বিজ্ঞ পাঠক-পাঠিকা!
আল্লাহর নবী ইউনুস (আ.) মাছের পেটে বন্দী অবস্থায় বিপদে পড়ে যে দোয়া পাঠ করে ছিলেন তাকে দোয়া ইউনুস বলা হয়। দোয়টি হলো, লা-ইলাহা ইল্লা আনতা, সুব্হানাকা ইন্নি কুন্তু মিনায যালিমীন। অর্থ হলো, (হে আল্লাহ!) আপনি ব্যতীত সত্য কোনো মাবুদ নেই। আপনি পবিত্র। নিশ্চয়ই আমি গোনাহগার। (আমাকে মাফ করে দিন)
.
হাদীসে এসেছে , কোনো মুসলিম কোনো বিষয়ে দোয়া ইউনুসের মাধ্যমে প্রার্থনা করলে আল্লাহ তায়ালা তা কবুল করেন।
ইউনুস (আ.) বিপদে পড়ে নিজে উক্ত দোয়াটি পাঠ করে ছিলেন এবং উপকৃত হয়ে ছিলেন। তাই যিনি সমস্যায় পতিত হবেন তিনি নিজেই এই দোয়া পাঠ করবেন। তিনি নিজে খাঁটি মনে অনুতপ্ত হয়ে নিজের গোনাহ-অপরাধ স্বীকার করে আল্লাহর কাছে মাফ চাইবেন।
.
সমস্যা দূর না হওয়া পর্যন্ত দোয়া পাঠ করতে থাকবেন। তাসবীহ দানায় গণনা করবেন না। কেননা, দোয়া
ইউনুস নির্দিষ্ট পরিমাণে পাঠ করতে কুরআন-সুন্নাহে বলা হয়নি।
.
অন্যের জন্য খতম পড়ুয়া লোকেরা সরলপ্রাণ মুসলিমদের মাঝে গুজব ছড়িয়েছেন যে, দোয়া ইউনুস সোয়া লাখ বার পড়তে হয়। এতে সাধারণ মানুষ ভীত হয়ে নিজেরা দোয়া ইউনুস পাঠ
করার হিম্মত হারিয়ে ফেলেছেন। তারা অন্যের দ্বারা সোয়া লাখ বার দোয়া ইউনুস পাঠ করাতে বাধ্য হয়েছেন। এভাবে অন্যের জন্য খতম পড়ুয়া লোকেরা চালাকি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে যাচ্ছেন। তারা দোয়া ইউনুসকে “খতমে ইউনুস” নাম দিয়ে সরলপ্রাণ মানুষকে বিরাট বড় ধোকায় ফেলেছেন।
.
ইসলামে দোয়া ইউনুসের কথা আছে, কিন্তু খতমে ইউনুসের কথা নেই।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, অন্যের জন্য খতম পড়ুয়া লোকেরা আয়োজকের বাড়িতে এসে সমবেত হয়ে দোয়া ইউনুসের ভিতরে নিজের গোনাহ-অপরাধের কথা স্বীকার করে নিজের জন্য ক্ষমা চেয়ে থাকেন । আয়োজকের গোনাহ-অপরাধের কথা কিছুই বলেন না। অথচ আয়োজকের বাড়ীতে খাবার খেয়ে থাকেন। যাওয়ার সময় খতমের হাদিয়া হিসেবে নগদ টাকাও নিয়ে থাকেন। দোয়া ইউনুসের অর্থ না জানার কারণে সরল প্রাণ সাধারণ মুমিন-মুসলিমগণ অন্যের জন্য খতম পড়ুয়া লোকদের দ্বারা প্রতারিত হচ্ছেন। দোয়া ইউনুসের অর্থের দিকে একটু লক্ষ্য করলেই বিষয়টি স্পষ্ট ভাবে বুঝা যাবে।
.
দোয়া ইউনুসে রয়েছে: “ইন্নি কুন্তু মিনায্ যালিমীন” নিশ্চয় আমি গোনাহগার। (আমাকে ক্ষমা করে দিন) অন্যের জন্য খতম পড়ুয়া লোকেরা সোয়া লাখ বার “নিশ্চয় আমি গোনাহ্গার”-এই
কথা বলে নিজের জন্য ক্ষমা চাইলে এতে খতম আয়োজকের কী আসে যায়?
.
বিজ্ঞ পাঠক!
মনে রাখবেন, ইউনুস (আ.) বিপদের পড়ে নিজের জন্য নিজে উক্ত দোয়া পড়ে ছিলেন। তিনি একদল লোক দ্বারা সোয়া লাখ বার উক্ত দোয়ার খতম পড়ান নি। সুতরাং খতম পড়ুয়া
লোদেরকে ডেকে এনে সোয়া লাখ বার “নিশ্চয় আমি গোনাহগার” জপানোর চেয়ে খাঁটি অন্তরে নিজে একবার দোয়া ইউনুস পাঠ করে আল্লাহর নিকট নিজের অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে নেয়া হাজার গুণ উত্তম । এতে আল্লাহ তায়ালা খুশী হয়ে বান্দাকে মাফ করে দিতে পারেন এবং বিপদ মুক্ত করতে পারেন।
আশ্চর্য্যের ব্যাপার হলো, ইদানিং খতম পড়ুয়া লোকেরা সোয়া লাখ বার দোয়া ইউনুস পাঠ না করে মাত্র ৩১৩ বার পাঠ করেই আখেরী মুনাজাত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এটা কি দুর্নীতি ও প্রতারণা নয় ?
.
যদি ৩১৩ বার পড়লেই খতম পূর্ণ হয়ে যায় তাহলে ইতিপূর্বে সোয়া লাখ বারের
কথা প্রচার করা হলো কেন?
.
অন্যের জন্য খতম পড়ুয়াদের কাছে প্রশ্ন হলো, অন্যের জন্য খতমে ইউনুস পড়া বা বখশিয়ে দেয়ার কথা কি কুরআন হাদীসে আছে?
.
রাসূলুল্লাহ (সা.), সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈন কি অন্যের জন্য কখনো খতমে ইউনুস পড়েছেন বা বখশিয়েছেন?
.
দোয়া ইউনুস সোয়া লাখ বার অথবা
৩১৩ বার পাঠ করার কি কোনো ভিত্তি বা দলিল ইসলামী শরীয়তে আছে?
.
অন্যের জন্য খতমে ইউনুস পড়তে একদল লোক সমবেত হওয়া, সোয়া লাখ অথবা ৩১৩ বার নির্দিষ্ট করে দোয়া ইউনুস
পাঠ করা এবং খতম শেষে সবাই মিলে সম্মিলিত ভাবে মুনাজাত করা কি নেক আমলের নামে দ্বীন ইসলামের ভিতর বিদআত নয়?
.
প্রত্যেক বিদআত গোমরাহী, আর প্রত্যেক গোমরাহীর পরিণাম জাহান্নাম-এই কথা কি আমাদের নবী মুহাম্মদ (সা.) বলে যান নি?
.
নবী মুহাম্মদ (ছাঃ) বলেন,
‘যে কেউ এমন কোন আমল করল,
যে ব্যাপারে আমাদের অনুমোদন নেই তা প্রত্যাখ্যাত।
(মুসলিম হাদিস নং ৪৪৯৩ )
.
নবী মুহাম্মদ (ছাঃ) বলেছেন :
“যে ব্যক্তি আমার নামে মিথ্যা বলবে তার থাকার জায়গা হবে জাহান্নাম। ”(বুখারী আস-সহীহ ৫২)
.
“আমি যা বলিনি সেই কথা যে আমার নামে বলবে তার থাকার জায়গা হবে জাহান্নাম। ”(বুখারী আস-সহীহ ৫২)
এখানেই শেষ নয়। ইদানিং খতমে বুখারী নামে তরতাজা একটি নতুন বিদআত বাজার জাত করা হয়েছে।
আল্লাহ্ আমাদের এসব বিদআতি কার্যক্রম থেকে হেফাজত করুক। আমিন।
No comments:
Post a Comment