Wednesday, November 4, 2015

বে-নামাযী / আধা নামাযীর বিধান ‪




 বে-নামাযী / আধা নামাযীর বিধান 
__________________
বে-নামাযীর বিধান সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমেই আমাদেরকে বুঝতে হবে যে, বে-নামাযী কাকে বলে।
__________________
সহজ উত্তরঃ যে ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত ত্যাগ করে।
__________________
একটা বিষয় খুব ভাল ভাবে বুঝে নিতে হবে যে, নামাযী শুধুমাত্র ঐ ব্যক্তিকেই বলা যায় যে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত কায়েম করে। আমাদের দেশে অজ্ঞ মুসলিমরা নিজেদেরকে নামাযী ভাবে। কেননা তাদের কেউ কেউ জুম্মা পড়া মুসলিম। কেউ কেউ ২ ঈদ পড়া মুসলিম। অথচ তারাও কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে বে-নামাযী বলেই গণ্য। তারা নিজেকে বে-নামাযী মনে করে না বরং নামাযী-ই মনে করে - এটি আসলে তাদের অজ্ঞতা।
__________________
আমাদের দেশে বে-নামাযীদের একটি বড় অজুহাত হচ্ছে- তাদেরকে সালাতের কথা বললেই তাদের কাপড় খারাপ থাকে। বে-নামাযীদের যত কাপড় খারাপ থাকে কোন মেয়েরও মনে হয় এত কাপড় খারাপ থাকে না।
__________________
‪যে শুধুমাত্র জুম্মা পড়া মুসুল্লি তার হিসাবটা লক্ষ্য করুন‬
__________________
সে শুধু সপ্তাহে এক ওয়াক্ত সালাত আদায় করে। অথচ এক সপ্তাহে তার উপর সালাত ফরজ থাকে ৩৫ ওয়াক্ত। তারমধ্যে সে ৩৪ ওয়াক্ত-ই তরক করে। ৩৪ ওয়াক্ত সালাত তরক করার পরেও সে কিভাবে নিজেকে নামাযী মুসলিম ভাবে???
__________________
এবার আসুন দেখি‬ ‪ ‎ইসলামে বে নামাযীর বিধান কিঃ‬
__________________
সালাত আদায় করা এত গুরুত্বপূর্ণ যে, সালাত আদায় না করলে মুসলিম থাকা যায় না। ইচ্ছাকৃত ভাবে সালাত ত্যাগ করলে সে আর মুসলিম থাকবে না।
__________________
জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ্‌র বান্দা ও শিরক-কুফরের মধ্যে পার্থক্যকারী হচ্ছে সালাত ত্যাগ করা। [সহিহ মুসলিম, ১ম খন্ড, ঈমান অধ্যায়, হাদিস নং-১৫৪]
__________________
আল্লাহ্‌র রাসুল (সাঃ) আরো বলেছেন- আমাদের ও কাফেরদের মাঝে চুক্তি হল সালাত। সুতরাং যে ব্যক্তি তা ত্যাগ করবে সে কাফির হয়ে যাবে। ( তিরমিজিঃ ২৬২১, ইবনে মাজাহঃ ১০৭৯ )
__________________
যে ৫ ওয়াক্ত সালাত কায়েম করে না সে মুসলিম নয়, সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে গেছে। যদি কাউকে মুসলিম থাকতে হয় তবে তাকে প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত সালাতের ফরজ ১৭ রাকআত আদায় করতেই হবে। নইলে সে কাফের-মুশরেকদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
__________________
এই তো গেল হাদিস।
আসুন এইবার দেখি কুরআন কি বলে‬
__________________
মহান আল্লাহ্‌ বলেন- "সবাই তাঁর অভিমুখী হও এবং ভয় কর, সালাত কায়েম কর এবং মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সুরা আর রুমঃ ৩১)
__________________
এই আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেছেন- সালাত কায়েম করতে এবং মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত না হতে। তাহলে যে ব্যক্তি সালাত কায়েম করল না সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হবে। কেননা সালাত হচ্ছে আল্লাহ্‌র হুকুম। আল্লাহ্‌র আনুগত্য করা ফরজ। সে সালাত আদায় করলো না মানে শয়তানের আনুগত্য করল। তাই বে-নামাযী হচ্ছে মুশরিক।
__________________
মুসলিমের Identity হচ্ছে সালাত। আপনি কি জানেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর যুগে যারা মন থেকে ইসলামকে মেনে নেয় নি কিন্তু মুখে মুখে কালেমার সাক্ষ্য দিয়েছিল অর্থাৎ যারা মুনাফিক ছিল তারাও রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর পিছনে জামাআতে সালাত আদায় করতে বাধ্য ছিল? রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর যুগে একটাও বেনামাযী খুঁজে পাওয়া যেত না।
__________________
•৷• কেন?
__________________
কারন তারা যদি কালেমার সাক্ষ্য দেয়ার পরেও সালাত আদায় না করে তবে তারা যে আসলে মুসলিম নয় এটা ধরা পরে যাবে। মুনাফিক হওয়া সত্ত্বেও তারা সালাত আদায় করতে বাধ্য ছিল।
__________________
মহান আল্লাহ্‌ বিশ্বাসীদের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন- যারা অদেখা বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং নামায প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি তাদেরকে যে রুযী দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে। (সুরা বাকারাঃ ৩)
__________________
তাহলে দেখতে পারছেন, ঈমান আনার পর পর-ই তার এক নম্বর ফরজ কাজ হচ্ছে সালাত কায়েম করা।
__________________
আল্লাহ্‌র রাসুল (সাঃ) আরো বলেছেন- আমাদের ও কাফেরদের মাঝে চুক্তি হল সালাত। সুতরাং যে ব্যক্তি তা ত্যাগ করবে সে কাফির হয়ে যাবে। (তিরমিজিঃ ২৬২১, ইবনে মাজাহঃ ১০৭৯)
__________________
সুরা আত তওবা-তে মহান আল্লাহ্‌ মুশরিকদের সীমালঙ্ঘন করার পর মাফ পাওয়ার ব্যাপারে বলেন- "অবশ্য তারা যদি তওবা করে, সালাত কায়েম করে আর যাকাত আদায় করে, তবে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই। আর আমি বিধানসমূহে জ্ঞানী লোকদের জন্যে সর্বস্তরে র্বণনা করে থাকি। (সুরা আত তওবাঃ ১১)
__________________
কোন লোক সত্যিকার অর্থে ঈমান এনেছে কি না, তার অন্তরে প্রবেশ করে দেখার ক্ষমতা আমাদের নেই। তাহলে আমরা কিভাবে বুঝবো যে, এই লোকটি ঈমান এনেছে??
__________________
তাই সালাত-ই হচ্ছে তার পরিচায়ক, তার Identity. আল্লাহ্‌ এই আয়াতে একথাই বলছেন, যদি তারা সালাত কায়েম করে আর যাকাত আদায় করে, তবে তারা আমাদের দ্বীনী ভাই। যদি আমরা তাকে সালাত কায়েম করতে দেখি তবেই তাকে মুসলিম বলে- সাক্ষ্য দিব। নচেৎ নয়।
__________________
তাই ৫ ওয়াক্ত সালাত আদায় করতেই হবে, এর বিকল্প কোন পথ নেই। যদি মুসলিম থাকতে হয় তবে ৫ ওয়াক্ত সালাত আদায় করতেই হবে। যদি কাপড় খারাপও থাকে এবং অন্য কোন উপায় না থাকে সেক্ষেত্রেও নামাযের ওয়াক্ত শেষ হবার আগে ঐ নাপাক কাপড় দিয়ে হলেও সালাত আদায় করতে হবে। পরে আল্লাহ্‌ এটা বিবেচনা করবেন। যেহেতু ঐ মুহূর্তে তার জন্য পবিত্র কাপড় দিয়ে সালাত আদায় করা সম্ভব ছিল না।
__________________
জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণীত, তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেন- সমস্ত জমিন আমার জন্য সালাত আদায়ের স্থান এবং পবিত্রতা অর্জনের উপায় করা হয়েছে। কাজেই আমার উম্মতের যে কেউ যেখানেই সালাতের ওয়াক্ত হয় সেখানেই যেন সালাত আদায় করে নেয়। [সহীহ বুখারী ১ম খন্ড, সালাত অধ্যায়, হাদিস নং- ৪২৫]
__________________
এখন তো মসজিদের অভাব নেই। মন থেকে ৫ ওয়াক্ত সালাতকে আপন করে নিতে হবে। তবেই তার পরিচয় হবে- মুসলিম।
__________________
তাই কোন বে-নামাযী যদি মুসলিম থাকতে চায় তবে তাকে অতি সত্বর আল্লাহ্‌র কাছে তাওবা করে ৫ ওয়াক্ত সালাতকে আঁকড়ে ধরতে হবে। যদি সে ৫ ওয়াক্ত সালাত কায়েমকারী হতে পারে তবেই সে মুসলিমদের দ্বীনী-ভাই নইলে সে কাফের-মুশরেকদের অন্তর্ভুক্ত।
__________________
আল্লাহ্‌ আমাদেরকে হেদায়াত দান করুক।
আমীন।

No comments:

Post a Comment