখিরাতের জীবন সম্পর্কে কেন তৎপরতা নেই কেন?
তাহলে বুঝতে হবে তারা শুধু মুখে মুখেই বলে আখিরাতে বিশ্বাস করি। আসলে তাদের আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস নেই। দুনিয়ার এই জীবন তাদেরকে পরকাল থেকে গাফেল করে রাখে।
ফলে তারা অপরাধ করতেই থাকে। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ না পড়া একটি অপরাধ, বেপর্দাভাবে চলা একটি অপরাধ, মিথ্যা কথা বলা একটি অপরাধ, টিভি-সিনেমা, গান-বাজনা............... আজকালকার যুগের লোকেদের অপরাধের কথা বলে শেষ করা যাবে না।
অনেকেই বলে আমি আল্লাহ্‌কে মনে প্রানে বিশ্বাস করি তাই আল্লাহ্‌ আমাকে মাফ করে দিবেন। আল্লাহ্‌ তো ক্ষমাশীল ও অত্যান্ত দয়ালু।
জি না। এই ধরণের লোকেদের জন্য কোন ক্ষমা নেই। যারা লজ্জিত হয় এবং পাপ কাজ থেকে ফিরে আসে, সৎ জীবন যাপন করতে থাকে তাদের জন্যই রয়েছে ক্ষমা।
"আর এমন লোকদের জন্য কোন ক্ষমা নেই, যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে, এমন কি যখন তাদের কারো মাথার উপর মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন বলতে থাকেঃ আমি এখন তওবা করছি। আর তওবা নেই তাদের জন্য, যারা কুফরী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। আমি তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। (সুরা নিসাঃ ১৮)
যারা আল্লাহ্‌র আদেশ-নিষেধ কিছু মানে আর কিছু মানে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।
" তবে কি তোমরা এই গ্রন্থের কিয়দংশ বিশ্বাস কর এবং কিয়দংশ অবিশ্বাস কর? যারা এরূপ করে পার্থিব জীবনে দূগর্তি ছাড়া তাদের আর কোনই পথ নেই। কিয়ামতের দিন তাদের কঠোরতম শাস্তির দিকে পৌঁছে দেয়া হবে। আল্লাহ তোমাদের কাজ-কর্ম সম্পর্কে বে-খবর নন। এরাই পরকালের বিনিময়ে পার্থিব জীবন ক্রয় করেছে। অতএব এদের শাস্তি লঘু হবে না এবং এরা সাহায্যও পাবে না। (সুরা বাকারাঃ ৮৫-৮৬)
জান্নাত কি মামার বাড়ীর মোয়া???
এত সহজেই জান্নাত পাওয়া যাবে?? সবাই জান্নাতের আশা করে বসে থাকে অথচ কাজ করে না। পক্ষান্তরে দুনিয়ার জীবনের ক্ষেত্রে একটা স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ জীবন অর্জন করার জন্য আশা করে বসে থাকে না বরং কাজে লেগে যায়, যুদ্ধে নেমে যায়।
" তোমাদের কি এই ধারণা যে, তোমরা এমনিতেই জান্নাতে চলে যাবে, অথচ সে লোকদের অবস্থা তোমরা এখনো অতিক্রম করনি যারা তোমাদের পূর্বে অতীত হয়েছে। তাদের উপর এসেছে বিপদ ও কষ্ট। (সুরা বাকারাঃ ২১৪)
আর যারা মনে করে-আমি আল্লাহ্‌কে মনে প্রানে বিশ্বাস করি তাই আল্লাহ্‌ আমাকে মাফ করে দিবেন। তার অবস্থা আরো করুন।
"মানুষ কি ভেবে রেখেছে যে, তারা একথা বলেই অব্যাহতি পেয়ে যাবে যে, আমরা বিশ্বাস করি এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? অথচ আমি তাদেরকেও পরীক্ষা করেছি, যারা তাদের পূর্বে ছিল। আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন যারা সত্যবাদী এবং নিশ্চয়ই জেনে নেবেন মিথ্যুকদেরকে। যারা মন্দ কাজ করে, তারা কি মনে করে যে, তারা আমার হাত থেকে বেঁচে যাবে? তাদের ফয়সালা খুবই মন্দ। যে আল্লাহর সাক্ষাত কামনা করে, আল্লাহর সেই নির্ধারিত কাল অবশ্যই আসবে। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী। (সুরা আনকাবুতঃ ২-৫)
আমি বুঝি না তাদের সাথে কি আল্লাহ্‌র কোন গোপন চুক্তি হয়েছে কিনা যারা ভাবে -আমি আল্লাহ্‌কে মনে প্রানে বিশ্বাস করি তাই আল্লাহ্‌ আমাকে মাফ করে দিবেন।

No comments:

Post a Comment