Monday, May 9, 2016

তাকদীর আল্লাহ লিখে দিয়েছেন, তাহলে বান্দার দোষ কি?




এটা কাফেরদের কথা ছিলো, তারা কোনো খারাপ কাজ করে বলতো আল্লাহ এটা চেয়েছেন তাই আমরা অমুক কাজটা করেছি (নাউযুবিল্লাহ), এর দ্বারা আসলে তারা নিজেদের পাপ কাজকে আল্লাহর উপর চাপিয়ে দিয়ে দায়িত্ব এড়াতো চাইতে। ইতিহাসে প্রথম এই কাজটা করেছিলো ইবলিশ শয়তান। শয়তান নিজের ইচ্ছায় আল্লাহর আদেশ লংঘন করে পথভ্রষ্ট হয়, এর পরেও সে তোওবা না করে উলটা অহংকার প্রদর্শন করে এবং আল্লাহকেই এর জন্য দায়ী করে। 
_____________________
দেখুন শয়তান কি বলছে –
“সে (ইবলিশ) বললঃ হে আমার পলনকর্তা! আপনি যেমন আমাকে পথ ভ্রষ্ট করেছেন, আমিও তাদের (আদম ও তার সন্তানদেরকে) সবাইকে পৃথিবীতে নানা সৌন্দর্যে আকৃষ্ট করব এবং তাদের সবাইকে পথ ভ্রষ্ঠ করে দেব।” সুরা আল-হিজরঃ ৩৯।
_____________________
মক্কার কাফের মুশরেকরাও শিরক ও পাপাচার করে আল্লাহর উপর চাপিয়ে দিতোঃ
“এখন মুশরেকরা বলবেঃ যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন, তবে না আমরা শিরক করতাম, না আমাদের বাপ দাদারাও শিরক করতো এবং না আমরা কোন (হালাল) বস্তুকে হারাম করতাম। এমনিভাবে তাদের পূর্ববর্তীরা মিথ্যারোপ করেছে, এমন কি তারা আমার শাস্তি আস্বাদন করেছে। আপনি বলুনঃ তোমাদের কাছে কি কোন প্রমাণ আছে যা আমাদেরকে দেখাতে পার? তোমরা শুধুমাত্র আন্দাজের অনুসরণ কর এবং তোমরা শুধু অনুমান করে কথা বল।”
সুরা আল-আনআ’মঃ ১৪৮।
_____________________
এখানে কাফেররা শিরক করা অবস্থায় দাবী করতো, আল্লাহ ইচ্ছায় আমরা শিরক করছি। আল্লাহ তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলে ঘোষনা করে বলেছেন, এদের পূর্ববর্তীরাও আল্লাহর উপর এমন মিথ্যা আরোপ করার কারণে শাস্তি পেয়েছিলো।
_____________________
‪#‎বাস্তব‬ উদাহরণঃ
কারো জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে, সুখ, দুঃখ, রিযিক...সব কিছুই তাকদীর বা আল্লাহর লিখিত বিষয়। কিন্তু কেউ যদি আত্মহত্যা করে এটাও কি তার তাকদীরের অংশ?
_____________________
উত্তরঃ হ্যা, এটাও তাকদীরের অংশ।
তাহলে বান্দার কি দোষ?
উত্তরঃ তাকদীরের অংশ কথাটার অর্থ হচ্ছে – সে ইচ্ছা করেছে আর আল্লাহ তার এই ইচ্ছায় বাঁধা দেন নি, সে যা করতে চেয়েছে আল্লাহ সেটাতে ইচ্ছা করেছেন এবং লাওহে মাহফুজে যেখানে সমস্ত কিছু লিপিবদ্ধ আছে সেখানে তা লিখে রেখছেন। কিন্তু এটা তার উপর আল্লাহ চাপিয়ে দেননি। বরং তাকে আল্লাহ আদেশ করেছেন - আত্মহত্যা করোনা – এটা মহাপাপ!!!
_____________________
মহান আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন,
“তোমরা নিজেদের জীবন ধ্বংস করে দিওনা।”
সুরা আল-বাক্বারাহঃ ১৯৫।
_____________________
মহান আল্লাহ রাববুল আলামীন আরো বলেন,
“আর তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু। এবং যে কেউ জুলুম করে, অন্যায়ভাবে উহা (আত্মহত্যা) করবে, অবশ্য আমি তাকে অগ্নিদগ্ধ করবো, আল্লাহর পক্ষে উহা সহজসাধ্য।” (সূরা-নিসা-২৯-৩০)
_____________________
যারা আল্লাহর এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এই কাজ করবে তাদের শাস্তি কি সে সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
ক) সাহাবা আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজেকে পাহাড়ের ওপর থেকে নিক্ষেপ করে আত্মহত্যা করে, সে জাহান্নামের মধ্যে সর্বদা ঐভাবে নিজেকে নিক্ষেপ করতে থাকবে।
খ) যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করেছে সেও জাহান্নামের মধ্যে সর্বদা ঐভাবে নিজ হাতে বিষপান করতে থাকবে।
_____________________
গ) যে কোন ধারালো অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করেছে তার কাছে জাহান্নামে সে ধারালো অস্ত্র থাকবে যার দ্বারা সে সর্বদা নিজের পেটকে ফুঁড়তে থাকবে।
ঘ) রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে সে দোজখে অনুরূপভাবে নিজ হাতে ফাঁসির শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। আর যে বর্শা ইত্যাদির আঘাত দ্বারা আত্মহত্যা করে- দোজখেও সে সেভাবে নিজেকে শাস্তি দেবে।
_____________________
ঙ) হযরত জুনদুব ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তোমাদের পূর্বেকার এক লোক আহত হয়ে সে ব্যথা সহ্য করতে পারেনি। তাই সে একখানা চাকু দিয়ে নিজের হাত নিজেই কেটে ফেলে। এর পর রক্তক্ষরণে সে মারা যায়। আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা নিজেকে হত্যা করার ব্যাপারে বড় তাড়াহুড়া করে ফেলেছে। তাই আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম।
_____________________
সুতরাং, দেখা যাচ্ছে আল্লাহ আত্মহত্যা করতে নিষেধ করেছেন, করলে কি শাস্তি হবে সেটা বর্ণনা করে বান্দাদেরকে ভয় প্রদর্শন করেছেন। কিন্তু এর পরেও কেউ যদি এটা করতে ইচ্ছা করে, আল্লাহ তাকে সেই সুযোগ দিয়েছেন – তাকে বাঁধা দেন নি। এর দ্বারা আল্লাহ আসলে বান্দাকে পরীক্ষা করছেন যেমনটা তিনি তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেছেনঃ
_____________________
“পূণ্যময় তিনি, যাঁর হাতে রাজত্ব। তিনি সবকিছুর উপর সর্বশক্তিমান। যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন - কে তোমাদের মধ্যে কর্মের দিকে থেকে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়।” 
সুরা মুলকঃ ১-২।
_____________________
***আবার বান্দা চাইলেই কি সব কিছু করতে পারে?
উত্তর হচ্ছে, না। এমন অনেক দেখা যায়, কেউ একবার আত্মহত্যা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়, পরবর্তীতে দীর্ঘদিন সে বেঁচে থাকে, যদিও সে আত্মহত্যার জন্য আন্তরিকভাবে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলো – তবুও সে ব্যার্থ হয়েছে।
_____________________
এটাই হচ্ছে আল্লাহর ইচ্ছা – বান্দা যা ইচ্ছা করুক না কেনো, সেটা যদি আল্লাহর ইচ্ছার অধীন না হয় তাহলে তার সে ইচ্ছা পূরণ হবে না। (উল্লেখ্য সে আত্মহত্যার ইচ্ছা ও চেষ্টা করার কারণে আত্মহত্যার সমান পাপ কিন্তু তার আমলনামায় ঠিকই লেখা হবে। কারণ সে ইচ্ছা ও চেষ্টা করেছিলো, কিন্তু আল্লাহর বিশেষ জ্ঞান অনুযায়ী তিনি এই কাজে ইচ্ছা করেন নি – তাই সে সফল হতে পারেনি)
_____________________
বান্দা ভালো-মন্দ যাই ইচ্ছা করুক না কেনো – সেটা আল্লাহর ইচ্ছার অধীন। যেমনটা কুরানুল কারীমে উল্লেখ করা হয়েছেঃ
“তোমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইচ্ছার বাইরে অন্য কোন কিছু ইচ্ছাই করতে পার না”।
সুরা তাকবীরঃ ১৯।
_____________________
এ হলো তাকদীরের প্রতি বিশ্বাসের ৪ টা স্তর, সেখান থেকে ৩ নাম্বার "আল্লাহর ইচ্ছা" সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা।
বিস্তারিত জানার জন্য আপনারা আহলে সুন্নাহর আলেমদের আকীদার উপরে লেখা বই সংগ্রহ করে পড়তে পারেন।
_____________________
তাকদীরের প্রতি বিশ্বাসের ৪ টা স্তর
১. আল্লাহর জ্ঞান। অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতে কি হয়েছে, কি হচ্ছে এবং কি হবে, সেই সম্পর্কে আল্লাহ পূর্ণাংগ জ্ঞান রাখেন।
২. যা যা হবে তার সবকিছুই আল্লাহ কিতাবে (লাওহে মাহফুজ) লিখে রেখেছেন।
৩. যা যা হবে, তাতে আল্লাহ ইচ্ছা করেছেন। আল্লাহ ইচ্ছা করলে কোনোকিছু হবে, ইচ্ছা না করলে কিছুই হবেনা।
৪. যা কিছু সৃষ্টি হবে তার সবকিছুর স্রষ্টা একমাত্র আল্লাহ।

No comments:

Post a Comment