Wednesday, July 26, 2017

মসজিদুল আক্বসা মর্যাদা সম্পকে কুরআন ও হাদিছ থেকে।





মসজিদুল আক্বসা মর্যাদা সম্পকে কুরআন ও হাদিছ থেকে।
বায়তুল মুক্বাদ্দাস্ দুনিয়ার অন্য ভূখন্ডের মত কোন সাধারণ ভূখন্ড নয়। বায়তুল মুক্বাদ্দাস্ ও তার আশপাশের এলাকা তথা সমগ্র ফিলিস্তিন ভূখন্ড বহু নবী-রাসূলের স্মৃতি বিজড়িত এবং কোরআন মজীদে এ ভূখন্ডকে الْأَرْضَ الْمُقَدَّسَةَ (আল-আরদাল মুক্বাদ্দাস্) বা ‘পবিত্র ভূমি’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
•_আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
‎قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَيُّ مَسْجِدٍ وُضِعَ فِي الْأَرْضِ أَوَّلَ ؟ قَالَ: " الْمَسْجِدُ الْحَرَامُ، قَالَ: قُلْتُ: ثُمَّ أَيٌّ، قَالَ: الْمَسْجِدُ الْأَقْصَى، قُلْتُ: كَمْ كَانَ بَيْنَهُمَا، قَالَ: أَرْبَعُونَ سَنَةً ثُمَّ أَيْنَمَا أَدْرَكَتْكَ الصَّلَاةُ بَعْدُ فَصَلِّهْ فَإِنَّ الْفَضْلَ فِيهِ
আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল জমিনে কোন মসজিদ সর্বপ্রথম নির্মাণ করা হয়েছে? তিনি বললেন: মসজিদে হারাম। আমি বললাম: অতঃপর কোনটি? তিনি বলেন: মসজিদে আক্বসা। আমি বললাম: উভয়ের মাঝে ব্যবধান কত ছিল? তিনি বলেন, চল্লিশ বছর। অতঃপর যেখানে তোমাকে স্বলাত পায়, সেখানে তা আদায় কর, কারণ এতেই ফজিলত”। (সহীহুল বুখারী: ৩৩৬৬)
•_মসজিদে আক্বসা মুসলিমদের প্রথম কিবলাঃ
বারা ইব্ন আযেব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:

‎كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى نَحْوَ بَيْتِ الْمَقْدِسِ سِتَّةَ عَشَرَ أَوْ سَبْعَةَ عَشَرَ شَهْرًا، وَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُحِبُّ أَنْ يُوَجَّهَ إِلَى الْكَعْبَةِ، فَأَنْزَلَ اللَّهُف قَدْ نَرَى تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَاءِ، فَتَوَجَّهَ نَحْوَ الْكَعْبَةِ
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ষোল অথবা সতের মাস বায়তুল মাকদিসের দিকে ফিরে স্বলাত আদায় করেন, তবে রালূলুল্লাহ (ﷺ) পছন্দ করতেন যেন তাকে কাবার দিকে ফিরিয়ে দেয়া হয়।
•_অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেন:
‎قَدْ نَرَىٰ تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَاءِ ۖ فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا ۚ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ ۚ وَحَيْثُ مَا كُنْتُمْ فَوَلُّوا وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ
আকাশের দিকে বার বার তোমার মুখ ফিরানো আমি অবশ্যই দেখছি। অতএব আমি অবশ্যই তোমাকে এমন কিবলার দিকে ফিরাব, যা তুমি পছন্দ কর। সুতরাং তোমার চেহারা মাসজিদুল হারামের দিকে ফিরাও এবং তোমরা যেখানেই থাক, তার দিকেই তোমাদের চেহারা ফিরাও।” ফলে তিনি কাবার দিকে মুখ ফিরালেন।
(আল-বাকারাহ, ২/১৪৪, সহীহুল বুখারী: ৩৯৯)
•_বায়তুল মাকদিস থেকে কাবার দিকে কেবলা পরিবর্তনের ফলে তার মর্যাদা রহিত হয়নি, বরং তার মর্যাদা মুসলিমের অন্তর ও ইসলামী শরীয়তে যথাযথ বিদ্যমান রয়েছে।
•_মসজিদে আক্বসা পৃথিবীর প্রথম মসজিদ কাবা থেকে এখানেই রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ইসরা হয়েছিল। 
আল্লাহ বলেন:

‎سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَىٰ بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا ۚ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ
পবিত্র ও মহীয়ান তিনি যিনি তাঁর বান্দাহকে রাতের বেলা ভ্রমণ করিয়েছেন মাসজিদুল হারাম থেকে মাসজিদুল আক্বসা পর্যন্ত, যার চারপাশকে আমি কল্যাণময় করেছি। তাকে আমার নিদর্শনাবলী দেখানোর জন্য, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। (আল-ইসরা, ১৭/১)
•_আনাস ইব্ন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:
‎أُتِيتُ بِالْبُرَاقِ وَهُوَ دَابَّةٌ أَبْيَضُ، طَوِيلٌ فَوْقَ الْحِمَارِ، وَدُونَ الْبَغْلِ يَضَعُ حَافِرَهُ عِنْدَ مُنْتَهَى طَرْفِهِ، قَالَ: فَرَكِبْتُهُ حَتَّى أَتَيْتُ بَيْتَ الْمَقْدِسِ، قَالَ: فَرَبَطْتُهُ بِالْحَلْقَةِ الَّتِي يَرْبِطُ بِهِ الأَنْبِيَاءُ، قَالَ: ثُمَّ دَخَلْتُ الْمَسْجِدَ فَصَلَّيْتُ فِيهِ رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ خَرَجْتُ، فَجَاءَنِي جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَام بِإِنَاءٍ مِنْ خَمْرٍ، وَإِنَاءٍ مِنْ لَبَنٍ، فَاخْتَرْتُ اللَّبَنَ، فَقَالَ جِبْرِيلُ: اخْتَرْتَ الْفِطْرَةَ، ثُمَّ عَرَجَ بِنَا إِلَى السَّمَاءِ
আমার নিকট বুরাক আনা হল, বুরাক সাদা চতুষ্পদ জন্তু গাধার চেয়ে লম্বা ও খচ্ছরের চেয়ে ছোট। তার দৃষ্টির শেষ প্রান্তে সে পা রাখে। তিনি বলেন: আমি তাতে সাওয়ার হয়ে বায়তুল মাকদিসে পৌঁছি। তিনি বলেন: আমি তাকে সেই খুঁটির সাথে বাঁধলাম, যার সাথে নবীগণ বাঁধেন। তিনি বলেন: অতঃপর আমি মসজিদে প্রবেশ করলাম ও দুই রাকাত স্বলাত আদায় করলাম। অতঃপর আমি বের হলাম। আমার নিকট জিবরিল আলাইহিস সালাম একটি মদ ও একটি দুধের পাত্র নিয়ে আসলেন, আমি দুধ গ্রহণ করলাম। জিবরিল বললেন আপনি ফিতরাত গ্রহণ করেছেন। অতঃপর আমাদের নিয়ে আসমানে আরোহণ করলেন। {সহিহ মুসলিম: ৩০০}
•_মসজিদে আক্বসা একমাত্র মসজিদ যেখানে আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে আমাদের নবী পর্যন্ত সবাই একত্র হয়েছেন ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ইস্তেমা এখানেই সংগঠিত হয়েছে ইসরার রাতে সকল নবীদের নিয়ে তিনি ইমাম হিসেবে স্বলাত আদায় করেন। এ থেকে প্রমাণিত হয় মসজিদে আক্বসা মুসলিমদের নিদর্শন উম্মতে মুহাম্মদ সেখানে ইমামতি করবে শেষ নবী পূর্বের সকল নবীর পবিত্র নিদর্শন সমূহের উত্তরাধিকারী এবং তার রিস্বলাত সকল পবিত্র ভূমিকে অন্তর্ভুক্তকারী আরো প্রমাণিত হয় সকল পবিত্র ভূমি দীনে ইসলামের মিরাস যার ওয়ারিশ কোন দীন হতে পারেনি মসজিদে আক্বসা ব্যতীত দুনিয়ার কোথাও সকল নবী একত্র হননি এ থেকেও মসজিদে আক্বসার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
•_আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:
‎لَقَدْ رَأَيْتُنِي فِي الْحِجْرِ، وَقُرَيْشٌ تَسْأَلُنِي عَنْ مَسْرَايَ، فَسَأَلَتْنِي عَنْ أَشْيَاءَ مِنْ بَيْتِ الْمَقْدِسِ لَمْ أُثْبِتْهَا، فَكُرِبْتُ كُرْبَةً مَا كُرِبْتُ مِثْلَهُ قَطُّ، قَالَ: فَرَفَعَهُ اللَّهُ لِي أَنْظُرُ إِلَيْهِ مَا يَسْأَلُونِي عَنْ شَيْءٍ، إِلَّا أَنْبَأْتُهُمْ بِهِ، وَقَدْ رَأَيْتُنِي فِي جَمَاعَةٍ مِنَ الأَنْبِيَاءِ، فَإِذَا مُوسَى قَائِمٌ يُصَلِّي، فَإِذَا رَجُلٌ ضَرْبٌ جَعْدٌ، كَأَنَّهُ مِنَ رِجَالِ شَنُوءَةَ، وَإِذَا عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ عَلَيْهِ السَّلَام، قَائِمٌ يُصَلِّي أَقْرَبُ النَّاسِ بِهِ شَبَهًا عُرْوَةُ بْنُ مَسْعُودٍ الثَّقَفِيُّ "، وَإِذَا إِبْرَاهِيمُ عَلَيْهِ السَّلَام، قَائِمٌ يُصَلِّي أَشْبَهُ النَّاسِ بِهِ صَاحِبُكُمْ يَعْنِي نَفْسَهُ، فَحَانَتِ الصَّلَاةُ فَأَمَمْتُهُمْ، فَلَمَّا فَرَغْتُ مِنً الصَّلَاةِ، قَالَ قَائِلٌ: يَا مُحَمَّدُ هَذَا مَالِكٌ صَاحِبُ النَّارِ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ، فَالْتَفَتُّ إِلَيْهِ، فَبَدَأَنِي بِالسَّلَامِ
আমি হিজরে অবস্থান করছিলাম, আর কুরাইশরা আমাকে আমার ইসরা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছিল। তারা আমাকে বায়তুল মাকদিস সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন করল, যা আমি ভালো করে আত্মস্থ করেনি। আমি খুব সমস্যায় পড়লাম, এর পূর্বে কখনো এরূপ সমস্যায় পড়িনি। তিনি বলেন আল্লাহ আমার সামনে মসজিদে আক্বসা উঁচিয়ে ধরলেন, আমি তা দেখতে ছিলাম। তারা আমাকে কোন জিনিস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেনি, যার সংবাদ আমি দেয়নি। আমি নিজেকে নবীদের জমাতের মধ্যে দেখেছি, দেখলাম মুসা দাঁড়িয়ে স্বলাত আদায় করছেন, দেখতে হালকা গড়ন ও কঠিন স্বভাবের, যেন তিনি শানুআ বংশের কেউ। আরো দেখলাম ঈসা ইব্ন মারইয়াম আলাইহিস সালামকে, তিনি দাঁড়িয়ে স্বলাত আদায় করছেন, তার সাথে অধিক মিল রয়েছে উরওয়া ইব্ন মাসউদ সাকাফীর। আরো দেখলাম ইবরাহিম আলাইহিস সালাম দাঁড়িয়ে স্বলাত আদায় করছেন, তার সাথে অধিক মিল রয়েছে তোমাদের সাথীর, অর্থাৎ তার নিজের। অতঃপর স্বলাতের সময় হল, আমি তাদের ইমামতি করলাম। আমি যখন স্বলাত থেকে ফারেগ হলাম, কেউ আমাকে বলল হে মুহাম্মদ, তিনি জাহান্নামের ফেরেশতা তাকে সালাম করুন, আমি তার দিকে ঘুরে দাঁড়ালাম, তিনিই আমাকে প্রথমে সালাম করলেন”। সহিহ মুসলিম: ৩১৯
•_মসজিদে আক্বসা, কুদস ও ফিলিস্তিনে অবিস্থত, আদি যুগ থেকেই পবিত্র।
‎يَا قَوْمِ ادْخُلُوا الْأَرْضَ الْمُقَدَّسَةَ الَّتِي كَتَبَ اللَّهُ لَكُمْ وَلَا تَرْتَدُّوا عَلَىٰ أَدْبَارِكُمْ فَتَنْقَلِبُوا خَاسِرِينَ
হে আমার কওম, তোমরা পবিত্র ভূমিতে প্রবেশ কর, যা আল্লাহ তোমাদের জন্য লিখে দিয়েছেন এবং তোমরা তোমাদের পেছনে ফিরে যেয়ো না, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রত্যাবর্তন করবে’। (মায়েদা, ৫/২১)
ফিলিস্তিনে বনি ইসরাইলের প্রবেশ করার পূর্বে মুসা আলাইহিস সালাম নিজ কওমকে এ নির্দেশ করেছেন বরং ইহুদিরা নিজেদেরকে যাদের পূর্বসূরি দাবি করে সেসব নবীদেরও পূর্বে অতএব প্রমাণিত হল ইহুদিদের পূর্ব থেকে এ ভূমি বরকতময়।
আল্লাহ তা‘আলা ইবরাহিম ও লুত আলাইহিমুস সালাম সম্পর্কে বলেন:
‎وَنَجَّيْنَاهُ وَلُوطًا إِلَى الْأَرْضِ الَّتِي بَارَكْنَا فِيهَا لِلْعَالَمِينَ
আর আমি তাকে ও লুতকে উদ্ধার করে সে ‎‎দেশে নিয়ে গেলাম, যেখানে আমি বিশ্ববাসীর ‎জন্য বরকত রেখেছি”। (আম্বিয়া, ২১/৭১)
অতএব এখানে ইবরাহিম আলাইহিস সালামের পূর্ব থেকে বরকত ছিল। এ জন্য ইয়াবুসিউনরা তার পাশে বসবাস করেছে তার ভেতরে বসবাস করেনি যেহেতু তা ইবাদতের স্থান।
•_মসজিদে আক্বসা যেখানে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে সফর করা বৈধ সকল আলেম একমত যে মসজিদে আক্বসা যিয়ারত ও তাতে স্বলাত আদায় করা মুস্তাহাব। সাওয়াবের উদ্দেশ্যে তিনটি মসজিদ ব্যতীত কোথাও সফর করা বৈধ নয় তন্মধ্যে মসজিদে আক্বসা অন্যতম। এ তিনটি মসজিদের বিশেষ ফজিলত রয়েছে যা অন্যান্য মসজিদের নেই।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ
‎لاَ تَشُدُّوا الرِّحَالَ إِلاَّ إِلَى ثَلاَثَةِ مَسَاجِدَ مَسْجِدِي هَذَا وَالْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَالْمَسْجِدِ الأَقْصَى
তিনটি মাসজিদ ছাড়া অন্য কোন দিকে (সওয়াবের নিয়াতে) তোমরা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বের হবে না। (১) মাসজিদুল হারাম (২) আমার এ মাসজিদ ও (৩) মাসজিদুল আক্বসা।
(সহীহুল বুখারী: হা/১১৮৯, ১৮৬৪ সহিহ মুসলিম: হা/৩১৫২, ৩২৭৭)
হাফেজ ইব্ন হাজার বলেন: “হাদিসে এ তিনটি মসজিদের ফজিলত ও শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে কারণ এগুলো নবীদের মসজিদ। প্রথম মসজিদ মুসলিমদের কেবলা সেখানেই তারা হজ করে। দ্বিতীয় মসজিদ পূর্ববর্তী উম্মতের কেবলা। তৃতীয় মসজিদ তাকওয়ার ওপর প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে”।
শায়খুল ইসলাম ইব্ন তাইমিয়াহ রহ. বায়তুল মাকদিসের যিয়ারত ও তাতে স্বলাত আদায় করার হুকুম সম্পর্কে বলেন: বুখারি ও মুসলিমে প্রমাণিত যে, তিনটি মসজিদ ব্যতীত (সাওয়াবের উদ্দেশ্যে) সফর করা যাবে না... বুখারি ও মুসলিম এ হাদিস আবু সাইদ ও আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণনা করেন। অন্যান্য সনদেও বর্ণিত রয়েছে। এ হাদিস প্রসিদ্ধ ও সবার নিকট গ্রহণযোগ্য। সকল আলেম এ হাদিস সহিহ বলেছেন, গ্রহণ করেছেন ও তার সত্যতার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন। মুসলিম উম্মার সকল আলেম একমত যে, ইবাদতের জন্য মসজিদে আক্বসায় সফর করা মুস্তাহাব। ইব্ন ওমর এখানে এসে স্বলাত আদায় করতেন”।
•_মসজিদে আক্বসা যেখানে অনেক সাহাবি প্রবেশ করেছেন। বসবাস করার নিয়তে, ইবাদত, ওয়ায ও শিক্ষা-দীক্ষার জন্য অনেক সাহাবি এখানে সফর করে এসেছেন। বিশেষ করে আবু উবাইদাহ ইব্নুল জাররাহ, যিনি শাম জয়কারী মুসলিম সেনাদের সেনাপতি ছিলেন। বেলাল ইব্ন রাবাহ ওমর ইব্নুল খাত্তাবের সাথে এ মসজিদে উপস্থিত হয়েছেন ও তাতে আযান দিয়েছেন। মুয়ায ইব্ন জাবাল, আবু উবাইদাহ মৃত্যুর পর তাকে মানুষের খলিফা নির্ধারণ করেছিলেন। আল্লাহর উন্মুক্ত তরবারি খালেদ ইব্নুল ওয়ালিদ, বায়তুল মাকদিসের বিজয়ে অংশ গ্রহণ করেছেন। উবাদাহ ইব্ন সামেত, ফিলিস্তিনে তিনিই সর্বপ্রথম বিচারকার্যের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বায়তুল মাকদিসে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন এবং সেখানেই তাকে দাফন করা হয়। তামিম ইব্ন আউস আদ-দারি, আব্দুল্লাহ ইব্ন সালাম বায়তুল মাকদিসে এসেছেন এবং তার বিজয়ে অংশ গ্রহণ করেছেন। তিনি জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্তদের একজন। তাদের ছাড়া আরো অনেকে মসজিদে আক্বসায় এসেছেন ও বসবাস করেছেন”।
•_মসজিদে আক্বসা অন্যান্য শহর থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী, যা মুসলিমগণ বিজয় করেন। এটাই একমাত্র শহর, যার চাবি গ্রহণ করার জন্য খলিফা ওমর ইব্নুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু মদিনা থেকে বের হয়ে কুদসে এসেছেন। ১৫হি.তে মসজিদে আক্বসার সীমানায় তিনি স্বলাতের জায়গা নির্মাণ করেন, যখন আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদের হাতে বায়তুল মাকদিসের বিজয় দান করেছিলন। তিনি এ পবিত্র ভূমি ওয়াকফ করে দেন, যেন কিয়ামত পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহর ওপর তার আমানতদারী বজায় থাকে।
•_মসজিদে আক্বসা যেখান থেকে রোম ও ক্রুসেডদের তাড়ানোর জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর অনুসারীগণ নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। ক্রুসেডদের নয়টি আক্রমণ তারা প্রতিহত করেন, নুরুদ্দিন মাহমুদ যানকি ও সালাহুদ্দিন আইয়ূবীর নেতৃত্বে তাদের ব্যতীত আরো অনেক মুসলিম শাসক যারা মুসলিম মুজাহিদদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। সর্বশেষ তাদের হাতে (৯১) বছর পর বায়তুল মাকদিস দখলমুক্ত হয়।
বির রুহ বিদ-দাম নাফদিকা ইয়া আক্বসা! অর্থ হচ্ছে
আমাদের জীবন ও রক্ত তোমার রক্ষার্থে উৎসর্গ করব হে আক্বসা!এই স্লোগানে মুখরিত ফিলিস্তীন। প্রায় ৫০ বছর পর এই প্রথম মসজিদে আক্বসায় ছালাত বন্ধ রয়েছে। গত কয়েকদিন থেকে মসজিদে আক্বসার বাহিরে ছালাত হচ্ছে। ইতিমধ্যেই তিন ফিলিস্তিনী নিহত ও শতাধিক আহত।

আক্বসাকে মহান আল্লাহ বরকতময় বলেছেন কুরআনে। (সূরা ইসরা)
আক্বসা আমাদের প্রথম ক্বিবলা।
আক্বসা আমাদের তৃতীয় সম্মানিত মসজিদ।
আক্বসাকে দেখতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সফর করা জায়েয।
আক্বসায় ছালাত অন্য মসজিদের ছালাতের চেয়ে উত্তম।
২য় খলিফা ওমর (রাঃ)-এর স্মৃতি বিজড়িত এই আক্বসা।
সালাহুদ্দীন আইয়ূবী (রহঃ)-এর স্মৃতি বিজড়িত এই আক্বসা।

ঈসা (আঃ) মারিয়াম (আঃ) সুলায়মান (আঃ) সহ অগণিত নবী রাসূলের স্মৃতি বিজড়িত এই আক্বসা।
আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) তার মিরাজ সফর এখান থেকেই শুরু করেছিলেন।

এখানেই সকল নবীর ছালাতে ইমামতি করিয়েছেন মুহাম্মাদ (ছাঃ)। তথা সকল নবীর মিলনমেলাস্থল এই আক্বসা।
ক্বিয়ামতের পূর্ব মুহুর্তে গুরুত্ব পূর্ণ স্পট হবে এই আক্বসা।

আক্বসা আমাদের সম্মান। আক্বসা আমাদের ঈমান। হে মহান রাব্ব বহু দূরে থেকেও আমরা আক্বসার ক্রন্দন শুনতে পাচ্ছি। তুমি মহা শক্তিধর ! মহা পরাক্রমশালী! তোমার শক্তিমত্তা এই অভিশপ্ত ইহুদী জাতির উপর দেখাও। আক্বসাকে এই অভিশপ্ত জাতির হাত থেকে মুক্ত কর। ইয়া রাব্ব তুমি সাহায্য কর! আমীন!

No comments:

Post a Comment