জেনে নিন!!! রোযা সংকারান্ত সকল তথ্য!!!!!!!!!!!!!!
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآَنُ هُدًى لِلنَّاسِ
এই সেই রমযান মাস, যাতে বিশ্বমানবের হেদায়েতের জন্য কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। (বাকারাঃ১৮৫)
২. এই মাসের সিয়ামকে আল্লাহ তায়ালা ফরয করেছেনঃ
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ
সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস পাবে সে যেন সিয়াম পালন করে। ((বাকারাঃ১৮৫)
তালহা বিন উবাইদুল্লাহ বলেন, এক ব্যক্তি নবী কে জিজ্ঞাসা করল; হে আল্লাহর রাসূল! আমার উপর আল্লাহ কি কি রোযা ফরয করেছেন তা আমাকে বলে দিন” উত্তরে তিনি বললেন, “রমযান মাসের রোযা” লোকটি বলল, এ ছাড়া অন্য কিছু কি আমার কর্তব্য আছে? তিনি বললেন, না, তবে যদি তুমি নফল রোযা রাখ, তাহলে ভিন্ন কথা।’ (বুখারীঃ ১৮৯১)
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ
فرض الله عز وجل عليكم صيامه
আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য এ মাসের সিয়াম পালন ফরজ করেছেন। (নাসায়ী)
ফলে ফরয সিয়াম রমজান মাসে হওয়ার কারণে এ মাসের মর্যাদা আরও অনেকগুণে বেড়ে গেছে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন :—
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
হে মোমিনগণ! তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেমনি ফরজ করা হয়েছে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর—যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার। সূরা বাকারা : ১৮৩
৩. এই মাস আগমন হলে রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অতিশয় আনন্দিত হয়ে সাহাবাগণকে সুসংবাদ দিতেন, তিনি বলতেনঃ
أتاكم رمضان شهر مبارك
তোমাদের দ্বারে বরকতময় মাস রমজান এসেছে।(নাসায়ী)
৪. এই মাস হল বরকতের মাসঃ
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يبشر أصحابه: قد جاءكم شهر مبارك, شهر رمضان
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সঙ্গী – সাথীদের এ মর্মে সুসংবাদ শোনাতেন ” তোমাদের সমীপে রমজান মাস এসেছে। এটি এক বরকতময় মাস।(নাসায়ীঃ৪/১২৯, আহমাদঃ২/২৩০)
৫. এই মাসে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছেঃ
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন:—
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآَنُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ : البقرة
এই সেই রমজান মাস, যাতে নাজিল হয়েছে আল-কোরআন, যা মানুষের দিশারি এবং স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী। (সূরা বাকারা : ১৮৪ )
৬. এই মাসের সিয়াম পালন জান্নাত লাভের একটি মাধ্যম।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন; যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনল, সালাত কায়েম করল, যাকাত আদায় করল, রমযান মাসে সিয়াম পালন করল, তাঁর জন্য আল্লাহর উপর সে বান্দার অধিকার হোল তাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেয়া। (বুখারী)
৭. এই মাসের আগমন হলে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় ও জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—
إذا جاء رمضان فتحت أبواب الجنة، وأغلقت أبواب النار، رواه مسلم
যখন রমজান মাসের আগমন ঘটে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। (মুসলিম)
৮. এই মাসে রহমতের সকল দরজা খুলে দেয়া হয় (সিসঃ১৩০৭, সজাঃ৪৭১ নং)
৯. এই মাসে আসমানের দরজসমূহ উম্মুক্ত করা হয়ঃ
(বুখারীঃ ১৮৯৯, আঃ, নাঃ, সিসঃ ১৮৬৮)
১০. এই মাসের আগমন হলে শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়ঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—
وصفدت الشياطين. وفي لفظ : (وسلسلت الشياطين) رواه مسلم
এবং শয়তানদেরকে শিকলে বন্দি করা হয়। অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে—‘শয়তানদেরকে শিকল আবদ্ধ করা হয়। (মুসলিম)
১১. এই মাসে এমন একটি রজণী রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম; অর্থাৎ লাইলাতুল কদরঃ
আল্লাহ তাআলা বলেন:—
لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ (3) تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِمْ مِنْ كُلِّ أَمْرٍ (4) سَلَامٌ هِيَ حَتَّى مَطْلَعِ الْفَجْرِ (5)
লাইলাতুল কদর সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, সে রজনি উষার আবির্ভাব পর্যন্ত। সূরা আল-কদর : ৩-৫
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি এই রাতের মঙ্গল থেকে বঞ্চিত হয়, সে আসলে সকল মঙ্গল থেকে বঞ্চিত। আর একান্ত বঞ্চিত ব্যক্তি ছাড়া সে মঙ্গল থেকে কেউ বঞ্চিত হয় না। (সইমাঃ ১৩৩৩, সজাঃ ৩৫১৯)
১২. এই মাসে দোয়া কবুল হয়ঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
لكل مسلم دعوة مستجابة، يدعو بـها في رمضان. رواه أحمد
রমজান মাসে প্রত্যেক মুসলিমের দোয়া কবুল করা হয়। (বাযযার, সহি আত-তারগীব ওয়াত-তারহীবঃ ৯৮৮, মুসনাদ আহমদঃ ৭৪৫০)
১৩. এই মাসের প্রতি রাতে ও দিনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেনঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
إن لله تبارك وتعالى عتقاء في كل يوم وليلة، (يعني في رمضان)
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রমজানের প্রতি রাতে ও দিনে বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। (সহি আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব, মুসনাদ আহমাদঃ ৭৪৫০)
১৪. এই মাস পাপ থেকে ক্ষমা লাভের মাসঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
.. رغم أنف رجل، دخل عليه رمضان، ثم انسلخ قبل أن يغفر له. .رواه الترمذي
ঐ ব্যক্তির নাক ধুলায় ধূসরিত হোক যার কাছে রমজান মাস এসে চলে গেল অথচ তার পাপগুলো ক্ষমা করা হয়নি। (তিরমিজি)
সত্যিই সে প্রকৃত পক্ষে সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত যে এ মাসেও আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত রয়ে গেল।
১৫. এ মাসের প্রত্যেক রাত্রে মহান আল্লাহ অনেক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে থাকেনঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
ولله عتقاء من النار، وذلك في كل ليلة. رواه الترمذي
এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ তাআলা জাহান্নাম থেকে বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। (তিরমিজি, আহমাদঃ৪/৩১২, ৫/৪১১, নাসায়ী, সইমাঃ১৩৩)
১৬. এ মাসের প্রত্যেক রাত্রে একজন আহ্বানকারী (ফেরেশতা) আহ্বান করার জন্য নিযুক্ত থাকেনঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
وينادي مناد كل ليلة : يا باغي الخير أقبل! ويا باغي الشر أقصر!
প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী এ বলে ঘোষণা দিতে থাকে যে, হে কল্যাণকামী! তুমি অগ্রসর হও। আর হে মন্দকামী! তুমি থেমে যাও।(তিরমিজি, আহমাদঃ৪/৩১২, ৫/৪১১, নাসায়ী, সইমাঃ১৩৩)
১৭. এ মাসে সৎকর্মের প্রতিদান বহু গুণে বৃদ্ধি করে দেয়া হয়:
যেমন হাদিসে এসেছে যে, রমজান মাসে ওমরাহ করলে একটি হজের সওয়াব পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, বরং, রমজান মাসে ওমরাহ করা আল্লাহর রাসূলের সাথে হজ আদায়ের মর্যাদা রাখে। এমনিভাবে সকল ইবাদত-বন্দেগিসহ সকল সৎকাজের প্রতিদান কয়েক গুণ বেশি দেয়া হয়।
১৮. এ মাস ধৈর্য ও সবরের মাস :
এ মাসে ঈমানদার ব্যক্তিগণ খাওয়া-দাওয়া, বিবাহ-শাদি ও অন্যান্য সকল আচার-আচরণে যে ধৈর্য ও সবরের এত অধিক অনুশীলন করেন তা অন্য কোন মাসে বা অন্য কোন পর্বে করেন না। এমনিভাবে সিয়াম পালন করে যে ধৈর্যের প্রমাণ দেয়া হয় তা অন্য কোন ইবাদতে পাওয়া যায় না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন:—
إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ. الزمر
ধৈর্যশীলদের তো বিনা হিসাবে পুরস্কার দেয়া হবে। সূরা যুমার : ১০
১৯. এ মাসে একটি ওমরা করলে একটি হজ্জ আদায়ের সওয়াব হয়, এমনকি তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে হজ্জ আদায়ের মর্যাদা রাখে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন;
فإن عمرة في رمضان تقضي حجة أو حجة معي
রমজান মাসে ওমরাহ আদায় করা আমার সাথে হজ আদায়ের সমতুল্য।(বুখারিঃ ১৮৬৩, এবং মুসলিমঃ ১২৫৬)
উম্মে মাকাল রাযিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন;
عمرة في رمضان تعدل حجة
রমজান মাসে ওমরাহ করা একটি হজ্জের সমান।(তিরমিযিঃ৮৬১)
২০. এ মাসে ইবাদতের মাধ্যমে রাত্রী জাগরণ করলে অতীতের গুনাহসমূহ মাফ হয়ঃ
যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশা রেখে রমজান মাসের রাত্রে কিয়াম তথা (তারাবীর সলাত) আদায় করবে আল্লাহ তায়ালা তার পূর্বের সকল গুণাহ খাতা মাফ করে দেবেন। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
২১. এ মাস জিহাদের মাসঃ
ইসলামের ইতিহাসে প্রথম যুদ্ধ এ মাসেই সংঘটিত হয়েছিল। ২য় হিজরির ১৭ই রমযানে সংঘটিত হয় ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ। এ যুদ্ধে আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদেরকে সাহায্য করেন এবং শত্রুর উপর বিজয় দান করেন।
অন্যদিকে আবার অষ্টম হিজরির ২০ই রমযান মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করেন, যার পর ইসলাম সম্পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠা লাভ হয়।
সুতরাং বিজয়ের সূচনাও যেমন রমযান মাসে, তেমনি মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে সমগ্র দুনিয়ায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা লাভও করে এই পবিত্র রমযান মাসে।
No comments:
Post a Comment