Sunday, July 23, 2017

আজানের জবাবে প্রচলিত ভুল:



Image may contain: text


আজানের জবাব প্রদান করাও একটি ইবাদাত। আলহামদুলিল্লাহ, এ ইবাদাতটি আমাদের দেশে ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে।
তবে আজানের জবাব প্রদানের ক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষ্কে কিছু ভুল করতে দেখা যায়।
আর এ ভুলগুলো থেকে অনেক সম্মানীয় আলেমও বাদ পড়েন না।

১. "আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ" এর জবাবে অনেকেই "সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম" বলে থাকেন। এটা সঠিক নয়।
উল্লখ্য যে, রাসূল সা, এর নাম শুনলে বা নিজে রাসূল সা, এর নাম উচ্চারণ করলে দূরূদ পড়া সুন্নাহ। তবে আজানের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। এখানে দূরুদ আজান শেষ হলে পড়া সুন্নাহ, আজানের মাঝখানে নয়।

২. আজানের শেষ অংশ "লাইলাহা ইল্লাল্লাহ" এর জবাব না দিয়ে, আল্লাহুম্মা রাব্বা হাজিহী--- বলে দুআ শুরু করে দেন। এটাও ঠিক নয়।
৩. আজান শেষে দুআর পূর্বে অনেকেই দূরুদ পড়েন না, তখন দুরুদ পড়া যে সুন্নাহ অনেকে এটাও জানেন না; বরং দূরুদ না পড়েই দুআ শুরু করেন। এটাও ঠিক নয়।
আজানের জবাব দেয়া প্রসঙ্গে রাসূল সা, বলেছেন- তোমরা আযান শুনলে তা- ই বল, মুয়াজ্জিন যা বলে, (বুখারী- ৬১১)।
মুয়াজ্জিন "আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ" বললে, শ্রোতাও "আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ" বলবে, (বুখারী- ৬১২)।
শুধু "হায়্যা আলাস সালাহ" এর জবাবে -"হাইয়্যা আলাস সালাহ" অথবা "লা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ" বলা যাবে, (বুখারী- ৬১৩)। 
" হায়্যা আলাল ফালাহ" শুনে শ্রোতাও জবাবে -"হায়্যা আলাল ফালাহ" অথবা "লা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ " বলবে, (নাসাঈ- ৬৮৫)।

ফযরের আযানে আস-সালাতু খায়রুম-মিনান-নাওম ও জামাতের ইকামাতের সময় ক্বাদকা মাতিস সালাহ – এই দুইটি বাক্যের জবাবে এইগুলোই বলতে হবে।
অন্য কিছু বলতে এমন কোনো কিছু সহীহ হাদীসে নাই – তাই যা আছে তাই বলতে হবে।
“আস-সালাতু খায়রুম-মিনান-নাওম” এর জবাবে “সাদাক্বতা ওয়া বারারতা” বলার কোনো ভিত্তি নেই (জাল কথা)।
মিরআ’ত ২/৩৬৩, হা/৬৬২।

“ক্বাদকা মাতিস সালাহ” এর জবাবে “আক্বা-মাহাল্লা-হু ওয়া আদা-মাহা” বলা সম্পর্কে আবুদাউদে বর্ণিত হাদীছটি ‘যঈফ’।
আবু দাউদ হা/৫২৮, শায়খ আলবানী, ইরওয়াউল গালীল হা/২৪১।
আজানের শেষ হলে, শ্রোতাও আজানের শেষ অংশের জবাব দেবে। 
অতপর দূুরুদ পড়বে। দুরুদ পড়ে তারপর আল্লাহুম্মা রাব্বা হাজিহী----বলে দুআ করবে, (আবু দাউদ- ৫২৩)।

আমাদের দেশের অনেক বই পুস্তক ও রেডিও টিভিতে আযানের যে দুয়া দেওয়া হয় তার মধ্যে কিছু অতিরিক্ত কথা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে যা কোনো সহীহ হাদীসে আসে নাই। অতিরিক্ত কথার মাঝে আছে "ইন্নাকালা তুখলিফুল মিয়াদ", ওয়াদ-দারাজাতার রাফীয়াতা" এইরকম কিছু কথা অতিতিক্ত আছে বায়হাকী কিতাবে যার সনদ সহীহ নয়।
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
“যে ব্যক্তি খালেস অন্তরে আযানের জবাব দেয়, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়”।
সহীহ মুসলিম, হাদীস ৩৮৫।

আযানের জবাব দেওয়ার পরে যে একবার দুরুদে ইব্রাহিম (নামাযে যেই দুরুদ পড়া হয় সেটা) পড়ে ও এর পরে আযানের যেই দুয়া আছে সেটা পড়ে তার জন্য রাসুলুল্লাহ ﷺ এর শাফায়াত করা জরুরী হয়ে পড়ে।
اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ، وَالصَّلاَةِ الْقَائِمَةِ، آتِ مُحَمَّداً الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ، وَابْعَثْهُ مَقَامَاً مَحمُوداً الَّذِي وَعَدْتَهُ،
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা রাব্বা হা-যিহিদ্ দা‘ওয়াতিত্ তা-ম্মাহ। ওয়াস সালা-তিল ক্বা-’ইমাহ। আ-তি মুহা’ম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাদীলাহ। ওয়াব্‘আছহু মাক্বা-মাম মাহ’মূদানিল্লাযী ওয়া‘আদতাহ।
অর্থঃ “হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহ্বান এবং প্রতিষ্ঠিত নামাযের তুমিই প্রভু! মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে ওসীলা (জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তর) এবং ফযীলত (সকল সৃষ্টির উপর অতিরিক্ত মর্যাদা দান করুন), আর তাঁকে মাকামে মাহমূদে (প্রশংসিত স্থানে) পৌঁছিয়ে দিন, যার প্রতিশ্রুতি আপনি তাঁকে দিয়েছেন।

No comments:

Post a Comment