Saturday, June 27, 2015

হযরত লুত (আঃ) এবং মৃত বা মরু সাগর!




হযরত লুত (আঃ) এবং মৃত বা মরু সাগর!
নবী হযরত লুত (আঃ) এর পিতার নাম ছিল হারান। লূত (আঃ) ছিলেন ইব্রাহীম (আঃ) এর ভাইয়ের ছেলে। ভাতিজা লূত (আঃ) ছোটবেলা থেকেই ইব্রাহীম (আঃ) এর সাহচর্যে বড় হন। এবং ইব্রাহীম (আঃ) এর আহবানে সাড়া দিয়ে সঠিক ধর্ম গ্রহন করেন ও সেই সত্য ধর্ম প্রচার করার জন্য মাতৃভূমি ইরাক ত্যাগ করে হিজরত করে মিশরে চলে আসেন। তিনি ইব্রাহীম (আঃ) এর যুগেই নবুয়ত প্রাপ্ত হন।
মিসরে ইব্রাহীম (আঃ) এর সাথে লূত (আঃ) কিছুদিন কাজ করার পর ইব্রাহীম (আঃ) মিসর হতে সিরিয়ার ফিলিস্তিনে, আর লূত (আঃ) জর্দান রাজ্য বা ট্রান্সজর্দান এলাকায় চলে আসেন। এটি বর্তমানে মরু সাগরের নিকট সডম ও গমোরা নগর হিসাবে খ্যাত। এখানে সাদ্দুম নামে এক বস্তি ছিল। সে বস্তি এবং আশে পাশের আরো কিছু এলাকায় লূত (আঃ) সত্য ধর্মের তবলীগ করতে থাকতেন।
লূত (আঃ) যে জাতির প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন, তারা জঘন্য রকমের খারাপ স্বভাবের ছিলো। তারা কুফর, শেরক ইত্যাদির সাথে সাথে জুলুম, অত্যাচারে লিপ্ত ছিল। পথিক, বিদেশী আগুন্তক, বনীক ও ব্যাবসায়ীদের কাছ হতে লুন্ঠন করতো। এছাড়াও তারা এমন এক কদর্য ও নির্লজ্জ কাজে লিপ্ত ছিল, যা তাদের পূর্বে বিশ্ব জগতের আর কেউই করেনি। তারা মাঠে ঘাটে, রাস্তায়, মাহফিল, মজলিসে বিনা দ্বিধায় পুরুষদের সাথে কুকর্মে লিপ্ত হতো।
হযরত লূত (আঃ) এসব জঘন্য দুস্কর্মের জন্য দেশবাসীকে বিভিন্নভাবে বোঝালেন। তারা বুঝলো না। তারপর তিরস্কার করলেন, কিš ‘তারা তাঁর কথায় কর্ণপাত করলো না। তিনি তাঁর দেশবাসিকে বললেন, নিশ্চই তোমরা এমন এক নির্লজ্জ ও কুৎসিৎ কাজে লিপ্ত যা তোমাদের পূর্বে বিশ্ব জগতের কেউই করেনি। ছেলে ও পুরুষদের সাথে কুকর্ম, ডাকাতি এবং প্রকাশ্য মজলিসে কুকর্ম, তোমরা কি এসবে ডুবে থাকবে? দেশবাসী উত্তর করলো, ‘তুমি যদি সত্যবাদী হয়ে থাকো, তবে আমাদের উপর গজব নিয়ে আসো।’ লূত (আঃ) আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেন, ‘হে পরওয়ারদেগার, আমাকে এই দুষ্টদের মোকাবেলায় সাহায্য করুন।
তখন আল্লাহ দু’জন ফেরেশতাদের, মেহমানরুপে তাঁর গৃহে পাঠালেন। ফেরেস্তারা অত্যান্ত সুদর্শন বালকরূপে এলেন। লূত (আঃ) এর বাড়ি এসে, এত সুদর্শন বয়সী বিদেশী মেহমান দেখে, দেশবাসীর চরিত্র ও অভ্যাসের কথা মনে করে, অত্যান্ত ভীত হয়ে গেলেন। তাঁর স্ত্রী ছিল কাফের। সে লূত (আঃ) এর সাথে অত্যান্ত অসহযোগীতা করতো। সে যেয়ে দেশবাসীকে এসব সুদর্শন মেহমানদের খবর দিয়ে আসলো। দেশবাসী মাতালের মতো ছুটে আসতে লাগলো। লূত (আঃ) অস্থির হয়ে পড়লেন। গুন্ডারাও উপস্থিত হলো।
লূত (আঃ) মেহমানদের রক্ষা করার উপায় হিসেবে নিজ কন্যাদেরকে গুন্ডাদের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন। কিন্তু দুশ্চরিত্রের ঐ সব লোক সমূহ সব কিছু অগ্রাহ্য করলো। এবং বললো আপনিতো জানেন, আমরা কি চাই? লূত (আঃ) বিব্রত অবস্থায় পড়লেন। কিভাবে রক্ষা পাবেন, তাই চিন্তা করতে লাগলেন। তখন ফেরেশতারা গোপনে লূত (আঃ) এর কাছে নিজেদের পরিচয় দিলেন। এবং পরামর্শ দিলেন যে, আপনি আপনার পরিজন ও সঙ্গীদেরকে নিয়ে রাত্রে রাত্রেই এই দেশ ত্যাগ করবেন। ভোর হতে না হতেই এই দেশের উপর আল্লাহর আযাব আসবে।
লূত (আঃ) ফেরেশতাদের কথানুযায়ী তার অনুসারীদের সাথে নিয়ে রাতেই শহরের বাইরে চলে গেলেন, সিরিয়ার উদ্দেশ্যে। অবশ্য লূত (আঃ) এর স্ত্রী ওখানেই রয়ে গেলেন। ভোরে এই এলাকায় ভয়›কর ভূকম্প, চালের তর্জন-গর্জন আরম্ভ হলো। উপর হতে প্রস্তর বর্ষণ হতে লাগলো। সমগ্র দেশকে উপরে তুলে সজোরে নিক্ষেপ করা হলো। প্রভাতেই সমগ্র দেশ ধ্বংস হয়ে ভূপৃষ্ট হতে পাপিষ্টদের চিহ্ন চিরতরে মুছে গেল। শুধু রইল কুৎসিৎ কল›েকর কালিমা রেখা। সবকিছু ধ্বংস হয়ে সম্পূর্ণ এলাকা সাগরে পরিণত হলো। যা আজও জর্দানের মানচিত্রে বিদ্যমান আছে। আল্লাহর গজবে পতিত অভিশপ্ত এই এলাকাটি বাংলায় মরু সাগর, ইংরেজীতে ও আরবীতে ‘বাহরে মাইয়েত’ নামে পরিচিত। এটি দৈঘ্যে ৭৭ কিলোমিটার (প্রায় ৫০ মাইল), প্রস্থে ১২ কিলোমিটারের কিছু উর্ধ্বে (প্রায় ৯ মাইল), গভীরতায় ৪০০ মিটার (প্রায় কোয়াটার মাইল)। পুরাতন ইতিহাসে এটি ‘লূত সাগর’ নামে আখ্যায়িত।
তথ্য সূত্র ঃ আলকোরআন:
সূরা আ’রাফ, পারা ৮, রুকু ১৭, সূরা শোআরা, পারা ১৯ রুকু ১৩, ১৯, সূরা হুদ, পারা ১২ রুকু ৭,
পারা ২৭, রুকু ৯, পারা ২০, রুকু ১৬, কামাসুল কোরআন। ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং ২৩১।

No comments:

Post a Comment