Sunday, January 17, 2016

“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” ঘোষণার শর্ত:




মুসলিমরা জানেন যে, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” ঘোষণা হলো জান্নাতের চাবিকাঠি – অনেকেই মনে করে থাকেন যে, এই ঘোষণা কেবল মুখে উচ্চারণ করলেই তারা নিশ্চিত জান্নাত লাভ করবেন। বাস্তবে মৌখিকভাবে কেবল এই ঘোষণা দেয়া জান্নাতে যাবার জন্যে পর্যাপ্ত নয়। আমরা জানি যে, মদীনার মুনাফিকরা সবাই “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” ঘোষণা দিত – তবু আল্লাহ্ বলেছেন যে, তারা জাহান্নামের নিম্নতম অংশে নিক্ষিপ্ত হবে এবং তারা হচ্ছে মিথ্যাবাদী।
যেমন অনেক ‘আলেমরাই বলে গেছেন, এই সাক্ষ্য বা ঘোষণা হচ্ছে জান্নাতের চাবি – কথাটা সত্য, কিন্তু এই ঘোষণাকে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে।
আল হাসান আল বসরী একবার এক লোককে জিজ্ঞেস করেছিলেন“তুমি মৃত্যুর জন্যে কি প্রস্তুতি গ্রহণ করেছো?” সে বলেছিল “এই ঘোষণা ও সাক্ষ্য: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’।” হাসান বসরী তাকে বলেন, “সেজন্য কিছু শর্তপূরণ করতে হবে।”
বিখ্যাত তাবেঈ ওহাব ইবন মুনাব্বিহ্কে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে “‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ ঘোষণাটা কি জান্নাতের চাবি নয়?” তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, “হ্যাঁ, তবে প্রতিটি চাবিরই খাঁজ রয়েছে – যদি সঠিক খাঁজের চাবি, তালায় লাগানো হয়, তবে (উদ্দিষ্ট) দরজা খুলে যাবে। নতুবা তা খুলবে না।” এই খাঁজের ব্যাপারটাই ঠিক করে দেবে যে, কোন কোন মুসলিম “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” ঘোষণা থেকে উপকৃত হবেন, আর কারা সারাদিনে বহুবার এই বাক্য উচ্চারণ করেও উপকৃত হবেন না।
শাহাদার শর্ত [বা condition] নিয়ে আলোচনা করার আগে, একটা বিষয় পরিস্কার করা প্রয়োজন – যে কোন বিষয়ে খণ্ডিত ভাবে কেবল ১টি আয়াত বা ১টি হাদীসের ভিত্তিতে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ [বা conclusion draw] করা উচিত নয়। ঠিক যেমন কোন ১টি হাদীস পড়ে কেউ মনে করে থাকতে পারেন যে, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” মুখে বললেই যে কেউ বেহেস্তে যেতে পারবে। বরং সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে, কোন বিষয়ের উপর যাবতীয় আয়াতসমূহ ও হাদীসসমূহ একত্রিত করে তারপর সেগুলো যাচাই করে তবে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া উচিত।
কুর’আনের আয়াত সমূহ ও হাদীস পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখলে, শাহাদার অনেক কয়টি শর্ত বা পূর্বশর্ত বেরিয়ে আসে। প্রত্যেক মুসলমানেরই উচিত, শাহাদার ঘোষণা দেয়ার সময় [বা ঘোষণা দিতে গিয়ে], তিনি সে সব শর্তগুলো নিজের জীবনে পূরণ করেছেন কি না – তা নিশ্চিত করা। আমরা ইনশা’আল্লাহ্ শাহাদার ঘোষণার জন্যে পূরণীয় শর্তগুলি পর্যায়ক্রমে আলোচনা করবো ।
প্রথম শর্ত:
শাহাদার অর্থ সম্বন্ধে যে কারো মৌলিক কোন জ্ঞান থাকাটা আবশ্যক। কারো বোঝা উচিত যে, শাহাদা কোন বিষয়কে নিশ্চিত করছে এবং কি কি বিষয়কে অস্বীকার করছে!! কুর’আনে আল্লাহ বলেন :
فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَمَثْوَاكُمْ
“সুতরাং জেনে রাখো, আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ্ নেই, মা প্রার্থনা কর তোমার এবং মু’মিন নর-নারীদের ত্র“টির জন্য। আল্লাহ্ তোমাদের গতিবিধি ও অবস্থান সম্বন্ধে সম্যক অবগত আছেন।”(সূরা মুহাম্মদ, ৪৭ : ১৯)
এবং রাসূল (সা.) বলেছেন যে, “আল্লাহ্ ছাড়া কোন উপাস্য নেই (বা ইবাদতের যোগ্য কেউ নেই – কোন ইলাহ নেই) একথা জেনে যে মৃত্যুবরণ করবে সে জান্নাতে যাবে।” (মুসলিম)
“শাহাদা” হচ্ছে “সাক্ষ্য”। কেউ যখন কোন সাক্ষ্য দেয়, তখন তাকে অবশ্যই জানতে হবে যে, সে কি সম্বন্ধে স্যা দিচ্ছে [এমনকি মিথ্যা সাক্ষী দিলেও – কোন কোর্টে যখন কোন দুষ্টব্যক্তি মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়, তখনও তাকে তার সাক্ষ্যের বিষয়বস্তু সম্বন্ধে ভালো করে জেনে নিতে হয়।]। এমন কোন কিছু – যা সম্বন্ধে তার কোন জ্ঞানই নেই – সেটা সম্বন্ধে কোন সাক্ষীর সাক্ষ্য, তা পার্থিব জীবনে যেমন কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না, তেমনি “শাহাদা”-র ব্যাপারেও সেরকমটা গ্রহণযোগ্য নয়।
আল্লাহ্ কুর’আনে আরো বলেন:
إِلَّا مَنْ شَهِدَ بِالْحَقِّ وَهُمْ يَعْلَمُونَ
“…..তবে যারা সত্য উপলব্ধি করে তার স্যা দেয় তারা ব্যতীত।” (সূরা যুখরুফ, ৪৩ : ৮৬)
দ্বিতীয় শর্ত:
“শাহাদার” বিষয়বস্তু সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া বা ইয়াক্বীন থাকা। এ ব্যাপারটা হচ্ছে, সন্দেহ ও সংশয় পোষণ করার বিপরীত ব্যাপার। আসলে ইসলামে কুর’আন ও সুন্নাহ্য় যা নিশ্চিত করা হয়েছে – সে রকম যে কোন কিছুর ব্যাপারে যে কোন রকমের সন্দেহ পোষণ করাই হচ্ছে “কুফর” [এর ব্যতিক্রম হচ্ছে এমন একটা অবস্থা, যখন কেউ জানে না যে, কোন একটা বিষয়কে কুর’আন ও সুন্নাহ্য় নিশ্চিত করা হয়েছে – এবং অজ্ঞতাবশত সে বিষয়ে সে সন্দেহ পোষণ করে। কিন্তু একবার যখন সে জানে যে, কোন একটা ব্যাপারকে কুর’আন বা সুন্নাহ্য় সুনির্দিষ্টভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে, তখন সেই ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করার, তার আর কোন অজুহাত থাকে না।] ।
“শাহাদা” ঘোষণাকারীর হৃদয়ে তাকে “শাহাদা”-র সত্যতা সম্পর্কে একদম নিশ্চিত হতে হবে। “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” সাক্ষ্য দেবার সময় তার অন্তর কোন দিক দিয়েই এর সত্যতা সম্বন্ধে সামান্যতম বিচলিত বা অনিশ্চিত হতে পারবে না। সত্যিকার বিশ্বাসী – যাদের অন্তরে কোন সংশয় থাকে না বা অন্তর বিশ্বাস জ্ঞাপন করতে গিয়ে কাঁপে না – আল্লাহ্ কুর’আনে তাদের বর্ণনা করেন:
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آَمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أُولَئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ
“তারাই মু’মিন যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনে, পরে সন্দেহ পোষণ করে না এবং জীবন ও সম্পদ দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে, তারাই সত্যনিষ্ঠ।” (সূরা হুজুরাত, ৪৯ : ১৫)
একইভাবে রাসূল (সা.) বলেছেন যে, “এমন কেউ নেই যে, ‘আল্লাহ্ ছাড়া কেউ ইবাদতের যোগ্য নয় এবং আমি আল্লাহ্র রাসূল’ এই ঘোষণা সমেত আল্লাহ্র সামনে উপস্থিত হবে এবং এই ঘোষণা সম্বন্ধে তার কোন সন্দেহ থাকবে না – অথচ সে জান্নাতে যাবে না।” (মুসলিম)
অপরপক্ষে, আল্লাহ্ মুনাফিকদের এমন সব ব্যক্তি বলে বর্ণনা করেছেন, যাদের অন্তর সন্দেহযুক্ত। উদাহরণ স্বরূপ আল্লাহ্ বলেন:
إِنَّمَا يَسْتَأْذِنُكَ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ وَارْتَابَتْ قُلُوبُهُمْ فَهُمْ فِي رَيْبِهِمْ يَتَرَدَّدُونَ
“শুধু তারাই আপনার কাছ থেকে (জিহাদে যাবার ব্যাপারে) অব্যাহতি চায়, যারা আল্লাহ্ এবং শেষ বিচারের দিনে বিশ্বাস করে না এবং যারা অন্তরে সন্দেহ অনুভব করে। আর তাই সেই সন্দেহের বশবর্তী হয়ে তারা দোদুল্যমান [দ্বিধাগ্রস্ত] হয়।” (সূরা তওবা, ৯ : ৪৫)
অনেক ‘আলেমই এ ব্যাপারে মত ব্যক্ত করেছেন যে, কারো ঈমানের জন্য তার কামনা-বাসনা বা রিপুর তাড়নার চেয়ে, তার অন্তরের রোগ – অর্থাৎ সংশয় ও সন্দেহ অনেক বেশি বিপজ্জনক। এটা এজন্য যে, কোন ব্যক্তির কামনা-বাসনা কখনো পরিতৃপ্ত হতে পারে এবং এসবের বশবর্তী থাকা অবস্থায়ও সে জানতে পারে যে এগুলো সঠিক নয়। সুতরাং কখনো সে সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হতেও পারে এবং ঐ সব কুকর্ম ছেড়ে, সে সবের জন্যে তওবা করতে পারে। অপরপক্ষে সন্দেহ ও সংশয় কারো অন্তরকে কুরে কুরে খায় এবং এভাবে চলতে থাকলে কেউ সম্পূর্ণরূপে ইসলাম ত্যাগ করতে পারে – অথবা – অন্তরে সত্য প্রতিষ্ঠিত না থাকা অবস্থায়, সে ইসলামের বাহ্যিক ব্যাপারগুলো লোক দেখানো ভাবে অনুশীলন বা সম্পাদন করে যেতে পারে।
সন্দেহের সবচেয়ে বড় ঔষধের একটি হচ্ছে জ্ঞান অর্জন । কুর’আন ও সুন্নাহর সঠিক জ্ঞান, কোন বিশ্বাসীর সকল বা বেশিরভাগ সংশয়ই দূরীভূত করে। অধ্যয়ন ও অনুধাবন করার প্রচেষ্টা থেকে কেউ নিশ্চয়তা [বা certainty ] লাভ করতে পারে। এবং কেউ যখন বেশী বেশী করে দ্বীনের উপর পড়ালেখা করে, তখন তার বিশ্বাস দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হতে থাকে।
তৃতীয় শর্ত:
জিহ্বা ও অন্তর দ্বারা “শাহাদা”র নিহিতার্থসমূহ কবুল করে নেয়া[এই শর্তটা শোনামাত্র পাঠকের মনে হতে পারে যে, প্রথম দুটো শর্ত পূরণ করার পর, আবার “কবুল” করার প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে? গ্রহণ বা কবুল করার আর কি বাকী থাকে? কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখবো যে, অনেক মানুষই শাহাদা সম্বন্ধে জ্ঞান ও তার বিষয়বস্তু সম্বন্ধে নিশ্চয়তা থাকা সত্ত্বেও, তা কবুল করতে পারে না। ] । একজন ব্যক্তি যদি “শাহাদার” প্রথম দুটো শর্ত পূরণ করে থাকে – অর্থাৎ, তার যদি নিজের দেয়া সাক্ষ্য সম্বন্ধে জ্ঞান থাকে [অর্থাৎ, সে কি সাক্ষ্য দিচ্ছে তা যদি সে জেনে থাকে] এবং তার যদি “ইয়াক্বীন” বা নিশ্চয়তা থাকে যে,“আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই” তবে ঐ “শাহাদার” নিহিতার্থসমূহও তাকে “কবুল” করতে হবে – তা না হলে সে অবিশ্বাসী বলে গণ্য হবে। অনেক সময় অহঙ্কার বা হিংসাবশত মানুষ “শাহাদার” অর্থ জানা সত্ত্বে এবং “শাহাদার” ঘোষণার বক্তব্য সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া সত্ত্বেও, তা গ্রহণ করতে পারে না [যেমন রাসূল (সা.)-এঁর যুগের অনেক ইহুদীরাই জানতো যে, তিনি যা বলছেন তা সত্য – তবু তারা তাঁর বাণীকে কবুল করতে পারেনি। উম্মুল মু’মিনীন সাফিয়া(রা.) যেমনটা বর্ণনা করেছেন যে, তার ইহুদী বাবা ও চাচার মাঝের সংলাপে তিনি জানতে পারেন যে, তারা বিশ্বাস করতেন, রাসূল (সা.) সত্য নবী । কিন্তু তিনি ইহুদী বংশোদ্ভূত নন বলে, তারা তাঁকে মানতে নারাজ ছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত তাঁকে অস্বীকার করেন। রাসূল (সা.)-এঁর চাচা আবু তালিবও সম্ভবত গোত্র ও বংশ মর্যাদাবশত তা করতে পারেন নি। আবার বর্তমান যুগে অনেক প্রাচ্য-বিশারদ(Orientalist) বা পশ্চিমা স্কলার রয়েছেন, যেমন Annemarie Schimmel, Edward Said প্রমুখ – কোনটা সত্য তা জেনে শুনেও এবং সত্যের পক্ষ অবলম্বন করে লেখালেখি করেও – যারা শেষ পর্যন্ত “শাহাদা” গ্রহণ করেননি বা করতে পারেননি। অমুসলিম হিসেবেই মৃত্যু বরণ করেছেন। ] ।
এই “কবুল” করার ব্যাপারটা হচ্ছে আসলে প্রকারান্তরে এই শর্ত যে, কুর’আনে যা কিছু আছে এবং রাসূল (সা.) যা কিছু বলেছেন – তার সবকিছুকে নিঃশর্তভাবে বিশ্বাস করা। তার নিজের যা পছন্দ হয় সেটা বিশ্বাস/গ্রহণ করবে এবং যা পছন্দ হয় না তা প্রত্যাখ্যান করবে – এমন অধিকার সংরক্ষণ না করে বিশ্বাস স্থাপন করা। কুর’আনে আল্লাহ্ বলেন :
أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ فَمَا جَزَاءُ مَنْ يَفْعَلُ ذَلِكَ مِنْكُمْ إِلَّا خِزْيٌ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّونَ إِلَى أَشَدِّ الْعَذَابِ
“…..তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশে বিশ্বাস কর এবং কিছু অংশকে প্রত্যাখ্যান কর? সুতরাং তোমাদের যারা এরকম করে তাদের একমাত্র প্রতিফল পার্থিব জীবনে হীনতা এবং কিয়ামতের দিন তারা কঠিনতম শাস্তির দিকে নিপ্তি হবে।………” (সূরা বাক্বারা, ২ : ৮৫)
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَنْ يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُبِينًا
“আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ে নির্দেশ দিলে, কোন মু’মিন পুরুষ বা কোন মু’মিন নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্তের অধিকার থাকবে না। কেউ আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলকে অমান্য করলে সে তো পথভ্রষ্ট হবে।” (সূরা আহ্যাব, ৩৩ : ৩৬)
চতুর্থ শর্ত:
“শাহাদার” চতুর্থ শর্ত হচ্ছে “আল-ইনক্বিয়াদ” বা আত্মসমর্পণ ও বাস্তবে মেনে চলা – অর্থাৎ বাহ্যত শারীরিক কাজের মাধ্যমে “শাহাদাকে” জীবনে কার্যকর করা – এটা আসলে ইসলাম শব্দের অর্থগুলির একটা: “আল্লাহর ইচ্ছা ও আদেশের কাছে আত্মসমর্পণ করা”
কুর’আনে আল্লাহ্ ঠিক এরকমই আদেশ করেছেন :
وَأَنِيبُوا إِلَى رَبِّكُمْ وَأَسْلِمُوا لَهُ
“তোমরা তোমাদের প্রতিপালকমুখী হও এবং তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ কর………..” (সূরা যুমার, ৩৯ : ৫৪)
وَمَنْ أَحْسَنُ دِينًا مِمَّنْ أَسْلَمَ وَجْهَهُ لِلَّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ
“দ্বীনে, তার চেয়ে আর কে ভালো যে সৎকর্মপরায়ণ হয়ে আল্লাহ্র কাছে আত্মসমর্পণ করে……..” (সূরা নিসা, ৪ : ১২৫)
কেউ যে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের(সা.) আদেশের কাছে নিজেকে সমর্পণ করবেন – সেটাকে আল্লাহ্ কুর’আনে ঈমানের শর্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন সূরা নিসার ৬৫ নম্বর আয়াতে:
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ
حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
“কিন্তু না, তোমার প্রতিপালকের শপথ। তারা মু’মিন হবে না যতণ পর্যন্ত তারা তাদের বিবাদ-বিসম্বাদের বিচারের ভার তোমার উপর অর্পণ না করে। তারপর তোমার সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তঃকরণে তা মেনে নেয়।” (সূরা নিসা, ৪ : ৬৫)
আমরা পরে ঈমানের আলোচনা করতে গিয়ে যেমন দেখবো: “শাহাদা” হচ্ছে ঈমানের সেই ঘোষণা বা সাক্ষী যা একজন বিশ্বাসীর অন্তরে, জিহ্বায় ও কর্মকাণ্ডে কার্যকরভাবে প্রতিফলিত হতে হবে। উদাহরণস্বরূপ কারো হৃদয়ে বা অন্তরে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা, ভীতি ও আল্লাহর কাছ থেকে প্রাপ্তির আশা থাকতে হবে। সেই একই ব্যক্তিকে জিহ্বা দ্বারা উচ্চারণ করে “শাহাদা”-র ঘোষণা দিতে হবে। এছাড়া এই ঈমানের ঘোষণা তার কাছে যে সব কার্যকলাপের দাবী রাখে, সেগুলোকেও একজন বিশ্বাসী বাস্তবে প্রয়োগ করবেন তার কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। কেউ যখন নিজেকে মুসলিম বলে দাবী করেন, অথচ সেই অনুযায়ী কোন কাজ করেন না – তখন বুঝতে হবে যে, হয় তিনি বুঝেনই না যে ইসলাম কি? আর নাহয়, তিনি নিজের বিপক্ষেই এই সাক্ষ্য রাখছেন যে, তিনি যে “শাহাদা” উচ্চারণ করছেন, তা আসলে সত্যিকার ও সঠিক ঈমানের সাক্ষ্য বা ঘোষণা নয়।
তার মানে কি এই যে, একজন সত্যিকার বিশ্বাসী একদম [perfect বা] নিখুঁত এবং কখনোই তিনি কোন পাপ করেন না? না, ব্যাপারটা তা নয়। সত্যিকার বিশ্বাসীরাও কখনো কখনো গুনাহর কাজ করে বসেন। কিন্তু যতক্ষণ তারা উপলব্ধি করেন যে, তারা যা করেছেন (অর্থাৎ ঐ পাপকর্ম) তা সঠিক নয় এবং তাদের ঐ কাজ আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পণ করার যে বাধ্যবাধকতা তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় – ততক্ষণ তারা তাদের “শাহাদার” শুদ্ধতাকে নষ্ট করেননি বা তাদের “শাহাদা”কে অর্থহীনতায় পরিণত করেননি বলে বলতে হবে [এখানে একটা উদাহরণ দেয়া যায়: আল্লাহ্ মদ হারাম করেছেন। এখন কেউ যদি বিশ্বস করে যে, মদ হারাম হবার কোন কারণ নেই বরং মদ নিষিদ্ধ করাটা সঠিক হয়নি তবে তার শাহাদার শুদ্ধতা নষ্ট হয়ে যাবে এবং তাকে “কাফির” বলে গণ্য করা হবে – অথচ ব্যক্তিগতভাবে সে হয়তো কখনো মদ ছুঁয়েও দেখেনি। আবার এমন কোন ব্যক্তি, যে অভ্যাসবশত মদ খায়, কিন্তু সে সব সময়ই বিশ্বাস করে যে, মদ বাস্তবিকই হারাম এবং সে একটা গর্হিত কাজ করছে – এক্ষেত্রে তাকে “ফাসিক” বলা হবে, কিন্তু তার ঈমান নষ্ট হয়ে গেছে বলে মনে করা হবে না। স্কলাররা এ প্রসঙ্গে দুই ধরনের কুফরের কথা বলেছেন। Kufr of Belief এবং Kufr of Action । প্রথমটিতে লিপ্ত হলে যে কেউ কাফির হয়ে যায় – আর দ্বিতীয়টিতে লিপ্ত হলেও, সে তথাপি ইসলামের গন্ডির মাঝেই থাকতে পারে। তবে কোন কোন Action আছে, যা সরাসরি কাউকে ”মুরতাদ” বানিয়ে দেয়, যেমন: আল্লাহ বা তাঁর রাসূলকে(সা.) গালি দেয়া – এক্ষেত্রে কারো মনে কি ছিল তা আর বিচার্য নয়। ]
৫ম শর্ত:
শাহাদার ৫ম শর্ত হচ্ছে সততা বা বিশ্বস্ততা – যা এখানে মুনাফিকী ও অসৎ চিত্তের বিপরীত অর্থ বহন করবে। এর অর্থ হচ্ছে, কেউ যখন “শাহাদা” উচ্চারণ করবে, তখন সে সত্যিই তা [mean করবে বা] বোঝাবে এবং তা mean করেই অন্তরের সার্বিক বিশ্বস্ততা সহকারে তা উচ্চারণ করবে [আমি একটা পশ্চিমা বইয়ে এই ব্যাপারটার একটা চমৎকার উদাহরণ সম্বন্ধে পড়েছিলাম। একজন সাদা-চামড়া পশ্চিমা অস্ত্র-ব্যবসায়ী ২০০১ সালের পট পরিবর্তনের পূর্ব পর্যায়ের আফগানিস্তানে গিয়েছিল কালোবাজারে অস্ত্র বিক্রির ব্যবস্থা করতে। হঠাৎই ওখানকার মুসলিম যোদ্ধারা তাকে ”কাফির” গুপ্তচর ভেবে মেরে ফেলবে কিনা তা নিয়ে নিজেদের মাঝে আঞ্চলিক ভাষায় আলোচনা শুরু করে – যা লোকটি তাদের ভাষা জানার সুবাদে বুঝতে পারে। সে তার প্রাণ বাঁচাতে সাথে সাথে “শাহাদা” উচ্চারণ করলে, ঐ যোদ্ধাদের মাঝে তা যাদু মন্ত্রের মত কাজ করে।] ।
অর্থাৎ “শাহাদা” উচ্চারণকারী কাউকে প্রতারণা করতে বা বোকা বানাতে মিথ্যা মিথ্যা কেবল একটা “বুলি” উচ্চারণ করবে না।
এ সম্বন্ধে রাসূল (সা.) বলেছেন : “এমন কেউ নেই যে, সে বিশ্বস্ততা সহকারে তার অন্তর থেকে সাক্ষ্য দিয়েছে যে, আল্লাহ্ ছাড়া উপাসনার (বা ইবাদতের) যোগ্য আর কেউ নেই – অথচ আল্লাহ্ তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম করেন নি।” (বুখারী)
আমাদের বেশির ভাগই হয়েতো এমন সব মানুষজনের কথা জানি, যারা “শাহাদা” উচ্চারণ করে অথচ তা বিশ্বস্ততার সাথে উচ্চারণ করে না। আসলে তারা “শাহাদার” বক্তব্যে [বা statement-এ] বিশ্বাসই করে না। তারা কেবল নিজেকে কিছু থেকে রক্ষা করতে বা কিছু লাভ করতে তা উচ্চারণ করে থাকে। এরাই হচ্ছে সত্যিকার অর্থে “মুনাফিক” যাদের কথা কুর’আনের শুরুতে আল্লাহ বলেছেন :
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَقُولُ آَمَنَّا بِاللَّهِ وَبِالْيَوْمِ الْآَخِرِ وَمَا هُمْ بِمُؤْمِنِينَ (8) يُخَادِعُونَ اللَّهَ وَالَّذِينَ آَمَنُوا وَمَا يَخْدَعُونَ إِلَّا أَنْفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُونَ (9) فِي قُلُوبِهِمْ مَرَضٌ فَزَادَهُمُ اللَّهُ مَرَضًا وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ بِمَا كَانُوا يَكْذِبُونَ
“আর মানুষের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে যারা বলে ‘আমরা আল্লাহ্ ও আখেরাতে ঈমান এনেছি’, কিন্তু তারা মু’মিন না। আল্লাহ ও মু’মিনদের তারা প্রতারণা করতে চায়। অথচ তারা যে কেবল নিজেদের ছাড়া আর কাউকে প্রতারণা করছে না, এটা তারা বুঝতে পারে না। তাদের অন্তরে অসুখ রয়েছে। অতঃপর আল্লাহ্ তাদের অসুখ বাড়িয়ে দিয়েছেন, তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি, কারণ তারা মিথ্যাবাদী।” (সূরা বাক্বারা, ২ : ৮-১০)
যারা এজন্য শাহাদা উচ্চারণ করে যে, তারা তাদের মুসলিম হওয়া থেকে লাভবান হতে চায় এবং এজন্য নয় যে, তারা সত্যি সত্যি ইসলামে বিশ্বাস করে – তাদের সেই “শাহাদা” আখেরাতে আল্লাহ্ প্রত্যাখ্যান করবেন। তাদের মিথ্যাচারের জন্য তারা কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে।
ষষ্ঠ শর্ত:
ষষ্ঠ শর্ত হচ্ছে, কেবল মাত্র আল্লাহর জন্য – ইখলাস সহকারে শাহাদা উচ্চারণ করা। এক্ষেত্রে তার উদ্দেশ্যের সাথে আর কোন উদ্দেশ্য মিশ্রিত থাকবে না। এবং এখানে ইখলাসের বিশুদ্ধতা বলতে আমরা বুঝাচ্ছি শিরকের বিপরীত ব্যাপার। অর্থাৎ, কেউ কেবল আল্লাহর কথা ভেবেই মুসলিম হয় এবং মুসলিম থাকে। তাঁর ক্রোধ ও শাস্তি এড়িয়ে চলার জন্য এবং তাঁর রহমত ও পুরস্কার লাভ করার জন্য। আল্লাহ্ কুর’আনে বলেন :
فَاعْبُدِ اللَّهَ مُخْلِصًا لَهُ الدِّينَ
“…..দ্বীনকে তাঁর জন্য বিশুদ্ধ বানিয়ে আল্লাহর ইবাদত কর।”(সূরা যুমার, ৩৯ : ২)
وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ
“তাদেরকে তো এছাড়া আর কোন হুকুম দেয়া হয়নি যে, তারা নিজেদের দ্বীনকে একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করবে, সালাত কায়েম করবে ও যাকাত দেবে, এটিই যথার্থ সত্য ও সঠিক দ্বীন।” (সূরা বাইয়্যেনাহ, ৯৮ : ৫)
এছাড়া রাসূল(সা.) বলেছেন: “এমন কেউ যে বলে, ‘আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন ইলাহ্ নেই’ এবং যে তা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে বলে – আল্লাহ্ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দিয়েছেন।”(মুসলিম)
যেসব মুসলিম একটি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন ও বড় হয়েছেন, তাদের এই ব্যাপারটা নিয়ে বিশেষভাবে ভাবা উচিত।পিতামাতার জন্য, পরিবারের জন্য, বন্ধুদের জন্য, সম্পদের জন্য অথবা অন্য যে কোন পার্থিব লক্ষ্যের জন্য মুসলিম না হয়ে প্রত্যেকের নিজের অন্তরে এই ব্যাপারটা পরিস্কার হওয়া উচিত যে, তিনি কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য মুসলিম। তার মুসলিম হওয়ার শুরু আল্লাহর জন্য ও শেষও কেবল আল্লাহর জন্য।
সপ্তম শর্ত:
শাহাদার সপ্তম শর্ত হচ্ছে এই সাক্ষ্যকে মনে প্রাণে ভালবাসা। যে শাহাদাকে ভালোবাসবে – সে, এই শাহাদা অনুসারে সব কিছুকে [মূল্যায়ন করবে বা] ভালবাসবে, এই শাহাদার নিহিতার্থ ও করণীয়সমূহকে ভালবাসবে এবং সেই সমস্ত মানুষকেও ভালবাসবে, যারা এই শাহাদা অনুযায়ী জীবনযাপন করেন এবং এর অর্থ প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেন। এটা শাহাদার একটি পূরণীয় শর্ত। একজন মানুষ যদি শাহাদা উচ্চারণ করে, অথচ এই সাক্ষ্য যা কিছুর প্রতিনিধিত্ব করে সেসবকে ভাল না বাসে, তবে বলতে হবে যে, তার ঈমান অপূর্ণ এবং তাকে সত্যিকার বিশ্বাসী বলা যাবে না। সে যদি শাহাদা ভাল না বাসে, অথবা, যদি এর বক্তব্যের প্রতি ঘৃণা পোষণ করে, তবে বলতে হবে যে, সে শাহাদাকে অস্বীকারই করলো। পবিত্র কুর’আনে আল্লাহ্ বলেন :
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَتَّخِذُ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَنْدَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللَّهِ وَالَّذِينَ آَمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِلَّهِ
“তবু মানুষের মাঝে কেউ কেউ আল্লাহ্ ছাড়া অন্যকে আল্লাহর সমকক্ষ হিসাবে গ্রহণ করে এবং আল্লাহকে ভালবাসার মত করে তাদের ভালবাসে। কিন্তু যারা ঈমান এনেছে, তারা আল্লাহর প্রতি ভালবাসায় সুদৃঢ়….।” (সূরা বাক্বারা, ২ : ১৬৫)
এছাড়া সূরা তওবার ২৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্ পার্থিব ব্যাপারসমূহকে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল ও জিহাদের চেয়ে বেশি ভালবাসার ব্যাপারে সবাইকে সাবধান করেছেন:
قُلْ إِنْ كَانَ آَبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُمْ مِنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُوا حَتَّى يَأْتِيَ اللَّهُ بِأَمْرِهِ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ
“বল, ‘তোমাদের কাছে যদি আল্লাহ্, তাঁর রাসূল এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করা অপেক্ষা তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভ্রাতা, তোমাদের পত্নী, তোমাদের গোষ্ঠী, তোমাদের অর্জিত সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য যার মন্দা পড়ার তোমরা আশঙ্কা কর এবং তোমাদের বাসস্থান যা তোমরা ভালোবাসো – এসব বেশী প্রিয় হয়, তবে অপক্ষো কর আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত।’ আল্লাহ্ সত্যত্যাগী সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করেন না।” (সূরা তওবা, ৯:২৪)
রাসূল (সা.) বলেছেন, “যার ভিতর তিনটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে সে ঈমানের মিষ্টি স্বাদ লাভ করেছে। (যার প্রথমটি হচ্ছে) সে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে যে কারো চেয়ে বেশি ভালবাসে …………….।” (বুখারী ও মুসলিম)
অষ্টম শর্ত:
শাহাদার অষ্টম শর্ত হচ্ছে অন্য সকল উপাস্যকে অস্বীকার করা।এটা যদিও শাহাদার কথাতেই স্পষ্ট, তবু অনেকে শাহাদা উচ্চারণ করলেও, এ ব্যাপারটা সম্বন্ধে পরিস্কার ধারণা পোষণ করেন না। সেজন্যই দেখা যায় অনেকে আল্লাহর ইবাদত করেন এবং পাশাপাশি অন্যান্য শাফায়াতকারীর শরণাপন্ন হন। শাহাদা কেবল নিশ্চয়তাকারী একটি ঘোষণা নয়, বরং অন্য উপাস্যদের অস্বীকারকারী একটি ঘোষণা, যেটা আল্লাহ্ সূরা বাকারার ২৫৬নং আয়াতে মনে করিয়ে দেন:
فَمَنْ يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِنْ بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَى لَا انْفِصَامَ لَهَا
“…..যে তাগুতকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহ্য় ঈমান আনবে, সে এমন এক মজবুত হাতল ধরবে যা কখনো ভাঙ্গবে না………।” (সূরা বাক্বারা, ২:২৫৬)
[আমাদের দেশে বিভিন্ন পীরের খানকায় বসে মানুষ একাধারে যেমন “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” যিকির করে, তেমনি জীবিত/মৃত পীর বা দরবেশের কৃপা ভিক্ষা করতে থাকে। এসব স্পষ্টতই উপরোক্ত শর্তের পরিপন্থী কাজ।]
এছাড়া রাসূল(সা.) বলেছেন: “যে বলে যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই এবং আল্লাহ্ ছাড়া যা কিছুর উপাসনা করা হয় তা অস্বীকার করে – তার সম্পদ ও রক্ত নিরাপদ এবং তার হিসাব হবে আল্লাহর সাথে।” (মুসলিম)
আমি বার বার মুসলিম ভাই-বোনদের কাছে তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি যে, সাধারণভাবে যে কোন মানুষের, আর বিশেষভাবে ”দ্বীন-ইসলামের” অনুসারীদের, অর্থাৎ আমাদের, মুসলিমদের, জন্য ”বিশ্বাস” একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় – সব কিছুর আগে বিশ্বাসটা ঠিক করতে হবে। বিশ্বাস হতে হবে জ্ঞান-ভিত্তিক – যে জ্ঞানের ভিত্তি হবে ”অহী” তথা text বা ”নস্” – সংস্কার বা উত্তরাধিকার ভিত্তিক নয়। আমি এও বলতে ও বোঝাতে চেষ্টা করেছি যে, বিশ্বাসের ব্যাপার হচ্ছে function-এর মত। আপনার সকল কর্ম-কান্ড হচ্ছে আপনার বিশ্বাসের function বা variable। যে ব্যক্তির সাপ সম্বন্ধে জ্ঞান নেই, যে কখনো সাপ দেখেনি বা আরো সহজ ভাবে বলতে গেলে “যার মনে বিশ্বাস নেই যে, সাপ একটা বিষধর বা বিপজ্জনক প্রাণী” – সে সাপকে ঐ ধরনের গুরুত্ব দেবে না, যে ধরনের গুরুত্ব দেবে এমন মানুষ, যে কি না চোখের সামনে কাউকে সাপে কামড়ে দেবার পর মরতে দেখেছে! মক্কার মসজিদুল হারামে ১ রাকাত সালাতের সওয়াব, অনত্র ১ লক্ষ রাকাত সালাতের সওয়াবের সমান! কিন্তু ধরুন, কেউ যদি সারাজীবনও সেখানে অজু ছাড়া সালাত আদায়

No comments:

Post a Comment