
উত্তর : সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
ছুটে যাওয়া সালাতের ক্ষেত্রে তিনটি অবস্থা হতে পারে :
•৷• •৷• প্রথম অবস্থা :
ঘুম বা ভুলে যাওয়ার কারণে সালাত ছুটে যাওয়া। এ অবস্থায় তার উপর কাযা করা ওয়াজিব। এর দলীল রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী :
“যে সালাত আদায় করতে ভুলে যায় বা সে সময় ঘুমিয়ে থাকায় তা ছুটে যায়, তার কাফফারাহ হলো সে যখনই তা মনে করবে তখনই (সাথে সাথে) সালাত আদায় করে নিবে।” [বুখারী (৫৭২) ও মুসলিম (৬৮৪)। (শব্দ চয়ন) সহীহ মুসলিমের]
এবং সে তা ধারাবাহিকভাবে আদায় করবে যেমনটি তার উপর ফরয হয়েছে, প্রথমটি প্রথমে করবে। এর দলীল জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ এর হাদীস -
“উমার ইবনুল খাত্তাব-রাদিয়াল্লাহু-‘আনহু-খানদাকের যুদ্ধের দিন সূর্যাস্তের পর এসে ক্বুরাইশ কাফিরদের গালি দিতে লাগলেন, তিনি বললেন : “হে রাসূলুল্লাহ, আমি ‘আসরের সালাত আদায় করতে যেতে যেতে সূর্য ডুবে যেতে লাগল !”
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া-সাল্লাম বললেন : “আল্লাহর শপথ, আমিও এর (‘আসরের) সালাত আদায় করি নি।” এরপর আমরা বাত্বহান-এ দাঁড়ালাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া-সাল্লাম সালাতের জন্য ওযু করলেন, আমরাও সালাতের জন্য ওযু করলাম।
এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া-সাল্লাম সূর্য অস্ত যাওয়ার পর ‘আসরের সালাত আদায় করলেন, এরপর মাগরিব এর সালাত আদায় করলেন।” [বুখারী (৫৭১) ও মুসলিম (৬৩১)]
•৷• •৷• দ্বিতীয় অবস্থা:
এমন ‘উযরের কারণে সালাত ছুটে যাওয়া, যে সময় কোনো হুঁশ থাকে না, যেমন- কোমা। এ অবস্থার ক্ষেত্রে তার উপর থেকে সালাত (আদায়ের দায়িত্ব) উঠে যায় এবং তার উপর তা কাযা করা ওয়াজিব হয় না।
ফাতওয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ‘আলিমগণকে
এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়েছিল :
এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়েছিল :
আমার এক গাড়ির দুর্ঘটনা ঘটেছিল, ফলে তিন মাস হাসপাতালে শুয়ে ছিলাম, এ সময়ে আমার কোনো হুঁশ ছিল না। এ পুরো সময় আমি কোনো সালাত আদায় করি নি। আমার উপর থেকে কি তা (সালাত আদায়ের দায়িত্ব) উঠে যাবে নাকি পূর্বের সব (ছুটে যাওয়া) সালাত পুনরায় আদায় করব?
তাঁরা উত্তরে বললেন :
“উল্লেখিত সময়ের সালাত [কাযা আদায়ের দায়িত্ব] আপনার থেকে ছুটে যাবে; কারণ আপনার তখন কোনো হুঁশ ছিল না।”
“উল্লেখিত সময়ের সালাত [কাযা আদায়ের দায়িত্ব] আপনার থেকে ছুটে যাবে; কারণ আপনার তখন কোনো হুঁশ ছিল না।”
তাঁদেরকে আরও প্রশ্ন করা হয়েছিল:
যদি কেউ এক মাস অজ্ঞান অবস্থায় থাকে আর এ পুরো মাস কোনো সালাত আদায় না করে, তবে সে কীভাবে ছুটে যাওয়া সালাত পুনরায় আদায় করবে?
যদি কেউ এক মাস অজ্ঞান অবস্থায় থাকে আর এ পুরো মাস কোনো সালাত আদায় না করে, তবে সে কীভাবে ছুটে যাওয়া সালাত পুনরায় আদায় করবে?
তাঁরা উত্তরে বলেন:
“এ সময়ে যে সালাতসমূহ বাদ গিয়েছে তা কাযা করবে না, কারণ সে উল্লেখিত অবস্থায় পাগলের হুকুমের মধ্যে পড়ে। আর পাগল ব্যক্তির জন্য কলম উঠানো হয়েছে (অর্থাৎ তার উপর শারী‘আতের বিধি-বিধান প্রযোজ্য নয়)।”
“এ সময়ে যে সালাতসমূহ বাদ গিয়েছে তা কাযা করবে না, কারণ সে উল্লেখিত অবস্থায় পাগলের হুকুমের মধ্যে পড়ে। আর পাগল ব্যক্তির জন্য কলম উঠানো হয়েছে (অর্থাৎ তার উপর শারী‘আতের বিধি-বিধান প্রযোজ্য নয়)।”
[ফাত্ওয়া আল-লাজ্নাহ আদ-দা’ইমাহ (৬/২১)]
•৷• •৷• তৃতীয় অবস্থা:
ইচ্ছাকৃতভাবে কোন ‘উযর (অজুহাত) ছাড়া সালাত ত্যাগ করা, আর তা কেবল দুই ক্ষেত্রেই হতে পারে:
এক:
সে যদি সালাতকে অস্বীকার করে, এর ফরয হওয়াকে মেনে না নেয়, তবে সে লোকের কুফরের ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই। কারণ সে ইসলামের ভিতরে নেই। তাকে (আগে) ইসলামে প্রবেশ করতে হবে, এরপর এর আরকান ও ওয়াজিবসমূহ পালন করতে হবে।
সে যদি সালাতকে অস্বীকার করে, এর ফরয হওয়াকে মেনে না নেয়, তবে সে লোকের কুফরের ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই। কারণ সে ইসলামের ভিতরে নেই। তাকে (আগে) ইসলামে প্রবেশ করতে হবে, এরপর এর আরকান ও ওয়াজিবসমূহ পালন করতে হবে।
আর কাফির থাকা অবস্থায় যে সালাত ত্যাগ করেছে তার কাযা করা তার উপর ওয়াজিব নয়।
দুই:
সে যদি অবহেলা বা অলসতাবশত সালাত ত্যাগ করে, তবে তার কাযা শুদ্ধ হবে না। কারণ সে যখন তা ত্যাগ করেছিল, তখন তার কোন গ্রহণযোগ্য‘উযর (অজুহাত) ছিল না।
সে যদি অবহেলা বা অলসতাবশত সালাত ত্যাগ করে, তবে তার কাযা শুদ্ধ হবে না। কারণ সে যখন তা ত্যাগ করেছিল, তখন তার কোন গ্রহণযোগ্য‘উযর (অজুহাত) ছিল না।
আর আল্লাহ সালাতকে সুনির্ধারিত, সুনির্দিষ্ট এক সময়ে ফরয করেছেন। আল্লাহ্ সুবহানুহূ ওয়া তা‘আলা বলেছেন :
“নিশ্চয়ই নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করা মু’মিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য।” [আন-নিসা: ১০৩]
অর্থাৎ এর সুনির্দিষ্ট সময় আছে। এর দলীল হলো রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাণী:
“যে এমন কোন কাজ করে যা আমাদের (শারী‘আত এর) অন্তর্ভুক্ত নয়, তবে তা প্রত্যাখ্যাত।” [এটি বর্ণনা করেছেন আল-বুখারী (২৬৯৭) ও মুসলিম (১৭১৮)]
:::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
শাইখ ‘আব্দুল ‘আযীয ইবনু বায-রাহিমাহুল্লাহ-কে
প্রশ্ন করা হয়েছিল :
:::::::::::::::::::::::::::
আমি ২৪ বছর বয়সের আগে সালাত আদায় করি নি। এখন আমি প্রতি ফরয সালাত এর সাথে আরেকবার ফরয সালাত আদায় করি। আমার জন্য কি তা করা জায়েয (বৈধ)? আমি কি এভাবেই চালিয়ে যাব নাকি আমার উপর অন্য কোন করণীয় আছে?
:::::::::::::::::
তিনি বলেন :
“যে ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত ত্যাগ করে, সঠিক মতানুসারে তার উপর কোনো কাযা নেই। বরং তাকে আল্লাহ তা‘আলার কাছে তাওবাহ করতে হবে; কারণ সালাত ইসলামের স্তম্ভ, তা ত্যাগ করা ভয়াবহ অপরাধসমূহের একটি। বরং ইচ্ছাকৃতভাবে তা (সালাত) ত্যাগ করা ‘বড় কুফর’ যা‘আলিমগণের দুটি মতের মধ্যে সবচেয়ে সঠিকটি,
..........
কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে প্রমাণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন :
......................
“আমাদের ও তাদের (কাফেরদের) মাঝে চুক্তি হলো সালাত; তাই যে তা ত্যাগ করে, সে কাফের হয়ে গেলো।” [ইমাম আহমাদ ও সুনানের সংকলকগণ সহীহ ইসনাদ সূত্রে বুরাইদাহ-রাদিয়াল্লাহু আনহু-হতে বর্ণনা করেছেন]
শাইখ ‘আব্দুল ‘আযীয ইবনু বায-রাহিমাহুল্লাহ-কে
প্রশ্ন করা হয়েছিল :
:::::::::::::::::::::::::::
আমি ২৪ বছর বয়সের আগে সালাত আদায় করি নি। এখন আমি প্রতি ফরয সালাত এর সাথে আরেকবার ফরয সালাত আদায় করি। আমার জন্য কি তা করা জায়েয (বৈধ)? আমি কি এভাবেই চালিয়ে যাব নাকি আমার উপর অন্য কোন করণীয় আছে?
:::::::::::::::::
তিনি বলেন :
“যে ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত ত্যাগ করে, সঠিক মতানুসারে তার উপর কোনো কাযা নেই। বরং তাকে আল্লাহ তা‘আলার কাছে তাওবাহ করতে হবে; কারণ সালাত ইসলামের স্তম্ভ, তা ত্যাগ করা ভয়াবহ অপরাধসমূহের একটি। বরং ইচ্ছাকৃতভাবে তা (সালাত) ত্যাগ করা ‘বড় কুফর’ যা‘আলিমগণের দুটি মতের মধ্যে সবচেয়ে সঠিকটি,
..........
কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে প্রমাণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন :
......................
“আমাদের ও তাদের (কাফেরদের) মাঝে চুক্তি হলো সালাত; তাই যে তা ত্যাগ করে, সে কাফের হয়ে গেলো।” [ইমাম আহমাদ ও সুনানের সংকলকগণ সহীহ ইসনাদ সূত্রে বুরাইদাহ-রাদিয়াল্লাহু আনহু-হতে বর্ণনা করেছেন]
আর রাসূল-সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী :
“একজন ব্যক্তি এবং শিরক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হলো সালাত ত্যাগ করা।” [ইমাম মুসলিম তাঁর সহীহ গ্রন্থে জাবির ইবনু ‘আব্দিল্লাহ-রাদ্বিয়াল্লাহু‘আনহুমা-থেকে বর্ণনা করেছেন।
সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ে এ ব্যাপারে আরও অনেক হাদীস রয়েছে, যাতে এ ব্যাপারে ইঙ্গিত পাওয়া যায়]
এক্ষেত্রে ভাই আপনার উপর কর্তব্য হলো আল্লাহর নিকট সত্যিকার অর্থে তাওবাহ করা। আর তা হলো-(১) পূর্বে যা গত হয়েছে তার ব্যাপারে অনুতপ্ত হওয়া; (২) আর কখনো সালাত ত্যাগ না করা; এবং (৩) এ মর্মে দৃঢ় সংকল্প করা যে, এ কাজে আপনি আর কখনও ফিরে যাবেন না।
আর আপনাকে প্রতি সালাতের সাথে বা অন্য সালাতের সাথে কাযা করতে হবে না, বরং আপনাকে শুধু তাওবাহ করতে হবে। আর সকল প্রশংসা আল্লাহর। যে তাওবাহ করে আল্লাহ তার তাওবাহ কবুল করেন। আল্লাহ -সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা- বলেছেন:
“হে মু’মিনগণ তোমরা সবাই আল্লাহর নিকট তাওবাহ করো,যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।” [আন-নূর : ৩১]
আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
“পাপ থেকে তাওবাহকারী এমন ব্যক্তির ন্যায় যার কোন পাপই নেই।” ইবন মাজাহ: হাদীস নং ৪২৫০।
“পাপ থেকে তাওবাহকারী এমন ব্যক্তির ন্যায় যার কোন পাপই নেই।” ইবন মাজাহ: হাদীস নং ৪২৫০।
তাই আপনাকে সত্যিকার অর্থে তাওবাহ করতে হবে, নিজের নাফসের সাথে হিসাব-নিকাশ করতে হবে, সঠিক সময়ে জামা‘আতের সাথে সালাত আদায়ের ব্যাপারে সদা-সচেষ্ট থাকতে হবে, আপনার দ্বারা যা যা হয়েছে সে ব্যাপারে আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে হবে এবং বেশি বেশি ভাল কাজ করতে হবে।
আর আপনাকে কল্যাণের সুসংবাদ জানাই, আল্লাহ-সুবহানাহূ ওয়া তা‘আলা -বলেছেন :
“আর যে তাওবাহ করে, ঈমান আনে, সৎকর্ম করে এবং হিদায়াতের পথ অবলম্বন করে, নিশ্চয়ই আমি তার প্রতি ক্ষমাশীল।” [ত্বাহা : ৮২]
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
সূরা আল-ফুরক্বান-এ শিরক, হত্যা, যিনা (ব্যভিচার) উল্লেখ করে
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন :
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
সূরা আল-ফুরক্বান-এ শিরক, হত্যা, যিনা (ব্যভিচার) উল্লেখ করে
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন :
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
“আর যে তা করল সে পাপ করল, ক্বিয়ামাতের দিন তার শাস্তি দ্বিগুণ করে দেয়া হবে এবং সে সেখানে অপমানিত অবস্থায় চিরকাল অবস্থান করবে,তবে সে ছাড়া যে তাওবাহ করেছে, ঈমান এনেছে এবং ভাল কাজ করেছে; আল্লাহ তাদের খারাপ কাজ সমূহকে ভাল কাজে পরিবর্তন করে দিবেন। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ মহা ক্ষমাশীল, পরম দয়াময় ।” [আল-ফুরক্বান : ৬৯-৭০]
আমরা আল্লাহ’র কাছে চাই আমাদের ও আপনার জন্য তাওফীক্ব, বিশুদ্ধ তাওবাহ ও কল্যাণের পথে অবিচলতা।” [মাজমূ‘ফাত্ওয়া আশ-শাইখ ইবন বায (১০/৩২৯,৩৩০)]
আল্লাহ্ তাআলা আমাদেরকে হেদায়াত দান করুন এবং সময় মত ৫ ওয়াক্ত নামায সহিহ হাদিস অনুসারে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর তরীকায় আদায় করার তওফিক দান করুন। আমিন।
No comments:
Post a Comment