Sunday, September 24, 2017

আলী (রা) সম্পর্কিত জাল হাদীস



Image may contain: flower and text


আলী (রা) সম্পর্কিত জাল হাদীস
""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""'
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইলমের শহর ও আলী (রা) তার দরজা
```````````````````````````````````````````````````````````````
আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত হাদীস:

أَنَا مَدِيْنَةُ الْعِلْمِ وَعَلِيٌّ بَابُهَـا
‘‘আমি জ্ঞানের শহর এবং আলী তার দরজা।’’
এ হাদীসটিকে অভিজ্ঞ মুহাদ্দিসগণ বানোয়াট বলে উল্লেখ করেছেন। কেউ কেউ হাদীসটিকে মিথ্যা না বলে যয়ীফ বলে উল্লেখ করেছেন। ইমাম তিরমিযী এ অর্থে একটি হাদীস বর্ণনা করে নিজেই হাদীসটি দুর্বল বলে উল্লেখ করেছেন।[1] ইমাম বুখারী, আবু হাতিম, ইয়াহইয়া বিন সায়ীদ, যাহাবী প্রমুখ মুহাদ্দিস হাদীসটিকে ভিত্তিহীন মিথ্যা বলে উল্লেখ করেছেন।[2]
আলী (রা) কে দরবেশী খিরকা প্রদান
`````````````````````````````````````````````
প্রচলিত একটি গল্পে বলা হয়েছে: ‘‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মি’রাজ থেকে ফিরে আসার পরে নিজের সাহাবা (রা)-দেরকে ডেকে এরশাদ করলেন যে, আমার দরবেশী খিরকা ঐ ব্যক্তিকে প্রদান করবো যে আমার প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারবে... আবূ বাকর (রা)-কে বললেন, যদি আমি তোমাকেই এ দরবেশী খিরকা দান করি তাহলে তুমি এর হক কিভাবে আদায় করবে? ... এভাবে উমার (রা) কে জিজ্ঞাসা করলেন ... উসমান (রা)-কে জিজ্ঞাসা করলেন...। এরপর আলী (রা)-কে প্রশ্ন করলেন। আলী (রা) উত্তরে বলেন, আমি আল্লাহর বান্দাদের গোপনীয়তা রক্ষা করব। তখন তিনি আলীকেই খিরকা প্রদান করেন...’’ ইত্যাদি। পুরো কাহিনীটিই ভিত্তিহীন বানোয়াট।[3]

আলীকে ডাক, বিপদে তোমাকে সাহায্য করবে !
`````````````````````````````````````````````````````
মোল্লা কারী বলেন, শিয়াদের বানানো একটি ঘৃণ্য জাল ও মিথ্যা কথা:

نَادِ عَلِيًّا مُظْهِرَ الْعَجَائِبِ، تَجِدْهُ عَوْناً لَكَ فِيْ النَّوَائِبِ، بِنُبُوَّتِكَ يَا مُحَمَّدُ، بِوَلاَيَتِكَ يَا عَلِيُّ
‘‘আলীকে ডাক, সে আশ্চর্য কর্মাদি প্রকাশ করে, তাকে তুমি বিপদে আপদে তোমার সহায়ক পাবে। হে মুহাম্মাদ, আপনার নবুয়তের ওসীলায়। হে আলী, আপনার বেলায়াতের ওসীলায়।’’[4]
বস্ত্তত, আমাদের সমাজে প্রচলিত সকল কুসংস্কার, শির্ক ও বিদ‘আতের উৎস হচ্ছে শিয়া মতবাদ ও শিয়া সম্প্রদায়। কুরআন কারীম ও সুস্পষ্ট সুন্নাতকে পরিত্যাগ করে তারা রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর বংশের ১২ বা ৭ ইমামের নামে ভক্তিতে বাড়াবাড়ি করেন। ফলে এসকল নেককার মানুষের নামে বিভিন্ন প্রকার মিথ্যা ও ঈমান বিধ্বংসী কথা তাদের মধ্যে প্রচার ও প্রতিষ্ঠিত করা ইসলামের শত্রুদের পক্ষে সহজ হয়ে যায়। তাদের হৃদয়গুলো কুরআন কারীম ও রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সুন্নাতের বাঁধন থেকে মুক্ত হয়ে গিয়েছে। হৃদয়ের মণিকোঠায় বসেছেন আলী ও তাঁর বংশের ইমামগণ। তাঁদের নামে জালিয়াতগণ যা বলেছে সবই তারা ভক্তিভরে মেনে নিয়েছেন এবং এ মিথ্যাগুলোর ভিত্তিতে কুরআনের সুস্পষ্ট নির্দেশনার বিকৃত ব্যাখ্যা করেছেন।
এ সম্প্রদায়ের কঠিনতম অপরাধগুলির অন্যতম হলো, এরা আলী (রা) ও তাঁর বংশের ইমামদেরকে ‘ঈশ্বর’ বানিয়েছে। তাঁদের মধ্যে ‘ঈশ্বরত্ব’ বা ‘ঐশ্বরিক শক্তি’ কল্পনা করেছে। এ কথাটি তাদের মধ্যে প্রচলিত একটি শির্ক। যেখানে কুরআন ও সুন্নাহ বারংবার শেখাচ্ছে সকল বিপদে আপদে শুধুমাত্র মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার, সেখানে এরা বানিয়েছে আলীর কাছে সাহায্য চাওয়ার কথা। বিপদে আপদে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে অলৌকিক সাহায্য প্রার্থনা করাই হলো সকল শিরকের মূল। এ বিষয়ে আমি ‘রাহে বেলায়াত’ নামক পুস্তকে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
এ জঘন্য মিথ্যা কথাটির ভিত্তিতে শিয়াগণ একটি দোয়া বানিয়েছে, যা দুর্ভাগ্যবশত আমাদের সমাজে অনেক ‘সুন্নী’ মুসলিমের মধ্যেও প্রচলিত। এ শিরক-পূর্ণ দোয়াটি প্রচলিত একটি পুস্তক থেকে উদ্ধৃত করছি: ‘‘দোয়ায়ে নাদে আলী। তাহাজ্জুদ নামাজের পর আগে পরে দরূদ শরীফ পড়ে এ দোয়া যত বেশী পারা যায় পড়ে দোয়া করিলে মনের বাসনা পূর্ণ হয় ও কঠিন বিপদ দূর হয়ে থাকে। বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। নাদে আলিয়ান মাজহারাল আজায়েবে তাজেদহু আউনাল্লাকা ফিন্নাওয়ায়েবে ওয়াকুল্লি হাম্মিন ওয়া গাম্মিন সাইয়ানজালি বি-আজমা-তিকা ইয়া আল্লাহ বিনুবুওয়াতিকা ইয়া মুহাম্মাদ বি-বিলায়াতিকা ইয়া আলী, ইয়া আলী, ইয়া আলী, লা ফাতা ইল্লা আলী, লা সাই- ফা ইল্লা জুল ফাক্কারে, নাছরুম মিনাল্লাহি ওয়া ফাতহুন কারীব, ওয়া বাশ্শিরিল মুমেনীন, ফাল্লাহু খাইরুন হাফিজাও ওয়া হুয়া আরহামার রাহিমিন।’’[5]
শিয়াদের রচিত এ দোয়াটি নিরেট শির্ক। অথচ তা আমাদের ধার্মিক মানুষদের মধ্যে প্রচলিত। কোনো সরল প্রাণ বুযুর্গ হয়ত দোয়াটি শুনে অর্থ না জেনে বা অসাবধানতা বশত তা আমল করেছিলেন। এখন আপনি যতই বলুন একথা শিরক, একথা শিয়াদের বানানো, সকল মুহাদ্দিস এ বিষয়ে একমত... ইত্যাদি, আপনার কোনো কথাই বাজারে ঠাঁই পাবে না। একটি কথাতেই সব নষ্ট হয়ে যাবে: অমুক বুযুর্গ তা পালন করেছেন, তিনি কি কিছুই বুঝেন নি???
আলী (রা)-কে দাফন না করে উটের পিঠে ছেড়ে দেয়া
``````````````````````````````````````````````````````````
৪০ হিজরীর রামাদান মাসের ২৩ তারিখে আলী (রা) তাঁর খেলাফতের রাজধানী কূফায় এক গুপ্তঘাতক খারিজীর হাতে শাহাদাত বরণ করেন। তাঁর জ্যেষ্ঠ্য পুত্র হাসান ইবনু আলী (রা) তাঁর জানাযার সালাতে ইমামতি করেন। জানাযা শেষে কূফাতেই তাঁর বাড়ীর অভ্যন্তরে তাঁকে দাফন করা হয়। কারণ ইমাম হাসান ও অন্যান্যরা ভয় পাচ্ছিলেন যে, সাধারণ গোরস্থানে তাঁকে দাফন করলে খারিজীগণ তাঁর মৃতদেহকে চুরি করবে ও অপমানিত করবে। এ বিষয়টি প্রথম যুগের মুসলিমদের মধ্যে প্রসিদ্ধ ছিল।

পরবর্তী কালে শিয়াগণ এ বিষয়ে একটি বানোয়াট ও মিথ্যা গল্প প্রচার করেছে। গল্পটির সার সংক্ষেপ হলো, আলী (রা)-কে দাফন না করে উটের পিঠের উপর ছেড়ে দেয়া হয়। উটটি হারিয়ে যায়। ... পরবর্তী কালে ‘নাজাফ’-এর তাঁর কবরের খোঁজ পাওয়া যায়।... ইত্যাদি।
এ সকল কাহিনী শুধু মিথ্যাই নয়, উপরন্তু তা আলী (রা), হাসান (রা), হুসাইন (রা) ও আলীর পরিবারের সকলের জন্যই কঠিন অবমাননাকর। ইন্তিকালের পরে মৃত দেহ দাফন করা জীবিতদের উপর ফরয। এ ফরয দায়িত্বে অবহেলা করে তাঁরা আমীরুল মুমিনীনের মৃত দেহ উটের পিঠে ছেড়ে দিবেন একথা একান্ত কান্ডজ্ঞানহীন মুর্খ ছাড়া কেউই বিশ্বাস করবে না। হাসান-হুসাইন (রা) তো দূরের কথা, একজন অতি সাধারণ মানুষও তার পিতার মৃতদেহ এভাবে ছেড়ে দিতে রাজি হবে না। সেও চাইবে যে, তার পিতার কবরটি পরিচিত থাক, যেন সে ও তার বংশধরেরা তা যিয়ারত করতে পারে...। কিন্তু সমস্যা হলো, কুরআন-সুন্নাহকে পরিত্যাগ করে অতিভক্তির অন্ধকারে হৃদয়কে নিমজ্জিত করার পরে ইমামগণের নামে যা কিছু বাতিল, শরীয়ত বিরুদ্ধ, বুদ্ধি ও বিবেক বিরুদ্ধ কথা বলা হয়েছে, সবই শিয়ারা বিভিন্ন ব্যাখ্যা করে বিশ্বাস করে নিয়েছে।
এ মিথ্যাচারের ভিত্তিতে নাজাফ শহরে একটি কবরকে শিয়াগণ আলীর কবর বলে বিশ্বাস ও প্রচার করেন। আলী (রা)-এর শাহাদাতের পরে তিন শত বছর পর্যন্ত কেউ বলেন নি যে, আলীর কবর নাজাফে। প্রায় তিন শত বছর পরে বিভিন্ন জনশ্রুতি ও কুসংস্কারের ভিত্তিতে এ কবরটি আলীর (রা) কবর বলে পরিচিতি পেতে শুরু করে। করবটির অবস্থা অবিকল বাবরী মসজিদের স্থলে রাম জন্ম-মন্দিরের কাহিনীর মত। সকল হিন্দু গবেষক ও ঐতিহাসিক একমত যে, অযোধ্যার বাবরী মসজিদের স্থানে কোনো দিনই রাম-মন্দির ছিল না। কিন্তু এ মিথ্যা কথাটি উগ্রপন্থি হিন্দুদের প্রচারে এখন প্রায় স্বতঃসিদ্ধ সত্যে পরিণত হয়েছে। হয়ত এক সময় এখানে ‘রাম-মন্দির’ নির্মিত হবে। ভারতের কোটি কোটি মানুষ বিশ্বাস করবে যে, এখানেই রামের জন্ম হয়েছিল! যেমন ভাবে কোটি কোটি শিয়া বিশ্বাস করে যে নাজাফের এ কবরটিই আলীর কবর। এজন্য তারা নাজাফ শহরকে বলে ‘নাজাফ আল-আশরাফ’। মক্কা শরীফ, মদীনা শরীফ ও নাজাফ আশ্রাফ। অর্থাৎ পবিত্র মক্কা, পবিত্র মদীনা ও মহা পবিত্র নাজাফ!!![6]
[1] তিরমিযী, আস-সুনান ৫/৫৯৬। [2] ইবনুল জাওযী, আল-মাউদূ‘আত ১/২৬১-২৬৫; সুয়ূতী, আল-লাআলী ১/৩২৮-৩৩৬; মোল্লা আলী কারী, আল-আসরার, ৭১-৭২ পৃ, নং ২৫১, সাখাবী, আল-মাকাসিদ, পৃ: ১১৪-১১৬, যারকানী, মুখতাসারুল মাকাসিদ পৃ: ৬৯। [3] হযরত খাজা নিজামউদ্দীন আউলিয়া, রাহাতিল কুলূব, পৃ. ৮-৯। [4] মোল্লা আলী কারী, আল-আসরার, পৃ. ২৬৫-২৬৬; আজলূনী, কাশফুল খাফা ২/৪৮৯। [5] মো. বসির উদ্দীন আহমাদ, নেক আমল, পৃ. ১৮৬। [6] ইবনু তাইমিয়া, মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ২৭/৪৪৬; ইবনু কাসীর, আল-বিদায়া ৭/৩৩০; মোল্লা কারী, আল-আসরার, পৃ. ২৮০।
__________________________________________
হাদীসের নামে জালিয়াতি- খোন্দকার আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহঃ

7 comments: