Sunday, May 15, 2016

মাহে শাবান ও শবে বরাতঃ করণীয় ও বর্জণীয়ঃ




হিজরী সনের ৮ম মাস হচ্ছে শাবানমাস। তার পরই আসে বছরের শ্রেষ্ঠ রামাযান মাস। সে হিসেবে মুসলিমের জীবনে এ মাসের যথেষ্ঠ গুরুত্ব রয়েছে। দীর্ঘ টানা একমাস তাকে সিয়াম সাধনা করতে করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন মানসিক, শারিরিক ও আর্থিক প্রস্তুতি। আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাযানে
প্রস্তুতি স্বরূপ অন্য মাসের তুলনায় শাবান মাসে বেশী বেশী নফল রোযা রাখতেন। আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ
ﻓَﻤَﺎ ﺭَﺃَﻳْﺖُ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﺳْﺘَﻜْﻤَﻞَ ﺻِﻴَﺎﻡَ ﺷَﻬْﺮٍ ﺇِﻻَّ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ، ﻭَﻣَﺎ ﺭَﺃَﻳْﺘُﻪُ ﺃَﻛْﺜَﺮَ ﺻِﻴَﺎﻣًﺎ ﻣِﻨْﻪُ ﻓِﻰ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ
আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রামাযন ব্যতীত অন্য কোন পূর্ণ মাসে রোযা রাখতে দেখে নি। আর তাঁকে আমি শাবান মাসের চেয়ে অধিক রোযা অন্য কোন মাসে রাখতে দেখি নি। (বুখারী) সুতরাং শাবান মাসে আমরাও রাসূলের সুন্নাত অনুযায়ী বেশী বেশী করে রাখবো এবং আল্লাহর কাছে প্রাণ খুলে দুআ করবো, তিনি যেন আমাদেরকে রামাযান পর্যন্ত হায়াত দান করেন এবং রামাযানের ফজীলত ও বরকত হাসিল করার তাওফীক দেন।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, বর্তমান সময়ে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের মধ্যেই শাবান মাস সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। বিশেষ করে প্রচলিত আছে সমাজের বিরাট এক অংশে শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে কিয়াম করা তথা নফল নামায পড়া এবং পরের দিন ছিয়াম পালন করার চিরাচরিত নিয়ম। যদিও রাসূল (সাঃ) থেকে এই রাতের নফল নামায এবং দিনের বেলা রোযা রাখার ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীছ পাওয়া যায়না।

এরাতকে আমাদের দেশের পরিভাষায় শবে বরাত বলা হয়ে থাকে। এ রাত সম্পর্কে মানুষের বিদআতী ধারণা এবং এরাতে মানুষ যেসমস্ত বিদআতী আমল করে তার বিস্তারিত বিবরণ প্রয়োজন। নিম্মে তার কিছু বিবরণ পেশ করা হলঃ
শবে বরাতে কুরআন নাযিল হয়েছে বলে ধারণাঃ
শবে বরাত পালনকারীদের বক্তব্য হল, শবে বরাতের রাতেই কুরআন নাযিল হয়েছে। সূরা দুখানের ৩নং আয়াতকে তারা দলীল হিসাবে পেশ করে থাকে। আল্লাহ বলেন, ﺇِﻧَّﺎ ﺃَﻧْﺰَﻟْﻨَﺎﻩُ ﻓِﻰْ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﻣُﺒَﺎﺭَﻛَﺔٍ “আমি কুরআনুল কারীমকে একটি বরকতপূর্ণ রাতে অবতীর্ণ করেছি। এবরকতপূর্ণ রাতই হল শবে বরাতের রাত। কতিপয় আলেম এভাবেই অত্র আয়াতের ব্যাখ্যা করেছেন। তাদের এব্যাখ্যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়; বরং এখানে বরকতপূর্ণ রাত বলতে লাইলাতুল ক্বদর উদ্দেশ্য। আল্লামা ইবনে কাছীর (রঃ) বলেন, অত্র বরকতপূর্ণ রাতই হল লাইলাতুল ক্বদর বা ক্বদরের রাত। যেমন অন্যত্র সুস্পষ্টভাবে উল্লেখিত হয়েছে। কুরআনের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য কথা হল, কুরআনের কোন অস্পষ্ট আয়াতের ব্যাখ্যা যদি অন্য কোন আয়াতে সুস্পষ্টভাবে পাওয়া যায়, তাহলে কুরআনের ব্যাখ্যাই গ্রহণ করতে হবে। আমরা দেখতে পাই যে, আল্লাহ সূরা কদরের শুরুতে বলেন,
ﺇِﻥَّ ﺃَﻧْﺰَﻟْﻨَﺎﻩُ ﻓِﻰ ﻟَﻴْﻠَﺔِ ﺍﻟْﻘَﺪْﺭِ “আমি কুরআনকে ক্বদরের রাতে অবতীর্ণ করেছি। (সূরা কদরঃ ১) আর এ কথা সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত যে, লাইলাতুল ক্বদর রামাযান মাস ব্যতীত অন্য কোন মাসে নয়। এমনিভাবে আল্লাহ তায়ালা রামাযান মাসে কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করে সূরা বাকারায় বলেন, ﺷَﻬْﺮُ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺍﻟَّﺬِﻯ ﺃُﻧْﺰِﻝَ ﻓِﻴْﻪِ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥُ
“রামাযান মাস এমন একটি মাস, যাতে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। (সূরা বাকারাঃ ১৮৫) সুতরাং শবে
বরাতে কুরআন নাযিল হওয়ার কথা গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা।

শবে বরাতের রাতে আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে নেমে আসার ধারণাঃ শবে বরাতের ইবাদতের পক্ষের আলেমগণ বলে থাকে, এরাতের শেষের দিকে আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং ক্বলব গোত্রের বকরীগুলোর লোম সংখ্যার চেয়ে অধিক সংখ্যক লোকের গুনাহ ক্ষমা করে থাকেন। উপরোক্ত অর্থ বহনকারী হাদীছটি
কয়েকটি সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু সকল বর্ণনাই যঈফ বা দূর্বল। দেখুনঃ ইমাম আলবানীর তাহ্কীকসহ
মিশকাত (১/২৮৯) হাদীছ নং- ১২৯৯। ইমাম তিরিমিযী বলেনঃ আমি আমার উস্তাদ মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল আল-বুখারীকে বলতে শুনেছি যে, এই হাদীছটি যঈফ। দেখুন তিরমিযী (২/২৫৯) হাদীছ নং- ৭৪৪।


নির্দিষ্টভাবে এরাতে আল্লাহর দুনিয়ার আকাশে নেমে আসার এবং সকল বান্দাকে ক্ষমা চাওয়ার প্রতি আহবান জানানোর হাদীছটি সুনানের কিতাবে যঈফ ও জাল সনদে বর্ণিত হয়েছে। তাছাড়া হাদীছটি বুখারীসহ অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে বর্ণিত সহীহ হাদীছের বিরোধী। সহীহ হাদীছের বর্ণনা অনুযায়ী আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং বলতে থাকেনঃ কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি ক্ষমা করে দিব। অমুক আছে কি? অমুক আছে কি? এভাবে প্রতি রাতেই ঘোষণা করতে থাকেন। দেখুন বুখারী, হাদীছ নং- ১০৯৪, মুসলিম, হাদীছ নং- ১৬৮। সুতরাং জাল হাদীছের উপর ভিত্তি করে সহীহ হাদীছের মর্ম প্রত্যাখ্যান করে শবে বরাতের রাতে আল্লাহ্ দুনিয়ার আকাশে নেমে আসার আকীদা পোষণ করা এবং সে রাতে বিশেষ ইবাদত করা সম্পূর্ণ বিদআত।


মৃত ব্যক্তির রূহ দুনিয়াতে আগমণের বিশ্বাসঃ শবে বরাত পালনের পিছনে যুক্তি হল, এরাতে মানুষের মৃত আত্মীয়দের রূহসমূহ দুনিয়াতে আগমণ করে স্ব স্ব আত্মীয়দের সাথে সাক্ষাৎ করে। এটি একটি অবান্তর ধারণা, যা
কুরআন-সুন্নার সুস্পষ্ট বিরোধী। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ ﻭَ ﻣِﻦْ ﻭَﺭَﺍﺋِﻬِﻢْ ﺑَﺮْﺯَﺥٌ ﺇِﻟَﻰ ﻳَﻮْﻡٍ ﻳُﺒْﻌَﺜُﻮْﻥَ “ওদের (মৃতদের) পিছনে রয়েছে অন্তরায়, তারা সেখানে কিয়ামত দিবস অবদি অবস্থান করবে। (সূরা মুমেনূনঃ ১০০) এরাত্রে মানুষের ভাগ্য লিখা হয় বলে ধারণাঃ তাদের এধারণাটিও ঠিক নয়। এ কথার পিছনে কুরআন হাদীছের কোন দলীল
নেই। সহীহ হাদীছে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ﻛَﺘَﺐَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻣَﻘَﺎﺩِﻳﺮَ ﺍﻟْﺨَﻠَﺎﺋِﻖِ ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﻳَﺨْﻠُﻖَ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽَ ﺑِﺨَﻤْﺴِﻴﻦَ ﺃَﻟْﻒَ ﺳَﻨَﺔٍ “আসমান-জমিন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বেই আল্লাহ তায়ালা স্বীয় মাখলুকের তাকদীর লিখে রেখেছেন। (সহীহ মুসলিম)


হালুওয়া রুটির রহস্যঃ তাদের বক্তব্য হচ্ছে শবে বরাতের দিন ওহুদ যুদ্ধে নবী (সাঃ) এর দাঁত মোবারক শহীদ হয়েছিল। তাই নবী (সাঃ) শক্ত খাবার খেতে না পারায় নরম খাদ্য হিসাবে হালুওয়া-রুটি খেয়েছিলেন। তাই আমরাও নবীর দাঁত ভাঙ্গার ব্যথায় সমবেদনা প্রকাশ করে হালুওয়া-রুটি খেয়ে থাকি। এটি একটি কাল্পনিক কথা।
কারণ ওহুদের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল তৃতীয় হিজরীর শাওয়াল মাসে, শাবান মাসে নয়।

এ রাতে কবর যিয়ারতের পিছনে যুক্তি ও তা খন্ডনঃ এরাতে রাসূল (সাঃ) বাকী কবরস্থান যিয়ারত করেছেন। তাই
আমাদেরকেও এরাতে কবর যিয়ারত করতে হবে। এ মর্মে ইবনে মাজাহ শরীফে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ। হাদীছের সনদে হাজ্জাজ ইবনে আরত্বাত নামক একজন যঈফ রাবী রয়েছে। ইমাম বুখারী সহ অন্যান্য মুহাদ্দিছগণ হাদীছটিকে যঈফ বলেছেন।

একশত রাকাত নামাযের ভিত্তি খন্ডনঃ এরাতে একশত রাকাত নামাযের ব্যাপারে যত হাদীছ রয়েছে, তার সবই জাল বা বানোওয়াট। এ নামায সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) থেকে কোন হাদীছ প্রমাণিত নেই। একশত রাকাত নামায পড়ার বিদআতটি ৪৪৮ হিজরীতে সর্বপ্রথম জেরুজালেমের বাইতুল মুকাদ্দাস মসজিদে প্রবর্তিত হয়।ইমাম মাকদেসী (রঃ) বলেনঃ ৪৪৮ হিজরীতে বাইতুল মাকদিসে আমাদের নিকট ইবনে আবী হুমায়রা নামক একজন লোক আগমণ করলো। তার তেলাওয়াত ছিল খুব সুন্দর। অর্ধ শাবানের রাতে সে মসজিদে
আকসায় নামাযে দাড়িয়ে গেল। তার পিছনে একজন এসে দাড়ালো। তারপর আরেকজন আসলো। এভাবে এক, দুই তিন করে নামায শেষ করা পর্যন্ত বিরাট এক জামাতে পরিণত হলো। (দেখুন ﺍﻟﺒﺎﻋﺚ ﻋﻠﻰ ﺍﻧﻜﺎﺭ ﺍﻟﺒﺪﻉ ﻭﺍﻟﺤﻮﺍﺩﺙ
১২৪-১২৫) পরবর্তীতে মসজিদের ইমামগণ অন্যান্য নামাযের ন্যায় এ নামাযও চালু করে দেয়।


নিসফে শাবানের নামায সম্পর্কে বিন বায (রঃ)এর একটি ফতোয়াঃ আল্লামা আব্দুল আযীয বিন বায(রঃ) কে নিসফে শাবানের রাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো- এ রাতে কোন বিশেষ নামায আছে কি না? উত্তরে তিনি বলেনঃ অর্ধ শাবানের রাত সম্পকে একটি সহীহ হাদীছও পাওয়া যায় নি। এ ব্যাপারে বর্ণিত সকল হাদীছ বানোয়াট ও যঈফ, যার কোন ভিত্তি নেই। আর এটি এমন রাত্রি যার অতিরিক্ত কোন মর্যাদা নেই। তাতে কুরআন পাঠ, একাকী কিংবা জামাত বদ্ধ হয়ে কোন নামায আদায় করা যাবে না। কতিপয় আলেম এই রাতের যে ফজীলতের কথা বলেছেন, তা দুর্বল। সুতরাং এ রাতের কোন অতিরিক্ত বৈশিষ্ঠ নেই। এটিই সঠিক কথা।
আল্লাহ্ সকলকে তাওফীক দিন। (দেখুনঃ ইবনে বায (রঃ)এর ফতোয়া সিরিজ প্রথম খন্ড)


ইমাম আলবানী (রঃ) বলেনঃ অর্ধ শাবানের রাতের ফজীলতে অনেকগুলো দুর্বল হাদীছ এসেছে। সবগুলো হাদীছ এক সাথে মিলালে সহীহর স্তরে পৌঁছে যায়। (দেখুন সিলসিলায়ে সহাহা, হাদীছ নং- ১১৪৪) তবে তিনি এ রাতে বিশেষ কোন এবাদত করাকে বিদআত বলে উল্লেখ করেছেন এবং কঠোর ভাষায় তার প্রতিবাদ করেছেন। (দেখুনঃ ইমাম আলবানীর ফতোয়া সিরিজ) 
শবে বরাতের রোযাঃ শবে বরাতের রোযা রাখার প্রমাণ স্বরূপ দু’টি হাদীছ পেশ করা হয়ে থাকে। প্রথম হাদীছঃ শাবান মাসের মধ্যরাত এলে তোমরা রাতে কিয়াম কর এবং দিনে ছিয়াম পালন কর। (ইবনে মাজাহ)
এই হাদীছের সনদে ইবনে আবু সাব্রাহ নামক একজন জাল হাদীছ রচনাকারী রাবী থাকার কারণে হাদীছটি গ্রহণযোগ্য নয়। (দেখুনঃ সিলসিলায়ে যাঈফা, হাদীছ নং- ২১৩২) দ্বিতীয় হাদীছঃ ইমরান বিন হুসাইন (রাঃ) বলেন, একবার রাসূল (সাঃ) জনৈক ব্যক্তিকে বললেন, তুমি কি সিরারে শাবানের রোযা রেখেছ? লোকটি বলল না। অতপর নবী (সাঃ) রামাযানের পরে রোযা দু’টি কাযা আদায় করতে বললেন। (সহীহ মুসলিম) তারা এ হাদীছ থেকে বুঝতে চেয়েছেন যে, এখানে সিরারে শাবান বলতে শবে বরাতের রোযা উদ্দেশ্য। অধিকাংশ আলেমদের মতে সিরার অর্থ মাসের শেষ। উক্ত ব্যক্তি শাবানের শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত রোযা পালনে অভ্যস্ত ছিল অথবা এটা তার মানতের রোযা ছিল। রামাযানের সঙ্গে মিশে যাওয়ার ভয়ে সে রোযা রাখা ছেড়ে দিয়েছিল। কারণ শাবান মাসের শেষের দিকে রামাযানের রোযার সাথে মিশিয়ে রোযা রাখার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই রাসূল (সাঃ) তাকে রোযা দু’টি কাযা আদায় করতে বলেছিলেন। {(দেখুন শরহুন্ নববী আলা সহীহ মুসলিম, (৪/১৮১)}


প্রিয় পাঠক মন্ডলী! শবে বরাত উপলক্ষে আমাদের দেশের রেডিও, টেলিভিশন, ওয়াজ মাহফিল ও বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে শবে বরাতের পক্ষে বিশেষ প্রচারণা চালনা হয় এমনকি ঐ দিন সরকারী ছুটি পর্যন্ত ঘোষণা করা হয়। লক্ষ
লক্ষ টাকা এর পিছনে ব্যয় করা হয়ে থাকে। অথচ এর কোন শরঈ ভিত্তি নেই। মুসলিম জাতির উচিৎ এবিদআত
থেকে বিরত থাকা। পরিতাপের বিষয় এই যে, অনেকেই এবিদআতকে বিদআতে হাসানাহ বলে থাকে। আসলে বিদআতে হাসানাহ বলতে কিছু নেই। ইসলামের নামে তৈরীকৃত সকল বিদআতই মন্দ, হাসানাহ বা ভাল বিদআত নামে কোন বিদআতের অস্তিত্ব নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ﻛُﻞُّ ﺑِﺪْﻋَﺔٍ ﺿَﻠَﺎﻟَﺔٍ ﻭَ ﻛُﻞُّ ﺿَﻠَﺎﻟَﺔٍ ﻓِﻰ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ
“প্রতিটি বিদআতই ভ্রষ্টতা আর সমস্ত ভ্রষ্টতার পরিণাম হল জাহান্নাম। (নাসাঈ)


ইবনে উমার (রাঃ) বলেন, “সমস্ত বিদআতই ভ্রষ্টতা যদিও মানুষ তাকে উত্তম বলে থাকে। (দেখুন ﺍﻹﺑﺪﺍﻉ ﻓﻲ ﺑﻴﺎﻥ
ﻛﻤﺎﻝ ﺍﻟﺸﺮﻉ ﻭﺧﻄﺮ ﺍﻻﺑﺘﺪﺍﻉ পৃষ্ঠা নং ২১-২১) এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, শবে বরাতের এ আয়োজন শুধুমাত্র
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ অনারব দেশসমূহেই দেখা যায়। আরব দেশসমূহে এর তৎপরতা নেই বললেই
চলে। বিশেষ করে ইসলামের প্রাণ কেন্দ্র সৌদি আরবে শবে বরাত পালনের কোন অস্তিত্বই দেখা যায়না। মক্কা-মদীনার সম্মানিত ইমামগণের কেউ কোন দিন শবে বরাত উদ্যাপন করার প্রতি জনগণকে উৎসাহিত করেন না। কারণ তারা ভাল করেই জানেন যে ইহা দ্বীনের কোন অংশ নয়; বরং তা একটি নব আবিষ্কৃত বিদআত। এজন্যই তাঁরা শবে বরাতসহ অন্যান্য সকল বিদআত থেকে মুসলিম জাতিকে সতর্ক করে থাকেন এবং তাদের সক জুমআর খুৎবা ও অন্যান্য আলোচনা ও ভাষণে বিনা শর্তে কুরআন-সুন্নার অনুসরণের আহবান জানান। আসুন আমরা ইবাদতের নামে এই নব আবিস্কৃত বিদআতকে পরিহার করি এবং অপরকে তা থেকে সাবধান করে দ্বীনি দায়িত্ব পালন করি।

লিখেছেন : আবদুল্লাহ শাহেদ
মাদানী, লিসান্স, মদীনা
বিশ্ববিদ্যালয়।

No comments:

Post a Comment