জাহান্নাম আরবী শব্দ, বাংলায় বলা হয় ‘নরক’ আর ফারসিতে বলা হয় ‘দোজখ’। শাব্দিক অর্থ হচ্ছে- শাস্তির স্থান, দুঃখময় স্থান, নিকৃষ্টতম স্থান, দুর্গন্ধময় স্থান ইত্যাদি। অর্থাৎ বিচিত্র রকমের অসহনীয় যাতনার বিশাল এক অগ্নিদীপ্ত কারাগার। জাহান্নামের আজাবের কারণে দেহের মধ্যে অবস্থিত হৃদপিণ্ড নাড়িভুড়ি শিরা উপশিরা অস্থিমজ্বা ইত্যাদির বিকৃত ঘটবে। শেষ বিচারের দিন যারা অপরাধী তাদেরকে শাস্তি দেয়ার জন্য আল্লাহ এ জাহান্নাম তৈরি করেছেন।
মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন; নিশ্চয় জাহান্নাম একটি ঘাঁটি। আল্লাহদ্রোহীদের আশ্রয়স্থল। যেখানে তারা যুগযুগ ধরে অবস্থান করবে। (সূরা নাবা: ২১-২৩)
জাহান্নামের শ্রেণী বিন্যাস:
এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন; জাহান্নামের সাতটি দরজা রয়েছে। প্রত্যেকটি দরজার জন্য ভিন্ন ভিন্ন দল নির্ধারিত আছে। (সূরা হিজর: ৪৪)
জাহান্নামের সাতটি দরজার নাম হচ্ছে-; ১. হাবিয়া ২. জাহীম ৩. সাকার ৪. লাজা ৫. সাঈর ৬. হুতামাহ ও ৭. জাহান্নাম।
অপরাধের ধরণ অনুযাই অপরাধীরা বিভিন্ন স্তরে শাস্তি ভোগ করবে। যেমন- মুনাফেক, কাফের, মুশরেক, ব্যভিচারী, সুদখোর, ঘুষখোর, জালেম, আল্লাহর দ্বীন কায়েমে বাধাদানকারী ইত্যাদি সবার জন্য ভিন্ন ভিন্ন স্তরে শাস্তি নির্দিষ্ট আছে।
নবী করীম (স.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন জাহান্নাম থেকে একটি মাথা বের হবে, যার দু’টো চোখ থাকবে, যা দিয়ে সে দেখবে, তার দু’টো কান থাকবে যা দিয়ে সে শুনতে পাবে এবং একটি জিহ্বা থাকবে যা দিয়ে সে কথা বলবে। সে বলতে থাকবে- আমাকে তিন ব্যক্তির উপর প্রধান্য দেয়া হয়েছে, ১. অহঙ্কারী ও বিদ্রোহী ২. যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ইলাহ হিসেবে মনোনীত করেছে এবং ৩. চিত্রকর। (তিরমিযী)
জাহান্নামীদরে পোশাক:
আল্লাহ তা’আলা বলেন, এরা দু’টি বিবাদমান পক্ষ। তারা তাদের প্রতিপালক সম্বন্ধে বিতর্ক করে; যারা কুফরী করে তাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে আগুনের পোশাক; তাদের মাথার ওপর গরম পানি ঢালা হবে। যা দ্বারা, তাদের উদরে যা আছে তা এবং তাদের চর্ম বিগলিত করা হবে। আর তাদের থাকবে লোহার হাতুড়িসমূহ। যখনই তারা যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে জাহান্নাম থেকে বের হতে চাইবে, তখনই তাদেরকে তাতে ফিরিয়ে দেয়া হবে। (বলা হবে) দহনের শাস্তি আস্বাদন কর। (সূরা হজ: ১৯-২২)
আল্লাহ তা’আলা পোশাকের ব্যাপারে আরো বলেছেন, আলকাতরার এমন পোশাক পরিধান করানো হবে, যা আগুনে টগবগ করতে থাকবে আর দাহ্য হতে থাকবে। এরশাদ হচ্ছে- “তাদের জামা হবে আলকাতরার এবং তাদের মুখমণ্ডল আগুন আচ্ছন্ন করে রাখবে।” (সূরা ইবরাহীম: ৫০)
জাহান্নামের আবহাওয়া:
পানি টকবগে গরম; ছায়া ধুম্রকুঞ্জ; জাহান্নামের ধোঁয়া না-ঠাণ্ডা, না-সম্মানের। জাহান্নামিদের অবস্থা শোচনীয় পরাজয়ের, চূড়ান্ত অপমানজনক। তদুপরি তারা পায়ে ভর করে পঞ্চাশ হাজার বৎসর দাঁড়িয়ে থাকবে। তারা ক্ষুধা-তৃষ্ণা নিবারণের জন্য এক মুঠো খাদ্য, সামান্য পানীয় পর্যন্ত পাবে না। তাদের গর্দান পিপাসায় ভেঙে পড়ার উপক্রম হবে, ক্ষুধার তীব্রতায় কলিজায় দাহক্রিয়া আরম্ভ হবে, অতঃপর এ হালতেই তাদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এরশাদ হচ্ছে- “আগুন তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে এবং তারা সেখানে থাকবে বীভৎস চেহারায়।” (সূরা মুমিনুন: ১০৪)
জাহান্নাম খুব-ই সংকীর্ন, বিপদ সঙ্কুল, ধ্বংসের স্থান, অন্ধকারে ভরপুর, সব সময় এতে আগুন প্রজ্বলিত থাকবে, জাহান্নামিরা সর্বদা এখানেই আবদ্ধ থাকবে। পাষাণ হৃদয়, কঠোর স্বভাব, কালো ও অন্ধকারে ঢাকা চেহারা বিশিষ্ট ফেরেশতাদের মাধ্যমে, ভয়ঙ্কর পদ্ধতিতে তাদেরকে জাহান্নামের প্রবেশ দ্বারে ডাকা হবে। যাদের চেহারা দর্শন শাস্তির ওপর অতিরিক্ত শাস্তি হিসেবে গণ্য হবে। তারা কঠোর, করুণাহীন, আরো ব্যবহার করবে লৌহদণ্ড। তারা পিছন থেকে হাঁকিয়ে, ধমকিয়ে-ধমকিয়ে জাহান্নামীদের নিয়ে যাবে জাহান্নামের দিকে, অতঃপর তাকে গভীর গর্তে নিক্ষেপ করবে। সেখানে তাদের সাপে দংশন করবে, জলন্ত পোশাক পরিধান করানো হবে, তাদের কোনো ইচ্ছাই পূর্ণ হবে না, তাদের কেউ ত্রাণকর্তা থাকবে না। মাথা-পা একসাথে বাঁধা হবে, পাপের কারণে চেহারা কালো হয়ে যাবে, তারা সর্বনাশ বলে চিৎকার করবে আর মৃত্যুকে আহ্বান করতে থাকবে। তখন তাদের বলা হবে- “আজ তোমরা এক মৃত্যুকে ডেক না, অনেক মৃত্যুকে ডাক।” (সূরা ফুরকান: ১৪)
তখন তারা নিজ বিকৃত মস্তিস্কের কথা স্বীকার করবে, যে কারণে তারা আজ এ পরিস্থিতির সম্মুখিন হয়েছে। এরশাদ হচ্ছে- “তারা বলবে, যদি আমরা কর্ণপাত করতাম অথবা বুদ্ধি খাটাতাম, তাহলে আমরা জাহান্নামী হতাম না।” (সূরা মুলক: ১০) সব দিক থেকে জাহান্নাম তাদের বেষ্টন করে রাখবে। এরশাদ হচ্ছে- “তাদের নিচে থাকবে জাহান্নামের আগুনের বিছানা এবং ওপরে থাকবে আগুনের চাদর। আমি এভাবেই অত্যাচারীদের প্রতিদান দেই।” (সূরা আল আ’রাফ: ৪১) তারা যেখানে যাবে, তাদের সাথে বিছানা-চাদরও সেখানে যাবে। এরশাদ হচ্ছে- “নিশ্চয় ওর শাস্তি তো আঁকড়ে থাকার জিনিস।” (সূরা ফুরকান: ৬৫)
আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয় জাহান্নাম কাফেরদের বেষ্টনকারী।” (সূরা তাওবা: ৪৯) কোথাও পালাবার জায়গা নেই। এরশাদ হচ্ছে: “যখন তাদের চামড়া জ্বলে যাবে, আমি অন্য চামড়া দিয়ে তা পালটে দেব। যেন তারা আজাব আস্বাদান করতে পারে।” (সূরা নিসা: ৫৬) অতঃপর বলবেন: “তোমরা শাস্তি আস্বাদান কর, আমি কেবল তোমাদের শাস্তির বৃদ্ধি ঘটাব।” (সূরা নাবা: ৩০)
পৃথিবীতে জাহান্নামের মুখ
অনেকের ধারণা এই পৃথিবীতেই রয়েছে জাহান্নামের মুখ। মূলত আগ্নেয়গিরির মুখগুলোকেই জাহান্নামের মুখ বলে ধরে নেয়া হয়। তবে কেউ কেউ এগুলোকে জাহান্নামের মুখ না বলে জাহান্নামের মুখের সঙ্গে তুলনা করেন। তারই একটি হলো দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসগরীয় দ্বীপদেশ ভানুয়াতুর আগ্নেয় মেখল দ্বীপরাজি। জীবন্ত অগ্নিগিরি মাউন্ট ইয়ারুসের অগ্নুৎপাত দেখলে আপনাকে জাহান্নামের বর্ণনা মনে করিয়ে দেবে। বিশ্বের মোস্ট একসেসিবল জীবন্ত আগ্নেয়গিরি রয়েছে এ দেশে।
জাহান্নাম থেকে মুক্তির দু’আ
হে আল্লাহ আমাদের জাহান্নাম এর আজাব থেকে মুক্তি দান করুন।
মুক্তির দু’আ- (আল্লাহুম্মা আজিরনী মিনান্নার)।
হে আল্লাহ আমাদের জাহান্নাম এর আজাব থেকে মুক্তি দান করুন।
মুক্তির দু’আ- (আল্লাহুম্মা আজিরনী মিনান্নার)।
No comments:
Post a Comment