Monday, September 21, 2015

কুরবানীর প্রথম ইতিহাস



•৷• সহীহ্ হাদিস •৷•'s photo.

▓▓▓▒▒░░▒▒░░ কুরবানীর প্রথম ইতিহাস ░░▒▒░░▒▒▓▓▓
____________
মহান আল্লাহ মানব জাতিকে একমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তবে সেক্ষেত্রে তিনি কিছু ইবাদত ফরজ করেছেন, আর কিছুকে ওয়াজিব সাব্যস্ত করেছেন। মুসলিমগণের উচিত একনিষ্ঠভাবে একমাত্র তাঁর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সেগুলো সম্পন্ন করা।
____________
কুরবানী সে ধরনের একটি ইবাদত যার বিধান আদম (আ.) এর যুগ থেকেই চলে আসছে। কিন্তু এ গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের সঠিক ইতিহাস ও বিধানাবলী সম্পর্কে আমরা খুব কমই অবগত আছি। আলোচ্য নিবন্ধটি এ বিষয়ে আমাদের অনেক সহায়ক হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
---------------------------
▓▓ কুরবানীর ইতিহাস :
---------------------------
▒▒ পৃথিবীর সর্বপ্রথম কুরবানী:
কুরবানীর ইতিহাস খুবই প্রাচীন। সেই আদি পিতা আদম (আ.) এর যুগ থেকেই কুরবানীর বিধান চলে আসছে। আদম (আ.) এর দুই ছেলে হাবীল ও কাবীলের কুরবানী পেশ করার কথা আমরা মহাগ্রন্থ আল-কুরআন থেকে জানতে পারি।
____________
মহান আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা বলেন,
﴿ ۞وَٱتۡلُ عَلَيۡهِمۡ نَبَأَ ٱبۡنَيۡ ءَادَمَ بِٱلۡحَقِّ إِذۡ قَرَّبَا قُرۡبَانٗا فَتُقُبِّلَ مِنۡ أَحَدِهِمَا وَلَمۡ يُتَقَبَّلۡ مِنَ ٱلۡأٓخَرِ قَالَ لَأَقۡتُلَنَّكَۖ قَالَ إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ ٱللَّهُ مِنَ ٱلۡمُتَّقِينَ ٢٧ ﴾ [المائ‍دة: ٢٧]
____________
অর্থাৎ, আদমের দুই পুত্রের (হাবিল ও কাবিলের) বৃত্তান্ত তুমি তাদেরকে যথাযথভাবে শুনিয়ে দাও, যখন তারা উভয়ে কুরবানী করেছিল, তখন একজনের কুরবানী কবুল হলো এবং অন্যজনের কুরবানী কবুল হলো না। তাদের একজন বলল, ‘আমি তোমাকে অবশ্যই হত্যা করব। অপরজন বলল, ‘আল্লাহ তো সংযমীদের কুরবানীই কবূল করে থাকেন।
[সূরা মায়িদা (৫):২৭]।
----------------------
░░ মূল ঘটনা হলো:
----------------------
যখন আদম ও হাওয়া (আ.) পৃথিবীতে আগমন করেন এবং তাদের সন্তান প্রজনন ও বংশ বিস্তার আরম্ভ হয়, তখন হাওয়া (আ.) এর প্রতি গর্ভ থেকে জোড়া জোড়া (জময) অর্থাৎ একসাথে একটি পুত্র ও একটি কন্যা এরূপ জময সন্তান জন্মগ্রহণ করত। কেবল শীস (আ.) ব্যতিরেকে। কারণ, তিনি একা ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন।
____________
তখন ভাই-বোন ছাড়া আদম (আ.) এর আর কোন সন্তান ছিল না। অথচ ভাই-বোন পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে না। তাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা উপস্থিত প্রয়োজনের খাতিরে আদম (আ.) এর শরীয়তে বিশেষভাবে এ নির্দেশ জারি করেন যে, একই গর্ভ থেকে যে যমজ পুত্র ও কন্যা জন্মগ্রহণ করবে, তারা পরস্পর সহোদর ভাই-বোন হিসেবে গণ্য হবে। তাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম।
____________
কিন্তু পরবর্তী গর্ভ থেকে জন্মগ্রহনকারী পুত্রের জন্য প্রথম গর্ভ থেকে জন্মগ্রহণকারীনি কন্যা সহোদরা বোন হিসেবে গণ্য হবে না। তাদের মধ্যে পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ। সুতরাং সে সময় আদম (আ.) একটি জোড়ার মেয়ের সাথে অন্য জোড়ার ছেলের বিয়ে দিতেন।
____________
ঘটনাক্রমে কাবীলের সাথে যে সহোদরা জন্ম নিয়েছিল সে ছিল পরমা সুন্দরী। তার নাম ছিল আকলিমা। কিন্তু হাবিলের সাথে যে সহোদরা জন্ম নিয়েছিল সে দেখতে অতটা সুন্দরী ছিল না। তার নাম ছিল লিওযা। বিবাহের সময় হলে শরয়ী ‘নিয়মানুযায়ী হাবীলের সহোদরা কুশ্রী বোন কাবীলের ভাগে পড়ল। কিন্তু কাবিল আকলিমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল।
____________
ফলে আদম (আ.) তৎকালীন শরীয়তের আইনের পরিপ্রেক্ষিতে কাবীলের আবদার প্রত্যাখ্যান করলেন এবং তাকে তার নির্দেশ মানতে বললেন। কিন্তু সে মানল না। এবার তিনি তাকে বকাঝকা করলেন। তবুও সে ঐ বকাঝকায় কান দিল না। অবশেষে আদম (আ.) তার এ দু‘সস্তান হাবীল ও কাবীলের মতভেদ দূর করার উদ্দেশ্যে বললেন, ‘তোমরা উভয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানী পেশ কর, যার কুরবানী গৃহীত হবে, তার সাথেই আকলিমার বিয়ে দেয়া হবে।’
____________
সে সময় কুরবানী গৃহীত হওয়ার একটি সুস্পষ্ট নিদর্শন ছিল যে, আকাশ থেকে একটি অগ্নিশিখা এসে সে কুরবানীকে ভষ্মীভূত করে ফেলত। আর যার কুরবানী কবূল হতো না তারটা পড়ে থকত। যাইহোক, তাদের কুরবানীর পদ্ধতি সম্পর্কে যা জানা যায় তা হলো- কাবীল ছিল চাষী।
____________
তাই তিনি গমের শীষ থেকে ভাল ভাল মালগুলো বের করে নিয়ে বাজে মালগুলোর একটি আটি কুরবানীর জন্য পেশ করল। আর হাবীল ছিল পশুপালনকারী। তাই সে তার জন্তুর মধ্যে থেকে সবচেয়ে সেরা একটি দুম্বা কুরবানীর জন্য পেশ করল। এরপর নিয়মানুযায়ী আকাশ থেকে অগ্নিশিখা এসে হাবীলের কুরবানীটি ভষ্মীভুত করে দিল।
____________
[ফতহুল ক্বাদীরের বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, হাবীলের পেশকৃত দুম্বাটি জান্নাতে উঠিয়ে নেয়া হয় এবং তা জান্নাতে বিচরণ করতে থাকে। অবশেষে ইসমাঈল যাবিহুল্লাহ (আ.) কে ঐ দুম্বাটি পাঠিয়ে বাঁচিয়ে দেয়া হয়।] আর কাবীলের কুরবানী যথাস্থানেই পড়ে থাকল। অর্থাৎ হাবীলেরটি গৃহীত হলো আর কাবীলেরটি হলো না।
____________
কিন্তু কাবীল এ আসমানী সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারল না। এ অকৃতকার্যতায় কাবীলের দুঃখ ও ক্ষোভ আরো বেড়ে গেল। সে আত্মসংবরণ করতে পারল না এবং প্রকাশ্যে তার ভাইকে বলল, ‘আমি অবশ্যই তোমাকে হত্যা করব। হাবিল তখন ক্রোধের জবাবে ক্রোধ প্রদর্শন না করে একটি মার্জিত ও নীতিগত বাক্য উচ্চারণ করল, এতে কাবীলের প্রতি তার সহানুভূতি ও শুভেচ্ছা ফুটে উঠেছিল।
____________
হাবীল বলেছিল, ‘ তিনি মুত্তাক্বীর কর্মই গ্রহণ করেন। সুতরাং তুমি তাক্বওয়ার কর্মই গ্রহণ করো। তুমি তাক্বওয়া অবলম্বন করলে তোমার কুরবানীও গৃহীত হতো। তুমি তা করোনি, তাই তোমার কুরবানী প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এতে আমার দোষ কোথায়?…..তবুও এক পর্যায়ে কাবীল হাবীল কে হত্যা করে ফেলল। (তাফসীর ইবনু কাসীর, দুররে মনসূর, ফতহুল বায়ান, ৩/৪৫ ও ফতহুল ক্বাদীর, ২/২৮-২৯)
____________
কুরআনে বর্ণিত হাবীল ও কাবীল কর্তৃক সম্পাদিত কুরবানীর এ ঘটনা থেকেই মূলত কুরবানীর ইতিহাসের গোড়াপত্তন হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা দেখতে পেলাম যে, কুরবানী দাতা ‘হাবীল’, যিনি মনের ঐকান্তিক আগ্রহ সহকারে আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের জন্যে একটি সুন্দর দুম্বা কুরবানী হিসেবে পেশ করেন। ফলে তার কুরবানী কবূল হয়।
____________
পক্ষান্তরে কাবীল, সে অমনোযোগী অবস্থায় কিছু খাদ্যশস্য কুরবানী হিসেবে পেশ করে। ফলে তার কুরবানী কবূল হয়নি। সুতরাং প্রমাণিত হলো কুরবানী মনের ঐকান্তিক আগ্রহ ছাড়া কবূল হয় না। তারপর থেকে বিগত সকল উম্মতের উপরে এটা জারি ছিল।
____________
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَلِكُلِّ أُمَّةٖ جَعَلۡنَا مَنسَكٗا لِّيَذۡكُرُواْ ٱسۡمَ ٱللَّهِ عَلَىٰ مَا رَزَقَهُم مِّنۢ بَهِيمَةِ ٱلۡأَنۡعَٰمِۗ فَإِلَٰهُكُمۡ إِلَٰهٞ وَٰحِدٞ فَلَهُۥٓ أَسۡلِمُواْۗ وَبَشِّرِ ٱلۡمُخۡبِتِينَ ٣٤ ﴾ [الحج: ٣٤]
____________
অর্থাৎ প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমি কুরবানীর বিধান রেখেছিলাম, যাতে তারা উক্ত পশু যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করে এ জন্য যে, তিনি চতুষ্পদ জন্তু থেকে তাদের জন্য রিযিক নির্ধারণ করেছেন।
[সূরা হাজ্জ (২২):৩৪]।
____________
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা নাসাফী ও যামাখশারী বলেন, ‘আদম (আ.) থেকে মুহাম্মাদ (সা.) পর্যন্ত প্রত্যেক জাতিকে আল্লাহ তা‘আলা তার নৈকট্য লাভের জন্য কুরবানীর বিধান দিয়েছেন। (তাফসীরে নাসাফী ৩/৭৯; কাশশাফ, ২/৩৩)।
____________
আদম (আ.) এর যুগে তারই পুত্র কাবীল ও হাবীলের কুরবানীর পর থেকে ইবরাহীম (আ.) পর্যন্ত কুরবানী চলতে থাকে। প্রকৃতপক্ষে কুরবানীর ইতিহাস ততটা প্রাচীন যতটা প্রাচীন দ্বীন-ধর্ম অথবা মানবজাতির ইতিহাস। মানবজাতির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে যত শরীয়ত নাযিল হয়েছে, প্রত্যেক শরীয়তের মধ্যে কুরবানী করার বিধান জারি ছিল।
____________
প্রত্যেক উম্মতের ইবাদতের এ ছিল একটা অপরিহার্য অংশ। তবে ঐসব কুরবানীর কোন বর্ণনা কোন গ্রন্থে পাওয়া যায় না। মূলত সেসব কুরবানীর নিয়ম-কানুন আমাদেরকে জানানো হয়নি।

No comments:

Post a Comment