Saturday, August 1, 2015

কাতার মিলিয়ে ঘন হয়ে জমে দাঁড়ানো এবং মাঝের ফাঁক বন্ধ করা :





কাতার মিলিয়ে ঘন হয়ে জমে দাঁড়ানো এবং মাঝের ফাঁক বন্ধ করা :
ইসলামের শাশ্বত বাণী সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া সকল মুসলিমের দায়িত্ব। সুতরাং শেয়ার ও ট্যাগ করতে ভুলবেন না।
কাতারে দাঁড়ানোর সময় ঘন হয়ে দাঁড়ানো জরুরী; যাতে মাঝে কোন ফাঁক না থাকে। পার্শ্ববর্তী নামাযীর পায়ের পাতার সাথে পায়ের পাতা (পায়ের বাইরের দিকটা সোজা কেবলামুখী করে কনিষ্ঠা আঙ্গুল থেকে গোড়ালি পর্যন্ত অংশ) ও বাহুর সাথে বাহু লাগিয়ে জমে দাঁড়াতে হবে নামাযীকে। আল্লাহর এ দরবারে আমীর-গরীব, ছোট-বড় ও প্রভু-দাসের কোন ভেদাভেদ নেই, কোন বেআদবী নেই। সাহাবাগণ কাতারে পরস্পর এইভাবেই দাঁড়াতেন। তাহলে কি তাঁরা বেআদব ছিলেন? আল্লাহর কসম! না। ঐ দেখেন না, একজন ছাত্র যদি তার শিক্ষকের গায়ে গা লাগিয়ে বসে, তাহলে শিক্ষক ও সমস্ত লোক তাকে বেআদব বলবেই। কিন্তু সেই ছাত্রই যদি বাস বা ট্রেনের সীটে ঐরুপ বসে, তাহলে তখন আর কেউ তাকে বেআদব বলে না। বলা বাহুল্য নামাযের সারিতে পাশাপাশি এই প্রেমের সূত্রে বড়-ছোটর কোন প্রভেদ নেই।
আসলে মনের সাথে মনের মিল থাকলে পায়ের সাথে পা মিলে যাওয়া দূরের কথা নয়। আর মনের মাঝে দূরত্ব থাকলে, মনের মাঝে ঔদ্ধত্ব, অহংকার ও ঘৃণা-বিদ্বেষ থাকলে অথবা ভুল বুঝাবুঝির ফলে অভিমান ও ক্ষেfভ থাকলে অবশ্যই দেহের দূরত্ব বেড়ে যাবে। বেড়ে যাবে আরো মনের দূরত্ব। দূর হবে সম্প্রীতির বাঁধন। শয়তান সেই ভুল বুঝাবুঝির সুযোগে জামাআতের মাঝে বিচ্ছিন্নতা আনতে বড় কৃতকার্য হবে।
পরন্তু যদি আপনি মনে করেন যে, পাশের মুসল্লী থেকে আপনি বড় এবং সে আপনার পায়ে পা লাগালে আপনার সম্মানে বাধবে, তাহলে আপনি আপনার পা তার পায়ে লাগিয়ে দিন। আর এ ক্ষেত্রে আশা করি আপনার মনের ঐ আত্মমর্যাদা ক্ষুন্ন হবে না।
পায়ে পা লাগিয়ে দাঁড়ানোর আমল মহানবী (সাঃ)-এর যামানায় প্রচলিত ছিল। তিনি সাহাবাদের সে আমল দেখেও বেআদবী মনে করে বাধা দেননি। তিনি নামাযের মধ্যে যেমন সামনে দেখতেন তেমনি পিছনে। ঘন হয়ে দাঁড়ানোর ব্যাখ্যাতে সাহাবাগণের এই আমল অবশ্যই তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন এবং তাতে তিনি-সম্মতি প্রকাশ করেছেন। বলা বাহুল্য, এ কাজ যে সুন্নত তাতে কোন সন্দেহ্ থাকতে পারে না।
কিন্তু বড় দু:খের বিষয় যে, তাবেঈনদের যামানা থেকেই এ আমল অনেকের কাছে বর্জনীয় হয়ে চলে আসছে। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, ‘আজকে যদি কারোর সাথে ঐ কাজ করি, তাহলে সে সেরকশ (দুরন্ত) খচ্চরের মত চকে যাবে।’ (ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ২/২৪৭) সুতরাং আল্লাহ তার প্রতি রহ্ম করেন যে এই মৃত সুন্নতকে জীবিত করে। (মারা: ২২৫পৃ:)
মহানবী (সাঃ) নামাযের কাতার তীরের মত সোজা করতেন। অতঃপর সাহাবাগণ যখন সে কাজ সমAক বুঝে উঠতে পেরেছেন এ কথা বুঝতে পারতেন, তখন তিনি তাকবীরে তাহ্রীমা দিতেন। একদিন তাকবীরে দিতে উদ্যত হতে গিয়ে তিনি দেখলেন, একটা লোকের বুক কাতারের সামনের দিকে বের হয়ে আছে। তা দেখে তিনি বললেন, “আল্লাহর বান্দাগণ! হয় তোমরা ঠিকমত কাতার সোজা কর, নচেৎ আল্লাহ তোমাদের চেহারাসমূহের মাঝে বিভিন্নতা সৃষ্টি করে দেবেন।” (বুখারী ৭১৭, মুসলিম, সহীহ ৪৩৬, আবূদাঊদ, সুনান ৬৬৩, মিশকাত ১০৮৫নং)
হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, একদা নামাযের ইকামত হল। নবী (সাঃ) আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, “তোমরা তোমাদের কাতার সোজা কর এবং ঘন হয়ে দাঁড়াও। নিশ্চয় আমি আমার পিছন দিক হতেও দেখে থাকি।” আনাস (রাঃ) বলেন, এরপর আমাদের প্রত্যেকে নিজ বাহুমূল তার পার্শ্ববর্তী সঙ্গীর বাহুমূলের সাথে এবং নিজ পা তার পায়ের সাথে (হাঁটু তার হাঁটুর সাথে, পায়ের গাঁট তার পায়ের গাঁটের সাথে) লাগিয়ে দিত। (বুখারী ৭১৮, মুসলিম, সহীহ ৪৩৬, আবূদাঊদ, সুনান ৬৬২নং)
হযরত জাবের বিন সামুরাহ্ (রাঃ) বলেন, একদা আল্লাহর রসূল (সাঃ) আমাদের কাছে এলেন। সে সময় আমরা গোলাকার দলে দলে বিভক্ত ছিলাম। তিনি বললেন, “তোমাদেরকে আমি বিক্ষিপ্তরুপে দেখছি কেন?” অতঃপর একদিন তিনি আমাদের কাছে এসে (আমাদেরকে অনুরুপ বিক্ষিপ্ত দেখে) বললেন, “তোমরা প্রতিপালকের সামনে ফিরিশ্তাবর্গের কাতার বাঁধার মত কাতার বেঁধে দাঁড়াবে না কি?” আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! ফিরিশ্তাবর্গ তাঁদের প্রতিপালকের সামনে কিরুপে কাতার বেঁধে দাঁড়ান।’ তিনি বললেন, “প্রথমকার কাতারসমূহ পূর্ণ করেন এবং ঘন হয়ে জমে কাতার বেঁধে দাঁড়ান।” (মুসলিম, সহীহ ৪৩০, আবূদাঊদ, সুনান ৬৬১, মিশকাত ১০৯১নং)
প্রকাশ থাকে যে, ঘন করে দাঁড়ানোর অর্থ এই নয় যে, পরস্পর ঠেলাঠেলি ও চাপাচাপি করে দাঁড়াতে হবে। বরং এইরুপ দাঁড়ানোতে নামাযের একাগ্রতা ও বিনয় নষ্ট হতে পারে। অতএব যাতে পায়ে পা এবং বাহুতে বাহু স্বাভাবিকভাবে লেগে থাকে তারই চেষ্টা করতে হবে। আর তার জন্য যতটুকু দরকার ততটুকুই পা ফাঁক করে দাঁড়াতে হবে।
সামনের কাতার খালি থাকলে (রাকআত বা রুকূ ছুটে যাওয়ার ভয়ে) পিছনে দাঁড়ানো বৈধ নয়। যেমন সামনের কাতারে ফাঁক দেখা দিলে তা বন্ধ করা জরুরী। সামনে কাতারে যেতে দূর হলে এবং নামাযের মধ্যে হলেও অগ্রসর হয়ে যেতে হবে কাতার মিলানোর উদ্দেশ্যে। এর জন্য রয়েছে আদেশ, পুরস্কার এবং তিরস্কারও।
নবী মুবাশ্শির (সাঃ) বলেন, “প্রথম কাতারকে আগে পূর্ণ কর, তারপর তার পরের কাতারকে। অপূর্ণ থাকলে যেন শেষের কাতার থাকে।” (আবূদাঊদ, সুনান ৬৭১নং)
তিনি বলেন, “তোমরা কাতার সোজা কর, বাহুমূলসমূহকে পাশাপাশি সমপর্যায় করে দাঁড়াও, কাতারের ফাঁক বন্ধ কর, পার্শ্ববর্তী নামাযী ভাইদের জন্য নিজ নিজহাতসমূহকে নরম কর এবং শয়তানের জন্য (কাতারে) ফাঁক রেখো না। আর যে ব্যক্তি কাতার মিলিয়ে দাঁড়ায় সে ব্যক্তির সাথে আল্লাহ মিলন (সম্পর্ক) রাখেন এবং যে ব্যক্তি কাতার ছিন্ন করে সে ব্যক্তির সাথে আল্লাহ (সম্পর্ক অথবা কল্যাণ) ছিন্ন করেন।” (আবূদাঊদ, সুনান ৬৬৬নং)
আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেন, “অবশ্যই আল্লাহ তাদের প্রতি রহ্ম করেন এবং ফিরিশ্তাবর্গ তাদের জন্য দুআ করে থাকেন, যারা কাতার মিলিয়ে দাঁড়ায়। আর যে ব্যক্তি কাতারের ফাঁক বন্ধ করে, আল্লাহ তার বিনিময়ে তাকে একটি মর্যাদায় উন্নীত করেন।” (ইবনে মাজাহ্, সুনান, আহমাদ, মুসনাদ, ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ, ইবনে হিব্বান, সহীহ,হাকেম, মুস্তাদরাক, জামে ১৮৪৩নং)
তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি (কাতারের মাঝে) কোন ফাঁক বন্ধ করে, আল্লাহ তার বিনিময়ে তাকে একটি মর্যাদায় উন্নীত করেন এবং তার জন্য জান্নাতে এক গৃহ্ নিমাGণ করেন।” (ত্বাবারানীরানী, মু’জাম আওসাত্ব, সহিহ তারগিব ৫০২নং)
তিনি বলেন, “অবশ্যই আল্লাহ রহ্মত বর্ষণ করেন এবং ফিরিশ্তাবর্গ দুআ করতে থাকেন তাদের জন্য যারা প্রথম কাতার মিলিয়ে (ব্যবধান না রেখে) দাঁড়ায়। আর যে পদক্ষেপ দ্বারা বান্দা কোন কাতারের ফাঁক বন্ধ করতে যায় তা অপেক্ষা আল্লাহর নিকট অন্য কোন পদক্ষেপ অধিক পছন্দনীয় নয়।” (আবূদাঊদ, সুনান, ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ, অবশ্য এতে পদক্ষেপের উল্লেখ নেই, সহিহ তারগিব ৫০৪নং)
পাশের নামাযীর জন্য নিজের বাহুকে নরম করে দাঁড়ানো :
পাশের নামাযী যাতে মনে কষ্ট না পায় তার জন্য প্রত্যেক নামাযীর কর্তব্য নিজ নিজ বাহুকে নরম করে রাখা। এতে উভয়ের মনে বিদ্বেষ দূর হয়ে প্রীতির সঞ্চার হবে। দূর হবে ঘৃণা ও কাতারের ফাঁক।
মহানবী (সাঃ) বলেন, “তোমাদের মধ্যে উত্তম লোক তারাই, যারা নামাযের মধ্যে নিজেদের বাহুসমূহকে (পাশের নামাযীর জন্য) নরম রাখে।” (আবূদাঊদ, সুনান ৬৭২নং)
বলা বাহুল্য, পায়ে পা লাগাবার সময়, বাম পা-কে ডান পায়ের নিচে বের করে বসার সময়ও পাশের নামাযীর সাথে কঠেfরতার পরিচয় দেওয়া উচিৎ নয়। বরং কাতারে চাপাচাপি বা ঠসাঠসি থাকলে পা বের করে অপরকে কষ্ট দেওয়ার চাইতে পা না বের করে উক্ত সুন্নত পালন না করাই উত্তম। (লিকাউবাবিল মাফতূহ্, ইবনে উষাইমীন ২২/৩০)

No comments:

Post a Comment